alt

সারাদেশ

বছরজুড়ে চাহিদা চকরিয়ার ইলিশিয়ার সুস্বাদু মহিষের দই

প্রতিনিধি, চকরিয়া (কক্সবাজার) : বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

চকরিয়া (কক্সবাজার) : কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ইলিশিয়ার সুস্বাদু মহিষের দই -সংবাদ

বছরে বার মাসই খাবার বিলাসি মানুষের কাছে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ইলিশিয়ার সুস্বাদু মহিষের দইয়ের। বিয়ে-শাদি কিংবা সামাজিক বড়পরিসরে যে কোন উৎসব অনুষ্ঠানে ভোজন রসিক মানুষের খাবার মেন্যুতে বরাবরে থাকছে ইলিশিয়ার মহিষের দই।

কক্সবাজার জেলায় বিশাল এলাকায় মহিষের চারণ ভুমি রয়েছে চকরিয়া উপজেলার চিংড়িজোন এরিয়া তথা পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের ইলিশিয়া দরবেশকাটা গ্রামে। একসময় পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নে জমিদার শ্রেণীর বিশাল জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল ইলিশিয়ায়। এখনো জমিদার পরিবার গুলোর পুরানো বাড়িঘর, মসজিদ মক্তব, খাচারীঘর, গোয়াল ভরা মহিষ ও গরু ছাগল, মাছের ঘের- পুকুর, বিশাল আয়তনের আবাদি জমি এলাকায় কালেরস্বাক্ষী হিসেবে ঠাঁই দাড়িয়ে রয়েছে। বেশিরভাগ পরিবার দীর্ঘ কয়েক যুগের বেশি সময় ধরে ঢাকা চট্টগ্রামের শহুরে জীবনে চলে গেলেও

সহায় সম্পদ সমূহ সময়ে সময়ে নিজেরা গ্রামে এসে কিংবা কাজের লোক দিয়ে দেখাশুনা করেন।

দীর্ঘ কয়েক যুগ আগে থেকে বেশিরভাগ জমিদার পরিবার বাড়ির পাশে নিজেদের মৎস্য ঘের পরিচালনার পাশাপাশি সেখানে লালন পালন করতেন বিপুল পরিমাণ মহিষ ও বেড়া ছাগল। এসব মহিষের পাল চিংড়িজোনের মৎস্য ঘের গুলোতে একপ্রকার ডেরা গড়তেন। এভাবে জমিদার পরিবারের পাশাপাশি ওই এলাকার অনেক স্বচ্ছল পরিবারে মহিষ লালন পালন বেড়ে যায় ইলিশিয়া ও আশপাশ এলাকায়। ফলে প্রতিদিন ওই এলাকায় প্রচুর পরিমান মহিষের দুধ উৎপাদন হতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট মালিকরা অল্প অল্প করে মহিষের দই বাজারজাত শুরু করেন। এরপর কয়েকবছরের মধ্যে ইলিশিয়া ও আশপাশ এলাকায় মহিষের দইয়ের বিকিকিনি জমজমাট হয়ে উঠে। এভাবেই ইলিশিয়ার সুস্বাদু মহিষের দইয়ের খ্যাতি

চকরিয়া কক্সবাজারের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রভৃতি অঞ্চলে। নিজের এলাকার সুস্বাদু মহিষের দইয়ের সুখ্যাতি নিয়ে কথাগুলো বলেছেন চকরিয়া পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা। তিনি বলেন, উপজেলার বেশিরভাগ ভোজন রসিক মানুষের খাবার হলো ইলিশিয়ার ঐতিহ্যবাহী মহিষের দুধের তৈরি টক দই। সুস্বাদু ও জনপ্রিয়তায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই দই বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। যুগ যুগ ধরে সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সবার পছন্দের তালিকায় মহিষের দই-ই অন্যতম সুস্বাদু খাবার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। চকরিয়া উপজেলা পেরিয়ে কক্সবাজার চট্টগ্রামে সীমাবদ্ধ নয়, দেশব্যাপী ইলিশিয়ার ঐতিহ্যবাহি মহিষের দইয়ের ব্যাপক পরিচিত ও চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, যেখানে মানুষ কোনো একটি কাজ আদায় করতে টাকা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারে না, সেখানে বিশেষ কাজটি ভাগিয়ে নিতে অনেকে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বা ব্যক্তিকে উপটোকন হিসেবে মহিষের দই উপহার দিয়ে কাজটি হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এধরনের অনেক নজিরও আছে ইলিশিয়ার মহিষের দই নিয়ে।

এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, জমিদার পরিবারগুলোতে এখন আগের মতো মহিষ পালন নেই। তবে বর্তমানে উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, সাহারবিল, ঢেমুশিয়া ও চিরিংগা ইউনিয়নে চিংড়ি ঘের মালিক ও উদোক্তা শ্রেণির লোকজন মহিষ পালন করছেন। এখানে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ ছোট-বড় মহিষের খামার গড়ে তোলা হয়েছে। এসব মহিষের দুধে এই দই তৈরি হয়।

জানা গেছে, ইলিশিয়ার দই তৈরিতে ব্যবহার করা দুধ অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। তাই দইটি স্থানীয়ভাবে বেশ জনপ্রিয়। স্থানীয় বাজারের দোকানগুলোতে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি দই বিক্রি হয়। প্রতিবছর রমজান মাসে দই বিক্রি বেড়ে যায় কয়েকগুণ বেশি। চাহিদা বাড়ার কারণে দামও তুলনামূলক একটু বেড়ে যায়। এতে খামারি এবং দোকানী উভয়ে বেশ ভালো লাভবান হচ্ছেন।

উৎপাদনে জড়িতরা জানান, দই উৎপাদনের ক্ষেত্রে সাধারণত মাটির পাত্রে বা টালিতে রাখা হয়। এতে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান এবং বৈশিষ্ট্যগত টক স্বাদের কারণে এ দই দ্রুত খাবারের উপযোগী ও সুস্বাদু হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়ে বাজারে সাড়া ফেলেছে।

১০/১২ বছর আগে ইলিশিয়া বাজারে মহিষের দই বিক্রি করা হতো। এখন চকরিয়া বদরখালী সড়কের লালব্রীজ এলাকায় মহিষের দই বিক্রি ঘিরে নতুন জংশন গড়ে উঠেছে। এখানে ২০-২২টি দোকানে প্রতিদিন জমজমাট মহিষের দই বিক্রি করা হচ্ছে। দইয়ের বাজার ঘিরে ওই এলাকায় বিভিন্ন রকমের পন্য বিক্রির দোকানপাট গড়ে উঠেছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা ও চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্ট বলেন, ইলিশিয়ার মহিষের দইয়ের খ্যাতি এখন শুধু চকরিয়া কিংবা কক্সবাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি বিদেশেও এর চাহিদা বাড়ছে। দই বিক্রি ঘিরে ইলিশিয়া বাজার ও লালব্রীজ এলাকায় ১৫ থেকে ২০টি দোকান গড়ে উঠেছে। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণের কারণে এখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই দই কিনতে আসে। চকরিয়া উপকূলের এই অঞ্চলের মহিষের দুধের দই উৎপাদনের পাশাপাশি দুধ দিয়ে বিভিন্ন মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে তৈরি করা হচ্ছে মিষ্টি, মাখন, ঘি, রসমালাই, ছানা ও সন্দেসসহ নানা রকম মুখরোচক খাবার। এসব পণ্য স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করছে। ফলে এ অঞ্চলের মহিষের মালিক খামারি থেকে শুরু বিক্রেতা দোকানি ও খাবারের প্রস্তুতকারদের মধ্যে কর্মসংস্থান ও ব্যবসার অভাবনীয় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছরে মহিষের দইয়ের বাজার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। একটি স্বতন্ত্র ব্যবসা হিসেবে এই দই এখন স্থানীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহিষের দুধের দই সাধারণত মাটির পাত্রে (টালিতে) বসানো হয়। সেখান থেকে শুধু পেপার দিয়ে মুড়িয়ে প্যাকেট করে দেওয়া হয়। ছোট ও বড় দুই ধরনের হাঁড়িতে দই বিক্রি হয়। হাঁড়ির আকারের ওপর ভিত্তি করে দইয়ের দাম নির্ধারণ করা হয়। হাঁড়িসহ ১ হাজার ২০০ গ্রাম দই ২৫০ টাকা, ২ হাজার ২০০ গ্রাম দই ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে দুধের দামের ওঠানামার কারণে দইয়ের দামও ওঠানামা করে বলে জানিয়েছেন দোকানীরা।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘চকরিয়া উপজেলা একটি অমিত সম্ভাবনা জনপদ। এই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মহিষের দুধের টক দই। উপকূলীয় অঞ্চলে মহিষ পালন, খামার গড়ে তোলা, দই উৎপাদন এবং বিক্রি ঘিরে একটি শিল্পজোন গড়ে উঠেছে। এখানে কাজ করে হাজার হাজার মানুষের জীবিকার উৎস তৈরি হয়েছে।

