alt

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুপেয় পানির সংকট সাতক্ষীরায় বাড়ছে মানহীন বোতলজাত পানি উৎপাদনকারী কারখানা

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

সাতক্ষীরা : সুপেয় পানির সংকট। পানির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন নারীরা -সংবাদ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে গেছে। কয়েক বছরে মাটিতে বেড়েছে লবণাক্ততা। সাতক্ষীরা জেলার বেশির ভাগ নলকূপের পানি আর্সেনিক, আয়রন ও লবণযুক্ত, যা পানের উপযোগী নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। উপকূলীয় এ অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকটের এ সুযোগে গড়ে উঠেছে ৫০০-এর বেশি অনুমোদনবিহীন বোতলজাত পানি উৎপাদন কারখানা। এসব কারখানায় দিনে ৮০-৯০ লাখ লিটার মানহীন পানি উৎপাদন হচ্ছে, যার পুরোটাই ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরার তিনটি পৌরসভাসহ সাতটি উপজেলায়ই কমপক্ষে ২২ লাখ মানুষ সুপেয় পানির সংকটে রয়েছে। উচ্চ বা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন বোতলজাত পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এতে তাদের ব্যয়ও বাড়ছে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএসটিআই খুলনা আঞ্চলিক অফিসের পরিদর্শক আব্দুল মান্নান বলেন, জেলায় প্রায় ৫০০-৬০০ বোতলজাত পানি উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে সাত বা আটটি কারখানায় লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। অনুমোদনহীন পানি উৎপাদনকারী কারখানাগুলোয় মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়। তাছাড়া ২০টির মতো কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও রয়েছে।

সবচেয়ে বেশি পানির সংকট রয়েছে উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জ ও দেবহাটা। জীবনধারণের প্রয়োজনে অনিরাপদ পানি পানে বাধ্য হচ্ছে এসব অঞ্চলের মানুষ।

শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ধুমঘাট গ্রামের অঞ্জলি রানী ও মিনতি রানী জানান, তাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে সুপেয় পানির সংকট তীব্র। অস্বচ্ছল এসব মানুষের পক্ষে নিরাপদ পানি কিনে পান করার সামর্থ্য নেই। তাই জীবনধারণের প্রয়োজনে অধিকাংশ নারী দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পানি সংগ্রহ করেন। এতে তাদের সাংসারিক কাজ ব্যাহত হয়। শুধু ধুমঘাট নয়, পার্শ্ববর্তী জেলেখালী, মুন্সিগঞ্জ, যতিন্দ্রনগর, ভৈরবনগর, আড়পাংশি ও হরিনগরসহ অনেক গ্রামে সুপেয় পানির সংকট রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত আর্সেনিক, আয়রন ও লবণযুক্ত পানি পান করলে মানুষের লিভার ও কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মানস কুমার মণ্ডল বলেন, আর্সেনিক, আয়রন ও লবণযুক্ত পানি নিয়মিত পান করা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর মধ্যে আর্সেনিকযুক্ত পানি একাধারে পান করলে লিভার ও কিডনি আক্রান্তের পাশাপাশি মরণব্যাধি ক্যান্সারও হতে পারে। এছাড়া আয়রনযুক্ত ও লবণাক্ত পানি পান করলে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের পাশাপাশি পেটের পীড়া দেখা দিতে পারে। সুস্থতার প্রয়োজনে পানি বিশুদ্ধ করা বা ফুটিয়ে পান করার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পানি কমিটির তথ্য বলছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলায় কমপক্ষে ২২ লাখ মানুষ সুপেয় পানির সংকটে রয়েছে। এখানে শতভাগ নলকূপের পানি আয়রন, আর্সেনিক ও লবণযুক্ত। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও তালা উপজেলার নলকূপের পানিতে রয়েছে আর্সেনিক ও আয়রন।

এছাড়া শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার নলকূপে রয়েছে লবণ, যা পানের উপযোগী নয়।

