alt

সারাদেশ

চাঁদপুরে বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি

প্রতিনিধি, চাঁদপুর : রোববার, ১১ মে ২০২৫

চাঁদপুর : বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষক। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ভেতর থেকে তোলা -সংবাদ

চাঁদপুর মেঘনা, ডাকাতিয়া, মেঘনা-ধনাগোদা ও পদ্মা নদী বিধৌত চাঁদপুর কৃষি সমৃদ্ধ একটি জেলা। এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। জেলার ৪টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন নদীভাঙন কবলিত, নদীবিধৌত ও নদীসিকস্তি। চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা ধনাগোদা নামে দু’টি সেচ প্রকল্প রয়েছে। চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ বছরে চাঁদপুর জেলায় ৬৩ হাজার ৯শ ৮০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার ২শ ১৮ মে.টন চাল। এবার এককভাবে উন্নত ফলনশীল ৪৯ হাজার ৬ শ ৬০ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪১০ মে.টন উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার ১শ’ মে.টন। হাইব্রিড ১৪ হাজার ৩ শ ২০ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪৯৫ মে.টনে উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ হাজার ৮শ’ ৪৫ মে.টন। প্রাপ্ত পরিসংখ্যান মতে-উপজেলাওয়ারী চাঁদপুর সদরে আবাদ ৫ হাজার ৬শ ৪০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার ১শ ৬৯ মে.টন। মতলব উত্তরে আবাদ ৯ হাজার ৯শ ৮৪ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ হাজার ৪শ ৮২ মে.টন। মতলব দক্ষিণে আবাদ ৪ হাজার ৮শ ৮০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার ২শ ৭৩ মে.টন। হাজীগঞ্জে আবাদ ৯ হাজার ৬শ ২১ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪২ হাজার ৪ শ ৭০ মে.টন্। শাহারাস্তিতে আবাদ ৯ হাজার ৮শ ৬০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৪ হাজার ৭ শ ৫১ মে.টন । কচুয়ায় আবাদ ১৩ হাজার ২শ ২৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার ৩শ ৪১ মে.টন। ফরিদগঞ্জে আবাদ ১০ হাজার ৮০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ হাজার ১শ ৯৩ মে.টন । হাইমচরে আবাদ ৬শ ৯০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৫শ ৫০ মে.টন। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত এখন চাঁদপুর জেলার কৃষকরা।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প অবস্থিত। এখানে এবার বেশ ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা এখন পুরোপুরি ব্যস্ত তাদের বোরো ধান কাটা এবং মাড়াইয়ের কাজে। মাঠভরা সবুজ ধানের শীষ এখন কৃষকদের মুখের হাসি। চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফসল ঘরে তুলবেন- এমনটাই স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। আবহাওয়া ভালো থাকায় সেচ প্রকল্পের আওতায় চলতি বোরো মৌসুমে ধান কাটার মহোৎসব শুরু হয়েছে। উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ পুরোদমে চলছে। তীব্র গরমের মাঝেও ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। মাঠজুড়ে কৃষক-শ্রমিকদের ব্যস্ততার শেষ নেই। মতলবে এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পৌর এলাকাসহ উপজেলার ফরাজীকান্দি, দুর্গাপুর, বাগানবাড়ি, সাদুল্যাপুর, ষাটনল, ফতেপুর পশ্চিম, ফতেপুর পূর্ব, মোহনপুর, কলাকান্দা, সুলতানাবাদ, ইসলামাবাদ, ইউনিয়নে বিস্তীর্ণ মাঠে এবার বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, এ বছর শিলা-বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়া ও অতি খরার কারণে ধানখেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগবালাই কম হয়েছে। ফলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মতলব উত্তরে ৯ হাজার ৯৮৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫,৪৯৫ মেট্রিক টন ধান এবং ৪৩ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন চাল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে বোরো ধানের আবাদ হওয়ায় কৃষকেরা বেশ উৎসাহিত। অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষকদের পরিচর্যার কারণে নির্ধারিত সময়ে জমির ধান পাকতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে এবার প্রায় ছয় টন ধান উৎপাদিত হবে।

