সুনামগঞ্জ : পর্যটন কেন্দ্র বারেকের টিলা -সংবাদ
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার পর্যটন স্পট বারেকের টিলা এখন চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন দিনে ও রাতে সুযোগ বুঝে চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত কিছু লোক বিভিন্ন পণ্য সীমান্তে এপার-ওপার করছে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অভিযানে প্রতিদিনই বিভিন্ন সীমান্তে চোরাচালানের পণ্য আটক হলেও থেমে নেই চোরাকারবারীদের অপতৎপরতা। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আনা নেয়া করায় সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতীয় চিনি ও ফুচকা, নাছির বিড়ি, পান, সুপারী, কসমেটিকস, গরু ও মাদকদ্রব্যসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য সরকারের শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিরাপদে আসছে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার চাঁনপুর সীমান্তের বারিক্কারটিলা (বারেকটিলা) ও রাজাই সীমান্ত দিয়ে।
চাঁনপুর সীমান্তের বারিক্কারটিলা ও রাজাই সীমান্ত সম্প্রতি চোরাকারবারীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
একটি সংঘবদ্ধ চোরাচালান চক্র একাধিক মামলার আসামী সিন্ডিকেট করে কিছু অসাধু বিজিবির সদস্য, পুলিশ ও সংবাদ কর্মীদের ম্যানেজ করেই তাদের অপকর্ম করে যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। বিগত সরকারের সময়ে সীমান্তের চোরাচালান অনেকটাই ওপেন সিক্রেট হলেও পট পরিবর্তন এবং বর্তমান বিজিবির অধিনায়কের শক্ত ভূমিকার কারণে এখন সীমান্তের চোরাচালান তুলনামূলক কম। সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবিসহ বিভিন্ন আইনকৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিদিনই ভারত থেকে চোরাই পথে নিয়ে আসা বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য আটক করলেও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত মূল গডফাদাররা বরাবরই থেকে যায় অধরা।
যারা ধরা পড়ে তারা বাহক মাত্র। এরা পেটের দায়ে শ্রমিক হিসেবে চোরাচালানের মালামাল বহন করেই জীবিকা নির্বাহ করে। অনেক সময় পরিত্যক্ত হিসেবে চোরাই পণ্য আটক করা হয়। কারণ বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে মালামাল রেখেই পালিয়ে যায়।
গত ২৩ এপ্রিল বুধবার টাস্কফোর্স অভিযান চালায় লাউড়েরগড় বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকা বাঁধাঘাট ইউনিয়নের বিন্নাকুলী এবং মদেরগাঁও গ্রামের একটি বাড়ি ও বিন্নাকুলি গ্রামের একটি পরিত্যাক্ত গুদাম ঘর থেকে ১৭৬৫০ কেজি ভারতীয় ফুসকা ও ৬০ কেজি জিরা উদ্ধার করে যার আনুমানিক মূল্য ৪৫ লাখ টাকা। একই দিনে ট্যাকেরঘাট সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবি সদস্যরা ১৬ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। গত এক সপ্তাহে লাউড়েরগড় ও চাঁনপুর সীমান্তে অভিযান চালিয়ে প্রায় এক কোটি টাকার ভারতীয় চোরাই পণ্য আটক করে।
গত (১৯ এপ্রিল) তাহিরপুরের লাউরগড় সীমান্তে বিজিবি টহল দলের হাত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা আটক ১২ বস্তা ভারতীয় ফুচকা ছিনিয়ে নেওয়ার পর বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলা ও করা হয়। এ সময় অভিযানে থাকা বিজিবি সদস্যদের অস্ত্র, চোরাচালানের ফুচকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে চোরাকারবারিরা। পরে এ ঘটনায় বিজিবি তাহিরপুরের লাউরগড় বিওপির হাবিলদার আব্দুল আলীম বাদী হয়ে ২০/২৫ জনকে আসামি করে একটি মামলাটি করেন।
