alt

রায়গঞ্জে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীর কাঁধে সংসারের বোঝা

প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) : রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে স্কুল ব্যাগের সঙ্গে সংসারের বোঝা কাঁধে তুলে নিয়েছে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী খাদিজা।

রায়গঞ্জ পৌর সভার ক্ষুদ্র বাশুড়িয়া এলাকার মৃত আব্দুল খালেকের বড় মেয়ে ৩য় শেণির শিক্ষার্থী খাদিজা। বয়স মাত্র ১১ বছর। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে বাধ্য হয়েই স্কুল ব্যাগের পরিবর্তে সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে তার সংগ্রামী জীবন। মাত্র ৩শ টাকার পণ্য বিক্রি করে স্বপ্ন বুনছেন তিনি।

অন্য শিশুদের মতো তারও স্বপ্ন ছিল স্কুলে যাওয়া, খেলা ধুলা করা। কিন্তু স্কুলব্যাগর সঙ্গে কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে সংসারের বোঝা। এ যেন নাটকের গল্পকেও হার মানায়। জীবন সংসারের তাগিদে ছোট বোন ও মার দায়িত্ব নিয়েছে সে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙ্গিনায় (রাস্তার পাশে) জরাজীর্ণ পলিথিনে মুড়ানো একটি ছোট্ট দোকান। সকাল ও বিদ্যালয় শেষে পণ্য বিক্রি করে যতটুকু আয় হয়। সেই সামান্য অর্থ দিয়েই চলে তিনজন নারীর সংগ্রামী জীবন। অসহায় খাদিজা বর্তমান পড়াশোনা করছেন রৌহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

চার বছর পূর্বে মারা গেছেন মেয়েটির বাবা। বিধবা মা লাকি বেগম (৩৫) ও ছোট বোনকে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে খেয়ে না খেয়ে চলছে তাদের জীবন।

শিশু খাদিজা বলেন, চোখের সামনে বাবা মারা যাওয়ার দৃশ্য আমি দেখেছি। বাবার রেখে যাওয়া দুই বোনের স্বপ্ন পূরণে আমাদের মা দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যার বাবা নেই, দুনিয়াতে তার কেউ নাই! কে আমাদের খাওয়াবে ? কে আমাদের পড়াশোনা খরচ বহন করবে মা আমাকে ও ছোট বোনকে স্কুলে ভর্তি করেছেন। কিন্তু লেখাপড়ার খরচ আমার মা বহন করতে পারিনা। বই, খাতা, কলম, ব্যাগ ইত্যাদি কিনতে পারিনা। তাই নিজের পড়াশোনার খরচ ও মাকে সহায়তা করতেই আমি সামান্য কিছু অর্থ দিয়েই ছোট্ট দোকান শুরু করেছি।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী খাদিজা আরও বলেন, প্রতিদিন স্কুলে যেতে মন চায়। ইচ্ছা করে অন্য আট-দশজন বন্ধুর মতো সকাল-বিকেল বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ছুটে বেড়াতে। তবে জীবনের বাস্তবতা বড়ই কঠিন। পরিবারের কোন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায়, তার সব আশা, প্রত্যাশা, ইচ্ছা কল্পনা মাত্র। তার স্বপ্ন একজন ভাল মানুষ হয়ে পরিবার, দেশ ও সমাজের পাশে দাঁড়াবেন বলে জানান তিনি।

খাদিজার মা লাকি বেগম জানান, স্বামী আব্দুল খালেক মারা গেলে অন্যের বাড়িতে কাজ করেই মেয়ের পড়াশোনাসহ কোনমতে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। গ্রামের এক মাহফিলে আত্মীয় স্বজনের দেওয়া ১০-২০ টাকা করে মোট ৩শ টাকা জমায় খাদিজা। আর সে টাকা দিয়েই রাস্তার পাশে সাদা পলিথিন বেষ্টনী দিয়ে ছোট্ট দোকানে সামান্য পণ্য সামগ্রী বিক্রি করে সংসারে সহায়তা করছে।

তিনি আরো জানান, মেয়ে দুইটার বাবা মারা যাওয়ার পর সংসার আর চলে না। কিভাবে যে সংসার চলছে তা বোঝানো কঠিন। স্যারেরা বলে মেয়েটার মেধা আছে। তাই পড়াতেই চাইছিলাম কিন্তু অর্থ না থাকায় পড়াশোনাটাও হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে।

সহপাঠী সুরাইয়া, আসিফ, কমরুল বলেন, খাদিজা দারুণ মেধাবী ও খুবই হাস্যোজ্জ্বল। সংসারে অভাব থাকলেও সে আমাদের কাউকে বুঝতে দেয় না। আমরা তাকে সহপাঠী ভাবি কখনোই অন্য চোখে দেখি না।

