বরগুনার আমতলী উপজেলার ফসলি জমির উর্বর মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটার গ্রাসে। কৃষকরা ইটভাটার ঠিকাদারদের প্রলোভনে পরে দেদার মাটি বিক্রি করছেন। মাটি বিক্রি করায় ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বরতা হারাচ্ছে। এতে করে হুমকিতে পড়েছে আবাদি জমি। ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু মাটি সংগ্রহকারী ঠিকাদার ও ইটভাটার মালিকরা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে কৃষকদের ভুলভালো বুঝিয়ে ইটভাটায় মাটি নিয়ে যাচ্ছেন। কৃষিবিদদের দাবি, দ্রুত মাটি কাটা বন্ধ না হলে কৃষি উৎপাদন বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পরবে। আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ঈশা ইকবাল বলেন, কৃষিজমির ওপরের ৮-১০ ইঞ্চি থেকে দের ফুট পর্যন্ত মাটির উপরিভাগে রাসায়নিক উপাদান থাকে। এই মাটি কেটে নেয়া হলে যেমন জমি উর্বরতা হারাবে, তেমনি ফসল আবাদ বিপর্যয়ের মুখে পরবে। তিনি আরও বলেন, ফসলি জমিতে গভীর করে মাটি কেটে নিলে ওই জমি অনাবাদি হয়ে যায়। এতে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। সরকারিভাবে নির্দেশনা আছে, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়া ফৌজদারি অপরাধ। যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নিলে মাটি কাটার প্রবণতা হ্রাস পেত।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার আমতলী সদর, হলদিয়া, চাওড়া, কুকুয়া, গুলিশাখালী এবং আঠারগাছিয়া ইউনিয়নে ঝিকঝ্যাঁক, ড্রাম চিমনি পদ্ধতির ২০টি ইটভাটা রয়েছে। এ ইটভাটাগুলোতে বছরে অন্তত ২০ কোটি ইট পোড়ানো হয়। ইট পোড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় মাটি ইটভাটার মালিকরা ফসলি জমি কেটে আনছে। আবার অনেকে ইটভাটায় মাটি বিক্রির জন্য কৃষিজমি কেটে পুকুর খনন করেছে। এর ফলে হাজার হাজার একর কৃষিজমির উর্বরতা হারাচ্ছে। ফসলি জমির মালিকরা না বুঝে ইটভাটার মালিকদের প্রলোভনে পরে দেদার মাটি বিক্রি করছে। গত বছর যারা ফসলি জমির মাটি বিক্রি করছে ওই জমিতে এ বছর আমনের মৌসুমে ভালো ফসল হয়নি। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপণ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩ এবং মাটির ব্যবহার হ্রাসকরণ নিয়ন্ত্রণ আইনে উল্লেখ আছে, ইট প্রস্তুতের জন্য ইটভাটার মালিকরা কৃষিজমি, পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করিতে পারিবে না। যদি কোনো ব্যক্তি ৫ এ উপধারা (১) এ বিধান লঙ্ঘন করিয়া ইটভাটা প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি বা পাহার বা টিলা হইতে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করিয়া ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেন তা হইলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বছরের কারাদ- বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দন্ডেদন্ডিত হইবেন। ইটভাটার মালিকরা এই আইনের তোয়াক্কা না করে ফসলি জমি (কৃষি) থেকে মাটি সংগ্রহ করে ইটভাটার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে আমতলী উপজেলার রায়বালা, ফকিরবাড়ী, বান্দ্রা, খলিয়ান, ঘটখালী, কালিবাড়ী এবং কুকুয়ার আজিমপুর ঘুরে দেখা গেছে, ট্রলার ও ট্রলিবোঝাই করে শ্রমিকরা দেদারসে মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। কালিবাড়ী গ্রামের কৃষক