alt

news » bangladesh

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে স্মৃতিবিজরিত সলঙ্গা হাটে স্মৃতি সৌধ নির্মাণের দাবি

জেলা বার্তা পরিবেশক, সিরাজগঞ্জ : বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সিরাজগঞ্জ : সলঙ্গা বৃদ্রোহের স্মৃতি বিজরিত সলঙ্গা হাট -সংবাদ

বৃটিশ বিরোধী সলঙ্গা বিদ্রোহের স্মৃতি বহন করছে সলঙ্গা হাট। প্রতিবারই নীরবে পার হয়ে যায় ২৭ জানুয়ারি। ৯৯ বছর আগে ঔপনিবেশিক বৃটিশ বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে যে দুর্বার গণবিদ্রোহ ঘটেছিল তার নজির উপমহাদেশের ইতিহাসে বিরল। নির্মম হত্যা কান্ড ঘটেছিল ১৯২২সালের ২৭ জানুয়ারীতে। প্রতি বছর ২৭ জানুয়ারিতে স্থানীয়ভাবে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে এলাকাবাসির দাবি সলঙ্গা হাটে স্থায়ী স্মৃতি সৌধ নির্মাণের।

দিনটি ছিলো গত শুক্রবার। তৎকালিন পাবনা জেলার রায়গঞ্জ, তাড়াশ এবং উল্লাপাড়া থানার ত্রিমোহনী এলাকা বলে পরিচিত সলঙ্গা হাট। গোটা উওরবঙ্গের মধ্যে সলঙ্গা হাট ছিলো প্রধান। আশেপাশে বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন ধরণের পণ্যসামগ্রী,গবাদি পশু বেচাকেনার জন্য এই হাটে আনা হত। হাটবারে সলঙ্গায় হাজার হাজার লোক সমাগত হত। শুক্রবার ছিল বৃহত্তর হাটের দিন। হাটের অধিকাংশ দোকানের মালিক ছিলো মাড়োয়ারি ও বর্ণহিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিলেতী পণ্য সামগ্রী এবং মদ বর্জনের আন্দোলন চলছিলো এই হাটে। মুসলিম অধ্যূষিত এই এলাকায় কংগ্রেসের কর্মী তারুণ্যের অহংকার বিকাশমান প্রতিভা মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এই আন্দোলনে তার সাথে কাজ করছিলেন ৩ শত সেচ্ছাসেবী কংগ্রেসের কর্মী। তারা জাতীয়তাবাদে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এই সময় পাবনার তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আর,এন দাস সিরাজগঞ্জ মহাকুমা কর্মকর্তা এস কে সিনহা এবং পাবনা জেলা বৃটিশ পুলিশ সুপার ৪০ জন সশস্ত্র পুলিশ নিয়ে এই হাটে উপস্থিত হয়। প্রসঙ্গত এর তিনদিন আগে বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার শেষ সীমানা চান্দাইকোনা হাটে বিলেতী পণ্য বর্জন নিয়ে জনতা ও পুলিশের এক সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ জনতা পুলিশের হাতে থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে পাশের ফুলজড় নদীতে ফেলে দেয়। এই ঘটনার পর সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় ব্যাপক পুলিশী অভিযান শুরু হয়। শুক্রবারে সলঙ্গায় পুলিশী তৎপরতা সেই ঘটনারই জের। তরুন বিপ্লবী নেতা মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ সলঙ্গা হাটে অবস্থিত অস্থায়ী কংগ্রেস অফিসে ছিলেন। তাঁকে এখান থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার উপর অমানুষিক পুলিশী নির্যাতন চলানো হয়। সেচ্ছাসেবকদের আহ্বানে জনতা নিরস্ত্র ছিলো।

