চলছে পবিত্র রমজান মাস। আর এই রমজানেও টিসিবির পণ্য পাচ্ছেন না দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার স্বল্প আয়ের প্রায় ১৯ হাজার পরিবার। দুই মাস ধরে টিসিবির পণ্য পাননি এ কার্ডধারীরা। ফলে হতাশার ছাপ দেখা যাচ্ছে স্বল্পআয়ের এসব মানুষের মুখে। স্মার্টকার্ড জটিলতায় বিতরণ কার্যক্রম ব্যাহত বলে জানাচ্ছেন ডিলাররা।
তবে এই কার্ডের তালিকা নিয়েও রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। উপজেলার এসব কার্ডধারীর অনেকের রয়েছে দালান বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কর্মসংস্থান।
অথচ আরও অনেক নিম্নআয়ের পরিবার রয়েছে যারা ধর্ণা দিয়েও পাননি এ সুবিধায় তাদের নাম লিখাতে। ফলে এসব নিম্নআয়ের সুবিধাভোগ করছেন অনেক আর্থিকস্বচ্ছল ব্যক্তিরাও। পুনরায় স্বচ্ছ তালিকা করার দাবি ভুক্তভোগীদের।
জানা গেছে, পূর্বের হাতে লেখা কার্ডের মাধ্যেমে ফুলবাড়ী উপজেলার পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নে স্বল্পআয়ের ১৮ হাজার ৮৭৯টি পরিবার রয়েছে টিসিবি পণ্য ভোগকারীর তালিকায়। এরমধ্যে পৌরএলাকায় ৩ হাজার ১৫৪টি, ১ নং এলুয়াড়ী ইউনিয়নে ২ হাজার ৬১৮টি, ২ নং আলাদীপুর ইউনিয়নে ২ হাজার ২৬২ টি, ৩ নং কাজিহাল ইউনিয়নে ২ হাজার ১৯০টি, ৪ নং বেতদীঘি ইউনিয়নে ২ হাজার ২৭৫টি, ৫ নং খয়েরবাড়ী ইউনিয়নে ১ হাজার ২৮০টি, ৬ নং দৌলতপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৫১৪টি এবং ৭ নম্বর শিবনগর ইউনিয়নে ৩ হাজার ৫৮৬টি পরিবার রয়েছে। এসব পরিবারের মাঝে পণ্য সরবরাহের জন্য রয়েছে তিনটি ডিলার।
এদিকে সরকারি নির্দেশনায় সুবিধাভোগীদের স্মার্ট কার্ডের জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৪টি কার্ড চূড়ান্ত হয়েছে যার প্রতিটি ইউনিয়নবাসী। ঢাকা থেকে এখন পর্যন্ত আসেনি চূড়ান্ত হওয়া কার্ডের বেশির ভাগ অংশই।
অন্যদিকে স্মার্ট কার্ড প্রক্রিয়াকরণে ডিসেম্বর মাসের পর আর বিতরণ করা হয়নি টিসিবির পণ্য। ফলে কার্ডধারী স্বল্পআয়ের এসব মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে একপ্রকার হতাশার ছাপ।
কার্ডধারীর সুবিধা না পাওয়া নিম্নআয়ের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, পূর্বে এসব তালিকা করেছেন মেয়র, কাউন্সিলররা। যার ফলে যারা ওইসব জনপ্রতিনিধির ভোট করেছে বা শুভাকাঙ্খি শুধু তারাই সবধরনের সুবিধা পেয়েছেন। লোক দেখানো কিছু নিম্নআয়ের মানুষ কার্ড পেলেও বেশিরভাগ কার্ড পেয়েছে আর্থিক স্বচ্ছল বহুতল ভবনে বসবাসরতরা। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি কার্ডগুলো বিতরণের পূর্বে পুনরায় এসব তালিকা করে প্রকৃত মানুষ যেন কার্ডের সুবিধা পায়।
গৃহবধূ আল্পনা রানীর জানান, জনৈক জনপ্রতিনিধির কাছে দিনের পর দিন ধর্ণা দিয়েও কার্ড হয়নি। অর্থচ যাদের ধনসম্পত্তি রয়েছে তাদের নামে হয়েছিল এই কার্ড যা বৈষম্য হয়েছে। আমার দাবি এই সরকার প্রশাসন কর্তৃক পুনরায় তালিকা করে প্রকৃতদের কার্ডের আওতায় আনুক। যাতে আমাদের মতো মানুষ বাঁচতে পারে।