মোতালেব বলেন, মোগো এলাকায় অনেক মানু হ্যাগো জমির মাটি বেইচ্ছা হালাইছে। কেউ সরল জমি কাইট্টা পুহোইর হরছে, মুই জমির মাডি কাইট্টা সর্বনাশ করমু না। বান্দ্রা গ্রামের বাদল বলেন, অনেকে জমির মাটি বিক্রি করছেন। ট্রাক্টরচালক মো. মুছা বলেন, কৃষিজমির মাটি কেটে বিবিসি ইটভাটায় ট্রাক্টরবোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছি। কৃষিজমির মাটি বিক্রিতে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে কিন্তু জমির মালিকরা বুঝেও ঠিকাদারের টাকার লোভে পড়ে দেদার মাটি বিক্রি করছেন। কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে ভুল করেছি। ওই জমিতে এ বছর ভালো ফসল হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রায়বালা গ্রামের এমবিএম ইটভাটার মালিক মাহবুব মৃধা ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারের কাছ থেকে ১০ টাকা ফুট হিসেবে মাটি ক্রয় করি। তারা ইটভাটায় ট্রাক্টরে করে মাটি দিয়ে যায়। কোথা থেকে ঠিকাদার মাটি সংগ্রহ করে তা আমার জানা নেই। মাটি সংগ্রহকারী ঠিকাদার মো. মোজাম্মেল হাওলাদার বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকা ফুট দরে মাটি কিনে ইটভাটাতে ১০ টাকা দরে বিক্রি করছি। কৃষকরা অপরিত্যাক্ত জমি, দলখেত এবং পুকুরের মাটি বিক্রি করছেন। তিনি আরও বলেন, এই উপজেলায় মোট ২০টি ইটভাটা রয়েছে। প্রত্যেকটি ইটভাটায়ই একজন করে মাটি সংগ্রহকারী ঠিকাদার রয়েছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া ফসল উৎপাদনের জন্য হুমকি। কিন্তু ফসলি জমির মালিকরা না বুঝে জমির মাটি বিক্রি করছেন। খোঁজ-খবর নিয়ে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
বরগুনার আমতলী উপজেলার ফসলি জমির উর্বর মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটার গ্রাসে। কৃষকরা ইটভাটার ঠিকাদারদের প্রলোভনে পরে দেদার মাটি বিক্রি করছেন। মাটি বিক্রি করায় ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বরতা হারাচ্ছে। এতে করে হুমকিতে পড়েছে আবাদি জমি। ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু মাটি সংগ্রহকারী ঠিকাদার ও ইটভাটার মালিকরা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে কৃষকদের ভুলভালো বুঝিয়ে ইটভাটায় মাটি নিয়ে যাচ্ছেন। কৃষিবিদদের দাবি, দ্রুত মাটি কাটা বন্ধ না হলে কৃষি উৎপাদন বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পরবে। আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ঈশা ইকবাল বলেন, কৃষিজমির ওপরের ৮-১০ ইঞ্চি থেকে দের ফুট পর্যন্ত মাটির উপরিভাগে রাসায়নিক উপাদান থাকে। এই মাটি কেটে নেয়া হলে যেমন জমি উর্বরতা হারাবে, তেমনি ফসল আবাদ বিপর্যয়ের মুখে পরবে। তিনি আরও বলেন, ফসলি জমিতে গভীর করে মাটি কেটে নিলে ওই জমি অনাবাদি হয়ে যায়। এতে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। সরকারিভাবে নির্দেশনা আছে, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়া ফৌজদারি অপরাধ। যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নিলে মাটি কাটার প্রবণতা হ্রাস পেত।