ছবি

বেগমগঞ্জে অনলাইনে বাইক বিক্রির নামে প্রতারণা গ্রেপ্তার ৬

ছবি

আলুর দর পতনে কৃষক দিশেহারা

ছাত্রীকে ধর্ষণ, ৪ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

মসজিদ নির্মাণের নামে লাখ টাকা হাতিয়ে গ্রাম পুলিশ লাপাত্তা

মেয়াদোত্তীর্ণ কীটনাশক ও ভেজাল সার রাখায় দোকানিকে জরিমানা

সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল হলেন বেতাগীর আরিফুর

রায়গঞ্জে জোড়া লাশ উদ্ধার

পদ্মা থেকে ড্রেজারে বালু তোলায় দণ্ডিত ৪

মুন্সীগঞ্জে সড়ক অবরোধ করে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি

ধর্মপাশার সাংবাদিক সেলিমের পিতার মৃত্যু

পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণ রোধে কর্মশালা

তিন জেলায় অগ্নিকাণ্ডের মার্কেট-বসতঘর ছাই

লিবিয়ায় দালাল চক্রের নির্যাতনে শিবচরের যুবকের মৃত্যু

পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে শ্রমিকের মৃত্যু

দুই জেলায় সড়কে ঝরল ৫ প্রাণ

নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

চাঁদা না দেয়ায় মাদ্রাসা ও মসজিদে হামলা, আহত ১৫

দুই জেলায় শিশুসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার

লবণ কারখানায় অভিযান, জরিমানা

কুমিল্লায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

কক্সবাজার জেলা পরিষদের ২৩ ইজারা নিয়ে হতাশ ভুক্তভোগীরা

ছবি

ঠাকুরগাঁওয়ে মসজিদের টাকায় পিটিআইয়ের হোস্টেল মেরামত

চট্টগ্রামে তৈরি হয় বগুড়ার দই! কারখানার জরিমানা

আসমান বিগ বাজার ও শিলামণি গার্মেন্টসে জরিমানা

বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাবেক ছাত্রদল নেতা নিহত

সন্ত্রাসীদের গুলিতে লবণ চাষীর মৃত্যু

ছবি

জগন্নাথপুরে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পরিবহন, হাওরের কাঁচা সড়কের সর্বনাশ

ফুটপাতের দোকানে নিম্ন আয়ের মানুষের উপচে পড়া ভিড়

ছবি

ঈদ সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লী এখন কর্মব্যস্ত

মহাদেবপুরে সাংবাদিক ও রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি

ছবি

সাতক্ষীরায় উপকূল রক্ষা বাঁধে ধস, এলাকাজুড়ে আতঙ্ক

সিরাজগঞ্জে ২ জনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

শেরপুরে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ২, আহত ১৬

ব্যক্তিগত নজরদারি থেকে রাষ্ট্রকে সরে আসতে হবে : ইফতেখারুজ্জামান

ছবি

মৃর্ত্তিঙ্গা চা বাগানে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাহা উৎসব

ছবি

মৎস্য ঘেরে হামলা, মোরেলগঞ্জে কবির বয়াতিকে গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন

tab

সারাদেশ

বছরজুড়ে চাহিদা চকরিয়ার ইলিশিয়ার সুস্বাদু মহিষের দই

প্রতিনিধি, চকরিয়া (কক্সবাজার)

চকরিয়া (কক্সবাজার) : কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ইলিশিয়ার সুস্বাদু মহিষের দই -সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

বছরে বার মাসই খাবার বিলাসি মানুষের কাছে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ইলিশিয়ার সুস্বাদু মহিষের দইয়ের। বিয়ে-শাদি কিংবা সামাজিক বড়পরিসরে যে কোন উৎসব অনুষ্ঠানে ভোজন রসিক মানুষের খাবার মেন্যুতে বরাবরে থাকছে ইলিশিয়ার মহিষের দই।