গত শুক্রবার সরেজমিনে সীমান্ত এলাকা ঘুরে চানপুর সীমান্ত ফাঁড়ির আওতাধীন এলাকা বারেকেরটিলা গ্রামের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাহিরপুর উপজেলার চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলা, আনন্দনগর ও রাজাই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় লক্ষ লক্ষ টাকার চিনি, ফুচকা, নাসির উদ্দিন বিড়ি, গাঁজা, ইয়াবা ও মদ পাচার করে আসছে ১৫-১৬ জনের একটি চোরাকারবারী গ্রুপ। আবার বাংলাদেশ থেকে রসুন, মাছ প্লাস্টিক সামগ্রী ভারতে পাচার করছে।
ওই ব্যক্তি আরও জানায়, চাঁনপুর সীমান্তের বারেকেরটিলার মেইন পিলার ১২০৩ এর ৩ এস, ২ এস, ভারতের ৮ নং গেইট বাংলা পিলার নং ১১ এক্স, ভারতের ৭ নং গেইট, বাংলা ৮ এক্স ও মাঝেরটিলার ৬, ৫ ও ৪ এক্স গেইট এলাকা দিয়ে ভারতীয় চিনি ও ফুচকা, নাছির উদ্দীন বিড়ি কসমেটিকস, গরু ও মাদকদ্রব্যসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য ওপেন চোরাচালান হয়। সে আরও জানায়, পিলার ১২০৩ এর ৩ এস, ২ এস, ভারতের ৮ নং গেইট বাংলা পিলার নং ১১ এক্স, ভারতের ৭ নং গেইট, বাংলা ৮ এক্স ও মাঝেরটিলার ৬, ৫ ও ৪ এক্স গেইট এলাকায় চোরাচালানের জন্য নিরাপদ। কিছু অসাধু বিজিবির সদস্য ও সোর্স চোরাকারবারীদের সহযোগিতা করে। আবার অনেক সময় টহলরত বিজিবির সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব করে। টহল টীম একদিকে গেলে তারা অন্য দিকে কাজ করে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, টহলে আসা বিজিবি সদস্যদের ম্যানেজ করতে রারেকেরটিলার উপর আনন্দ নগর গ্রামের বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী নিতুল মারাক ও তার স্ত্রীর সঙ্গে কন্টাক্ট করে চোরাকারবারিরা। পরে তারা টহলকারী বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে চোরাই লাইন ক্লিয়ার করে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে রাত ১০টা থেক ভোররাত পর্যন্ত ওইসব পয়েন্ট দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে চিনি ও ফুচকা, নাছির উদ্দীন বিড়ি, কসমেটিকস, গরু ও মাদকদ্রব্যসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য। এসব অবৈধ পণ্য নিয়ে আসার পরটিলার উপর বিভিন্ন বাড়িতে প্রথমে মজুদ রাখা হয়। পরে ভোররাতে অটোরিকশা বুঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয় বাদাঘাট বাজারে। এর পর সুযোগ বুঝে চোরাকারবারিরা নৌকা ও ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে। ঐ ব্যক্তির অনুরোধ, ভাই নিউজে আমার নাম দিলে আমার সঙ্গের লোকজনই আমারে মাইরা লাইব। আর পুলিশ বিজিবি তো আছেই। তারা আমার নামে যে কোনও মামলা দিয়ে জেলে দিব। ভাই আমরা ব্যবসা করি সরকারের ট্যাক্স ফাকি দিয়ে। সূত্র জানায়, চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে, মাহারামটিলা গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে শফিকুল ইসলাম বুটকুন (৪০), তোতা মিয়া (৩৮), বড়গোফটিলা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে সাইকুল মিয়া (৩২), মিলন মিয়া (২৮), একই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে সোলায়মান (২৭), জসিম উদ্দিনের ছেলে ফরিদ মিয়া (৩৮), আব্দুল হেকিমের ছেলে সাদ্দাম মিয়া (৩৫), মারামটিলার হাবি রহমানের ছেলে কাজল মিয়া (৪০) ও পশ্চিমটিলার লিটন মিয়া (৩০) সহ ১৫-১৬ জনের একটি প্রভাবশালী চোরাকারবারি সিন্ডিকেট চক্র।
গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে দিন মজুর শ্রেডুর লোকজন দিয়ে অবৈধ কাজ কারবার চালাচ্ছে।
