ভিটেমাটি ছাড়ার শোকছায়া অশীতিপর এই বৃদ্ধার চোখেমুখে -সংবাদ
গ্রামের সরু রাস্তার দু’পাশে ঝাড়-জঙ্গল আর শিমুলতলার ছায়া। ভোর বেলায় শিশিরভেজা ঘাসের ওপর পায়ের শব্দে ভরে ওঠে পরিবেশ। সেই পথ দিয়েই যাচ্ছে আদিবাসীরা- যেন গ্রাম ছেড়ে যাওয়া এক অন্তহীন মিছিল। ৫৩ বছর ধরে উৎসবের আলো, হাসিকান্না আর ঝুমুরের বোল ভরিয়ে রেখেছিল যে ভিটেটুকু, আজ তা শূন্য হয়ে যাচ্ছে। পুরুষেরা মাথায় বোঝা নিয়েছে, মহিলারা বাচ্চাদের হাত ধরে টেনে নিচ্ছে। কেউ কাঁধে পুঁটলি, কেউ গলায় আঁচল দিয়ে অশ্রু মুছছে। শিশুদের চোখে অবুঝ বিস্ময়- কেন তারা তাদের পৃথিবী ফেলে যাচ্ছে, তার কোনো উত্তর নেই।
মহল্লার শেষে দাঁড়িয়ে আছেন উদুবালা দেবী। বয়স আশির ঘরে পেরিয়েছে। মুখজুড়ে অজস্র ভাঁজ, চোখে নেমে আসা আলো। এই উঠোনই তাঁর শেষ স্মৃতি হাতছাড়া হয়ে গেছে। কোথায় যাবেন জানেন না তিনি। জানালেন, তাঁর গন্তব্য অজানা পথ। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলছেন, এতো বছরের বসতি সহজে কি ছাড়া যায়?
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়া। ৫৩ বছর আগে এখানে ১৬ কাঠা জমিতে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেছিলেন পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের ছয়টি পরিবার। তিন প্রজন্মে ছয়টি বাড়ি বেড়ে ১৬টি হয়েছিল। এখন সেই ভিটে থেকে উচ্ছেদের আয়োজন করছেন সাজ্জাদ আলী নামে এক ব্যক্তি। নগরের হড়গ্রাম এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ আলীর দাবি, তিনি ১৯৯৪ সালে এই জমি কিনেছেন।
ঘরভিটে ছাড়ার আগে পরিবারগুলোকে আজ শুক্রবার ‘খাসি খাওয়ানোর’ কথা ছিল। শুধু তাই নয়, উচ্ছেদের শিকার পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের জন্য মোট ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার,(০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) পুলিশ, মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে হাজির হন। আপাতত উচ্ছেদের আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। জমির মালিকানা নিয়ে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত পাহাড়িয়া পরিবারগুলো সেখানেই থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে ইতিমধ্যে তিনটি পরিবার জায়গা ছেড়ে চলে গেছে। এখনো ১৩টি পরিবার রয়েছে। আগামীকাল ভোজ শেষে রোববারের মধ্যে তাঁদের বাড়ি ছাড়তে হবে বলে জানিয়েছিলেন সাজ্জাদ আলী।
পাড়ার বাসিন্দারা জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবার ভারতে চলে গিয়েছিল। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে তাঁরা আর বাড়িঘর পাননি। তখন এক হিন্দু ব্যক্তি তাঁর ১৬ কাঠা জমিতে ছয়টি পরিবারকে বসবাসের সুযোগ দেন। সেই মালিক বহু আগেই মারা গেছেন। এখন সাজ্জাদ আলী দাবি করছেন, মালিক মৃত্যুর আগে জমি তাঁর কাছে বিক্রি করেছিলেন।
দু’বছর আগে সাজ্জাদ আলী তাঁদের বাড়ি ছাড়তে বললে তৎকালীন ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছিলেন। সেদিন সাজ্জাদের কাগজপত্র দেখে কাউন্সিলর বলেন, দলিলটি জাল। তখন কৌশলে কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে পালিয়ে যান সাজ্জাদ। এরপর উচ্ছেদের চেষ্টা বন্ধ থাকে। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর সাজ্জাদ আবার মহল্লায় এসে সবাইকে ঘর ছাড়তে বলেন। পাহাড়িয়ারা রাজি না হলে একপর্যায়ে কিছু টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।
