ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সন্ত্রাসবিরোধ আইনের মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা লতিফ সিদ্দিকী এবং সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়েছে আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম হাসিব উল্লাস পিয়াস বৃহস্পতিবার,(০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই জিন্নাত আলী এ তথ্য দিয়েছেন।
এ সময় পান্নার জামিন শুনানিতে মারধরের শিকার হয়েছেন সময় টিভির সাংবাদিক মোহাম্মদ সিয়াম। তাকে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরেছেন এজলাসে থাকা কয়েকজন আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধ আইনের মামলায় সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে আদালতে হাজির করা হয়। আজ নিয়ে তিনবার তার জামিনের আবেদন করা হয়। তবে আজ আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে আদালতে হাজির করা হয়নি। আজই প্রথমবারের মতো তার জামিনের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম হাসিব উল্লাস পিয়াস তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে দেয়।
পান্নার জামিন শুনানিতে আরেক সাংবাদিককে মারধর
সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার জামিন শুনানিতে মারধরের শিকার হয়েছেন সময় টিভির সাংবাদিক মোহাম্মদ সিয়াম। এ সময় ঢাকার মহানগর হাকিমের আদালতে তাকে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরেছেন এজলাসে থাকা কয়েকজন আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে সাংবাদিক পান্নাকে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের অষ্টম তলায় ৩০ নম্বর এজলাসে নেয়া হয়। পান্নাকে তড়িৎ গতিতে কাঠগড়ায় নেয়ার পর হেলমেট খুলে দেয়া হয়। তখন পুলিশের উদ্দেশে পান্না বলেন, ‘আপনারা এমন কেন করছেন, আমি তো আপনাদের শত্রু নই।’
এ সময় পান্নার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ জিজ্ঞেস করেন, ‘ভাই আপনাকে কি জেলের ভেতরে নির্যাতন করা হয়েছে?’ সাংবাদিক পান্না উত্তর দেন, ‘না।’ তখন মুক্তাদির রশীদকে এজলাস থেকে বের হয়ে যেতে ধমকাতে থাকেন আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি।
এ সময় মুক্তাদির রশীদ বলেন, ‘আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেয়ার ক্ষমতা কেবলমাত্র বিচারকের আছে। উনি বললে বের হয়ে যাব। উনাকে বলতে দিন।’
এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ওই আইনজীবী মুক্তাদিরকে মারতে উদ্যত হলে তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন পাশে থাকা সাংবাদিক সিয়াম। এরই মাঝে বিচারক এজলাসে ওঠেন। জামিন শুনানি শুরু হয়। সিয়াম ওই আইনজীবীকে বলেন, ‘উনি বহিরাগত না, একজন সাংবাদিক।’ এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বেঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে উঠে কানের ওপর ঘুষি মারেন আইনজীবী মাহি। সিয়াম তার হাতে থাকা মাইক্রোফোন উঠিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন।
তবে আইনজীবী তাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে আসেন। সিয়াম কিছু বুঝে ওঠার আগেই আইনজীবীর কয়েকজন সহযোগী তাকে ঘিরে মারধর শুরু করেন। যে যেভাবে পেরেছে, সিয়ামকে মেরেছেন। চড়, থাপ্পড়, কিল, ঘুষি, লাথিতে রক্তাক্ত হন সিয়াম। এ পরিস্থিতি দেখে এজলাস থেকে নেমে খাসকামড়ায় চলে যান বিচারক। এ সময় প্রসিকিউশনের পক্ষে থাকা কাইয়ুম হোসেন নয়ন ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে তাকে সাক্ষীর কাঠগড়ার কাছে নিয়ে যান। ওই আইনজীবীদের চাপে মুক্তাদির রশীদকেও এজলাস কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়।
পরে সিয়াম বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই বিচারকের সামনে মব সৃষ্টি করে আমাকে মারধর করলো কয়েকজন আইনজীবী। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
৩টা ২৫ মিনিটে বিচারক আবার এজলাসে আসেন। এরপর শুনানি নিয়ে আদালত লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক পান্নার জামিন আবেদন নাকচ করে দেন।
অবশ্য আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি সাংবাদিক মারধরের ঘটনাকে ‘অনাকাক্সিক্ষত’ বর্ণনা করেন। তিনি দাবি করেন, মারধরের সঙ্গে তিনি জড়িত নন।