কার্ডধারী রিকশাচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা দিন করি দিন খাই যা রোজগার করি তা খেয়েই শেষ হয়ে যায়। একদিন রোজগার না করলে সংসারে খরচ জোটে না। আমি টিসিবির কার্ডধারী। টিসিবির পণ্য পাওয়ায় সংসারের খরচ কম হচ্ছিল। কিন্তু দুই মাস পাইনি পণ্য। ফলে সাংসারিক খরচ বেড়ে গেছে। রমজান মাসে অন্তত টিসিবির পণ্য পাব আশা ছিল। কিন্তু পাওয়া যায়নি।
মেসার্স ভোলা প্রসাদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী টিসিবি ডিলার অনিল বলেন, যে কয়টি স্মার্ট কার্ড হয়েছে সে পরিমাণে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের পণ্য মজুত রয়েছে। সব কার্ড না আসায় বিতরণ কার্যক্রম করা সম্ভব হয়নি। উপজেলায় প্রায় ১৯ হাজার সুবিধাভোগীর মধ্যে শুধু ইউনিয়নের ১ হাজার ৫৪টি কার্ড এসেছে। এই অবস্থায় পণ্য সরবরাহ করতে গেলে বাকি গ্রাহকদের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এছাড়া নানা রকম ঝামেলা মুখোমুখি হতে পারে। তাই বিতরণ করা যাচ্ছে না। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারের সঙ্গে পরামর্শ করে বিতরণের বিষয়ে শিগগির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মেসার্স শাহারিয়ার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ডিলার আব্দুল লতিফ বলেন, চূড়ান্তকৃত কার্ডের পণ্য পেয়েছি। কিন্তু সামান্য কয়েকটি কার্ডের পণ্য বিতরণ করলে বাকিরা হট্টগোল শুরু করবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আশরাফুল হক বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তা ছাড়া বিতরণে সমস্যাটি কি শুধু এই উপজেলায়, নাকি সারাদেশে? অন্য উপজেলায় যদি বিতরণ হয়ে থাকে তবে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
চলছে পবিত্র রমজান মাস। আর এই রমজানেও টিসিবির পণ্য পাচ্ছেন না দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার স্বল্প আয়ের প্রায় ১৯ হাজার পরিবার। দুই মাস ধরে টিসিবির পণ্য পাননি এ কার্ডধারীরা। ফলে হতাশার ছাপ দেখা যাচ্ছে স্বল্পআয়ের এসব মানুষের মুখে। স্মার্টকার্ড জটিলতায় বিতরণ কার্যক্রম ব্যাহত বলে জানাচ্ছেন ডিলাররা।
তবে এই কার্ডের তালিকা নিয়েও রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। উপজেলার এসব কার্ডধারীর অনেকের রয়েছে দালান বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কর্মসংস্থান।
অথচ আরও অনেক নিম্নআয়ের পরিবার রয়েছে যারা ধর্ণা দিয়েও পাননি এ সুবিধায় তাদের নাম লিখাতে। ফলে এসব নিম্নআয়ের সুবিধাভোগ করছেন অনেক আর্থিকস্বচ্ছল ব্যক্তিরাও। পুনরায় স্বচ্ছ তালিকা করার দাবি ভুক্তভোগীদের।
জানা গেছে, পূর্বের হাতে লেখা কার্ডের মাধ্যেমে ফুলবাড়ী উপজেলার পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নে স্বল্পআয়ের ১৮ হাজার ৮৭৯টি পরিবার রয়েছে টিসিবি পণ্য ভোগকারীর তালিকায়। এরমধ্যে পৌরএলাকায় ৩ হাজার ১৫৪টি, ১ নং এলুয়াড়ী ইউনিয়নে ২ হাজার ৬১৮টি, ২ নং আলাদীপুর ইউনিয়নে ২ হাজার ২৬২ টি, ৩ নং কাজিহাল ইউনিয়নে ২ হাজার ১৯০টি, ৪ নং বেতদীঘি ইউনিয়নে ২ হাজার ২৭৫টি, ৫ নং খয়েরবাড়ী ইউনিয়নে ১ হাজার ২৮০টি, ৬ নং দৌলতপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৫১৪টি এবং ৭ নম্বর শিবনগর ইউনিয়নে ৩ হাজার ৫৮৬টি পরিবার রয়েছে। এসব পরিবারের মাঝে পণ্য সরবরাহের জন্য রয়েছে তিনটি ডিলার।
