রায়গঞ্জের পশ্চিম আটঘড়িায়া গ্রামের বাসিন্দা আদিবাসি সন্তান উজ্জল মাহাতো। তিনি বলেন, আদিবাসিদের বেশির ভাগ ধর্মীয় রীতি- নীতি, আচার, অনুষ্ঠান বিপন্ন হতে চলেছে। কিংবা হারিয়ে গেছে। আবার সংকুক্ষিতও হয়ে আসছে। আরপরও চলনবিলাঞ্চলে আদিবাসিদের সমৃদ্ধ লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম অংশ কারাম পূজা বা উৎসব এখনও রঙ ছড়ায়।
মুলত: বর্ষার প্রকুতি যখন সবুজ সমারোহে সেজে ওঠে, এ সময় খাল-বিল, নদী-নালা বর্ষার পানিতে পূর্ণতা পায়; তখন বিল বা জলাশয়ে ফোটে শাপলা-শালুক। পাশাপাশি কৃষিজীবী আদিবাসি পরিবারের নারী-পুরুষ বিস্তর অবসরে থাকেন। ঠিক তখন ভাদ্র মাস। এ মাসেই আসে আদিবাসীদের কারাম পূূজা বা উৎসব। যা আদিবাসীদের তারুণ্যের উৎসবও বটে। পঞ্জিকা মতে, এ উৎসবটি শুরু হয় পার্শ্ব একাদশীতে। সোমবার ডালায় গজাঁনো চারা গাছের বিশেষ পরিচচর্যার মধ্য দিয়ে কারাম উৎসবের শুরু হয়েছে। আর মুল পুজা- অর্চণা বা ধমীয় ক্রীয়াদি বুধবার সম্পূর্ণ হবে।
চলনবিলের সাতটি উপজেলায় বসবাসকারী আদিবাসী মাহাতো, কুর্মি মতাতো, সাঁওতাল, ওঁরাও, মাহাতো, বড়াইক, সিং, পাহান, মাহালিসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় হাজার বিশেক শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষ এবারও বংশপরম্পরায় পালন করছেন তাঁদের প্রানের উৎসব কারাম। তাঁদের মধ্যে সাঁওতাল, ওঁরাও, তবে মাহাতো ছাড়া আদিবাসি অনান্য সম্প্রদায় তাঁদের নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি ও বিশ্বাসে কারাম উৎসব পালন করে থাকেন। তবে চলনবিল জনপদে মাহাতো সম্প্রদায়ের লোকজনই নানা আয়োজনে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে বেশি কারাম পূজা বা উৎসব করে থাকেন।
জানা গেছে, তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাসমতে পরিবারের মঙ্গল কামনায় এদিন পূজা-অর্চনার পাশাপাশি তাঁরা নির্মল আনন্দে মেতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরও গতকাল বুধবার সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া; নাটোরের সিংড়াসহ সাতটি উপজেলার আদিবাসি অধ্যুষিত প্রায় ৪৫ থেকে ৫০টি গ্রামে কিছু স্থানে বড় আকারে। আবার কিছু স্থানে ছোট আকারে। আর বড় ছোট যাই হোক কারাম উৎসব চলনলিাঞ্চলের আদিবাসি পল্লিতে রং ছড়াবে উৎসবের আমেজে এটাই বাস্তবতা। সমতলে বসবাসরত আদিবাসীরা কারাম উৎসব ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশীতে পালন করে থাকেন। সাধারণত গ্রামের খোলা মাঠে কারাম গাছের বড় বড় ডাল মাটিতে পুঁতে তাতে নানা ধরনের ফুল দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। পাশাপাশি মাটির প্রদীপ বা দিয়ালী জ্বালিয়ে সারাদিন এমনকি গভীর রাত অবদি চলে তাঁদের নানা ধরনের পূজা ও উৎসব আয়োজন। এতে শামিল হন আদিবাসি পল্লির শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী নারী-পুরুষ সদস্য।
আদিবাসি শিক্ষার্থী মৌমিতা মাহাতো জানান,কারাম নামক গাছের ডাল কেটে বিভিন্ন প্রাচীন রীতি- নীতি মেনে এ উৎসব করা হয়। এর নাম কারাম উৎসব বা ডাল গেড়ে পূজা করা হয়। তাই এটির কোথাও কোথাও ডাল পূজা নামেও সমধিক পরিচিতি আছে বৈকি। আগে চলনবিল এলাকার আদিবাসী পল্লিতে কারাম উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা চলত পাঁচ দিন। কোথাও কোথাও সাত দিন ধরে এ অনুষ্ঠান হতো। শুরুর দিন থেকেই যাঁরা কারাম পূজায় অংশগ্রহণ করেন (কেরমেতি) তাঁদের আমিষ জাতীয় খাবার, হলুদ, তেল ও সব ধরনের মসলা জাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হয়। কেরমেতি বলতে যাঁরা কারাম পূজায় অংশ গ্রহন করেন তাঁদের বোঝায়। তাঁরা বিশ্বাস করেন, যদি এই খাবার পদ্ধতির কেউ অনিয়ম করেন তাহলে তাঁর অংশের বীজের অঙ্কুরোদ্গম হবে না।