গত ২৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান নিয়ে এক আলোচনা সভায় ‘মব’ হামলার শিকার লতিফ সিদ্দিকী, সাংবাদিক পান্নাসহ ১৬ জনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। পরের দিন শুক্রবার শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধ আইনে করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল বুধবার লতিফ সিদ্দিকীর স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদন না পাওয়ায় জামিন আবেদন করেও তা প্রত্যাহার করে নেন আইনজীবী। এদিন আবারও লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে মোহাম্মদ কামরুল হোসেন ও ইফফাত জাহান রনি জামিন চেয়ে আবেদন করেন। সাংবাদিক পান্নার পক্ষে ফারজানা ইয়াসমিন রাখী জামিন আবেদন করেন।
আইনজীবী কামরুল হোসেন আদালতে বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, এটা কারও অজানা না। ঘরোয়া পরিবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক, সমাজের বিশিষ্ট লোকদের ‘মব ভায়োলেন্স’ করে উত্তেজিত হয়ে মারধর করে। ‘তিনি কিন্তু আওয়ামী লীগের আমলেও কারাগারে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের কথা বললেই ফ্যাসিস্ট, আওয়ামী বানিয়ে দেন। তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন আওয়ামী লীগের। অনেক দলে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে। ৮৭ বছর বয়সের একজন লোক। তাছাড়া তিনি অসুস্থ। তার জামিনের প্রার্থনা করছি।’
সাংবাদিক পান্নার পক্ষে ফারজানা ইয়াসমিন রাখী বলেন, ‘এজাহারে সাংবাদিক পান্নার বিরুদ্ধে একটা ‘সিঙ্গেল লাইনও’ নেই। আলোচনা সভা করার আগে কিন্তু ডিএমপির অনুমতি ছিল। ‘যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কনসার্ন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভাবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতে সমাজের ভদ্র স্বভাবের মানুষ লাঞ্ছিত হলেন। যারা লাঞ্ছিত করলো তাদের বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে যারা লাঞ্ছিত হলেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলো। তার জামিনের প্রার্থনা করছি।’
শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেয়।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সন্ত্রাসবিরোধ আইনের মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা লতিফ সিদ্দিকী এবং সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়েছে আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম হাসিব উল্লাস পিয়াস বৃহস্পতিবার,(০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই জিন্নাত আলী এ তথ্য দিয়েছেন।
এ সময় পান্নার জামিন শুনানিতে মারধরের শিকার হয়েছেন সময় টিভির সাংবাদিক মোহাম্মদ সিয়াম। তাকে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরেছেন এজলাসে থাকা কয়েকজন আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধ আইনের মামলায় সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে আদালতে হাজির করা হয়। আজ নিয়ে তিনবার তার জামিনের আবেদন করা হয়। তবে আজ আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে আদালতে হাজির করা হয়নি। আজই প্রথমবারের মতো তার জামিনের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম হাসিব উল্লাস পিয়াস তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে দেয়।
পান্নার জামিন শুনানিতে আরেক সাংবাদিককে মারধর
সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার জামিন শুনানিতে মারধরের শিকার হয়েছেন সময় টিভির সাংবাদিক মোহাম্মদ সিয়াম। এ সময় ঢাকার মহানগর হাকিমের আদালতে তাকে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরেছেন এজলাসে থাকা কয়েকজন আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে সাংবাদিক পান্নাকে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের অষ্টম তলায় ৩০ নম্বর এজলাসে নেয়া হয়। পান্নাকে তড়িৎ গতিতে কাঠগড়ায় নেয়ার পর হেলমেট খুলে দেয়া হয়। তখন পুলিশের উদ্দেশে পান্না বলেন, ‘আপনারা এমন কেন করছেন, আমি তো আপনাদের শত্রু নই।’
এ সময় পান্নার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ জিজ্ঞেস করেন, ‘ভাই আপনাকে কি জেলের ভেতরে নির্যাতন করা হয়েছে?’ সাংবাদিক পান্না উত্তর দেন, ‘না।’ তখন মুক্তাদির রশীদকে এজলাস থেকে বের হয়ে যেতে ধমকাতে থাকেন আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি।