কক্সবাজার জেলায় বিশাল এলাকায় মহিষের চারণ ভুমি রয়েছে চকরিয়া উপজেলার চিংড়িজোন এরিয়া তথা পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের ইলিশিয়া দরবেশকাটা গ্রামে। একসময় পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নে জমিদার শ্রেণীর বিশাল জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল ইলিশিয়ায়। এখনো জমিদার পরিবার গুলোর পুরানো বাড়িঘর, মসজিদ মক্তব, খাচারীঘর, গোয়াল ভরা মহিষ ও গরু ছাগল, মাছের ঘের- পুকুর, বিশাল আয়তনের আবাদি জমি এলাকায় কালেরস্বাক্ষী হিসেবে ঠাঁই দাড়িয়ে রয়েছে। বেশিরভাগ পরিবার দীর্ঘ কয়েক যুগের বেশি সময় ধরে ঢাকা চট্টগ্রামের শহুরে জীবনে চলে গেলেও

সহায় সম্পদ সমূহ সময়ে সময়ে নিজেরা গ্রামে এসে কিংবা কাজের লোক দিয়ে দেখাশুনা করেন।

দীর্ঘ কয়েক যুগ আগে থেকে বেশিরভাগ জমিদার পরিবার বাড়ির পাশে নিজেদের মৎস্য ঘের পরিচালনার পাশাপাশি সেখানে লালন পালন করতেন বিপুল পরিমাণ মহিষ ও বেড়া ছাগল। এসব মহিষের পাল চিংড়িজোনের মৎস্য ঘের গুলোতে একপ্রকার ডেরা গড়তেন। এভাবে জমিদার পরিবারের পাশাপাশি ওই এলাকার অনেক স্বচ্ছল পরিবারে মহিষ লালন পালন বেড়ে যায় ইলিশিয়া ও আশপাশ এলাকায়। ফলে প্রতিদিন ওই এলাকায় প্রচুর পরিমান মহিষের দুধ উৎপাদন হতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট মালিকরা অল্প অল্প করে মহিষের দই বাজারজাত শুরু করেন। এরপর কয়েকবছরের মধ্যে ইলিশিয়া ও আশপাশ এলাকায় মহিষের দইয়ের বিকিকিনি জমজমাট হয়ে উঠে। এভাবেই ইলিশিয়ার সুস্বাদু মহিষের দইয়ের খ্যাতি

চকরিয়া কক্সবাজারের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রভৃতি অঞ্চলে। নিজের এলাকার সুস্বাদু মহিষের দইয়ের সুখ্যাতি নিয়ে কথাগুলো বলেছেন চকরিয়া পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা। তিনি বলেন, উপজেলার বেশিরভাগ ভোজন রসিক মানুষের খাবার হলো ইলিশিয়ার ঐতিহ্যবাহী মহিষের দুধের তৈরি টক দই। সুস্বাদু ও জনপ্রিয়তায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই দই বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। যুগ যুগ ধরে সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সবার পছন্দের তালিকায় মহিষের দই-ই অন্যতম সুস্বাদু খাবার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। চকরিয়া উপজেলা পেরিয়ে কক্সবাজার চট্টগ্রামে সীমাবদ্ধ নয়, দেশব্যাপী ইলিশিয়ার ঐতিহ্যবাহি মহিষের দইয়ের ব্যাপক পরিচিত ও চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, যেখানে মানুষ কোনো একটি কাজ আদায় করতে টাকা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারে না, সেখানে বিশেষ কাজটি ভাগিয়ে নিতে অনেকে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বা ব্যক্তিকে উপটোকন হিসেবে মহিষের দই উপহার দিয়ে কাজটি হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এধরনের অনেক নজিরও আছে ইলিশিয়ার মহিষের দই নিয়ে।

এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, জমিদার পরিবারগুলোতে এখন আগের মতো মহিষ পালন নেই। তবে বর্তমানে উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, সাহারবিল, ঢেমুশিয়া ও চিরিংগা ইউনিয়নে চিংড়ি ঘের মালিক ও উদোক্তা শ্রেণির লোকজন মহিষ পালন করছেন। এখানে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ ছোট-বড় মহিষের খামার গড়ে তোলা হয়েছে। এসব মহিষের দুধে এই দই তৈরি হয়।

