নরসিংদী : ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র -সংবাদ
অব্যবস্থাপনায় ধুঁকছে স্বাস্থ্যখাত, নানা সমস্যায় জর্জরিত নরসিংদী জেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জেলার একটি উপজেলার চিত্র তুলে ধরা হল, বাকি উপজেলাতেও প্রায় একই অবস্থা। শিবপুর উপজেলার ১০টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অবস্থা খুবই নাজুক। আসে না চিকিৎসক। মাতৃ ও শিশু সেবার জন্য ভিজিটর নিয়োগ থাকলেও নেই ওষুধ এবং সরঞ্জাম। তাই মৃতপ্রায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে হতাশ এলাকাবাসী। উপজেলার দুলালপুর, বাঘাব, জয়নগর, যোশর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদের হাজার হাজার দরিদ্র ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সরকারি চিকিৎসা সেবা পাওয়ার অন্যতম সরকারি প্রতিষ্ঠান ইউপি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, ডাক্তার এবং লোকবল সংকটের কারণে এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন মৃতপ্রায়।
শনিবার ও রোববার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঢুকার পথে আগাছায় জঙ্গলে পরিনত হয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভিতরে ময়লা আবর্জনার ছড়াছড়ি। হাসপাতালে ডাক্তার এবং সহকারীর রুমে তালা। নেই কোনো ফার্মাসিস্ট। রোগী বসার ওয়েটিং রুম ফাঁকা, রোগী শোয়ানোর চৌকিটি ধুলাবালিতে ভরপুর। গত শনিবার সকাল এগারোটা হাসপাতালের বাইরে ঘুরতে থাকা গড়বাড়ী গ্রামের ফারজানা আক্তার, শীলা আক্তার বলেন আমরা রোগী নিয়ে অনেকক্ষণ ডাক্তারের অপেক্ষায় বসে থেকে ডাক্তার আসবে না জানার পর চলে যাচ্ছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান এখানে নিয়মিত কোনো ডাক্তার আসেন না, দূরদূরান্ত থেকে অনেক রোগী এসে হতাশা নিয়ে চলে যায়। এ সময়ে হাসপাতালে হেলথ এসিস্ট্যান্ট তানিয়া আক্তারকে বাচ্চাদের টিকা দিতে দেখা গেছে। তবে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আসেননি। ফলে সেবা প্রার্থীরা ডাক্তারের অপেক্ষা করে চলে যান। ২৪ আগষ্ট রোববার দুলালপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য
কল্যাণ কেন্দ্র সকাল ৯ টা থেকে ৯ টা ৩০ মিনিট হাসপাতালে তালা। তখনও ভিজিটর আসেনি। একইদিন বেলা ১টা ১০ মিনিট হাসপাতালে তালা। তখনও কেউ নেই হাসপাতালে। দুলালপুর ইউনিয়নের দরগারবন্দ গ্রামের নুরজাহান বেগম, নাদিরা আক্তার, আলীনগর গ্রামের মীম আক্তার হাসপাতালে আসেন সেবা নিতে। তাদের সাথে কথা হয়। তারা অনুনয় করে বলেন ভাই দুর থেকে এসেছি। ডাক্তারকে একটি ফোন দিবেন, আসব কিনা। বিষয়টি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমানকে জানালে তিনি বলেন বিষয়টি আমি দেখতেছি। ১টা ৩০ মিনিট এক মহিলা এসে বললেন ডাক্তার আসতেছে। অপেক্ষায় রইলাম। ১টা ৪০ মিনিট হাসপাতালের ডাক্তার চুমকি আক্তার হাপিয়ে হাপিয়ে আসলেন। হাসপাতালের দরজার তালা খুলে বসতে দিলেন। ভিজিটর চুমকি আক্তার বললেন আজ তিনি দশটায় হাসপাতালে এসেছেন। রাস্তায় দেরি হয়েছে। অফিস কয়টায় জানতে চাইলে বলেন সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে তিনটা। দেরিতে আসলেন আবার আগে চলে গেলেন। তিনি বলেন চলে যায়নি হাসপাতালে পানি নেই, ওয়াস রুম নেই। তাই পাশের বাড়িতে ওয়াসরুমে গিয়েছিলাম। শনিবারে আসলেনা কেন। তিনি বলেন সমস্যা ছিল আসতে পারিনি। