ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেছেন, বাংলাদেশে তাদের মূল বার্তা একটাই- ‘সব সংস্কার টেকসই হতে হবে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং ক্ষমতার প্রয়োগের ধরনকে গভীরভাবে সংস্কার করতে হবে। আর আমি নিশ্চিত যে নাগরিক সমাজের নজরদারির মাধ্যমে এ সংস্কার সফল হবে।’
বৃহস্পতিবার,(০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ট্র্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ এ মন্তব্য করেন। এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের, আউটরিচ এবং কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এক সাংবাদিক জানতে চান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর টিআই বাংলাদেশে প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে কিনা?
এর জবাবে ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, ‘একেবারেই না। দুর্নীতি বাংলাদেশের মতো প্রতিটি দেশেই রয়েছে। যেখানে ক্ষমতা থাকবে, সেখানে অপব্যবহারের প্রলোভনও থাকবে। তাই নাগরিক সমাজ সবসময় অপরিহার্য। টিআই বাংলাদেশ এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক।’
টিআইবি বলছে, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বৈশ্বিক ও জাতীয় পর্যায়ের অভিজ্ঞতা বিনিময়, টিআইবির কার্যক্রম, সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জগুলোর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বিনিময় তার এ সফরের মূল উদ্দেশ্য।
তিন দিনের সফরে গত সোমবার বাংলাদেশে আসেন বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা- টিআইয়ের আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ। এটিই তার প্রথম বাংলাদেশ সফর।
বাংলাদেশ সফরের মূল উদ্দেশ্য সর্ম্পকে ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, এটি দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি চ্যাপ্টার সফরের অংশ-মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। তিনি এখানে এসেছেন দুর্নীতিবিরোধী বৈশ্বিক আন্দোলনের পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি প্রদর্শনের জন্য।
দুর্নীতি সম্পর্কিত নির্দিষ্ট অভিযোগ সম্পর্কে মন্তব্য করেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা টিআইবির দায়িত্ব। তবে সাধারণভাবে বলবো- প্রতিটি দেশে তদন্ত, বিচার ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা অপরিহার্য।’
সফরের অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ।
সাক্ষাতের অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এসিসি (দুদক), প্রধান বিচারপতি এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছি। প্রতিটি বৈঠকেই আমি অনুভব করেছি যে- তারা রূপান্তরের এ যাত্রা সফল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। চ্যালেঞ্জ অনেক বড়, তবে তাদের আন্তরিক ইচ্ছা আছে এগুলো মোকাবিলা করার।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ
পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে টিআইবি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে কিনা জানতে সংস্থাটির চেয়ারপারসন বলেন, তার ধারণা, ১৫ বছরে বছরে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে। এটি বৈশ্বিক দুর্নীতির অর্থনীতির অংশ। এর সমাধান হলো তাদের জানতে হবে টাকা কোথায় গেছে। এজন্য দরকার ‘বেনিফিসিয়াল ওনারশিপ ট্রান্সপারেসি’।
আইনের মাধ্যমে প্রকৃত মালিক কে, তা জানা জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও অপরিহার্য। সম্প্রতি লন্ডনে টিআইবির উদ্যোগে প্রায় ১৮৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এখন তা বাংলাদেশের জনগণের কাছে ফিরিয়ে আনা জরুরি।’
তিন দিনের সফরে টিআইবির কর্মী, টিআইবির উদ্যোগে দেশের ৪৫টি অঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবাভিত্তিক সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি এবং ৬৫টি ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ফ্রাঁসোয়া বলেন, ‘আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি আমাদের বাংলাদেশের অংশ কতটা প্রাণবন্ত। আমরা বিশ্বজুড়ে ১০০টিরও বেশি দেশে আছি, এর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় (টিআইবি)।’
বাংলাদেশের তরুণ কর্মীদের উদ্দীপনা ও নিষ্ঠা তাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি সারাদেশ থেকে আসা সংশ্লিষ্ট নাগরিক কমিটির সভাপতি এবং যুব কমিটির নির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। এটি বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ কতটা সক্রিয় ও প্রাণবন্ত তা প্রমাণ করে।’
তিনি গভীর আগ্রহ নিয়ে গত বছর বাংলাদেশে তরুণ, নারী, শ্রমজীবী মানুষসহ সাধারণ নাগরিকদের নেতৃত্বে এক কর্তৃত্ববাদী ও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক গণআন্দোলন পর্যবেক্ষণ করেছেন বলেও জানান।
বিশ্বজুড়ে যেখানে অনেক দেশে কর্তৃত্ববাদ বেড়ে চলেছে, সেখানে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম ছিল মন্তব্য করে ফ্রাঁসোয়া বলেন, ‘তাই আমাদের বৈশ্বিক নাগরিক সমাজ, যেটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছে, তারা বাংলাদেশে কী ঘটছে তা প্রশংসার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।’
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেছেন, বাংলাদেশে তাদের মূল বার্তা একটাই- ‘সব সংস্কার টেকসই হতে হবে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং ক্ষমতার প্রয়োগের ধরনকে গভীরভাবে সংস্কার করতে হবে। আর আমি নিশ্চিত যে নাগরিক সমাজের নজরদারির মাধ্যমে এ সংস্কার সফল হবে।’
বৃহস্পতিবার,(০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ট্র্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ এ মন্তব্য করেন। এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের, আউটরিচ এবং কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এক সাংবাদিক জানতে চান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর টিআই বাংলাদেশে প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে কিনা?