তাদের প্রাণ প্রিয় নেতাকে গুরুতর আহত করে হাটের ভিতর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ জনতার পুলিশ সুপারের মাথায় আঘাত করেলে তিনি আহত হন। জনতা বিপ্লবী তর্কবাগীশ কে পুলিশের বেষ্টনী থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মারমুখী দাঙ্গা পুলিশের কারনে সে সময় বেশী সুবিধা করতে পারেনি। আহত পুলিশ সুপারের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ব্যবসায়ীরা পুলিশ সুপারের চিকিৎসাকালীন সময়ে লক্ষ্য জনতা বিপ্লবী তর্কবাগীশকে মুক্ত করার জন্য তিন দিগ থেকে এগিয়ে আসেন। পুলিশ মদের দোকানের কাছে অবস্থান নেয় এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে আন্দোলনকারীদের উপর গুলীবর্ষণ করে। এই লোমহর্ষক হত্যাকান্ডে প্রায় ৪ হাজার লোক নিহত হয়। বেসরকারি হিসাবে হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশী বলে জানা যায়। আহতদের সলঙ্গা হাট সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। এখানে কতজন মারা গেছে তার কোন সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। প্রাণ ভয়ে পালাতে গিয়ে গুলীবিদ্ধ আহতদের কতজন মারা গেছে তার হিসাব এখনো মেলেনি।

মাওলানা তর্কবাগীশ লিখেছেন, গুলীবিদ্ধ হয়ে তার সামনে সাতজন নিহত হয়। এদের মধ্যে তিন জনের নাম জানা যায় এরা হলেন, উল্লাপাড়ার চাঁদ উল্লাহ, আরজ উল্লাহ ও রাজ আলী। সলঙ্গার সাতটিকরী গ্রামের বাদুর আলী প্রামানিক, দশানী পাড়ার মুজার বাবা।

বৃটিশের নির্যাতনের ভয়ে অনেকেই সেসময় নিহতের কথা প্রকাশ করেনি। বৃটিশ রাজত্ব শেষ হওয়ার পর নিহতদের নাম ঠিকানা চাপা পড়ে গেছে। স্মৃতি কথায় মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ এই কাহিনীর বর্ণনা দিয়ে বলেছেন এই নির্মমতা নিঃসন্দেহে জুলিয়ান ওয়ালা বাগের চেয়েও ভয়ংকর ও ন্যক্কারজনক। পুলিশের গুলীতে হাটে এতো গরু-মহিষ ছাগল মারা যায় যে তার সংখ্যা নির্ণয় করা যায়নি। এসব জীব, জানোয়ারের শবদেহ আর নিহত মানুষের লাশ মিলেমিশে হয়ে গিয়েছিল একাকার। এর চেয়ে করুণ,এর চেয়ে নৃশংস ও মর্মান্তিক দৃশ্য জীবনে আর আমি দেখিনী। ৪০ জন পুলিশের মধ্যে ৩৯জন গুলী চালায়। একজন বিহারী ক্ষত্রীয় হিন্দু গুলী না চালিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। ( তার উত্তর ছিল হাম তো আদমী কো মারনে আয়া।মায় গাও কাশি (গো হত্যা)নেহি কার সাকতা ও হামারা মাতা হ্যায়।) অবিরাম গুলীবর্ষণে পুলিশের গুলী শেষ হয়ে যাওয়ায় ঐক্যবদ্ধভাবে জনতা লাঠি বল্লম নিয়ে চারদিকে থেকে এগিয়ে আসে।

তারা তর্কবাগীশকে মুক্ত এবং হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতে চায়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশকে মুক্তি দেয়। বিপ্লবী তর্কবাগীশ জনতাকে শান্ত হতে আহ্বান করেন। এই আহবানের জনগণ শান্ত হবার ফলে বৃটিশ সরকারের পুলিশ সুপার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও ৪০ জন পুলিশের প্রাণ রক্ষা পায়। প্রাণে বেঁচে যাওয়র পর শাসকবাহিনী স্বরুপে আত্মপ্রকাশ করে। সন্ধ্যার সময় গ্রামবাসীদের ধরে এনে তাদের দিয়ে আহত-নিহতদের একসাথে বেঁধে গাড়ীতে করে সিরাজগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয়।পথিমধ্যে আরও অনেকে হত্যা করে লাশ গায়েব করা হয়। শত শত নিহত ও অর্ধমৃতদের সিরাজগঞ্জ শহরের রহমতগঞ্জ করবস্থানে এনে দাফন করা হয়।