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানে। না জানে না। স্যারকে আজ জানাব। আপনার বিরুদ্ধে সেবা প্রার্থীদের অভিযোগ, ভাল ব্যবহার করেন না, ঔষধ দেননা, নিয়মিত হাসপাতালে আসেননা। তিনি বলেন ২০২৪ সালের আগষ্ট মাসের এক তারিখে আমি এখানে আসি। আমি আসার পর কোন ঔষধ পাচ্ছি না। যা পাই, রোগীদের দিয়ে দেই। রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ কথাটি মিথ্যা। সবার সাথে ভালো আচরণ করা হয়। প্রয়োজনীয় ঔষধ দিতে পারিনা, তাই আমি ভালো না। এখানে জনবল সংকট রয়েছে। আয়া, ঝাড়ুদার নেই। নেই পানির ব্যবস্থা। আমি একা অফিসে আছি। অনেক সময় ভয় হয়। কেউ না থাকলে নিজেকে অসহায় মনে হয়। আশপাশের ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। শনিবার, রোববার সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমার এখানে ডিউটি। অতিরিক্ত দুইদিন মঙ্গলবার ও বুধবার পাশের ইউনিয়নের দড়িপাড়া নিনগাও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ডিউটি করছি।
উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভকালীন এবং প্রসব পরবর্তী সেবা, পরিবার-পরিকল্পনা সেবা এবং শিশুদের টীকা প্রদানের জন্য পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা নিয়োগ থাকার কথা থাকলেও এ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো সেবা প্রদানকারী নেই। পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের সুপারভাইজার মোঃ এখলাছুর রহমান স্বীকার করে বলেন, এখানে নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ না থাকার ফলে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে শিবপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মোঃ সাইদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লোকবল সংকটের কারণে সেবা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া ঔষধেরও ঘাটতি রয়েছে। তিনি আরও জানান ১০টি সাব সেন্টারের মধ্যে নিয়মিত নিয়োগপ্রাপ্ত ভিজিটর আছেন মাত্র ৬ জন। আবার পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জামাদি নেই বলে ও স্বীকার করেন। তবে নতুন অর্থবছরে এর সংকট কাটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
নরসিংদী : ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র -সংবাদ
সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
অব্যবস্থাপনায় ধুঁকছে স্বাস্থ্যখাত, নানা সমস্যায় জর্জরিত নরসিংদী জেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জেলার একটি উপজেলার চিত্র তুলে ধরা হল, বাকি উপজেলাতেও প্রায় একই অবস্থা। শিবপুর উপজেলার ১০টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অবস্থা খুবই নাজুক। আসে না চিকিৎসক। মাতৃ ও শিশু সেবার জন্য ভিজিটর নিয়োগ থাকলেও নেই ওষুধ এবং সরঞ্জাম। তাই মৃতপ্রায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে হতাশ এলাকাবাসী। উপজেলার দুলালপুর, বাঘাব, জয়নগর, যোশর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদের হাজার হাজার দরিদ্র ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সরকারি চিকিৎসা সেবা পাওয়ার অন্যতম সরকারি প্রতিষ্ঠান ইউপি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, ডাক্তার এবং লোকবল সংকটের কারণে এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন মৃতপ্রায়।
শনিবার ও রোববার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঢুকার পথে আগাছায় জঙ্গলে পরিনত হয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভিতরে ময়লা আবর্জনার ছড়াছড়ি। হাসপাতালে ডাক্তার এবং সহকারীর রুমে তালা। নেই কোনো ফার্মাসিস্ট। রোগী বসার ওয়েটিং রুম ফাঁকা, রোগী শোয়ানোর চৌকিটি ধুলাবালিতে ভরপুর। গত শনিবার সকাল এগারোটা হাসপাতালের বাইরে ঘুরতে থাকা গড়বাড়ী গ্রামের ফারজানা আক্তার, শীলা আক্তার বলেন আমরা রোগী নিয়ে অনেকক্ষণ ডাক্তারের অপেক্ষায় বসে থেকে ডাক্তার আসবে না জানার পর চলে যাচ্ছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান এখানে নিয়মিত কোনো ডাক্তার আসেন না, দূরদূরান্ত থেকে অনেক রোগী এসে হতাশা নিয়ে চলে যায়। এ সময়ে হাসপাতালে হেলথ এসিস্ট্যান্ট তানিয়া আক্তারকে বাচ্চাদের টিকা দিতে দেখা গেছে। তবে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আসেননি। ফলে সেবা প্রার্থীরা ডাক্তারের অপেক্ষা করে চলে যান। ২৪ আগষ্ট রোববার দুলালপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য