সংগঠনটির সভাপতি এবিএম শফিুকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় পানি কমিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সরকারের কাছে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সরকারিভাবে পর্যাপ্ত পানি শোধনাগার স্থাপন করা, পুকুর খননের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং গভীর নলকূপ স্থাপন করা। এছাড়া ভূগর্ভের পানি অপচয় রোধ করার সুপারিশও করা হয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। একজন কৃষকের বোরো চাষের জন্য যে পরিমাণ পানির চাহিদা থাকে, তার তিন গুণ পানি উত্তোলন করা হয় ভূগর্ভ থেকে। ফলে পানির স্তর দিন দিন নিচে চলে যাচ্ছে।

পাশাপাশি পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভূগর্ভ থেকে প্রতিদিন যেভাবে পানি উত্তোলন করছে, তাতে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে বলে মনে করেন পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলার সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল।

তিনি বলেন, নিয়ম হলো বোতলজাত পানি উৎপাদন করতে হলে আগে গভীর পুকুর খনন করতে হবে। তাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে বোতলজাত পানি উৎপাদন করতে হবে। তবে সাতক্ষীরায় অবৈধ উপায়ে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করে বোতলজাত করা হচ্ছে। এসব পানি উৎপাদন কারখানার নেই বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা দক্ষ কেমিস্টও নেই। এর পরও বাজারজাত করা হচ্ছে এসব পানি। তৃষ্ণার্ত মানুষও নিরুপায় হয়ে এসব মানহীন পানি কিনছে।

এ প্রসঙ্গে বোতলজাত পানি উৎপাদনকারী কারখানা মালিক সমিতির সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি ও তাহা ড্রিংকিং ওয়াটার কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো. তামিম উদ্দিন বলেন, জেলায় প্রায় ৬০০টি বোতলজাত পানি উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় গড়ে প্রতিদিন ২০ লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ৬০০ বোতল পানি উৎপাদন করা হয়। এর বাইরেও এলাকার মানুষ বাড়ির কলস বা ড্রামে করেও পানি কিনে নিয়ে যায়।

প্রতিটি বোতলের দাম রাখা হয় ১৫ টাকা। জেলায় দিনে ৩ লাখ ৬০ বোতল পানি উৎপাদন হচ্ছে, যার গড় মূল্য ৫৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকার পানি বিক্রি হয়। তাহা ড্রিংকিং ওয়াটারসহ সাতটি বোতলজাত পানি উৎপাদনকারী কারখানার বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স রয়েছে। বাকিগুলো অনুমোদনহীন।

ফটো ক্যাপশন-সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন নারীরা

ছবি

মোরেলগঞ্জে থোকায় থোকায় ঝুলছে মাল্টা, সফল উদ্যোক্তা বাশার

ছবি

আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪২৮ জন

ছবি

বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে সিলেট, শঙ্কা প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির

ছবি

নারায়ণগঞ্জে ফ্ল্যাট বাসা থেকে একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার

মাধবপুরে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত ৬, আতঙ্কে এলাকাবাসী

নাইক্ষ্যংছড়িতে রাবার বাগানের গাছ থেকে শ্রমিকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

বাড়ছে নদীর পানি, সিলেটে বন্যার আভাস

সোনারগাঁয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকের শরীর টিপে না দেয়ায় ছাত্রকে আটক রেখে নির্যাতন

ফ্যানে ঝুলছিলেন যুবক, খাটে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ, আর্থিক দুরাবস্থায় ছিল পরিবারটি

ছবি

বিরামপুরে কুকুরে কামড়ানো সগাভীর মাংস বিক্রির চেষ্টা

ছবি

রায়পুরায় ভিডব্লিউবি উপকার ভোগীদের মাঝে চাল বিতরণ

ছবি

গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নতুন ঘর পেলেন মোজাম্মেল-জহুরা দম্পতি

ছবি

আদমদীঘিতে তিন মাদক ব্যবসায়ি আটক

ছবি

রাঙাছড়া সেতু যেন মরণ ফাঁদ

ছবি

বাঁশবোঝাই ট্রাকে বাসের ধাক্কা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ৩