এর জবাবে ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, ‘একেবারেই না। দুর্নীতি বাংলাদেশের মতো প্রতিটি দেশেই রয়েছে। যেখানে ক্ষমতা থাকবে, সেখানে অপব্যবহারের প্রলোভনও থাকবে। তাই নাগরিক সমাজ সবসময় অপরিহার্য। টিআই বাংলাদেশ এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক।’
টিআইবি বলছে, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বৈশ্বিক ও জাতীয় পর্যায়ের অভিজ্ঞতা বিনিময়, টিআইবির কার্যক্রম, সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জগুলোর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বিনিময় তার এ সফরের মূল উদ্দেশ্য।
তিন দিনের সফরে গত সোমবার বাংলাদেশে আসেন বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা- টিআইয়ের আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ। এটিই তার প্রথম বাংলাদেশ সফর।
বাংলাদেশ সফরের মূল উদ্দেশ্য সর্ম্পকে ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, এটি দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি চ্যাপ্টার সফরের অংশ-মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। তিনি এখানে এসেছেন দুর্নীতিবিরোধী বৈশ্বিক আন্দোলনের পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি প্রদর্শনের জন্য।
দুর্নীতি সম্পর্কিত নির্দিষ্ট অভিযোগ সম্পর্কে মন্তব্য করেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা টিআইবির দায়িত্ব। তবে সাধারণভাবে বলবো- প্রতিটি দেশে তদন্ত, বিচার ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা অপরিহার্য।’
সফরের অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ।
সাক্ষাতের অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এসিসি (দুদক), প্রধান বিচারপতি এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছি। প্রতিটি বৈঠকেই আমি অনুভব করেছি যে- তারা রূপান্তরের এ যাত্রা সফল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। চ্যালেঞ্জ অনেক বড়, তবে তাদের আন্তরিক ইচ্ছা আছে এগুলো মোকাবিলা করার।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ
পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে টিআইবি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে কিনা জানতে সংস্থাটির চেয়ারপারসন বলেন, তার ধারণা, ১৫ বছরে বছরে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে। এটি বৈশ্বিক দুর্নীতির অর্থনীতির অংশ। এর সমাধান হলো তাদের জানতে হবে টাকা কোথায় গেছে। এজন্য দরকার ‘বেনিফিসিয়াল ওনারশিপ ট্রান্সপারেসি’।
আইনের মাধ্যমে প্রকৃত মালিক কে, তা জানা জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও অপরিহার্য। সম্প্রতি লন্ডনে টিআইবির উদ্যোগে প্রায় ১৮৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এখন তা বাংলাদেশের জনগণের কাছে ফিরিয়ে আনা জরুরি।’
তিন দিনের সফরে টিআইবির কর্মী, টিআইবির উদ্যোগে দেশের ৪৫টি অঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবাভিত্তিক সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি এবং ৬৫টি ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ফ্রাঁসোয়া বলেন, ‘আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি আমাদের বাংলাদেশের অংশ কতটা প্রাণবন্ত। আমরা বিশ্বজুড়ে ১০০টিরও বেশি দেশে আছি, এর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় (টিআইবি)।’
বাংলাদেশের তরুণ কর্মীদের উদ্দীপনা ও নিষ্ঠা তাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি সারাদেশ থেকে আসা সংশ্লিষ্ট নাগরিক কমিটির সভাপতি এবং যুব কমিটির নির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। এটি বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ কতটা সক্রিয় ও প্রাণবন্ত তা প্রমাণ করে।’
তিনি গভীর আগ্রহ নিয়ে গত বছর বাংলাদেশে তরুণ, নারী, শ্রমজীবী মানুষসহ সাধারণ নাগরিকদের নেতৃত্বে এক কর্তৃত্ববাদী ও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক গণআন্দোলন পর্যবেক্ষণ করেছেন বলেও জানান।
বিশ্বজুড়ে যেখানে অনেক দেশে কর্তৃত্ববাদ বেড়ে চলেছে, সেখানে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম ছিল মন্তব্য করে ফ্রাঁসোয়া বলেন, ‘তাই আমাদের বৈশ্বিক নাগরিক সমাজ, যেটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছে, তারা বাংলাদেশে কী ঘটছে তা প্রশংসার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।’