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার আমতলী সদর, হলদিয়া, চাওড়া, কুকুয়া, গুলিশাখালী এবং আঠারগাছিয়া ইউনিয়নে ঝিকঝ্যাঁক, ড্রাম চিমনি পদ্ধতির ২০টি ইটভাটা রয়েছে। এ ইটভাটাগুলোতে বছরে অন্তত ২০ কোটি ইট পোড়ানো হয়। ইট পোড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় মাটি ইটভাটার মালিকরা ফসলি জমি কেটে আনছে। আবার অনেকে ইটভাটায় মাটি বিক্রির জন্য কৃষিজমি কেটে পুকুর খনন করেছে। এর ফলে হাজার হাজার একর কৃষিজমির উর্বরতা হারাচ্ছে। ফসলি জমির মালিকরা না বুঝে ইটভাটার মালিকদের প্রলোভনে পরে দেদার মাটি বিক্রি করছে। গত বছর যারা ফসলি জমির মাটি বিক্রি করছে ওই জমিতে এ বছর আমনের মৌসুমে ভালো ফসল হয়নি। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপণ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩ এবং মাটির ব্যবহার হ্রাসকরণ নিয়ন্ত্রণ আইনে উল্লেখ আছে, ইট প্রস্তুতের জন্য ইটভাটার মালিকরা কৃষিজমি, পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করিতে পারিবে না। যদি কোনো ব্যক্তি ৫ এ উপধারা (১) এ বিধান লঙ্ঘন করিয়া ইটভাটা প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি বা পাহার বা টিলা হইতে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করিয়া ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেন তা হইলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বছরের কারাদ- বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দন্ডেদন্ডিত হইবেন। ইটভাটার মালিকরা এই আইনের তোয়াক্কা না করে ফসলি জমি (কৃষি) থেকে মাটি সংগ্রহ করে ইটভাটার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে আমতলী উপজেলার রায়বালা, ফকিরবাড়ী, বান্দ্রা, খলিয়ান, ঘটখালী, কালিবাড়ী এবং কুকুয়ার আজিমপুর ঘুরে দেখা গেছে, ট্রলার ও ট্রলিবোঝাই করে শ্রমিকরা দেদারসে মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। কালিবাড়ী গ্রামের কৃষক মোতালেব বলেন, মোগো এলাকায় অনেক মানু হ্যাগো জমির মাটি বেইচ্ছা হালাইছে। কেউ সরল জমি কাইট্টা পুহোইর হরছে, মুই জমির মাডি কাইট্টা সর্বনাশ করমু না। বান্দ্রা গ্রামের বাদল বলেন, অনেকে জমির মাটি বিক্রি করছেন। ট্রাক্টরচালক মো. মুছা বলেন, কৃষিজমির মাটি কেটে বিবিসি ইটভাটায় ট্রাক্টরবোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছি। কৃষিজমির মাটি বিক্রিতে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে কিন্তু জমির মালিকরা বুঝেও ঠিকাদারের টাকার লোভে পড়ে দেদার মাটি বিক্রি করছেন। কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে ভুল করেছি। ওই জমিতে এ বছর ভালো ফসল হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রায়বালা গ্রামের এমবিএম ইটভাটার মালিক মাহবুব মৃধা ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারের কাছ থেকে ১০ টাকা ফুট হিসেবে মাটি ক্রয় করি। তারা ইটভাটায় ট্রাক্টরে করে মাটি দিয়ে যায়। কোথা থেকে ঠিকাদার মাটি সংগ্রহ করে তা আমার জানা নেই। মাটি সংগ্রহকারী ঠিকাদার মো. মোজাম্মেল হাওলাদার বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকা ফুট দরে মাটি কিনে ইটভাটাতে ১০ টাকা দরে বিক্রি করছি। কৃষকরা অপরিত্যাক্ত জমি, দলখেত এবং পুকুরের মাটি বিক্রি করছেন। তিনি আরও বলেন, এই উপজেলায় মোট ২০টি ইটভাটা রয়েছে। প্রত্যেকটি ইটভাটায়ই একজন করে মাটি সংগ্রহকারী ঠিকাদার রয়েছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া ফসল উৎপাদনের জন্য হুমকি। কিন্তু ফসলি জমির মালিকরা না বুঝে জমির মাটি বিক্রি করছেন। খোঁজ-খবর নিয়ে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।