ছবি

নুরাল পাগলার দরবারে হামলায় নিহত রাসেলের হত্যার বিচার দাবি পরিবারের

ছবি

সুন্দরবনে অভিযান: ‘বনদস্যু প্রধান সুমন বাহিনী’র চার সদস্য গ্রেপ্তার, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার

ছবি

টাঙ্গাইলে মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল, ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল বন্ধ

ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘কর্ণফুলী কমিউটারের’ বগি লাইনচ্যুত, ডাউন লাইনে চলাচল বন্ধ

চট্টগ্রামে ঈদে মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রায় পদদলিত হয়ে ২ জনের মৃত্যু

ছবি

মুন্সিগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৮, আহত ১০

ছবি

‘নুরাল পাগলা’র দরবারে পুলিশের ওপর হামলা: অজ্ঞাত ৩ হাজারের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

‘নুরাল পাগলা’র দরবারে হামলা-সংঘর্ষে এক নিহত: পুলিশ

ছবি

হাত-পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে হাসপাতালে বর, সেখানেই মালাবদল দুজনের

ছবি

রাজবাড়ীতে কবর থেকে লাশ তুলে আগুন, রাজশাহীতে খানকায় হামলা

সোনারগাঁয়ে পুলিশের উপর হামলা করে আসামী ছিনতাই বিএনপি নেতার, ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ

ভাঙ্গায় অবরোধ তুলে নিলেন স্থানীয়রা, স্বাভাবিক হলো যান চলাচল

ছবি

রাজশাহীতে খানকা শরিফে হামলা, পুলিশ পদক্ষেপ নেয়নি অভিযোগ

ছবি

গোয়ালন্দে তৌহিদি জনতার হামলায় ‘নুরাল পাগলা’র মরদেহ পুড়ল, ৫০ আহত

ছবি

চকরিয়ায় ফসলের পোকা দমনে আলোক ফাঁদ

ছবি

গোয়ালন্দে বজ্রপাতে গৃহবধূর মৃত্যু

ছবি

গোয়ালন্দে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু

ছবি

নেত্রকোনা ৫ আসনের সাবেক এমপির পিএস গ্রেপ্তার

ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাদকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

ছবি

কলাপাড়ায় বিরল প্রজাতির সজারু উদ্ধার

ছবি

বিএনপি’র কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

ছবি

কেন্দুয়ায় জন্মনিবন্ধনে ভোগান্তি, বাল্যবিবাহের শাস্তি পাচ্ছে শিশু

ছবি

কর্ণফুলী নদী থেকে ১২ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ

ছবি

সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের নেতার মরদেহ উদ্ধার

ছবি

মহেশপুরে চার বছরের শিশুর ধর্ষক আটক

ছবি

নাগেশ্বরীতে বউ-শাশুড়ী মেলা

ছবি

সরিষাবাড়ীতে ২০ গ্রামের মানুষের ভরসা খেয়া নৌকা

ছবি

বিরামপুরে নওয়াব আলী স্যার স্মৃতি সম্মাননা বৃত্তি পরীক্ষা

ছবি

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে আট দফা দাবি ক্ষতিগ্রস্ত জমি মালিকদের

ছবি

নদী দখলমুক্ত করতে বাধা, এস্কেভেটর ভাঙচুর

ছবি

পানির দাবিতে মানববন্ধন পাথরঘাটা পৌরবাসীর

ছবি

পাঁচবিবিতে আধুনিকমানের মুরগির খামার করে লাভবান শাহিন

ছবি

অপেক্ষার অবসান : গঙ্গাচড়ার কুটির ঘাটে স্টিলের সাঁকো

ছবি

বাগেরহাটে সড়ক দুর্ঘনায় নিহত ২

ছবি

লালমোহনে হাইকোর্টের রায় অমান্য করে সড়ক ইজারা

ছবি

মোরেলগঞ্জে আমন রোপণে ব্যস্ত কৃষক

tab

news » bangladesh

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে স্মৃতিবিজরিত সলঙ্গা হাটে স্মৃতি সৌধ নির্মাণের দাবি

