ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
নওগাঁর মহাদেবপুরে অপবাদ দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে জেরা করার ভিডিও ভাইরালের পর লোকলজ্জায় গ্যাসবড়ি সেবন করে আত্মহত্যা করেছেন এক গৃহবধূ। এলাকার ইউপি মেম্বার নিজের জেরা করার ভিডিওটি অন্য এক যুবককে দিয়ে ধারণ করান। বিষয়টি ওই মেম্বার স্বীকার করলেও ঘটনার এক সপ্তাহ পরও এবিষয়ে থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। দুই বছর আর চার বছরের দুই সন্তান রেখে গৃহবধূর মৃত্যুতে তার শোক সন্তপ্ত মা বাবা মানুষ দেখলেই কেঁদে বুক ভাঁসাচ্ছেন।
ওই গৃহবধূ উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের রোদইল আদিবাসী পাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদের মেয়ে ও কালুশহর ডিঙ্গাহার গ্রামের দানেশ আলীর ছেলে আল আমিন জয়েনের স্ত্রী মর্জিনা বেগম (৩০)। গত ২৯ আগস্ট বেলা ১১টায় তিনি গ্যাসবড়ি সেবন করেন। প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে নেয়ার পথে মান্দা ফেরিঘাট এলাকায় তার মৃত্যু হয়।
‘‘গোলাপ ফুল” নামক ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মর্জিনা বেগম ও একটি যুবককে গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এলাকার মেম্বার শাহজাহান আলী কর্কষ ও অশালীন ভাষায় শাহাদৎ আঙ্গুলি উঁচিয়ে মারমুখি হয়ে মর্জিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তিনি জানতে চান সেদিন কোন অবৈধ কাজ হয়েছে কিনা। জবাবে মর্জিনা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ওই ছেলের সাথে তার কোন অবৈধ সম্পর্ক নেই। রাস্তা থেকে আটক করে মারতে মারতে তাকে বাড়ির ভেতর নিয়ে যায়। মর্জিনা আরো জানান, তাকে যখন ডাকা হয়, তখন তিনি ভাত খাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় দরজা খুলে তিনি বাইরে বের হন। মেম্বার ওই গৃহবধূর নাম শোনার পর বাবার নাম জানতে চাইলে মর্জিনা লজ্জায় মাথা নীচু করে কিছুক্ষণ চুপ থাকেন। মেম্বার আঙ্গুল উঁচিয়ে ধমক দিলে মর্জিনা ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যঙ্গ করে বলেন বাবার নাম শাহজাহান। মেম্বার মারতে চাইলে পরে তার বাবার প্রকৃত নাম বলেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে সরেজমিনে মর্জিনার বাবার বাড়ি গেলে তার মা আবেদা বেগম ও বাবা আব্দুল মজিদ তাদের মেয়ে মর্জিনার ছোট দুই সন্তান কোলে নিয়ে হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, তার মেয়ের শ^শুর দানেশ আলী, শ্বাশুড়ি জোবেদা বেগম, ভাসুর জয়নাল আর দেবর ময়েন উদ্দিন তার মেয়েকে গাছের সাথে বেঁধে ইচ্ছামত পিটিয়েছে। তার পশ্চাৎদেশ, পায়ের তালু আর শরীরের সব জায়গা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে থেতলে দিয়েছে। তার মেয়ে সহ্য করেছে। তাকে এত মারপিট করেছে, প্রথমে বাবা মায়ের কাছে তা বলেনি। কিন্তু ভিডিও ভাইরাল হবার পর আর সহ্য করতে পারেনি। সব ঘটনা খুলে বলে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে।
ঘটনাস্থল কালুশহর ডিঙ্গাহার গ্রামে মর্জিনার শ^শুড়বাড়িতে গেলে কোন পুরুষ মানুষের দেখা মেলেনি। বড় ছেলে জয়নালের স্ত্রী সেলিনা বেগম ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানালেন, মর্জিনার সাথে পার্শবর্তী কামালপুর গ্রামের মৃত গণেশ রবিদাসের ছেলে সাগর রবিদাসের অবৈধ সম্পর্ক ছিল।
মর্জিনার স্বামী আল আমিন জয়েন জানান, ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। দিনমজুরি কাজ করতে ফরিদপুর গিয়েছিলেন। তার স্ত্রীর ফোন পেয়ে বাড়ি আসেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত মেম্বার শাহজাহান আলী ভিডিও ধারণ করানোর কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে সব ঘটনা মোবাইলফোনে মহাদেবপুর থানার ওসিকে জানান। ওসি ঘটনাস্থলে না এসে মেয়ের কোন কথা বলার থাকলে তা রেকর্ড করতে বলেন। তাই মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তা মোল্লাপাড়া গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে বাবুকে ভিডিও করতে বলেন। কিন্তু ভিডিওটি ফেসবুকে ছাড়লেন কেন এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। মহাদেবপুর থানার ওসি শাহীন রেজা বলেন, মর্জিনার আত্মহত্যার ব্যাপারে থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়েছে।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নওগাঁর মহাদেবপুরে অপবাদ দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে জেরা করার ভিডিও ভাইরালের পর লোকলজ্জায় গ্যাসবড়ি সেবন করে আত্মহত্যা করেছেন এক গৃহবধূ। এলাকার ইউপি মেম্বার নিজের জেরা করার ভিডিওটি অন্য এক যুবককে দিয়ে ধারণ করান। বিষয়টি ওই মেম্বার স্বীকার করলেও ঘটনার এক সপ্তাহ পরও এবিষয়ে থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। দুই বছর আর চার বছরের দুই সন্তান রেখে গৃহবধূর মৃত্যুতে তার শোক সন্তপ্ত মা বাবা মানুষ দেখলেই কেঁদে বুক ভাঁসাচ্ছেন।
