তীব্র গরম পড়ার আগেই সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রীষ্মের দাবদাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সংকট আরও বাড়বে বলে অনেকে মনে করছেন। দেশের উপকূলের অবস্থা আরও শোচনীয়। উপকূলের মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির উৎস।
নলকূপে নোনা পানি ওঠে। বৃষ্টির মৌসুমে অনেকে ধরে রাখেন পাত্রে। সেই পানি শেষ হয়ে গেলে শুরু হয় সুপেয় পানির সংকট। গরিব মানুষ তখন পুকুর ও ডোবার পানিতে ফিটকিরি অথবা ওষুধ দিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করেন। অন্যান্য কাজ করতে হয় নোনা পানি দিয়ে। লবণাক্ততার এই আগ্রাসন শুধু ভূ-উপরিস্থ পানির নয়, ভূগর্ভস্থ উৎসেও ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে রায়গঞ্জ উপজেলার অবস্থাও একই। ফলে নানা রোগব্যাধি এ অঞ্চলের জনস্বাস্থ্যকে হুমকিতে ফেলছে।
সাধারণত শীতের মৌসুম থেকে বর্ষা মৌসুম আসার আগ পর্যন্ত একটা লম্বা সময় এ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নলকূপে পানি ওঠে না। নানা কাজের জন্য পানি আনতে হয় দূর থেকে। আর এ অভাব মেটাতে স্থানীয়ভাবে অনেকেই ভূগর্ভস্থ পানি পরিশোধন করে সরবরাহ করে থাকেন। বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি ফিল্টার থেকে খাওয়া-দাওয়ার জন্য সুপেয় পানি নিতে প্রতি মাসে হাজার টাকার মতো ব্যয় করতে হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতু পরিবর্তিত হচ্ছে, আর এর ফলে প্রভাব পড়ছে নিরাপদ ও সুপেয় পানির উপর। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হচ্ছে সুপেয় পানির সংকট। গ্রীষ্মকালে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে। কিছু দিন আগেও ৬০/৬৫ ফুট গভীরে পানি পাওয়া গেলেও এখন ১০০ ফুট গভীরেও পানি পাওয়া কঠিন হচ্ছে। চলতি বোরো মৌসুমে সেচ পাম্পের আওতায় রায়গঞ্জে কয়েক হাজার একর জমিতে বোরো ধান চাষ হচ্ছে। নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় সেচের জন্য কৃষকরা ক্রমেই গভীর ও অগভীর নলকূপনির্ভর হয়ে পড়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীপ্রবাহ আটকে দেওয়া, পুকুর ভরাট এবং খাল- বিল বেদখলের কারণে প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ নিরাপদ পানির তীব্র সংকটের মধ্যে দিয়ে দিনাতিপাত করছেন।
বর্তমানে বিশ্বে আনুমানিক ২৬০টি আন্তর্জাতিক নদী রয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৪০ ভাগ লোক এই আন্তর্জাতিক নদীগুলোর অববাহিকায় বসবাস করে। পানির একটি বৈশিষ্ট্য হলো, পানি নিচের দিকে গড়ায় এবং দেশের রাষ্ট্রীয় বা প্রশাসনিক সীমানা মানে না, এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে যায়।
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে পানি বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী ও দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ববিবাদ এবং যুদ্ধবিগ্রহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানির সংকট একটি বৈশ্বিক সংকট। যতই দিন যাচ্ছে এ সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।
একটি গবেষণা বলছে, জলবাছু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে নিরাপদ ও সুপেয় পানির এই সংকট মোকাবেলায় সরকার, সহযোগী উন্নয়ন সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়েও দরকার সচেতনতা। পানির অপচয় রোধ ও পরিমিত মাত্রায় ব্যবহারে জনগণকে সচেতন করে তোলা, পানির পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করা, ভূগর্ভস্থ পানি রক্ষা করতে বৃষ্টির পানি ব্যবহার করা ইত্যাদি এ সংকট মোকাবিলার মক্ষম উপায়।
রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫
তীব্র গরম পড়ার আগেই সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রীষ্মের দাবদাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সংকট আরও বাড়বে বলে অনেকে মনে করছেন। দেশের উপকূলের অবস্থা আরও শোচনীয়। উপকূলের মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির উৎস।
নলকূপে নোনা পানি ওঠে। বৃষ্টির মৌসুমে অনেকে ধরে রাখেন পাত্রে। সেই পানি শেষ হয়ে গেলে শুরু হয় সুপেয় পানির সংকট। গরিব মানুষ তখন পুকুর ও ডোবার পানিতে ফিটকিরি অথবা ওষুধ দিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করেন। অন্যান্য কাজ করতে হয় নোনা পানি দিয়ে। লবণাক্ততার এই আগ্রাসন শুধু ভূ-উপরিস্থ পানির নয়, ভূগর্ভস্থ উৎসেও ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে রায়গঞ্জ উপজেলার অবস্থাও একই। ফলে নানা রোগব্যাধি এ অঞ্চলের জনস্বাস্থ্যকে হুমকিতে ফেলছে।
সাধারণত শীতের মৌসুম থেকে বর্ষা মৌসুম আসার আগ পর্যন্ত একটা লম্বা সময় এ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নলকূপে পানি ওঠে না। নানা কাজের জন্য পানি আনতে হয় দূর থেকে। আর এ অভাব মেটাতে স্থানীয়ভাবে অনেকেই ভূগর্ভস্থ পানি পরিশোধন করে সরবরাহ করে থাকেন। বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি ফিল্টার থেকে খাওয়া-দাওয়ার জন্য সুপেয় পানি নিতে প্রতি মাসে হাজার টাকার মতো ব্যয় করতে হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতু পরিবর্তিত হচ্ছে, আর এর ফলে প্রভাব পড়ছে নিরাপদ ও সুপেয় পানির উপর। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হচ্ছে সুপেয় পানির সংকট। গ্রীষ্মকালে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে। কিছু দিন আগেও ৬০/৬৫ ফুট গভীরে পানি পাওয়া গেলেও এখন ১০০ ফুট গভীরেও পানি পাওয়া কঠিন হচ্ছে। চলতি বোরো মৌসুমে সেচ পাম্পের আওতায় রায়গঞ্জে কয়েক হাজার একর জমিতে বোরো ধান চাষ হচ্ছে। নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় সেচের জন্য কৃষকরা ক্রমেই গভীর ও অগভীর নলকূপনির্ভর হয়ে পড়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীপ্রবাহ আটকে দেওয়া, পুকুর ভরাট এবং খাল- বিল বেদখলের কারণে প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ নিরাপদ পানির তীব্র সংকটের মধ্যে দিয়ে দিনাতিপাত করছেন।
বর্তমানে বিশ্বে আনুমানিক ২৬০টি আন্তর্জাতিক নদী রয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৪০ ভাগ লোক এই আন্তর্জাতিক নদীগুলোর অববাহিকায় বসবাস করে। পানির একটি বৈশিষ্ট্য হলো, পানি নিচের দিকে গড়ায় এবং দেশের রাষ্ট্রীয় বা প্রশাসনিক সীমানা মানে না, এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে যায়।
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে পানি বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী ও দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ববিবাদ এবং যুদ্ধবিগ্রহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানির সংকট একটি বৈশ্বিক সংকট। যতই দিন যাচ্ছে এ সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।
একটি গবেষণা বলছে, জলবাছু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে নিরাপদ ও সুপেয় পানির এই সংকট মোকাবেলায় সরকার, সহযোগী উন্নয়ন সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়েও দরকার সচেতনতা। পানির অপচয় রোধ ও পরিমিত মাত্রায় ব্যবহারে জনগণকে সচেতন করে তোলা, পানির পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করা, ভূগর্ভস্থ পানি রক্ষা করতে বৃষ্টির পানি ব্যবহার করা ইত্যাদি এ সংকট মোকাবিলার মক্ষম উপায়।