জেলা বার্তা পরিবেশক, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জ : সলঙ্গা বৃদ্রোহের স্মৃতি বিজরিত সলঙ্গা হাট -সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বৃটিশ বিরোধী সলঙ্গা বিদ্রোহের স্মৃতি বহন করছে সলঙ্গা হাট। প্রতিবারই নীরবে পার হয়ে যায় ২৭ জানুয়ারি। ৯৯ বছর আগে ঔপনিবেশিক বৃটিশ বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে যে দুর্বার গণবিদ্রোহ ঘটেছিল তার নজির উপমহাদেশের ইতিহাসে বিরল। নির্মম হত্যা কান্ড ঘটেছিল ১৯২২সালের ২৭ জানুয়ারীতে। প্রতি বছর ২৭ জানুয়ারিতে স্থানীয়ভাবে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে এলাকাবাসির দাবি সলঙ্গা হাটে স্থায়ী স্মৃতি সৌধ নির্মাণের।

দিনটি ছিলো গত শুক্রবার। তৎকালিন পাবনা জেলার রায়গঞ্জ, তাড়াশ এবং উল্লাপাড়া থানার ত্রিমোহনী এলাকা বলে পরিচিত সলঙ্গা হাট। গোটা উওরবঙ্গের মধ্যে সলঙ্গা হাট ছিলো প্রধান। আশেপাশে বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন ধরণের পণ্যসামগ্রী,গবাদি পশু বেচাকেনার জন্য এই হাটে আনা হত। হাটবারে সলঙ্গায় হাজার হাজার লোক সমাগত হত। শুক্রবার ছিল বৃহত্তর হাটের দিন। হাটের অধিকাংশ দোকানের মালিক ছিলো মাড়োয়ারি ও বর্ণহিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিলেতী পণ্য সামগ্রী এবং মদ বর্জনের আন্দোলন চলছিলো এই হাটে। মুসলিম অধ্যূষিত এই এলাকায় কংগ্রেসের কর্মী তারুণ্যের অহংকার বিকাশমান প্রতিভা মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এই আন্দোলনে তার সাথে কাজ করছিলেন ৩ শত সেচ্ছাসেবী কংগ্রেসের কর্মী। তারা জাতীয়তাবাদে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এই সময় পাবনার তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আর,এন দাস সিরাজগঞ্জ মহাকুমা কর্মকর্তা এস কে সিনহা এবং পাবনা জেলা বৃটিশ পুলিশ সুপার ৪০ জন সশস্ত্র পুলিশ নিয়ে এই হাটে উপস্থিত হয়। প্রসঙ্গত এর তিনদিন আগে বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার শেষ সীমানা চান্দাইকোনা হাটে বিলেতী পণ্য বর্জন নিয়ে জনতা ও পুলিশের এক সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ জনতা পুলিশের হাতে থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে পাশের ফুলজড় নদীতে ফেলে দেয়। এই ঘটনার পর সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় ব্যাপক পুলিশী অভিযান শুরু হয়। শুক্রবারে সলঙ্গায় পুলিশী তৎপরতা সেই ঘটনারই জের। তরুন বিপ্লবী নেতা মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ সলঙ্গা হাটে অবস্থিত অস্থায়ী কংগ্রেস অফিসে ছিলেন। তাঁকে এখান থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার উপর অমানুষিক পুলিশী নির্যাতন চলানো হয়। সেচ্ছাসেবকদের আহ্বানে জনতা নিরস্ত্র ছিলো।