সরকারের কৃষিবান্ধব নীতিমালা, উপজেলা কৃষি অফিসের তৎপরতা, কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম, অনুকূল আবহাওয়া ও পর্যাপ্ত কৃষি উপকরণের সরবরাহ মিলিয়ে চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কৃষকদের বিনামূল্যে উন্নত বীজ, সার ও কীটনাশক বিতরণ করা হয়েছে এবং কৃষি অফিসারগণ মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত পরামর্শ দিয়েছেন। ধান কাটার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন, যার মাধ্যমে প্রতি শতকে ৯০ টাকা এবং প্রতি একরে ৯০০০ টাকা নির্ধারণ করেছে উপজেলা কৃষি অফিস। ছেংগারচর পৌরসভার আদুরভিটি গ্রামের কৃষক মো. আয়নাল আখন বলেন, এই বছর ধান অনেক ভালো হয়েছে। বীজ, সার আর পরামর্শ সব কিছুই সময়মতো পেয়েছি। আশা করছি ভালো দামও পাব। ঠাকুরচর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে তিনি পাঁচ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষি বিভাগের সার্বিক পরামর্শে তার জমিতে এবার ভালো ফলন হয়েছে। গজরা ইউনিয়নের কৃষক মো. কামাল হোসেন বলেন, আগে ধান কাটায় অনেক কষ্ট হতো। এখন হারভেস্টার মেশিনের কারণে সময় ও খরচ দুটোই বাঁচছে। ফরাজীকান্দি গ্রামের কৃষক আসাদ মাঝি (৭৫) বলেন, ‘ধান আবাদে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। ফলনও বাম্পার হয়েছে। আমার জমিতে ধান কাটা শুরু করেছি। আশা করছি ঝড়-বৃষ্টি না হলে আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে সব ধান ঘরে তুলতে পারব। শুনেছি বাজারে দাম ভালো। আশা করছি এবার লাভ হবে।’ ছেংগারচর পৌরসভার কৃষাণী রিতা রাণী দাস বলেন, ‘সকালে উঠেই মাঠে আসি। নিজের ফলানো ধান হাতে তুলতে পারার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সরকারের কৃষি বান্ধব নীতিমালার ফলে কৃষকরা আজ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়েছেন। আমাদের কৃষি অফিস মাঠপর্যায়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে, কৃষকদের মাঝে উন্নত জাতের বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করছে। এই মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগবালাই কম ছিল, উৎপাদনও ভালো হয়েছে। উপযুক্ত সময়ে কৃষকরা জমিতে ধান রোপণ করার পাশাপাশি জমিতে সেচসহ পরিচর্যা করেন। তাছাড়া আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে গিয়ে কাজ করছেন। কৃষকদের সব বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া ও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আমরা আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদন হবে। বর্তমান সময়ের কৃষক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিকে এগিয়ে নিচ্ছে, যা সত্যিই আশাব্যঞ্জক। কৃষকের মুখে হাসি ফুটানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ‘কৃষি আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। এক ফোঁটা ঘাম ঝরিয়ে যেসব কৃষক দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করছেন, তারা আমাদের আসল নায়ক। সরকারের কৃষি উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কৃষকদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে উপজেলা প্রশাসন সবসময় পাশে রয়েছে।

বোরো মৌসুমে কৃষকরা যেন সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট ও মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কৃষি খাত আরও সমৃদ্ধ হবে এবং কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে।’ সোনালি ধান যখন মাঠে পাকে, তখন সেটি শুধু কৃষকের ঘরে ফসল নয়, বরং একটি জনপদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে ওঠে। এই উৎসব যেন কৃষকের ঘরে হাসি বয়ে আনবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

ছবি

আওয়ামী লীগ কার্যালয় দখলের ঘটনায় এনসিপি নেতাদের ভিন্নমত, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত শিগগির

ছবি

তাড়াশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মাঝে গরু বিতরণে অনিয়ম

রাজশাহীতে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে আত্মহত্যার সংখ্যা

ছবি

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত একই পরিবারের তিন শিশু

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বিনোদনের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

রাণীনগরে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৩ নেতা গ্রেপ্তার

ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

ছবি

একসঙ্গে ছয় সন্তান জন্ম দিলেন গৃহবধূ

তুচ্ছ ঘটনায় দিনমজুরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

ছবি

প্রকাশ্যে বেল্ট দিয়ে নির্যাতন, মূল অভিযুক্ত জিহাদ গ্রেপ্তার

মেহেরপুরের ঘরে ঘরে গরুর খামার

হবিগঞ্জে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ধানের গুদাম

ছবি

বীরগঞ্জে কৃষকের করলা, ঝিঙ্গা গাছ কেটে দিল দুর্বৃত্তরা

সীমান্ত সচেতনতা নিয়ে মতবিনিময়

ছবি

মাধবপুর সীমান্তে বিজিবির ২ স্তরের নিরাপত্তা বলয়

চান্দিনায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

রাণীনগরে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৩ নেতা গ্রেপ্তার

প্রকাশ্যে বেল্ট দিয়ে নির্যাতন, মূল অভিযুক্ত জিহাদ গ্রেপ্তার

কক্সবাজারে পাচারকারীর হাত থেকে ১৪ জন উদ্ধার

খাগড়াছড়িতে দুর্র্র্র্বল রবি এয়ারটেল নেটওয়ার্ক, সমস্যায় ভুগছে গ্রাহক

ছবি

কোরবানি উপলক্ষে দুমকিতে গবাদি পশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত খামারিরা