জানা গেছে, ইলিশিয়ার দই তৈরিতে ব্যবহার করা দুধ অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। তাই দইটি স্থানীয়ভাবে বেশ জনপ্রিয়। স্থানীয় বাজারের দোকানগুলোতে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি দই বিক্রি হয়। প্রতিবছর রমজান মাসে দই বিক্রি বেড়ে যায় কয়েকগুণ বেশি। চাহিদা বাড়ার কারণে দামও তুলনামূলক একটু বেড়ে যায়। এতে খামারি এবং দোকানী উভয়ে বেশ ভালো লাভবান হচ্ছেন।

উৎপাদনে জড়িতরা জানান, দই উৎপাদনের ক্ষেত্রে সাধারণত মাটির পাত্রে বা টালিতে রাখা হয়। এতে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান এবং বৈশিষ্ট্যগত টক স্বাদের কারণে এ দই দ্রুত খাবারের উপযোগী ও সুস্বাদু হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়ে বাজারে সাড়া ফেলেছে।

১০/১২ বছর আগে ইলিশিয়া বাজারে মহিষের দই বিক্রি করা হতো। এখন চকরিয়া বদরখালী সড়কের লালব্রীজ এলাকায় মহিষের দই বিক্রি ঘিরে নতুন জংশন গড়ে উঠেছে। এখানে ২০-২২টি দোকানে প্রতিদিন জমজমাট মহিষের দই বিক্রি করা হচ্ছে। দইয়ের বাজার ঘিরে ওই এলাকায় বিভিন্ন রকমের পন্য বিক্রির দোকানপাট গড়ে উঠেছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা ও চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্ট বলেন, ইলিশিয়ার মহিষের দইয়ের খ্যাতি এখন শুধু চকরিয়া কিংবা কক্সবাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি বিদেশেও এর চাহিদা বাড়ছে। দই বিক্রি ঘিরে ইলিশিয়া বাজার ও লালব্রীজ এলাকায় ১৫ থেকে ২০টি দোকান গড়ে উঠেছে। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণের কারণে এখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই দই কিনতে আসে। চকরিয়া উপকূলের এই অঞ্চলের মহিষের দুধের দই উৎপাদনের পাশাপাশি দুধ দিয়ে বিভিন্ন মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে তৈরি করা হচ্ছে মিষ্টি, মাখন, ঘি, রসমালাই, ছানা ও সন্দেসসহ নানা রকম মুখরোচক খাবার। এসব পণ্য স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করছে। ফলে এ অঞ্চলের মহিষের মালিক খামারি থেকে শুরু বিক্রেতা দোকানি ও খাবারের প্রস্তুতকারদের মধ্যে কর্মসংস্থান ও ব্যবসার অভাবনীয় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছরে মহিষের দইয়ের বাজার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। একটি স্বতন্ত্র ব্যবসা হিসেবে এই দই এখন স্থানীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহিষের দুধের দই সাধারণত মাটির পাত্রে (টালিতে) বসানো হয়। সেখান থেকে শুধু পেপার দিয়ে মুড়িয়ে প্যাকেট করে দেওয়া হয়। ছোট ও বড় দুই ধরনের হাঁড়িতে দই বিক্রি হয়। হাঁড়ির আকারের ওপর ভিত্তি করে দইয়ের দাম নির্ধারণ করা হয়। হাঁড়িসহ ১ হাজার ২০০ গ্রাম দই ২৫০ টাকা, ২ হাজার ২০০ গ্রাম দই ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে দুধের দামের ওঠানামার কারণে দইয়ের দামও ওঠানামা করে বলে জানিয়েছেন দোকানীরা।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘চকরিয়া উপজেলা একটি অমিত সম্ভাবনা জনপদ। এই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মহিষের দুধের টক দই। উপকূলীয় অঞ্চলে মহিষ পালন, খামার গড়ে তোলা, দই উৎপাদন এবং বিক্রি ঘিরে একটি শিল্পজোন গড়ে উঠেছে। এখানে কাজ করে হাজার হাজার মানুষের জীবিকার উৎস তৈরি হয়েছে।

back to top