রাজশাহীর হড়গ্রাম মহল্লার এই আদিবাসী পাড়ায় ৫৩ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবার।
পাড়ার বাসিন্দারা বলছেন, পরিস্থিতি এমন যে তাঁরা কারও কাছে যেতে পারছেন না। কাউন্সিলরও নেই। তাই চিন্তাভাবনা করে টাকা নিতে রাজি হন তাঁরা। সাজ্জাদ আলীর হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ছয়টি পরিবার ছিল, তাই প্রতি পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা। পরে তিনি প্রত্যেক বাড়িকে ছয় লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। প্রথমে তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। এরপর ১৫ দিন, ৭ দিন ও ১০ দিন করে সময় দেওয়া হয়। মাসখানেক আগে টাকা দেওয়া হয়েছে। সবশেষ ১০ দিনের সময় শেষ হবে শুক্রবার। সেদিন খাসি কেটে ভোজ দেওয়া হবে। এরপর রোববারের মধ্যে সবাইকে জায়গা ছাড়তে হবে।
প্রথম যে ছয়জন এখানে বাড়ি করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে শুধু ফুলমণি বিশ্বাস বেঁচে আছেন। কথা বলতে পারেন, তবে চোখ বন্ধ রেখেই বলেন। বয়স জানতে চাইলে বললেন, ‘শুধু মনে আছে, রাজশাহীর দারুসার রাইটের সময় (১৯৬২ সাল) এক ছেলের মা হয়েছিলাম।’ কোথায় যাবেন জানতে চাইলে বললেন, ‘কোথায় যাব? গন্তব্য অজানা পথ।’
মহল্লার রুবেল বিশ্বাস, শান্ত বিশ্বাস ও রিংকু বিশ্বাস ঘরবাড়ি ভেঙে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আত্মীয়দের বাড়িতে চলে গেছেন। অন্যরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কেউ গ্রামে জমি কিনেছেন, কিন্তু বাড়ি করার টাকা নেই।
মহল্লার অন্তঃসত্ত্বা নারী পার্বতী রানী বলেন, ‘আমি পোয়াতি। এখন কার বাড়িতে গিয়ে উঠব?’ তরুণ শিপেন বিশ্বাস এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। জানালেন, এ মহল্লায় প্রথম বাড়ি করা ছয়জনের একজন তাঁর দাদা বামনা পাহাড়িয়া। এখানেই জন্ম তাঁর বাবা টুনু বিশ্বাসের। তাঁরাও রোববারের পর জমি ছাড়বেন।
গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশের একটি দল নিয়ে আদিবাসীপাড়ায় আসেন কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি আজিজুল বারী। তিনি পাহাড়িয়াদের প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কেন থানায় যাননি?’ বিশনি বিশ্বাস উত্তর দেন, ‘এখানে জন্ম জায়গা। আমরা যদি এখানে থাকতে পারি, থাকতে চাই। জন্ম জায়গা ছেড়ে কেউ যেতে চায়? কিন্তু আমাদের বলা হয়েছে যদি হাঁটাহাঁটি করি, তাহলে কোনো টাকা পাব না।’
সেখানে ছিলেন সাজ্জাদ আলীর কেয়ারটেকার মো. শাহীন। ওসি সাজ্জাদকে বারবার ফোন করান। একপর্যায়ে দলিল হাতে হাজির হন সাজ্জাদ। দাবি করেন, তিনি ১৯৯৪ সালে জমি কিনেছেন এবং পুনর্বাসন করে জায়গা দখলে নিচ্ছেন। খাসি কেটে খাওয়ানোর বিষয়ে বলেন, ‘তারা এখানে এত দিন ছিল, যাচ্ছে। আমি তাদের মুরগি খাওয়াতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারাই বলেছে খাসি খাওয়াতে হবে।’
এ সময় মানবাধিকার ও আদিবাসী সংগঠনের নেতারাও সেখানে আসেন। ওসি প্রতিটি বাড়ির তালিকা করেন। ১৩টি পরিবার থেকে ১৩ জন প্রতিনিধি এবং সাজ্জাদ আলীকে বিকেল ৫টায় কাশিয়াডাঙ্গা জোনের ডিসি কার্যালয়ে ডাকেন।
পরে সাংবাদিকদের ওসি বলেন, ‘আমি সংবাদমাধ্যমে জেনে এখানে এসেছি। তাঁরা কখনো থানায় আসেননি। এখন নিউজ হওয়ার পর এসেছেন, আমরাও এসেছি। সবাই মিলে সুষ্ঠু সমাধান করব। যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে না, সেভাবেই ব্যবস্থা নেব। আপাতত এখানকার বাসিন্দারা থাকবেন। জমির কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখা হবে।’