প্রতিবেশী সামিদুল ইসলাম বলেন, মেয়েটির বাবা নেই। সংসারের সব বোঝা ওর মা লাকি বেগমের ওপর। খুব কষ্ট করে মেয়েটাকে পড়াচ্ছে। আমি চাই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বিত্তবান বা সরকার খাদিজাকে সহযোগিতা করুক।

এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হাসান শেখ জানান, স্বামী হারা লাকি বেগমের যদি বিধবা ভাতার কার্ড না থাকে তবে অবশ্যই তাকে ভাতার কার্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া তিনি আবদেন করলে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

ছবি

সরকারি হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশে নতুন নিয়ম

ছবি

মাতামুহুরী নদী ভরাট ও বিষ দিয়ে নিধনকাণ্ডে বিপন্ন হচ্ছে দেশীয় মাছ

ছবি

‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বলে হেনস্থা, পশ্চিমবঙ্গের অনেক মানুষ বিপাকে

ছবি

এবার আগারগাঁওয়ে ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগের মিছিল, আটক দুই

ছবি

১১ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ‘৮৬ হাজারের বেশি’

ছবি

পীরগঞ্জ সরকারী আব্দুর রউফ কলেজে তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে তোলপাড়

ছবি

দুমকি প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল, সম্পাদক সাইদুর

ছবি

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি প্রত্যাহার

ছবি

ভালুকায় দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ১৫

ছবি

বোয়ালখালীতে গৃহবধূর মৃত্যু

ছবি

ভুটভুটির ধাক্কায় সাইকেল আরোহী নিহত

ছবি

ডিমলা থানা পুলিশের কার্যক্রম চলছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে

ছবি

জয়পুরহাটে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যার চেষ্টা

ছবি

চাঁদপুরে জেলা প্রশাসক কাপ সাঁতার প্রতিযোগিতা

ছবি

বাল্কহেড চলাচলে ধলেশ্বরীর দুই তীরে ভাঙন

ছবি

শেরপুরে অটোরিকশা চালক আবু বক্কর হত্যার রহস্য উন্মোচন

ছবি

রায়গঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের কর্মবিরতি, গ্রাহকদের ভোগান্তি

ছবি

রাজবাড়ীতে শুরু হয়েছে ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল অলিম্পিয়াড সিজন ২

ছবি

ঝিনাইগাতীতে কৃষকের কাকরুল গাছ কেটে ফেলল প্রতিপক্ষরা

ছবি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনায় আওয়ামীলীগের ঝটিকা মিছিল

ছবি

রাণীনগরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ

ছবি

শেরপুরে চাঁদা না দেওয়ায় ইমামকে হত্যাচেষ্টা, বিচারের দাবীতে মানববন্ধন

ছবি

শেরপুরে দুর্নীতির অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত

ছবি

গোবিন্দগঞ্জে রাতের আঁধারে কৃষকের আখ কর্তন ও চুরি

ছবি

সুন্দরগঞ্জে সেতু আছে সংযোগ সড়ক নেই

ছবি

কেশবপুরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পলি অপসারণ শুরু

ছবি

বাঁশের সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার

ছবি

কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে ‘সরকারবিরোধী’ মিছিল: ছাত্রলীগের দুই কর্মীসহ চারজন গ্রেপ্তার

ছবি

নিহত নারীর মাথা উদ্ধার

ছবি

৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করলেন বিএনপি নেতা শাহাফুজ আলম

ছবি

শারদীয় দুর্গোৎসব মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ

ছবি

ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় আলোকিত মওলানা ভাসানী সেতু

ছবি

দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে

ছবি

মোরেলগঞ্জে রাস্তার বেহালদশা ৮ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

ভৈরবে প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে দুই পরিবারের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ছবি

সুনামগঞ্জ কার মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ নিহত ২

tab

news » bangladesh

রায়গঞ্জে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীর কাঁধে সংসারের বোঝা

প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ)

রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে স্কুল ব্যাগের সঙ্গে সংসারের বোঝা কাঁধে তুলে নিয়েছে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী খাদিজা।

রায়গঞ্জ পৌর সভার ক্ষুদ্র বাশুড়িয়া এলাকার মৃত আব্দুল খালেকের বড় মেয়ে ৩য় শেণির শিক্ষার্থী খাদিজা। বয়স মাত্র ১১ বছর। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে বাধ্য হয়েই স্কুল ব্যাগের পরিবর্তে সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে তার সংগ্রামী জীবন। মাত্র ৩শ টাকার পণ্য বিক্রি করে স্বপ্ন বুনছেন তিনি।