গত ১২ এপ্রিল তাহিরপুর উপজেলার গণমাধ্যম কর্মী কামাল হোসেন রাফী তার ফেসবুক এ বারেকেরটিলার উপর একদল চোরাকারবারীদের মালামাল বহনের ভিডিও আপলোড করেন। তিনি জানান, প্রায় সময় ঘুরতে গেলে এসব দৃশ্য চোখে পড়ে। গত ১৯ এপ্রিল তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা এবং সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের সহ দপ্তর সম্পাদক সামরুল ইসলাম তার ফেসবুক এ বারেকেরটিলার সীমান্তের কাটা তারের বেড়ার ঠিক পাশেই একদল লোক বস্তা কাধেঁ নিয়ে আসার একটি ভিডিও আপলোড করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনার জন্ম দেয়।
তিনি জানান বন্ধু বান্ধব নিয়ে ঘুরতে গিয়ে এসব দৃশ্য দেখে আমার নিজের মোবাইলে ভিডিও করে আপলোড দেই। এ ব্যাপারে বিজিবি চাঁনপুর বি ওপির ইনচার্জ নায়েক সুবেদার সামসুল হক বলেন, এর পর থেকেই আমাদের টহল জোরদার করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির জানান, ফেসবুক এ আপলোড করা সামরুল ইসলাম এর ভিডিও ফুটেজ ভারতের সীমান্তে না বাংলাদেশ সীমান্তে এবং ভিডিও ফুটেজটি কবেকার এ নিয়ে তদন্ত চলছে। আমরা ভারতের সীমান্ত রক্ষী বি এস এফ কে ও জানিয়েছি। টহল জোরদার করা হয়েছে। এত বড় সীমান্ত এ ছাড়াওটিলা নদী এবং অনেক জায়গাতেই কাটা তারের বেড়া না থাকায় টহলটিমের সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিজিবির সদস্য গণ একদিকে গেলে অন্য দিকে হয়তো সুযোগ নিয়ে থাকে। তিনি আরও জানান সীমান্তের চোরাচালান নির্মূল করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দশে বিজিবি জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে। আমরা প্রতিদিনই বিভিন্ন সীমান্তে অভিযান চালিয়ে মালামাল আটক করছি এবং তা অব্যাহত আছে।
সুনামগঞ্জ : পর্যটন কেন্দ্র বারেকের টিলা -সংবাদ
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার পর্যটন স্পট বারেকের টিলা এখন চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন দিনে ও রাতে সুযোগ বুঝে চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত কিছু লোক বিভিন্ন পণ্য সীমান্তে এপার-ওপার করছে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অভিযানে প্রতিদিনই বিভিন্ন সীমান্তে চোরাচালানের পণ্য আটক হলেও থেমে নেই চোরাকারবারীদের অপতৎপরতা। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আনা নেয়া করায় সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতীয় চিনি ও ফুচকা, নাছির বিড়ি, পান, সুপারী, কসমেটিকস, গরু ও মাদকদ্রব্যসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য সরকারের শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিরাপদে আসছে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার চাঁনপুর সীমান্তের বারিক্কারটিলা (বারেকটিলা) ও রাজাই সীমান্ত দিয়ে।
চাঁনপুর সীমান্তের বারিক্কারটিলা ও রাজাই সীমান্ত সম্প্রতি চোরাকারবারীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
একটি সংঘবদ্ধ চোরাচালান চক্র একাধিক মামলার আসামী সিন্ডিকেট করে কিছু অসাধু বিজিবির সদস্য, পুলিশ ও সংবাদ কর্মীদের ম্যানেজ করেই তাদের অপকর্ম করে যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। বিগত সরকারের সময়ে সীমান্তের চোরাচালান অনেকটাই ওপেন সিক্রেট হলেও পট পরিবর্তন এবং বর্তমান বিজিবির অধিনায়কের শক্ত ভূমিকার কারণে এখন সীমান্তের চোরাচালান তুলনামূলক কম। সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবিসহ বিভিন্ন আইনকৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিদিনই ভারত থেকে চোরাই পথে নিয়ে আসা বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য আটক করলেও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত মূল গডফাদাররা বরাবরই থেকে যায় অধরা।