ছাত্রদল নেতা হত্যার প্রধান আসামি কুষ্টিয়ায় গ্রেপ্তার

ছবি

রায়পুরে তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ খেটে-খাওয়া মানুষ

রাউজানে বসতঘর পুড়ে ছাই : অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি

প্রতিপক্ষের হামলায় আহত বৃদ্ধার মৃত্যু

হবিগঞ্জে ছাত্র আন্দোলনে ৪ জনের ওপর হামলার ঘটনায় আটক ২

হাটহাজারীতে আম গাছ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু

হবিগঞ্জে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

ছবি

সীতাকুণ্ডে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে স্ক্র্যাপবাহী পরিবহন, ঘটছে দুর্ঘটনা

ছবি

ডিমলায় ভুট্টার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে চাষিরা ক্ষুব্ধ

শেরপুরের ১৩৮৬ বোতল ভারতীয় মদ উদ্ধার

ভৈরবে অবৈধ বালু উত্তোলন তিন ড্রেজার, এক নৌকা আটক

ছবি

সিরাজগঞ্জে দাবদাহে প্রাণিকুল অতিষ্ঠ-খামারিরা বিপাকে

ছবি

ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ছয় মাসে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১০০ টন চাল আমদানি

ভৈরবে ৩ প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা ভ্রাম্যমাণ আদালতের

নদীর পাড়ে রক্তাক্ত অজ্ঞাত মরদেহ

tab

সারাদেশ

চাঁদপুরে বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি

প্রতিনিধি, চাঁদপুর

চাঁদপুর : বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষক। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ভেতর থেকে তোলা -সংবাদ

রোববার, ১১ মে ২০২৫

চাঁদপুর মেঘনা, ডাকাতিয়া, মেঘনা-ধনাগোদা ও পদ্মা নদী বিধৌত চাঁদপুর কৃষি সমৃদ্ধ একটি জেলা। এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। জেলার ৪টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন নদীভাঙন কবলিত, নদীবিধৌত ও নদীসিকস্তি। চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা ধনাগোদা নামে দু’টি সেচ প্রকল্প রয়েছে। চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ বছরে চাঁদপুর জেলায় ৬৩ হাজার ৯শ ৮০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার ২শ ১৮ মে.টন চাল। এবার এককভাবে উন্নত ফলনশীল ৪৯ হাজার ৬ শ ৬০ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪১০ মে.টন উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার ১শ’ মে.টন। হাইব্রিড ১৪ হাজার ৩ শ ২০ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪৯৫ মে.টনে উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ হাজার ৮শ’ ৪৫ মে.টন। প্রাপ্ত পরিসংখ্যান মতে-উপজেলাওয়ারী চাঁদপুর সদরে আবাদ ৫ হাজার ৬শ ৪০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার ১শ ৬৯ মে.টন। মতলব উত্তরে আবাদ ৯ হাজার ৯শ ৮৪ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ হাজার ৪শ ৮২ মে.টন। মতলব দক্ষিণে আবাদ ৪ হাজার ৮শ ৮০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার ২শ ৭৩ মে.টন। হাজীগঞ্জে আবাদ ৯ হাজার ৬শ ২১ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪২ হাজার ৪ শ ৭০ মে.টন্। শাহারাস্তিতে আবাদ ৯ হাজার ৮শ ৬০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪৪ হাজার ৭ শ ৫১ মে.টন । কচুয়ায় আবাদ ১৩ হাজার ২শ ২৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার ৩শ ৪১ মে.টন। ফরিদগঞ্জে আবাদ ১০ হাজার ৮০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ হাজার ১শ ৯৩ মে.টন । হাইমচরে আবাদ ৬শ ৯০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৫শ ৫০ মে.টন। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত এখন চাঁদপুর জেলার কৃষকরা।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প অবস্থিত। এখানে এবার বেশ ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা এখন পুরোপুরি ব্যস্ত তাদের বোরো ধান কাটা এবং মাড়াইয়ের কাজে। মাঠভরা সবুজ ধানের শীষ এখন কৃষকদের মুখের হাসি। চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফসল ঘরে তুলবেন- এমনটাই স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। আবহাওয়া ভালো থাকায় সেচ প্রকল্পের আওতায় চলতি বোরো মৌসুমে ধান কাটার মহোৎসব শুরু হয়েছে। উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ পুরোদমে চলছে। তীব্র গরমের মাঝেও ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। মাঠজুড়ে কৃষক-শ্রমিকদের ব্যস্ততার শেষ নেই। মতলবে এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পৌর এলাকাসহ উপজেলার ফরাজীকান্দি, দুর্গাপুর, বাগানবাড়ি, সাদুল্যাপুর, ষাটনল, ফতেপুর পশ্চিম, ফতেপুর পূর্ব, মোহনপুর, কলাকান্দা, সুলতানাবাদ, ইসলামাবাদ, ইউনিয়নে বিস্তীর্ণ মাঠে এবার বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, এ বছর শিলা-বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়া ও অতি খরার কারণে ধানখেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগবালাই কম হয়েছে। ফলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মতলব উত্তরে ৯ হাজার ৯৮৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫,৪৯৫ মেট্রিক টন ধান এবং ৪৩ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন চাল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে বোরো ধানের আবাদ হওয়ায় কৃষকেরা বেশ উৎসাহিত। অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষকদের পরিচর্যার কারণে নির্ধারিত সময়ে জমির ধান পাকতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে এবার প্রায় ছয় টন ধান উৎপাদিত হবে।

