alt

সারাদেশ

বিজয়নগরে ২৫ কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশাবাদ

জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাক্ষণবাড়িয়া : সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

ব্রাক্ষণবাড়িয়া : বিজয়নগরের একটি লিচু বাগান -সংবাদ

ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এ বছরও রসালো ফল লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় লিচুর ভালো ফলন হয়। বিজয়নগর উপজেলা এখন পাকা লিচুর রঙে রঙিন। পুরো উপজেলাই যেন লিচু বাগান। গাছে গাছে ঝুলছে থোকা থোকা লিচু। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। বাগান থেকে লিচু পেরে তা ঝুড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিজয়নগরের বিভিন্ন বাজারে। সেখান থেকে পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়।

গত ১৫ দিন ধরে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বাজারগুলোতে বিজয়নগরের পাটনাই লিচু পুরোদমে বিক্রি হচ্ছে। এখন থেকে বাজারে আসবে এলাচি লিচু, চায়না লিচু ও বোম্বাই লিচু। লিচুর দাম হাতের নাগালের মধ্যে থাকায় খুশী ক্রেতারা।

এদিকে লিচু পাকতে শুরু করায় ও বাগানগুলোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিনই দূর- দূরান্ত থেকে উৎসুক মানুষ গিয়ে লিচু বাগানে ভীড় করেন। লিচু বাগানে তারা প্রিয়জনদের সাথে সেলফি তুলেন। ফেরার সময় কিনে নিয়ে আসেন লিচু।

বিজয়নগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ জীয়াউল ইসলাম জানান, এ বছর বিজয়নগর উপজেলায় প্রায় ৬৩০ হেক্টর জমিতে লিচুর ফলন হয়েছে। এই বাগানগুলো থেকে প্রায় ১৭০০ মেট্রিকটন লিচু পাওয়া যাবে যার বাজার মূল্য ২৫ কোটি টাকা। তিনি বলেন, বিজয়নগর উপজেলার লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে এই লিচুর আলাদা কদর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০২ সাল থেকে বিজয়নগর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ করা শুরু হয়। কম পরিশ্রমে বেশী লাভ হওয়ায় পর্যায়ক্রমে এখানকার ধানি জমিগুলোকেও লিচু বাগানে পরিণত করতে থাকেন চাষিরা।

বর্তমানে উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, আদমপুর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমোড়া, নুরপুর, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, চান্দপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, রুপো, শান্তামোড়া,কামালপুর, কচুয়ামোড়া, ভিটিদাউপুর এলাকায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই একটি লিচু গাছ আছে। যাদের বাড়িতে একটু জায়গা আছে তারা প্রত্যেকেই বাড়িতে অন্যান্য ফলের গাছের সাথে লিচু গাছ লাগান।

এসব বাগানে দেশী লিচু, এলাচি লিচু, চায়না লিচু, পাটনাই লিচু ও বোম্বাই লিচু চাষ করা হয়।

এলাকাবাসী ও চাষীরা জানান, লিচু গাছে মুকুল আসার পর থেকে কয়েক দফা বাগান বিক্রি হয়। গাছে মুকুল ও গুটি আসার পর প্রথমে বাগান কিনেন স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলার মহাজনরা। গুটি একটু বড় হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় গাছ বিক্রি হয়। লিচু আকার ধারণ করলে তৃতীয় দফায় বিক্রি হয়। লিচু বড় হলে চতুর্থ দফায় বাগান বিক্রি হয়।

বিজয়নগর উপজেলার সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার হচ্ছে উপজেলার আউলিয়া বাজার। এছাড়াও উপজেলার মেরাশানী, মুকুন্দপুর, কাংকইরা বাজার, চম্পকনগর, সিঙ্গারবিল বাজার, আমতলী বাজারসহ আরো কয়েকটি বাজারে পাইকারীভাবে লিচু বেচা- কেনা হয়।

প্রতিদিন ভোর রাত ৪টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এসব বাজারে লিচু বিক্রি হয়। প্রতিদিন উপজেলা আউলিয়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রায় ১৫/২০ লাখ টাকার লিচু বেচা- কেনা হয়।