ভিটেমাটি ছাড়ার শোকছায়া অশীতিপর এই বৃদ্ধার চোখেমুখে -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গ্রামের সরু রাস্তার দু’পাশে ঝাড়-জঙ্গল আর শিমুলতলার ছায়া। ভোর বেলায় শিশিরভেজা ঘাসের ওপর পায়ের শব্দে ভরে ওঠে পরিবেশ। সেই পথ দিয়েই যাচ্ছে আদিবাসীরা- যেন গ্রাম ছেড়ে যাওয়া এক অন্তহীন মিছিল। ৫৩ বছর ধরে উৎসবের আলো, হাসিকান্না আর ঝুমুরের বোল ভরিয়ে রেখেছিল যে ভিটেটুকু, আজ তা শূন্য হয়ে যাচ্ছে। পুরুষেরা মাথায় বোঝা নিয়েছে, মহিলারা বাচ্চাদের হাত ধরে টেনে নিচ্ছে। কেউ কাঁধে পুঁটলি, কেউ গলায় আঁচল দিয়ে অশ্রু মুছছে। শিশুদের চোখে অবুঝ বিস্ময়- কেন তারা তাদের পৃথিবী ফেলে যাচ্ছে, তার কোনো উত্তর নেই।
মহল্লার শেষে দাঁড়িয়ে আছেন উদুবালা দেবী। বয়স আশির ঘরে পেরিয়েছে। মুখজুড়ে অজস্র ভাঁজ, চোখে নেমে আসা আলো। এই উঠোনই তাঁর শেষ স্মৃতি হাতছাড়া হয়ে গেছে। কোথায় যাবেন জানেন না তিনি। জানালেন, তাঁর গন্তব্য অজানা পথ। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলছেন, এতো বছরের বসতি সহজে কি ছাড়া যায়?
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়া। ৫৩ বছর আগে এখানে ১৬ কাঠা জমিতে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেছিলেন পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের ছয়টি পরিবার। তিন প্রজন্মে ছয়টি বাড়ি বেড়ে ১৬টি হয়েছিল। এখন সেই ভিটে থেকে উচ্ছেদের আয়োজন করছেন সাজ্জাদ আলী নামে এক ব্যক্তি। নগরের হড়গ্রাম এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ আলীর দাবি, তিনি ১৯৯৪ সালে এই জমি কিনেছেন।
ঘরভিটে ছাড়ার আগে পরিবারগুলোকে আজ শুক্রবার ‘খাসি খাওয়ানোর’ কথা ছিল। শুধু তাই নয়, উচ্ছেদের শিকার পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের জন্য মোট ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার,(০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) পুলিশ, মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে হাজির হন। আপাতত উচ্ছেদের আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। জমির মালিকানা নিয়ে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত পাহাড়িয়া পরিবারগুলো সেখানেই থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে ইতিমধ্যে তিনটি পরিবার জায়গা ছেড়ে চলে গেছে। এখনো ১৩টি পরিবার রয়েছে। আগামীকাল ভোজ শেষে রোববারের মধ্যে তাঁদের বাড়ি ছাড়তে হবে বলে জানিয়েছিলেন সাজ্জাদ আলী।
পাড়ার বাসিন্দারা জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবার ভারতে চলে গিয়েছিল। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে তাঁরা আর বাড়িঘর পাননি। তখন এক হিন্দু ব্যক্তি তাঁর ১৬ কাঠা জমিতে ছয়টি পরিবারকে বসবাসের সুযোগ দেন। সেই মালিক বহু আগেই মারা গেছেন। এখন সাজ্জাদ আলী দাবি করছেন, মালিক মৃত্যুর আগে জমি তাঁর কাছে বিক্রি করেছিলেন।
দু’বছর আগে সাজ্জাদ আলী তাঁদের বাড়ি ছাড়তে বললে তৎকালীন ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছিলেন। সেদিন সাজ্জাদের কাগজপত্র দেখে কাউন্সিলর বলেন, দলিলটি জাল। তখন কৌশলে কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে পালিয়ে যান সাজ্জাদ। এরপর উচ্ছেদের চেষ্টা বন্ধ থাকে। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর সাজ্জাদ আবার মহল্লায় এসে সবাইকে ঘর ছাড়তে বলেন। পাহাড়িয়ারা রাজি না হলে একপর্যায়ে কিছু টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।