সরকারের কৃষিবান্ধব নীতিমালা, উপজেলা কৃষি অফিসের তৎপরতা, কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম, অনুকূল আবহাওয়া ও পর্যাপ্ত কৃষি উপকরণের সরবরাহ মিলিয়ে চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কৃষকদের বিনামূল্যে উন্নত বীজ, সার ও কীটনাশক বিতরণ করা হয়েছে এবং কৃষি অফিসারগণ মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত পরামর্শ দিয়েছেন। ধান কাটার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন, যার মাধ্যমে প্রতি শতকে ৯০ টাকা এবং প্রতি একরে ৯০০০ টাকা নির্ধারণ করেছে উপজেলা কৃষি অফিস। ছেংগারচর পৌরসভার আদুরভিটি গ্রামের কৃষক মো. আয়নাল আখন বলেন, এই বছর ধান অনেক ভালো হয়েছে। বীজ, সার আর পরামর্শ সব কিছুই সময়মতো পেয়েছি। আশা করছি ভালো দামও পাব। ঠাকুরচর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে তিনি পাঁচ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষি বিভাগের সার্বিক পরামর্শে তার জমিতে এবার ভালো ফলন হয়েছে। গজরা ইউনিয়নের কৃষক মো. কামাল হোসেন বলেন, আগে ধান কাটায় অনেক কষ্ট হতো। এখন হারভেস্টার মেশিনের কারণে সময় ও খরচ দুটোই বাঁচছে। ফরাজীকান্দি গ্রামের কৃষক আসাদ মাঝি (৭৫) বলেন, ‘ধান আবাদে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। ফলনও বাম্পার হয়েছে। আমার জমিতে ধান কাটা শুরু করেছি। আশা করছি ঝড়-বৃষ্টি না হলে আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে সব ধান ঘরে তুলতে পারব। শুনেছি বাজারে দাম ভালো। আশা করছি এবার লাভ হবে।’ ছেংগারচর পৌরসভার কৃষাণী রিতা রাণী দাস বলেন, ‘সকালে উঠেই মাঠে আসি। নিজের ফলানো ধান হাতে তুলতে পারার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সরকারের কৃষি বান্ধব নীতিমালার ফলে কৃষকরা আজ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়েছেন। আমাদের কৃষি অফিস মাঠপর্যায়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে, কৃষকদের মাঝে উন্নত জাতের বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করছে। এই মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগবালাই কম ছিল, উৎপাদনও ভালো হয়েছে। উপযুক্ত সময়ে কৃষকরা জমিতে ধান রোপণ করার পাশাপাশি জমিতে সেচসহ পরিচর্যা করেন। তাছাড়া আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে গিয়ে কাজ করছেন। কৃষকদের সব বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া ও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আমরা আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদন হবে। বর্তমান সময়ের কৃষক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিকে এগিয়ে নিচ্ছে, যা সত্যিই আশাব্যঞ্জক। কৃষকের মুখে হাসি ফুটানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ‘কৃষি আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। এক ফোঁটা ঘাম ঝরিয়ে যেসব কৃষক দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করছেন, তারা আমাদের আসল নায়ক। সরকারের কৃষি উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কৃষকদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে উপজেলা প্রশাসন সবসময় পাশে রয়েছে।

বোরো মৌসুমে কৃষকরা যেন সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট ও মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কৃষি খাত আরও সমৃদ্ধ হবে এবং কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে।’ সোনালি ধান যখন মাঠে পাকে, তখন সেটি শুধু কৃষকের ঘরে ফসল নয়, বরং একটি জনপদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে ওঠে। এই উৎসব যেন কৃষকের ঘরে হাসি বয়ে আনবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

back to top