এসব বাজার থেকে ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাদপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা লিচু কিনে বিভিন্ন যানবাহনে করে নিয়ে যায়। এখানকার লিচু চাষীরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর লিচুর ফলন অনেকটা কম হয়েছে।চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারেও লিচুর ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।

উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের লিচু চাষী মোঃ দুলাল মিয়া বলেন, তার ৬টি লিচুর বাগান রয়েছে। ৬টি বাগানে আছে ১৮৫টি গাছ। এবছর ৮৫টি গাছে লিচু ধরেছে। মৌসুমের প্রথম দিকে যদি আবহাওয়া ভালো থাকতো তাহলে ফলন আরো ভালো হতো। তবে দাম ভালো পাওয়ায় আমরা ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছি।

উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের বাগান মালিক মাসুদ মিয়া বলেন, এ বছর তার বাগানের ৮০টি লিচু গাছের মধ্যে ৫০টি গাছে ভালো ফলন হয়েছে। লিচুর মুকুল আসার সময় আবহাওয়া ভালো না থাকায় কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যায়নি,তবে ভালো দাম পাওয়ায় সেই ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ জায়গায় তিনি লিচুর আবাদ করবেন।

একই এলাকার মোঃ মুখলেছুর রহমান নামে আরেক বাগান মালিক বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন আরো ভালো হতো। তবে তিনি লিচু বিক্রি করে লাভবান হবেন।

এখানকাল লিচু চাষী ও ব্যবসায়ীরা জানান, বিজয়নগরে সাধারণত তিন জাতের লিচুর ফলন ভালো হয়। এগুলো হলো পাটনায় বা দেশি লিচু, বোম্বাই ও চায়না-৩। এছাড়াও বেদেনা, চায়না-১ ও চায়না-২ জাতের লিচু চাষ হয় এখানে। সবার আগে বাজারে আসে পাটনায় বা দেশি লিচু। বোম্বাই বা চায়না-৩ লিচু কিছুদিন পরে পাকলেও বাজারে এর কদর বেশি। বিক্রিও হয় বেশি দামে। চায়না লিচু দেশি লিচুর মতো দেখতে হলেও আকারে ছোট হয়। খেতে সুস্বাদু। কুমিল্লা থেকে লিচু কিনতে বিজয়নগরে আসা পাইকার জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ বছর প্রতি হাজার লিচু বাগান থেকেই ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় কিনতে হয়। এর পাশাপাশি শ্রমিকের খরচ, হাটের খরচ ও পরিবহন খরচ মিলিয়ে কুমিল্লায় পাইকারি বাজারে লিচু পৌঁছাতে প্রতি হাজার লিচুতে খরচ পড়ে প্রায় দেড় হাজার টাকা। এর আগের বছর একই লিচু বাগান থেকে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে কিনতাম।

আখাউড়া সড়ক বাজার এলাকার লিচু বিক্রেতা মোবারক মিয়া বলেন, প্রতিবছর তিনি বিজয়নগর থেকে লিচু কিনে আখাউড়ায় নিয়ে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, আমরা বাগান থেকে প্রতি হাজার লিচু ২৫০০ টাকায় কিনে আখাউড়ায় নিয়ে ৩০০০ টাকা দরে বিক্রি করি।

ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে লিচু কিনতে যাওয়া মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা বিজয়নগরের বিভিন্ন জায়গা থেকে লিচু কিনে ব্রাক্ষণবাড়িয়া শহরে বিক্রি করি। এই এলাকার লিচু হিসেবে ঠিক পাওয়া যাওয়ায় ক্রেতারা খুবই খুশী। তিনি বলেন, প্রথম প্রথম এখান থেকে লিচু কিনে শহরে নিয়ে প্রতি একশ লিচু ৩০০ টাকায় বিক্রি করি। এখন ভরা মৌসুমে এখান থেকে লিচু কিনে ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় ২৫০/২৬০ টাকায় বিক্রি করি। এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ জিয়াউল ইসলাম বলেন, কৃষিতে বিজয়নগর একটি সম্ভাবনাময় উপজেলা, এখানে সব ধরনের ফল ও সবজি আবাদ হচ্ছে যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ নিয়ে কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বের সাথে কাজ করছে।