তাদের প্রাণ প্রিয় নেতাকে গুরুতর আহত করে হাটের ভিতর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ জনতার পুলিশ সুপারের মাথায় আঘাত করেলে তিনি আহত হন। জনতা বিপ্লবী তর্কবাগীশ কে পুলিশের বেষ্টনী থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মারমুখী দাঙ্গা পুলিশের কারনে সে সময় বেশী সুবিধা করতে পারেনি। আহত পুলিশ সুপারের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ব্যবসায়ীরা পুলিশ সুপারের চিকিৎসাকালীন সময়ে লক্ষ্য জনতা বিপ্লবী তর্কবাগীশকে মুক্ত করার জন্য তিন দিগ থেকে এগিয়ে আসেন। পুলিশ মদের দোকানের কাছে অবস্থান নেয় এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে আন্দোলনকারীদের উপর গুলীবর্ষণ করে। এই লোমহর্ষক হত্যাকান্ডে প্রায় ৪ হাজার লোক নিহত হয়। বেসরকারি হিসাবে হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশী বলে জানা যায়। আহতদের সলঙ্গা হাট সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। এখানে কতজন মারা গেছে তার কোন সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। প্রাণ ভয়ে পালাতে গিয়ে গুলীবিদ্ধ আহতদের কতজন মারা গেছে তার হিসাব এখনো মেলেনি।

মাওলানা তর্কবাগীশ লিখেছেন, গুলীবিদ্ধ হয়ে তার সামনে সাতজন নিহত হয়। এদের মধ্যে তিন জনের নাম জানা যায় এরা হলেন, উল্লাপাড়ার চাঁদ উল্লাহ, আরজ উল্লাহ ও রাজ আলী। সলঙ্গার সাতটিকরী গ্রামের বাদুর আলী প্রামানিক, দশানী পাড়ার মুজার বাবা।

বৃটিশের নির্যাতনের ভয়ে অনেকেই সেসময় নিহতের কথা প্রকাশ করেনি। বৃটিশ রাজত্ব শেষ হওয়ার পর নিহতদের নাম ঠিকানা চাপা পড়ে গেছে। স্মৃতি কথায় মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ এই কাহিনীর বর্ণনা দিয়ে বলেছেন এই নির্মমতা নিঃসন্দেহে জুলিয়ান ওয়ালা বাগের চেয়েও ভয়ংকর ও ন্যক্কারজনক। পুলিশের গুলীতে হাটে এতো গরু-মহিষ ছাগল মারা যায় যে তার সংখ্যা নির্ণয় করা যায়নি। এসব জীব, জানোয়ারের শবদেহ আর নিহত মানুষের লাশ মিলেমিশে হয়ে গিয়েছিল একাকার। এর চেয়ে করুণ,এর চেয়ে নৃশংস ও মর্মান্তিক দৃশ্য জীবনে আর আমি দেখিনী। ৪০ জন পুলিশের মধ্যে ৩৯জন গুলী চালায়। একজন বিহারী ক্ষত্রীয় হিন্দু গুলী না চালিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। ( তার উত্তর ছিল হাম তো আদমী কো মারনে আয়া।মায় গাও কাশি (গো হত্যা)নেহি কার সাকতা ও হামারা মাতা হ্যায়।) অবিরাম গুলীবর্ষণে পুলিশের গুলী শেষ হয়ে যাওয়ায় ঐক্যবদ্ধভাবে জনতা লাঠি বল্লম নিয়ে চারদিকে থেকে এগিয়ে আসে।

তারা তর্কবাগীশকে মুক্ত এবং হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতে চায়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশকে মুক্তি দেয়। বিপ্লবী তর্কবাগীশ জনতাকে শান্ত হতে আহ্বান করেন। এই আহবানের জনগণ শান্ত হবার ফলে বৃটিশ সরকারের পুলিশ সুপার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও ৪০ জন পুলিশের প্রাণ রক্ষা পায়। প্রাণে বেঁচে যাওয়র পর শাসকবাহিনী স্বরুপে আত্মপ্রকাশ করে। সন্ধ্যার সময় গ্রামবাসীদের ধরে এনে তাদের দিয়ে আহত-নিহতদের একসাথে বেঁধে গাড়ীতে করে সিরাজগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয়।পথিমধ্যে আরও অনেকে হত্যা করে লাশ গায়েব করা হয়। শত শত নিহত ও অর্ধমৃতদের সিরাজগঞ্জ শহরের রহমতগঞ্জ করবস্থানে এনে দাফন করা হয়।

back to top