সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ১২০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
পাচার করা অর্থ দিয়ে দুবাইয়ে ২২৬টি ফ্ল্যাট কেনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ ও পরিচালনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার দাবি করেছে পুলিশের ইউনিটটি।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের কোতয়ালী থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এ মামলায় জাবেদ ও রুকমিলাসহ নাম ও পরিচয় না দিয়ে আরও ৫-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাবেকমন্ত্রী জাবেদ ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন স্থানে ২২৬টি ফ্ল্যাট কেনেন, যার মূল্য ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ১৬৮ দিরহাম। এছাড়া তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের নামে দুবাইয়ে দুটি সম্পত্তির তথ্য পাওয়া যায়, যেগুলোর মূল্য ২২ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ দিরহাম।
অনুসন্ধানে জাবেদের নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে দুবাই ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংকে দুটিসহ মোট চারটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে সিআইডি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন অঙ্কের দিরহাম ও মার্কিন ডলারের লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানান্তরের সময়ের বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৩১১ কোটি ২৬ লাখ ৬ হাজার ৭৯৫ টাকা।
অনুসন্ধানের বরাতে সিআইডি বলছে, জাবেদ দম্পতি এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পারস্পরিক যোগসাজসে দুবাইয়ের রাস আল খাইমাহ ইকোনোমিক জোনের অনুমতিক্রমে বিল্ডিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশান ম্যাটারিয়াল প্রোডাক্ট ব্যবসার জন্য জেবা ট্রেডিং এফজেডই এবং কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবসার জন্য র্যাপিড র্যাপ্টর এফজেডই নামে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, বিনিয়োগ ও পরিচালনার তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনার ভিত্তিতে সিআইডি বলছে, বিদেশে কোম্পানি নিবন্ধন, বিনিয়োগ ও সম্পত্তি অর্জনের জন্য তারা কোনো অনুমোদন নেননি। এভাবে জাবেদ বিদেশে সম্পত্তি ক্রয়, কোম্পানি নিবন্ধন এবং ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা করার মাধ্যমে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা আরব আমিরাতে পাচার করেছেন, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচনায় ‘অনুসন্ধান শেষে’ মামলাটি করা হয়েছে বলে সিআইডির ভাষ্য।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুদকের একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে জাবেদ এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ১২০টি হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত। এসব হিসাবে ৪৪ কোটি ২৪ লাখ ৭০ হাজার ৪৭০ টাকা রয়েছে।
২০২৪ সালের অগাস্টে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল ২০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে তার ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক।
এছাড়া জাবেদ ও তার স্ত্রীর নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি সম্পত্তিসহ অন্যান্য দেশে স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি গত ৫ মার্চ তাদের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দেন আদালত। এসব হিসাবে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকার বেশি জমা আছে। একই সঙ্গে তাদের নামে থাকা ১০২ কোটি টাকার শেয়ার ও ৯৫৭ বিঘা জমি জব্দের আদেশও দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর আদালত জাবেদ ও রুকমিলার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করে।
সে বছর ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জাবেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। এর জবাবে কয়েক মাস পর আওয়ামী লীগের এ নেতা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, তার বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু পাকিস্তান আমল থেকেই বিদেশে ব্যবসা করেছেন। তিনি সেই ব্যবসার উত্তরাধিকারী। যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার সময়ও তিনি ব্যবসা করেছেন। যুক্তরাজ্যে তার আয়কর নথিও আছে।
ওই বছর ৩১ অক্টোবর সিআইডির তরফে জানানো হয়, বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে জাবেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি। এর ধারাবাহিকতায় প্রায় ১০ মাস পেরিয়ে এসে অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করল সংস্থাটি।
চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি প্রথম মেয়াদে ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং পরের মেয়াদে এক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। শিল্প প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন জাবেদ। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তিনবারের সভাপতি ছিলেন।
বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ১২০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
পাচার করা অর্থ দিয়ে দুবাইয়ে ২২৬টি ফ্ল্যাট কেনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ ও পরিচালনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার দাবি করেছে পুলিশের ইউনিটটি।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের কোতয়ালী থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এ মামলায় জাবেদ ও রুকমিলাসহ নাম ও পরিচয় না দিয়ে আরও ৫-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাবেকমন্ত্রী জাবেদ ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন স্থানে ২২৬টি ফ্ল্যাট কেনেন, যার মূল্য ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ১৬৮ দিরহাম। এছাড়া তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের নামে দুবাইয়ে দুটি সম্পত্তির তথ্য পাওয়া যায়, যেগুলোর মূল্য ২২ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ দিরহাম।
অনুসন্ধানে জাবেদের নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে দুবাই ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংকে দুটিসহ মোট চারটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে সিআইডি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন অঙ্কের দিরহাম ও মার্কিন ডলারের লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানান্তরের সময়ের বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৩১১ কোটি ২৬ লাখ ৬ হাজার ৭৯৫ টাকা।
অনুসন্ধানের বরাতে সিআইডি বলছে, জাবেদ দম্পতি এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পারস্পরিক যোগসাজসে দুবাইয়ের রাস আল খাইমাহ ইকোনোমিক জোনের অনুমতিক্রমে বিল্ডিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশান ম্যাটারিয়াল প্রোডাক্ট ব্যবসার জন্য জেবা ট্রেডিং এফজেডই এবং কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবসার জন্য র্যাপিড র্যাপ্টর এফজেডই নামে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, বিনিয়োগ ও পরিচালনার তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনার ভিত্তিতে সিআইডি বলছে, বিদেশে কোম্পানি নিবন্ধন, বিনিয়োগ ও সম্পত্তি অর্জনের জন্য তারা কোনো অনুমোদন নেননি। এভাবে জাবেদ বিদেশে সম্পত্তি ক্রয়, কোম্পানি নিবন্ধন এবং ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা করার মাধ্যমে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা আরব আমিরাতে পাচার করেছেন, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচনায় ‘অনুসন্ধান শেষে’ মামলাটি করা হয়েছে বলে সিআইডির ভাষ্য।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুদকের একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে জাবেদ এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ১২০টি হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত। এসব হিসাবে ৪৪ কোটি ২৪ লাখ ৭০ হাজার ৪৭০ টাকা রয়েছে।
২০২৪ সালের অগাস্টে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল ২০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে তার ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক।
এছাড়া জাবেদ ও তার স্ত্রীর নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি সম্পত্তিসহ অন্যান্য দেশে স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি গত ৫ মার্চ তাদের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দেন আদালত। এসব হিসাবে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকার বেশি জমা আছে। একই সঙ্গে তাদের নামে থাকা ১০২ কোটি টাকার শেয়ার ও ৯৫৭ বিঘা জমি জব্দের আদেশও দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর আদালত জাবেদ ও রুকমিলার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করে।
সে বছর ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জাবেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। এর জবাবে কয়েক মাস পর আওয়ামী লীগের এ নেতা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, তার বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু পাকিস্তান আমল থেকেই বিদেশে ব্যবসা করেছেন। তিনি সেই ব্যবসার উত্তরাধিকারী। যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার সময়ও তিনি ব্যবসা করেছেন। যুক্তরাজ্যে তার আয়কর নথিও আছে।
ওই বছর ৩১ অক্টোবর সিআইডির তরফে জানানো হয়, বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে জাবেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি। এর ধারাবাহিকতায় প্রায় ১০ মাস পেরিয়ে এসে অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করল সংস্থাটি।
চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি প্রথম মেয়াদে ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং পরের মেয়াদে এক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। শিল্প প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন জাবেদ। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তিনবারের সভাপতি ছিলেন।