তিনি বলেন, মাটি ও আবহাওয়ার কথা চিন্তা করলে আমাদের বিজয়নগর উপজেলা লিচু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। আমরা লিচুর মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে চাষীদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ বছর বিজয়নগরে প্রায় ১ হাজার ৭০০ মেট্রিকটন লিচু উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার বাজার মূল্য হবে আনুমানিক ২৫ কোটি টাকা।

খালেদা জিয়াকে উপহার, ‘কালো মানিক’কে নিয়ে ঢাকার পথে কৃষক সোহাগ

ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে ৩ জন নিহত

ছবি

যমুনা সেতু এলাকায় ২৫ কিলোমিটার যানজট

ঈদের দশ দিনের ছুটি শুরু আজ

ছবি

বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট ও পশুর হাটে বাড়তি নিরাপত্তা

প্রতিদিন আদালতে হাজিরার শর্তে আকাশ চৌধুরীর জামিন মঞ্জুর

ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে অনুপ্রবেশ, বিএসএফ সদস্যকে আটক করে বিজিবির কাছে হস্তান্তর

ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্যাস সিলিন্ডারবোঝাই ট্রাক উল্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণ

ছবি

ফরিদপুরে বাস-মাহিন্দ্রা সংঘর্ষে ৫ জনের মৃত্যু, আহত ৪

ছবি

ঈদ সামনে রেখে অন্তহীন ব্যস্ততায় চান্দিনার কামারপাড়া

জগন্নাথপুর সীমান্তে ভারতীয় ভূ-খণ্ডে মাকে শেষ দেখা

ছবি

তাহিরপুরে যুবলীগ নেতাকে চুরির অভিযোগে বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল

৯৯৯-এ ফোন পেয়ে উদ্ধার, গ্রেপ্তার মোটরসাইকেলচালক

ছবি

নাইক্ষ্যংছড়িতে বিজিবির জব্দ ১৮ গরু ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় গোলাগুলি, আহত ৪

ছবি

প্যারোল মেলেনি, জেলগেটেই শেষবার মায়ের মুখ দেখলেন সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান

ঈশ্বরদী ইপিজেডে শত শত শ্রমিক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত, এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু

ছবি

মাগুরা-ঝিনাইদহ সড়কে মুখোমুখি সংঘর্ষে যুবক নিহত

ছবি

রাঙামাটিতে পাহাড় ধস-জলাবদ্ধতা, আশ্রয়কেন্দ্রে শত শত মানুষ

ছবি

গাজীপুরে পোশাক কারখানায় পানির কারণে শ্রমিক অসুস্থতা, তদন্তে কর্তৃপক্ষ

ছবি

সংস্কারের তিন বছর না যেতেই লামা-সুয়ালক সড়ক বেহাল

লাউয়াছড়া পাহাড়ি সড়কে ডাকাতি

শরণখোলায় বজ্রপাতে মাছ ব্যবসায়ীর মৃত্যু

পানিবন্দী আমতলীর লাখো মানুষ

ছবি

মানিকগঞ্জে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে শিশু খাবার

চুয়াডাঙ্গায় আকাশ হত্যার বিচারের দাবিতে ট্রেন আটকে মানববন্ধন

রাণীনগরে দুই রাতে ১৩ গরু ছাগল চুরি

হিলিতে পার্টনার কংগ্রেস অনুষ্ঠিত

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালিত

দুর্গাপুরে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে এসে সড়কে ঝরল জাপান প্রবাসীর প্রাণ

ছবি

মাছচাষিদের মধ্যে মাছের খাবার বিতরণ

গোপালপুরে ভিজিএফের চাল বিতরণ উদ্বোধন

ছবি

কালীগঞ্জে শীতলক্ষ্যা পাড়ে ‘জীবন তরী’

ছবি

দামুড়হুদায় কালের সাক্ষী জমিদার বাড়ির প্রধান ফটক

বাজেট ঘোষণা : বেনাপোল কাস্টমসে সতর্কতা

সুন্দরবনে মাছ ধরায় তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু

tab

সারাদেশ

বিজয়নগরে ২৫ কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশাবাদ

জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাক্ষণবাড়িয়া

ব্রাক্ষণবাড়িয়া : বিজয়নগরের একটি লিচু বাগান -সংবাদ

সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এ বছরও রসালো ফল লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় লিচুর ভালো ফলন হয়। বিজয়নগর উপজেলা এখন পাকা লিচুর রঙে রঙিন। পুরো উপজেলাই যেন লিচু বাগান। গাছে গাছে ঝুলছে থোকা থোকা লিচু। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। বাগান থেকে লিচু পেরে তা ঝুড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিজয়নগরের বিভিন্ন বাজারে। সেখান থেকে পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়।