অন্য শিশুদের মতো তারও স্বপ্ন ছিল স্কুলে যাওয়া, খেলা ধুলা করা। কিন্তু স্কুলব্যাগর সঙ্গে কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে সংসারের বোঝা। এ যেন নাটকের গল্পকেও হার মানায়। জীবন সংসারের তাগিদে ছোট বোন ও মার দায়িত্ব নিয়েছে সে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙ্গিনায় (রাস্তার পাশে) জরাজীর্ণ পলিথিনে মুড়ানো একটি ছোট্ট দোকান। সকাল ও বিদ্যালয় শেষে পণ্য বিক্রি করে যতটুকু আয় হয়। সেই সামান্য অর্থ দিয়েই চলে তিনজন নারীর সংগ্রামী জীবন। অসহায় খাদিজা বর্তমান পড়াশোনা করছেন রৌহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

চার বছর পূর্বে মারা গেছেন মেয়েটির বাবা। বিধবা মা লাকি বেগম (৩৫) ও ছোট বোনকে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে খেয়ে না খেয়ে চলছে তাদের জীবন।

শিশু খাদিজা বলেন, চোখের সামনে বাবা মারা যাওয়ার দৃশ্য আমি দেখেছি। বাবার রেখে যাওয়া দুই বোনের স্বপ্ন পূরণে আমাদের মা দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যার বাবা নেই, দুনিয়াতে তার কেউ নাই! কে আমাদের খাওয়াবে ? কে আমাদের পড়াশোনা খরচ বহন করবে মা আমাকে ও ছোট বোনকে স্কুলে ভর্তি করেছেন। কিন্তু লেখাপড়ার খরচ আমার মা বহন করতে পারিনা। বই, খাতা, কলম, ব্যাগ ইত্যাদি কিনতে পারিনা। তাই নিজের পড়াশোনার খরচ ও মাকে সহায়তা করতেই আমি সামান্য কিছু অর্থ দিয়েই ছোট্ট দোকান শুরু করেছি।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী খাদিজা আরও বলেন, প্রতিদিন স্কুলে যেতে মন চায়। ইচ্ছা করে অন্য আট-দশজন বন্ধুর মতো সকাল-বিকেল বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ছুটে বেড়াতে। তবে জীবনের বাস্তবতা বড়ই কঠিন। পরিবারের কোন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায়, তার সব আশা, প্রত্যাশা, ইচ্ছা কল্পনা মাত্র। তার স্বপ্ন একজন ভাল মানুষ হয়ে পরিবার, দেশ ও সমাজের পাশে দাঁড়াবেন বলে জানান তিনি।

খাদিজার মা লাকি বেগম জানান, স্বামী আব্দুল খালেক মারা গেলে অন্যের বাড়িতে কাজ করেই মেয়ের পড়াশোনাসহ কোনমতে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। গ্রামের এক মাহফিলে আত্মীয় স্বজনের দেওয়া ১০-২০ টাকা করে মোট ৩শ টাকা জমায় খাদিজা। আর সে টাকা দিয়েই রাস্তার পাশে সাদা পলিথিন বেষ্টনী দিয়ে ছোট্ট দোকানে সামান্য পণ্য সামগ্রী বিক্রি করে সংসারে সহায়তা করছে।

তিনি আরো জানান, মেয়ে দুইটার বাবা মারা যাওয়ার পর সংসার আর চলে না। কিভাবে যে সংসার চলছে তা বোঝানো কঠিন। স্যারেরা বলে মেয়েটার মেধা আছে। তাই পড়াতেই চাইছিলাম কিন্তু অর্থ না থাকায় পড়াশোনাটাও হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে।

সহপাঠী সুরাইয়া, আসিফ, কমরুল বলেন, খাদিজা দারুণ মেধাবী ও খুবই হাস্যোজ্জ্বল। সংসারে অভাব থাকলেও সে আমাদের কাউকে বুঝতে দেয় না। আমরা তাকে সহপাঠী ভাবি কখনোই অন্য চোখে দেখি না।

প্রতিবেশী সামিদুল ইসলাম বলেন, মেয়েটির বাবা নেই। সংসারের সব বোঝা ওর মা লাকি বেগমের ওপর। খুব কষ্ট করে মেয়েটাকে পড়াচ্ছে। আমি চাই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বিত্তবান বা সরকার খাদিজাকে সহযোগিতা করুক।

এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হাসান শেখ জানান, স্বামী হারা লাকি বেগমের যদি বিধবা ভাতার কার্ড না থাকে তবে অবশ্যই তাকে ভাতার কার্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া তিনি আবদেন করলে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

back to top