ওই গৃহবধূ উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের রোদইল আদিবাসী পাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদের মেয়ে ও কালুশহর ডিঙ্গাহার গ্রামের দানেশ আলীর ছেলে আল আমিন জয়েনের স্ত্রী মর্জিনা বেগম (৩০)। গত ২৯ আগস্ট বেলা ১১টায় তিনি গ্যাসবড়ি সেবন করেন। প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে নেয়ার পথে মান্দা ফেরিঘাট এলাকায় তার মৃত্যু হয়।
‘‘গোলাপ ফুল” নামক ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মর্জিনা বেগম ও একটি যুবককে গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এলাকার মেম্বার শাহজাহান আলী কর্কষ ও অশালীন ভাষায় শাহাদৎ আঙ্গুলি উঁচিয়ে মারমুখি হয়ে মর্জিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তিনি জানতে চান সেদিন কোন অবৈধ কাজ হয়েছে কিনা। জবাবে মর্জিনা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ওই ছেলের সাথে তার কোন অবৈধ সম্পর্ক নেই। রাস্তা থেকে আটক করে মারতে মারতে তাকে বাড়ির ভেতর নিয়ে যায়। মর্জিনা আরো জানান, তাকে যখন ডাকা হয়, তখন তিনি ভাত খাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় দরজা খুলে তিনি বাইরে বের হন। মেম্বার ওই গৃহবধূর নাম শোনার পর বাবার নাম জানতে চাইলে মর্জিনা লজ্জায় মাথা নীচু করে কিছুক্ষণ চুপ থাকেন। মেম্বার আঙ্গুল উঁচিয়ে ধমক দিলে মর্জিনা ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যঙ্গ করে বলেন বাবার নাম শাহজাহান। মেম্বার মারতে চাইলে পরে তার বাবার প্রকৃত নাম বলেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে সরেজমিনে মর্জিনার বাবার বাড়ি গেলে তার মা আবেদা বেগম ও বাবা আব্দুল মজিদ তাদের মেয়ে মর্জিনার ছোট দুই সন্তান কোলে নিয়ে হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, তার মেয়ের শ^শুর দানেশ আলী, শ্বাশুড়ি জোবেদা বেগম, ভাসুর জয়নাল আর দেবর ময়েন উদ্দিন তার মেয়েকে গাছের সাথে বেঁধে ইচ্ছামত পিটিয়েছে। তার পশ্চাৎদেশ, পায়ের তালু আর শরীরের সব জায়গা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে থেতলে দিয়েছে। তার মেয়ে সহ্য করেছে। তাকে এত মারপিট করেছে, প্রথমে বাবা মায়ের কাছে তা বলেনি। কিন্তু ভিডিও ভাইরাল হবার পর আর সহ্য করতে পারেনি। সব ঘটনা খুলে বলে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে।
ঘটনাস্থল কালুশহর ডিঙ্গাহার গ্রামে মর্জিনার শ^শুড়বাড়িতে গেলে কোন পুরুষ মানুষের দেখা মেলেনি। বড় ছেলে জয়নালের স্ত্রী সেলিনা বেগম ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানালেন, মর্জিনার সাথে পার্শবর্তী কামালপুর গ্রামের মৃত গণেশ রবিদাসের ছেলে সাগর রবিদাসের অবৈধ সম্পর্ক ছিল।
মর্জিনার স্বামী আল আমিন জয়েন জানান, ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। দিনমজুরি কাজ করতে ফরিদপুর গিয়েছিলেন। তার স্ত্রীর ফোন পেয়ে বাড়ি আসেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত মেম্বার শাহজাহান আলী ভিডিও ধারণ করানোর কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে সব ঘটনা মোবাইলফোনে মহাদেবপুর থানার ওসিকে জানান। ওসি ঘটনাস্থলে না এসে মেয়ের কোন কথা বলার থাকলে তা রেকর্ড করতে বলেন। তাই মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তা মোল্লাপাড়া গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে বাবুকে ভিডিও করতে বলেন। কিন্তু ভিডিওটি ফেসবুকে ছাড়লেন কেন এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। মহাদেবপুর থানার ওসি শাহীন রেজা বলেন, মর্জিনার আত্মহত্যার ব্যাপারে থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়েছে।