গত ১৫ দিন ধরে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বাজারগুলোতে বিজয়নগরের পাটনাই লিচু পুরোদমে বিক্রি হচ্ছে। এখন থেকে বাজারে আসবে এলাচি লিচু, চায়না লিচু ও বোম্বাই লিচু। লিচুর দাম হাতের নাগালের মধ্যে থাকায় খুশী ক্রেতারা।

এদিকে লিচু পাকতে শুরু করায় ও বাগানগুলোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিনই দূর- দূরান্ত থেকে উৎসুক মানুষ গিয়ে লিচু বাগানে ভীড় করেন। লিচু বাগানে তারা প্রিয়জনদের সাথে সেলফি তুলেন। ফেরার সময় কিনে নিয়ে আসেন লিচু।

বিজয়নগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ জীয়াউল ইসলাম জানান, এ বছর বিজয়নগর উপজেলায় প্রায় ৬৩০ হেক্টর জমিতে লিচুর ফলন হয়েছে। এই বাগানগুলো থেকে প্রায় ১৭০০ মেট্রিকটন লিচু পাওয়া যাবে যার বাজার মূল্য ২৫ কোটি টাকা। তিনি বলেন, বিজয়নগর উপজেলার লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে এই লিচুর আলাদা কদর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০২ সাল থেকে বিজয়নগর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ করা শুরু হয়। কম পরিশ্রমে বেশী লাভ হওয়ায় পর্যায়ক্রমে এখানকার ধানি জমিগুলোকেও লিচু বাগানে পরিণত করতে থাকেন চাষিরা।

বর্তমানে উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, আদমপুর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমোড়া, নুরপুর, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, চান্দপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, রুপো, শান্তামোড়া,কামালপুর, কচুয়ামোড়া, ভিটিদাউপুর এলাকায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই একটি লিচু গাছ আছে। যাদের বাড়িতে একটু জায়গা আছে তারা প্রত্যেকেই বাড়িতে অন্যান্য ফলের গাছের সাথে লিচু গাছ লাগান।

এসব বাগানে দেশী লিচু, এলাচি লিচু, চায়না লিচু, পাটনাই লিচু ও বোম্বাই লিচু চাষ করা হয়।

এলাকাবাসী ও চাষীরা জানান, লিচু গাছে মুকুল আসার পর থেকে কয়েক দফা বাগান বিক্রি হয়। গাছে মুকুল ও গুটি আসার পর প্রথমে বাগান কিনেন স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলার মহাজনরা। গুটি একটু বড় হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় গাছ বিক্রি হয়। লিচু আকার ধারণ করলে তৃতীয় দফায় বিক্রি হয়। লিচু বড় হলে চতুর্থ দফায় বাগান বিক্রি হয়।

বিজয়নগর উপজেলার সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার হচ্ছে উপজেলার আউলিয়া বাজার। এছাড়াও উপজেলার মেরাশানী, মুকুন্দপুর, কাংকইরা বাজার, চম্পকনগর, সিঙ্গারবিল বাজার, আমতলী বাজারসহ আরো কয়েকটি বাজারে পাইকারীভাবে লিচু বেচা- কেনা হয়।

প্রতিদিন ভোর রাত ৪টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এসব বাজারে লিচু বিক্রি হয়। প্রতিদিন উপজেলা আউলিয়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রায় ১৫/২০ লাখ টাকার লিচু বেচা- কেনা হয়।

এসব বাজার থেকে ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাদপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা লিচু কিনে বিভিন্ন যানবাহনে করে নিয়ে যায়। এখানকার লিচু চাষীরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর লিচুর ফলন অনেকটা কম হয়েছে।চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারেও লিচুর ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।

উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের লিচু চাষী মোঃ দুলাল মিয়া বলেন, তার ৬টি লিচুর বাগান রয়েছে। ৬টি বাগানে আছে ১৮৫টি গাছ। এবছর ৮৫টি গাছে লিচু ধরেছে। মৌসুমের প্রথম দিকে যদি আবহাওয়া ভালো থাকতো তাহলে ফলন আরো ভালো হতো। তবে দাম ভালো পাওয়ায় আমরা ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছি।

উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের বাগান মালিক মাসুদ মিয়া বলেন, এ বছর তার বাগানের ৮০টি লিচু গাছের মধ্যে ৫০টি গাছে ভালো ফলন হয়েছে। লিচুর মুকুল আসার সময় আবহাওয়া ভালো না থাকায় কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যায়নি,তবে ভালো দাম পাওয়ায় সেই ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ জায়গায় তিনি লিচুর আবাদ করবেন।

একই এলাকার মোঃ মুখলেছুর রহমান নামে আরেক বাগান মালিক বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন আরো ভালো হতো। তবে তিনি লিচু বিক্রি করে লাভবান হবেন।

এখানকাল লিচু চাষী ও ব্যবসায়ীরা জানান, বিজয়নগরে সাধারণত তিন জাতের লিচুর ফলন ভালো হয়। এগুলো হলো পাটনায় বা দেশি লিচু, বোম্বাই ও চায়না-৩। এছাড়াও বেদেনা, চায়না-১ ও চায়না-২ জাতের লিচু চাষ হয় এখানে। সবার আগে বাজারে আসে পাটনায় বা দেশি লিচু। বোম্বাই বা চায়না-৩ লিচু কিছুদিন পরে পাকলেও বাজারে এর কদর বেশি। বিক্রিও হয় বেশি দামে। চায়না লিচু দেশি লিচুর মতো দেখতে হলেও আকারে ছোট হয়। খেতে সুস্বাদু। কুমিল্লা থেকে লিচু কিনতে বিজয়নগরে আসা পাইকার জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ বছর প্রতি হাজার লিচু বাগান থেকেই ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় কিনতে হয়। এর পাশাপাশি শ্রমিকের খরচ, হাটের খরচ ও পরিবহন খরচ মিলিয়ে কুমিল্লায় পাইকারি বাজারে লিচু পৌঁছাতে প্রতি হাজার লিচুতে খরচ পড়ে প্রায় দেড় হাজার টাকা। এর আগের বছর একই লিচু বাগান থেকে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে কিনতাম।

আখাউড়া সড়ক বাজার এলাকার লিচু বিক্রেতা মোবারক মিয়া বলেন, প্রতিবছর তিনি বিজয়নগর থেকে লিচু কিনে আখাউড়ায় নিয়ে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, আমরা বাগান থেকে প্রতি হাজার লিচু ২৫০০ টাকায় কিনে আখাউড়ায় নিয়ে ৩০০০ টাকা দরে বিক্রি করি।

ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে লিচু কিনতে যাওয়া মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা বিজয়নগরের বিভিন্ন জায়গা থেকে লিচু কিনে ব্রাক্ষণবাড়িয়া শহরে বিক্রি করি। এই এলাকার লিচু হিসেবে ঠিক পাওয়া যাওয়ায় ক্রেতারা খুবই খুশী। তিনি বলেন, প্রথম প্রথম এখান থেকে লিচু কিনে শহরে নিয়ে প্রতি একশ লিচু ৩০০ টাকায় বিক্রি করি। এখন ভরা মৌসুমে এখান থেকে লিচু কিনে ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় ২৫০/২৬০ টাকায় বিক্রি করি। এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ জিয়াউল ইসলাম বলেন, কৃষিতে বিজয়নগর একটি সম্ভাবনাময় উপজেলা, এখানে সব ধরনের ফল ও সবজি আবাদ হচ্ছে যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ নিয়ে কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বের সাথে কাজ করছে।

তিনি বলেন, মাটি ও আবহাওয়ার কথা চিন্তা করলে আমাদের বিজয়নগর উপজেলা লিচু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। আমরা লিচুর মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে চাষীদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ বছর বিজয়নগরে প্রায় ১ হাজার ৭০০ মেট্রিকটন লিচু উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার বাজার মূল্য হবে আনুমানিক ২৫ কোটি টাকা।

back to top