কল্যাণ কেন্দ্র সকাল ৯ টা থেকে ৯ টা ৩০ মিনিট হাসপাতালে তালা। তখনও ভিজিটর আসেনি। একইদিন বেলা ১টা ১০ মিনিট হাসপাতালে তালা। তখনও কেউ নেই হাসপাতালে। দুলালপুর ইউনিয়নের দরগারবন্দ গ্রামের নুরজাহান বেগম, নাদিরা আক্তার, আলীনগর গ্রামের মীম আক্তার হাসপাতালে আসেন সেবা নিতে। তাদের সাথে কথা হয়। তারা অনুনয় করে বলেন ভাই দুর থেকে এসেছি। ডাক্তারকে একটি ফোন দিবেন, আসব কিনা। বিষয়টি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমানকে জানালে তিনি বলেন বিষয়টি আমি দেখতেছি। ১টা ৩০ মিনিট এক মহিলা এসে বললেন ডাক্তার আসতেছে। অপেক্ষায় রইলাম। ১টা ৪০ মিনিট হাসপাতালের ডাক্তার চুমকি আক্তার হাপিয়ে হাপিয়ে আসলেন। হাসপাতালের দরজার তালা খুলে বসতে দিলেন। ভিজিটর চুমকি আক্তার বললেন আজ তিনি দশটায় হাসপাতালে এসেছেন। রাস্তায় দেরি হয়েছে। অফিস কয়টায় জানতে চাইলে বলেন সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে তিনটা। দেরিতে আসলেন আবার আগে চলে গেলেন। তিনি বলেন চলে যায়নি হাসপাতালে পানি নেই, ওয়াস রুম নেই। তাই পাশের বাড়িতে ওয়াসরুমে গিয়েছিলাম। শনিবারে আসলেনা কেন। তিনি বলেন সমস্যা ছিল আসতে পারিনি। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানে। না জানে না। স্যারকে আজ জানাব। আপনার বিরুদ্ধে সেবা প্রার্থীদের অভিযোগ, ভাল ব্যবহার করেন না, ঔষধ দেননা, নিয়মিত হাসপাতালে আসেননা। তিনি বলেন ২০২৪ সালের আগষ্ট মাসের এক তারিখে আমি এখানে আসি। আমি আসার পর কোন ঔষধ পাচ্ছি না। যা পাই, রোগীদের দিয়ে দেই। রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ কথাটি মিথ্যা। সবার সাথে ভালো আচরণ করা হয়। প্রয়োজনীয় ঔষধ দিতে পারিনা, তাই আমি ভালো না। এখানে জনবল সংকট রয়েছে। আয়া, ঝাড়ুদার নেই। নেই পানির ব্যবস্থা। আমি একা অফিসে আছি। অনেক সময় ভয় হয়। কেউ না থাকলে নিজেকে অসহায় মনে হয়। আশপাশের ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। শনিবার, রোববার সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমার এখানে ডিউটি। অতিরিক্ত দুইদিন মঙ্গলবার ও বুধবার পাশের ইউনিয়নের দড়িপাড়া নিনগাও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ডিউটি করছি।
উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভকালীন এবং প্রসব পরবর্তী সেবা, পরিবার-পরিকল্পনা সেবা এবং শিশুদের টীকা প্রদানের জন্য পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা নিয়োগ থাকার কথা থাকলেও এ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো সেবা প্রদানকারী নেই। পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের সুপারভাইজার মোঃ এখলাছুর রহমান স্বীকার করে বলেন, এখানে নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ না থাকার ফলে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে শিবপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মোঃ সাইদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লোকবল সংকটের কারণে সেবা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া ঔষধেরও ঘাটতি রয়েছে। তিনি আরও জানান ১০টি সাব সেন্টারের মধ্যে নিয়মিত নিয়োগপ্রাপ্ত ভিজিটর আছেন মাত্র ৬ জন। আবার পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জামাদি নেই বলে ও স্বীকার করেন। তবে নতুন অর্থবছরে এর সংকট কাটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।