আদিবাসীদের ভাষায় জাঁওয়া বলতে বোঝায় মাটি, বালি, মুং, কুর্থি, ছোলা ইত্যাদি দিয়ে চারা গাছের অঙ্কুরোদ্গমের যে ডালা তৈরি করা হয় তাই। এটি বৃহৎ অর্থে বৃক্ষের তথা কৃষির বিভিন্ন বীজের অঙ্কুরোদ্গম, সন্তান স্নেহে লালন-পালন ও সংরক্ষণকেই বুঝিয়ে থাকে। কারাম উৎসবে মূলত বীজের অঙ্কুরোদ্গম, বীজ থেকে চারা তৈরি, সন্তান স্নেহে লালন-পালন ও সংরক্ষণ যা প্রতীকি অর্থে প্রকৃতিকে বন্দনা করাকেই বোঝায়। কারাম উপলক্ষে বিভিন্ন রকম আচার ও আদিবাসিদের নিজস্ব ভাষায় গীতের মাধ্যমে জাঁওয়া তোলা হয়। অর্থাৎ প্রণ- প্রকৃতির বন্দনা করা হয়। নিয়মিত পরিচর্যায় বীজ গুলো এক সময় দুই পাতা বিশিষ্ট হলুদাভ সবুজ চারা গাছে পরিণত হয়। শেষের দিন কেরমেতিরা সন্ধ্যায় বাড়ির আঙিনায় কারাম ডাল গেড়ে শাপলা ফুল, শসা, ফিতা প্রভৃতি দিয়ে সাজিয়ে, ডালের গোড়ায় ডালাগুলো রেখে প্রদীপ জ্বালিয়ে ও বরণডালা সজ্জিত কাঁসার থালা নিয়ে অধীর আগ্রহে তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রথা বুকে লালন করে পূজায় মনোনিবেশ করেন। আর ওই রাতেই পূজার কাজ শেষ হয়; যা বুধবার গভীর রাতে শেষ হবে।
পাশাপাশি কারাম উৎসবে রঙের ছটা ছড়াবে আদিবাসিদের নিজস্ব সংস্কৃতি ঝুমুর নাচের সুর মূচ্ছনায়।
বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রায়গঞ্জের পশ্চিম আটঘড়িায়া গ্রামের বাসিন্দা আদিবাসি সন্তান উজ্জল মাহাতো। তিনি বলেন, আদিবাসিদের বেশির ভাগ ধর্মীয় রীতি- নীতি, আচার, অনুষ্ঠান বিপন্ন হতে চলেছে। কিংবা হারিয়ে গেছে। আবার সংকুক্ষিতও হয়ে আসছে। আরপরও চলনবিলাঞ্চলে আদিবাসিদের সমৃদ্ধ লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম অংশ কারাম পূজা বা উৎসব এখনও রঙ ছড়ায়।
মুলত: বর্ষার প্রকুতি যখন সবুজ সমারোহে সেজে ওঠে, এ সময় খাল-বিল, নদী-নালা বর্ষার পানিতে পূর্ণতা পায়; তখন বিল বা জলাশয়ে ফোটে শাপলা-শালুক। পাশাপাশি কৃষিজীবী আদিবাসি পরিবারের নারী-পুরুষ বিস্তর অবসরে থাকেন। ঠিক তখন ভাদ্র মাস। এ মাসেই আসে আদিবাসীদের কারাম পূূজা বা উৎসব। যা আদিবাসীদের তারুণ্যের উৎসবও বটে। পঞ্জিকা মতে, এ উৎসবটি শুরু হয় পার্শ্ব একাদশীতে। সোমবার ডালায় গজাঁনো চারা গাছের বিশেষ পরিচচর্যার মধ্য দিয়ে কারাম উৎসবের শুরু হয়েছে। আর মুল পুজা- অর্চণা বা ধমীয় ক্রীয়াদি বুধবার সম্পূর্ণ হবে।
চলনবিলের সাতটি উপজেলায় বসবাসকারী আদিবাসী মাহাতো, কুর্মি মতাতো, সাঁওতাল, ওঁরাও, মাহাতো, বড়াইক, সিং, পাহান, মাহালিসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় হাজার বিশেক শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষ এবারও বংশপরম্পরায় পালন করছেন তাঁদের প্রানের উৎসব কারাম। তাঁদের মধ্যে সাঁওতাল, ওঁরাও, তবে মাহাতো ছাড়া আদিবাসি অনান্য সম্প্রদায় তাঁদের নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি ও বিশ্বাসে কারাম উৎসব পালন করে থাকেন। তবে চলনবিল জনপদে মাহাতো সম্প্রদায়ের লোকজনই নানা আয়োজনে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে বেশি কারাম পূজা বা উৎসব করে থাকেন।