ছবি

উদ্বোধনের দিনই বিকল বেরোবি ভাড়া বাস

ছবি

কেন্দুয়া থেকে তিন নারীকে চীনে পাচারের চেষ্টা, আটক ২

ছবি

সারিয়াকান্দিতে বিনা মূল্যে গরু বিতরণ

ছবি

পূর্বধলায় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির সমন্বয় সভা

ছবি

কেশবপুর-কলাগাছি সড়ক বেহাল, ঘটছে দুর্ঘটনা

ছবি

মধুপুরে লাল মাটিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের পেঁপে চাষে লাভবান কৃষক

ছবি

গোবিপ্রবি ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদককে দুই সেমিস্টার বহিষ্কার

ছবি

বর্ষা মৌসুমেও দেশীয় মাছের আকাল

ছবি

পদ্মার ভাঙনে চর ছাড়ছেন বাসিন্দারা মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার শঙ্কা

ছবি

নদী খননের মাটি মজুদ রাখা নিয়ে উত্তেজনা

ছবি

রংপুরে প্রাণি সম্পদ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে প্রেজেনটেশনে শেখ মুজিব ও হাসিনার ছবি

ছবি

আড়াইহাজারে ছাত্রলীগ নেতা রবিন গ্রেপ্তার

ছবি

রায়পুরায় ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা

ছবি

সামাজিক বনায়নের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ছবি

গৌরনদীর হাট-বাজার সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি

ছবি

বাগেরহাটে অটো চালকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

নুরাল পাগলের মরদেহের ওপর তেল ছিটানো ব্যক্তি গ্রেপ্তার

ছবি

ভোলাহাটে ক্যানসার সচেতনতা সভা

ছবি

মাধবপুরে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত ৬, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ছবি

সিরাজগঞ্জে বাবাকে হত্যার অভিযোগে ছেলের মৃত্যুদন্ড

ছবি

তারাগঞ্জে নিজের শিশুকে গলা কেটে হত্যা করল মা!

tab

news » bangladesh

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুপেয় পানির সংকট সাতক্ষীরায় বাড়ছে মানহীন বোতলজাত পানি উৎপাদনকারী কারখানা

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা : সুপেয় পানির সংকট। পানির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন নারীরা -সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে গেছে। কয়েক বছরে মাটিতে বেড়েছে লবণাক্ততা। সাতক্ষীরা জেলার বেশির ভাগ নলকূপের পানি আর্সেনিক, আয়রন ও লবণযুক্ত, যা পানের উপযোগী নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। উপকূলীয় এ অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকটের এ সুযোগে গড়ে উঠেছে ৫০০-এর বেশি অনুমোদনবিহীন বোতলজাত পানি উৎপাদন কারখানা। এসব কারখানায় দিনে ৮০-৯০ লাখ লিটার মানহীন পানি উৎপাদন হচ্ছে, যার পুরোটাই ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরার তিনটি পৌরসভাসহ সাতটি উপজেলায়ই কমপক্ষে ২২ লাখ মানুষ সুপেয় পানির সংকটে রয়েছে। উচ্চ বা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন বোতলজাত পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এতে তাদের ব্যয়ও বাড়ছে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএসটিআই খুলনা আঞ্চলিক অফিসের পরিদর্শক আব্দুল মান্নান বলেন, জেলায় প্রায় ৫০০-৬০০ বোতলজাত পানি উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে সাত বা আটটি কারখানায় লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। অনুমোদনহীন পানি উৎপাদনকারী কারখানাগুলোয় মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়। তাছাড়া ২০টির মতো কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও রয়েছে।

সবচেয়ে বেশি পানির সংকট রয়েছে উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জ ও দেবহাটা। জীবনধারণের প্রয়োজনে অনিরাপদ পানি পানে বাধ্য হচ্ছে এসব অঞ্চলের মানুষ।

শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ধুমঘাট গ্রামের অঞ্জলি রানী ও মিনতি রানী জানান, তাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে সুপেয় পানির সংকট তীব্র। অস্বচ্ছল এসব মানুষের পক্ষে নিরাপদ পানি কিনে পান করার সামর্থ্য নেই। তাই জীবনধারণের প্রয়োজনে অধিকাংশ নারী দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পানি সংগ্রহ করেন। এতে তাদের সাংসারিক কাজ ব্যাহত হয়। শুধু ধুমঘাট নয়, পার্শ্ববর্তী জেলেখালী, মুন্সিগঞ্জ, যতিন্দ্রনগর, ভৈরবনগর, আড়পাংশি ও হরিনগরসহ অনেক গ্রামে সুপেয় পানির সংকট রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত আর্সেনিক, আয়রন ও লবণযুক্ত পানি পান করলে মানুষের লিভার ও কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মানস কুমার মণ্ডল বলেন, আর্সেনিক, আয়রন ও লবণযুক্ত পানি নিয়মিত পান করা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর মধ্যে আর্সেনিকযুক্ত পানি একাধারে পান করলে লিভার ও কিডনি আক্রান্তের পাশাপাশি মরণব্যাধি ক্যান্সারও হতে পারে। এছাড়া আয়রনযুক্ত ও লবণাক্ত পানি পান করলে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের পাশাপাশি পেটের পীড়া দেখা দিতে পারে। সুস্থতার প্রয়োজনে পানি বিশুদ্ধ করা বা ফুটিয়ে পান করার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পানি কমিটির তথ্য বলছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলায় কমপক্ষে ২২ লাখ মানুষ সুপেয় পানির সংকটে রয়েছে। এখানে শতভাগ নলকূপের পানি আয়রন, আর্সেনিক ও লবণযুক্ত। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও তালা উপজেলার নলকূপের পানিতে রয়েছে আর্সেনিক ও আয়রন।

এছাড়া শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার নলকূপে রয়েছে লবণ, যা পানের উপযোগী নয়।

সংগঠনটির সভাপতি এবিএম শফিুকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় পানি কমিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সরকারের কাছে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সরকারিভাবে পর্যাপ্ত পানি শোধনাগার স্থাপন করা, পুকুর খননের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং গভীর নলকূপ স্থাপন করা। এছাড়া ভূগর্ভের পানি অপচয় রোধ করার সুপারিশও করা হয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। একজন কৃষকের বোরো চাষের জন্য যে পরিমাণ পানির চাহিদা থাকে, তার তিন গুণ পানি উত্তোলন করা হয় ভূগর্ভ থেকে। ফলে পানির স্তর দিন দিন নিচে চলে যাচ্ছে।

পাশাপাশি পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভূগর্ভ থেকে প্রতিদিন যেভাবে পানি উত্তোলন করছে, তাতে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে বলে মনে করেন পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলার সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল।

তিনি বলেন, নিয়ম হলো বোতলজাত পানি উৎপাদন করতে হলে আগে গভীর পুকুর খনন করতে হবে। তাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে বোতলজাত পানি উৎপাদন করতে হবে। তবে সাতক্ষীরায় অবৈধ উপায়ে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করে বোতলজাত করা হচ্ছে। এসব পানি উৎপাদন কারখানার নেই বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা দক্ষ কেমিস্টও নেই। এর পরও বাজারজাত করা হচ্ছে এসব পানি। তৃষ্ণার্ত মানুষও নিরুপায় হয়ে এসব মানহীন পানি কিনছে।

এ প্রসঙ্গে বোতলজাত পানি উৎপাদনকারী কারখানা মালিক সমিতির সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি ও তাহা ড্রিংকিং ওয়াটার কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো. তামিম উদ্দিন বলেন, জেলায় প্রায় ৬০০টি বোতলজাত পানি উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় গড়ে প্রতিদিন ২০ লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ৬০০ বোতল পানি উৎপাদন করা হয়। এর বাইরেও এলাকার মানুষ বাড়ির কলস বা ড্রামে করেও পানি কিনে নিয়ে যায়।

প্রতিটি বোতলের দাম রাখা হয় ১৫ টাকা। জেলায় দিনে ৩ লাখ ৬০ বোতল পানি উৎপাদন হচ্ছে, যার গড় মূল্য ৫৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকার পানি বিক্রি হয়। তাহা ড্রিংকিং ওয়াটারসহ সাতটি বোতলজাত পানি উৎপাদনকারী কারখানার বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স রয়েছে। বাকিগুলো অনুমোদনহীন।

ফটো ক্যাপশন-সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন নারীরা

back to top