রাজশাহীর হড়গ্রাম মহল্লার এই আদিবাসী পাড়ায় ৫৩ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবার।
পাড়ার বাসিন্দারা বলছেন, পরিস্থিতি এমন যে তাঁরা কারও কাছে যেতে পারছেন না। কাউন্সিলরও নেই। তাই চিন্তাভাবনা করে টাকা নিতে রাজি হন তাঁরা। সাজ্জাদ আলীর হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ছয়টি পরিবার ছিল, তাই প্রতি পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা। পরে তিনি প্রত্যেক বাড়িকে ছয় লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। প্রথমে তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। এরপর ১৫ দিন, ৭ দিন ও ১০ দিন করে সময় দেওয়া হয়। মাসখানেক আগে টাকা দেওয়া হয়েছে। সবশেষ ১০ দিনের সময় শেষ হবে শুক্রবার। সেদিন খাসি কেটে ভোজ দেওয়া হবে। এরপর রোববারের মধ্যে সবাইকে জায়গা ছাড়তে হবে।
প্রথম যে ছয়জন এখানে বাড়ি করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে শুধু ফুলমণি বিশ্বাস বেঁচে আছেন। কথা বলতে পারেন, তবে চোখ বন্ধ রেখেই বলেন। বয়স জানতে চাইলে বললেন, ‘শুধু মনে আছে, রাজশাহীর দারুসার রাইটের সময় (১৯৬২ সাল) এক ছেলের মা হয়েছিলাম।’ কোথায় যাবেন জানতে চাইলে বললেন, ‘কোথায় যাব? গন্তব্য অজানা পথ।’
মহল্লার রুবেল বিশ্বাস, শান্ত বিশ্বাস ও রিংকু বিশ্বাস ঘরবাড়ি ভেঙে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আত্মীয়দের বাড়িতে চলে গেছেন। অন্যরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কেউ গ্রামে জমি কিনেছেন, কিন্তু বাড়ি করার টাকা নেই।
মহল্লার অন্তঃসত্ত্বা নারী পার্বতী রানী বলেন, ‘আমি পোয়াতি। এখন কার বাড়িতে গিয়ে উঠব?’ তরুণ শিপেন বিশ্বাস এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। জানালেন, এ মহল্লায় প্রথম বাড়ি করা ছয়জনের একজন তাঁর দাদা বামনা পাহাড়িয়া। এখানেই জন্ম তাঁর বাবা টুনু বিশ্বাসের। তাঁরাও রোববারের পর জমি ছাড়বেন।
গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশের একটি দল নিয়ে আদিবাসীপাড়ায় আসেন কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি আজিজুল বারী। তিনি পাহাড়িয়াদের প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কেন থানায় যাননি?’ বিশনি বিশ্বাস উত্তর দেন, ‘এখানে জন্ম জায়গা। আমরা যদি এখানে থাকতে পারি, থাকতে চাই। জন্ম জায়গা ছেড়ে কেউ যেতে চায়? কিন্তু আমাদের বলা হয়েছে যদি হাঁটাহাঁটি করি, তাহলে কোনো টাকা পাব না।’
সেখানে ছিলেন সাজ্জাদ আলীর কেয়ারটেকার মো. শাহীন। ওসি সাজ্জাদকে বারবার ফোন করান। একপর্যায়ে দলিল হাতে হাজির হন সাজ্জাদ। দাবি করেন, তিনি ১৯৯৪ সালে জমি কিনেছেন এবং পুনর্বাসন করে জায়গা দখলে নিচ্ছেন। খাসি কেটে খাওয়ানোর বিষয়ে বলেন, ‘তারা এখানে এত দিন ছিল, যাচ্ছে। আমি তাদের মুরগি খাওয়াতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারাই বলেছে খাসি খাওয়াতে হবে।’
এ সময় মানবাধিকার ও আদিবাসী সংগঠনের নেতারাও সেখানে আসেন। ওসি প্রতিটি বাড়ির তালিকা করেন। ১৩টি পরিবার থেকে ১৩ জন প্রতিনিধি এবং সাজ্জাদ আলীকে বিকেল ৫টায় কাশিয়াডাঙ্গা জোনের ডিসি কার্যালয়ে ডাকেন।
পরে সাংবাদিকদের ওসি বলেন, ‘আমি সংবাদমাধ্যমে জেনে এখানে এসেছি। তাঁরা কখনো থানায় আসেননি। এখন নিউজ হওয়ার পর এসেছেন, আমরাও এসেছি। সবাই মিলে সুষ্ঠু সমাধান করব। যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে না, সেভাবেই ব্যবস্থা নেব। আপাতত এখানকার বাসিন্দারা থাকবেন। জমির কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখা হবে।’