জানা গেছে, তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাসমতে পরিবারের মঙ্গল কামনায় এদিন পূজা-অর্চনার পাশাপাশি তাঁরা নির্মল আনন্দে মেতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরও গতকাল বুধবার সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া; নাটোরের সিংড়াসহ সাতটি উপজেলার আদিবাসি অধ্যুষিত প্রায় ৪৫ থেকে ৫০টি গ্রামে কিছু স্থানে বড় আকারে। আবার কিছু স্থানে ছোট আকারে। আর বড় ছোট যাই হোক কারাম উৎসব চলনলিাঞ্চলের আদিবাসি পল্লিতে রং ছড়াবে উৎসবের আমেজে এটাই বাস্তবতা। সমতলে বসবাসরত আদিবাসীরা কারাম উৎসব ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশীতে পালন করে থাকেন। সাধারণত গ্রামের খোলা মাঠে কারাম গাছের বড় বড় ডাল মাটিতে পুঁতে তাতে নানা ধরনের ফুল দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। পাশাপাশি মাটির প্রদীপ বা দিয়ালী জ্বালিয়ে সারাদিন এমনকি গভীর রাত অবদি চলে তাঁদের নানা ধরনের পূজা ও উৎসব আয়োজন। এতে শামিল হন আদিবাসি পল্লির শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী নারী-পুরুষ সদস্য।
আদিবাসি শিক্ষার্থী মৌমিতা মাহাতো জানান,কারাম নামক গাছের ডাল কেটে বিভিন্ন প্রাচীন রীতি- নীতি মেনে এ উৎসব করা হয়। এর নাম কারাম উৎসব বা ডাল গেড়ে পূজা করা হয়। তাই এটির কোথাও কোথাও ডাল পূজা নামেও সমধিক পরিচিতি আছে বৈকি। আগে চলনবিল এলাকার আদিবাসী পল্লিতে কারাম উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা চলত পাঁচ দিন। কোথাও কোথাও সাত দিন ধরে এ অনুষ্ঠান হতো। শুরুর দিন থেকেই যাঁরা কারাম পূজায় অংশগ্রহণ করেন (কেরমেতি) তাঁদের আমিষ জাতীয় খাবার, হলুদ, তেল ও সব ধরনের মসলা জাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হয়। কেরমেতি বলতে যাঁরা কারাম পূজায় অংশ গ্রহন করেন তাঁদের বোঝায়। তাঁরা বিশ্বাস করেন, যদি এই খাবার পদ্ধতির কেউ অনিয়ম করেন তাহলে তাঁর অংশের বীজের অঙ্কুরোদ্গম হবে না।
আদিবাসীদের ভাষায় জাঁওয়া বলতে বোঝায় মাটি, বালি, মুং, কুর্থি, ছোলা ইত্যাদি দিয়ে চারা গাছের অঙ্কুরোদ্গমের যে ডালা তৈরি করা হয় তাই। এটি বৃহৎ অর্থে বৃক্ষের তথা কৃষির বিভিন্ন বীজের অঙ্কুরোদ্গম, সন্তান স্নেহে লালন-পালন ও সংরক্ষণকেই বুঝিয়ে থাকে। কারাম উৎসবে মূলত বীজের অঙ্কুরোদ্গম, বীজ থেকে চারা তৈরি, সন্তান স্নেহে লালন-পালন ও সংরক্ষণ যা প্রতীকি অর্থে প্রকৃতিকে বন্দনা করাকেই বোঝায়। কারাম উপলক্ষে বিভিন্ন রকম আচার ও আদিবাসিদের নিজস্ব ভাষায় গীতের মাধ্যমে জাঁওয়া তোলা হয়। অর্থাৎ প্রণ- প্রকৃতির বন্দনা করা হয়। নিয়মিত পরিচর্যায় বীজ গুলো এক সময় দুই পাতা বিশিষ্ট হলুদাভ সবুজ চারা গাছে পরিণত হয়। শেষের দিন কেরমেতিরা সন্ধ্যায় বাড়ির আঙিনায় কারাম ডাল গেড়ে শাপলা ফুল, শসা, ফিতা প্রভৃতি দিয়ে সাজিয়ে, ডালের গোড়ায় ডালাগুলো রেখে প্রদীপ জ্বালিয়ে ও বরণডালা সজ্জিত কাঁসার থালা নিয়ে অধীর আগ্রহে তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রথা বুকে লালন করে পূজায় মনোনিবেশ করেন। আর ওই রাতেই পূজার কাজ শেষ হয়; যা বুধবার গভীর রাতে শেষ হবে।
পাশাপাশি কারাম উৎসবে রঙের ছটা ছড়াবে আদিবাসিদের নিজস্ব সংস্কৃতি ঝুমুর নাচের সুর মূচ্ছনায়।