যারা ধরা পড়ে তারা বাহক মাত্র। এরা পেটের দায়ে শ্রমিক হিসেবে চোরাচালানের মালামাল বহন করেই জীবিকা নির্বাহ করে। অনেক সময় পরিত্যক্ত হিসেবে চোরাই পণ্য আটক করা হয়। কারণ বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে মালামাল রেখেই পালিয়ে যায়।
গত ২৩ এপ্রিল বুধবার টাস্কফোর্স অভিযান চালায় লাউড়েরগড় বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকা বাঁধাঘাট ইউনিয়নের বিন্নাকুলী এবং মদেরগাঁও গ্রামের একটি বাড়ি ও বিন্নাকুলি গ্রামের একটি পরিত্যাক্ত গুদাম ঘর থেকে ১৭৬৫০ কেজি ভারতীয় ফুসকা ও ৬০ কেজি জিরা উদ্ধার করে যার আনুমানিক মূল্য ৪৫ লাখ টাকা। একই দিনে ট্যাকেরঘাট সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবি সদস্যরা ১৬ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। গত এক সপ্তাহে লাউড়েরগড় ও চাঁনপুর সীমান্তে অভিযান চালিয়ে প্রায় এক কোটি টাকার ভারতীয় চোরাই পণ্য আটক করে।
গত (১৯ এপ্রিল) তাহিরপুরের লাউরগড় সীমান্তে বিজিবি টহল দলের হাত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা আটক ১২ বস্তা ভারতীয় ফুচকা ছিনিয়ে নেওয়ার পর বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলা ও করা হয়। এ সময় অভিযানে থাকা বিজিবি সদস্যদের অস্ত্র, চোরাচালানের ফুচকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে চোরাকারবারিরা। পরে এ ঘটনায় বিজিবি তাহিরপুরের লাউরগড় বিওপির হাবিলদার আব্দুল আলীম বাদী হয়ে ২০/২৫ জনকে আসামি করে একটি মামলাটি করেন।
গত শুক্রবার সরেজমিনে সীমান্ত এলাকা ঘুরে চানপুর সীমান্ত ফাঁড়ির আওতাধীন এলাকা বারেকেরটিলা গ্রামের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাহিরপুর উপজেলার চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলা, আনন্দনগর ও রাজাই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় লক্ষ লক্ষ টাকার চিনি, ফুচকা, নাসির উদ্দিন বিড়ি, গাঁজা, ইয়াবা ও মদ পাচার করে আসছে ১৫-১৬ জনের একটি চোরাকারবারী গ্রুপ। আবার বাংলাদেশ থেকে রসুন, মাছ প্লাস্টিক সামগ্রী ভারতে পাচার করছে।
ওই ব্যক্তি আরও জানায়, চাঁনপুর সীমান্তের বারেকেরটিলার মেইন পিলার ১২০৩ এর ৩ এস, ২ এস, ভারতের ৮ নং গেইট বাংলা পিলার নং ১১ এক্স, ভারতের ৭ নং গেইট, বাংলা ৮ এক্স ও মাঝেরটিলার ৬, ৫ ও ৪ এক্স গেইট এলাকা দিয়ে ভারতীয় চিনি ও ফুচকা, নাছির উদ্দীন বিড়ি কসমেটিকস, গরু ও মাদকদ্রব্যসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য ওপেন চোরাচালান হয়। সে আরও জানায়, পিলার ১২০৩ এর ৩ এস, ২ এস, ভারতের ৮ নং গেইট বাংলা পিলার নং ১১ এক্স, ভারতের ৭ নং গেইট, বাংলা ৮ এক্স ও মাঝেরটিলার ৬, ৫ ও ৪ এক্স গেইট এলাকায় চোরাচালানের জন্য নিরাপদ। কিছু অসাধু বিজিবির সদস্য ও সোর্স চোরাকারবারীদের সহযোগিতা করে। আবার অনেক সময় টহলরত বিজিবির সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব করে। টহল টীম একদিকে গেলে তারা অন্য দিকে কাজ করে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, টহলে আসা বিজিবি সদস্যদের ম্যানেজ করতে রারেকেরটিলার উপর আনন্দ নগর গ্রামের বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী নিতুল মারাক ও তার স্ত্রীর সঙ্গে কন্টাক্ট করে চোরাকারবারিরা। পরে তারা