এদিকে সরকারি নির্দেশনায় সুবিধাভোগীদের স্মার্ট কার্ডের জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৪টি কার্ড চূড়ান্ত হয়েছে যার প্রতিটি ইউনিয়নবাসী। ঢাকা থেকে এখন পর্যন্ত আসেনি চূড়ান্ত হওয়া কার্ডের বেশির ভাগ অংশই।
অন্যদিকে স্মার্ট কার্ড প্রক্রিয়াকরণে ডিসেম্বর মাসের পর আর বিতরণ করা হয়নি টিসিবির পণ্য। ফলে কার্ডধারী স্বল্পআয়ের এসব মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে একপ্রকার হতাশার ছাপ।
কার্ডধারীর সুবিধা না পাওয়া নিম্নআয়ের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, পূর্বে এসব তালিকা করেছেন মেয়র, কাউন্সিলররা। যার ফলে যারা ওইসব জনপ্রতিনিধির ভোট করেছে বা শুভাকাঙ্খি শুধু তারাই সবধরনের সুবিধা পেয়েছেন। লোক দেখানো কিছু নিম্নআয়ের মানুষ কার্ড পেলেও বেশিরভাগ কার্ড পেয়েছে আর্থিক স্বচ্ছল বহুতল ভবনে বসবাসরতরা। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি কার্ডগুলো বিতরণের পূর্বে পুনরায় এসব তালিকা করে প্রকৃত মানুষ যেন কার্ডের সুবিধা পায়।
গৃহবধূ আল্পনা রানীর জানান, জনৈক জনপ্রতিনিধির কাছে দিনের পর দিন ধর্ণা দিয়েও কার্ড হয়নি। অর্থচ যাদের ধনসম্পত্তি রয়েছে তাদের নামে হয়েছিল এই কার্ড যা বৈষম্য হয়েছে। আমার দাবি এই সরকার প্রশাসন কর্তৃক পুনরায় তালিকা করে প্রকৃতদের কার্ডের আওতায় আনুক। যাতে আমাদের মতো মানুষ বাঁচতে পারে।
কার্ডধারী রিকশাচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা দিন করি দিন খাই যা রোজগার করি তা খেয়েই শেষ হয়ে যায়। একদিন রোজগার না করলে সংসারে খরচ জোটে না। আমি টিসিবির কার্ডধারী। টিসিবির পণ্য পাওয়ায় সংসারের খরচ কম হচ্ছিল। কিন্তু দুই মাস পাইনি পণ্য। ফলে সাংসারিক খরচ বেড়ে গেছে। রমজান মাসে অন্তত টিসিবির পণ্য পাব আশা ছিল। কিন্তু পাওয়া যায়নি।
মেসার্স ভোলা প্রসাদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী টিসিবি ডিলার অনিল বলেন, যে কয়টি স্মার্ট কার্ড হয়েছে সে পরিমাণে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের পণ্য মজুত রয়েছে। সব কার্ড না আসায় বিতরণ কার্যক্রম করা সম্ভব হয়নি। উপজেলায় প্রায় ১৯ হাজার সুবিধাভোগীর মধ্যে শুধু ইউনিয়নের ১ হাজার ৫৪টি কার্ড এসেছে। এই অবস্থায় পণ্য সরবরাহ করতে গেলে বাকি গ্রাহকদের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এছাড়া নানা রকম ঝামেলা মুখোমুখি হতে পারে। তাই বিতরণ করা যাচ্ছে না। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারের সঙ্গে পরামর্শ করে বিতরণের বিষয়ে শিগগির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মেসার্স শাহারিয়ার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ডিলার আব্দুল লতিফ বলেন, চূড়ান্তকৃত কার্ডের পণ্য পেয়েছি। কিন্তু সামান্য কয়েকটি কার্ডের পণ্য বিতরণ করলে বাকিরা হট্টগোল শুরু করবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আশরাফুল হক বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তা ছাড়া বিতরণে সমস্যাটি কি শুধু এই উপজেলায়, নাকি সারাদেশে? অন্য উপজেলায় যদি বিতরণ হয়ে থাকে তবে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।