এ সময় মুক্তাদির রশীদ বলেন, ‘আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেয়ার ক্ষমতা কেবলমাত্র বিচারকের আছে। উনি বললে বের হয়ে যাব। উনাকে বলতে দিন।’
এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ওই আইনজীবী মুক্তাদিরকে মারতে উদ্যত হলে তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন পাশে থাকা সাংবাদিক সিয়াম। এরই মাঝে বিচারক এজলাসে ওঠেন। জামিন শুনানি শুরু হয়। সিয়াম ওই আইনজীবীকে বলেন, ‘উনি বহিরাগত না, একজন সাংবাদিক।’ এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বেঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে উঠে কানের ওপর ঘুষি মারেন আইনজীবী মাহি। সিয়াম তার হাতে থাকা মাইক্রোফোন উঠিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন।
তবে আইনজীবী তাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে আসেন। সিয়াম কিছু বুঝে ওঠার আগেই আইনজীবীর কয়েকজন সহযোগী তাকে ঘিরে মারধর শুরু করেন। যে যেভাবে পেরেছে, সিয়ামকে মেরেছেন। চড়, থাপ্পড়, কিল, ঘুষি, লাথিতে রক্তাক্ত হন সিয়াম। এ পরিস্থিতি দেখে এজলাস থেকে নেমে খাসকামড়ায় চলে যান বিচারক। এ সময় প্রসিকিউশনের পক্ষে থাকা কাইয়ুম হোসেন নয়ন ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে তাকে সাক্ষীর কাঠগড়ার কাছে নিয়ে যান। ওই আইনজীবীদের চাপে মুক্তাদির রশীদকেও এজলাস কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়।
পরে সিয়াম বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই বিচারকের সামনে মব সৃষ্টি করে আমাকে মারধর করলো কয়েকজন আইনজীবী। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
৩টা ২৫ মিনিটে বিচারক আবার এজলাসে আসেন। এরপর শুনানি নিয়ে আদালত লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক পান্নার জামিন আবেদন নাকচ করে দেন।
অবশ্য আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি সাংবাদিক মারধরের ঘটনাকে ‘অনাকাক্সিক্ষত’ বর্ণনা করেন। তিনি দাবি করেন, মারধরের সঙ্গে তিনি জড়িত নন।
গত ২৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান নিয়ে এক আলোচনা সভায় ‘মব’ হামলার শিকার লতিফ সিদ্দিকী, সাংবাদিক পান্নাসহ ১৬ জনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। পরের দিন শুক্রবার শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধ আইনে করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল বুধবার লতিফ সিদ্দিকীর স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদন না পাওয়ায় জামিন আবেদন করেও তা প্রত্যাহার করে নেন আইনজীবী। এদিন আবারও লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে মোহাম্মদ কামরুল হোসেন ও ইফফাত জাহান রনি জামিন চেয়ে আবেদন করেন। সাংবাদিক পান্নার পক্ষে ফারজানা ইয়াসমিন রাখী জামিন আবেদন করেন।
আইনজীবী কামরুল হোসেন আদালতে বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, এটা কারও অজানা না। ঘরোয়া পরিবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক, সমাজের বিশিষ্ট লোকদের ‘মব ভায়োলেন্স’ করে উত্তেজিত হয়ে মারধর করে। ‘তিনি কিন্তু আওয়ামী লীগের আমলেও কারাগারে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের কথা বললেই ফ্যাসিস্ট, আওয়ামী বানিয়ে দেন। তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন আওয়ামী লীগের। অনেক দলে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে। ৮৭ বছর বয়সের একজন লোক। তাছাড়া তিনি অসুস্থ। তার জামিনের প্রার্থনা করছি।’
সাংবাদিক পান্নার পক্ষে ফারজানা ইয়াসমিন রাখী বলেন, ‘এজাহারে সাংবাদিক পান্নার বিরুদ্ধে একটা ‘সিঙ্গেল লাইনও’ নেই। আলোচনা সভা করার আগে কিন্তু ডিএমপির অনুমতি ছিল। ‘যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কনসার্ন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভাবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতে সমাজের ভদ্র স্বভাবের মানুষ লাঞ্ছিত হলেন। যারা লাঞ্ছিত করলো তাদের বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে যারা লাঞ্ছিত হলেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলো। তার জামিনের প্রার্থনা করছি।’
শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেয়।