টহলকারী বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে চোরাই লাইন ক্লিয়ার করে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে রাত ১০টা থেক ভোররাত পর্যন্ত ওইসব পয়েন্ট দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে চিনি ও ফুচকা, নাছির উদ্দীন বিড়ি, কসমেটিকস, গরু ও মাদকদ্রব্যসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য। এসব অবৈধ পণ্য নিয়ে আসার পরটিলার উপর বিভিন্ন বাড়িতে প্রথমে মজুদ রাখা হয়। পরে ভোররাতে অটোরিকশা বুঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয় বাদাঘাট বাজারে। এর পর সুযোগ বুঝে চোরাকারবারিরা নৌকা ও ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে। ঐ ব্যক্তির অনুরোধ, ভাই নিউজে আমার নাম দিলে আমার সঙ্গের লোকজনই আমারে মাইরা লাইব। আর পুলিশ বিজিবি তো আছেই। তারা আমার নামে যে কোনও মামলা দিয়ে জেলে দিব। ভাই আমরা ব্যবসা করি সরকারের ট্যাক্স ফাকি দিয়ে। সূত্র জানায়, চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে, মাহারামটিলা গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে শফিকুল ইসলাম বুটকুন (৪০), তোতা মিয়া (৩৮), বড়গোফটিলা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে সাইকুল মিয়া (৩২), মিলন মিয়া (২৮), একই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে সোলায়মান (২৭), জসিম উদ্দিনের ছেলে ফরিদ মিয়া (৩৮), আব্দুল হেকিমের ছেলে সাদ্দাম মিয়া (৩৫), মারামটিলার হাবি রহমানের ছেলে কাজল মিয়া (৪০) ও পশ্চিমটিলার লিটন মিয়া (৩০) সহ ১৫-১৬ জনের একটি প্রভাবশালী চোরাকারবারি সিন্ডিকেট চক্র।
গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে দিন মজুর শ্রেডুর লোকজন দিয়ে অবৈধ কাজ কারবার চালাচ্ছে।
গত ১২ এপ্রিল তাহিরপুর উপজেলার গণমাধ্যম কর্মী কামাল হোসেন রাফী তার ফেসবুক এ বারেকেরটিলার উপর একদল চোরাকারবারীদের মালামাল বহনের ভিডিও আপলোড করেন। তিনি জানান, প্রায় সময় ঘুরতে গেলে এসব দৃশ্য চোখে পড়ে। গত ১৯ এপ্রিল তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা এবং সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের সহ দপ্তর সম্পাদক সামরুল ইসলাম তার ফেসবুক এ বারেকেরটিলার সীমান্তের কাটা তারের বেড়ার ঠিক পাশেই একদল লোক বস্তা কাধেঁ নিয়ে আসার একটি ভিডিও আপলোড করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনার জন্ম দেয়।
তিনি জানান বন্ধু বান্ধব নিয়ে ঘুরতে গিয়ে এসব দৃশ্য দেখে আমার নিজের মোবাইলে ভিডিও করে আপলোড দেই। এ ব্যাপারে বিজিবি চাঁনপুর বি ওপির ইনচার্জ নায়েক সুবেদার সামসুল হক বলেন, এর পর থেকেই আমাদের টহল জোরদার করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির জানান, ফেসবুক এ আপলোড করা সামরুল ইসলাম এর ভিডিও ফুটেজ ভারতের সীমান্তে না বাংলাদেশ সীমান্তে এবং ভিডিও ফুটেজটি কবেকার এ নিয়ে তদন্ত চলছে। আমরা ভারতের সীমান্ত রক্ষী বি এস এফ কে ও জানিয়েছি। টহল জোরদার করা হয়েছে। এত বড় সীমান্ত এ ছাড়াওটিলা নদী এবং অনেক জায়গাতেই কাটা তারের বেড়া না থাকায় টহলটিমের সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিজিবির সদস্য গণ একদিকে গেলে অন্য দিকে হয়তো সুযোগ নিয়ে থাকে। তিনি আরও জানান সীমান্তের চোরাচালান নির্মূল করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দশে বিজিবি জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে। আমরা প্রতিদিনই বিভিন্ন সীমান্তে অভিযান চালিয়ে মালামাল আটক করছি এবং তা অব্যাহত আছে।