alt

news » bangladesh

বেপরোয়া আরাকান আর্মির দাপট এখন নাফ নদে

প্রতিনিধি, টেকনাফ (কক্সবাজার) : রোববার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরাকান আর্মির কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া জেলেদের কয়েকজন -সংবাদ

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকাজুড়ে দখলে থাকা সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির দাপট রাখাইন ছাড়িয়ে এখন বাংলাদেশের নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরেও চলছে। এ কারণে বাংলাদেশি জেলেদের প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে তারা। নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের আটকের ঘটনা আগেও অনেকবার ঘটেছে। সম্প্রতি নতুন করে আরাকান আর্মি নাফ নদ ও সাগরে মাছ শিকারে ফেরার পথে বাংলাদেশি ১৩টি ট্রলারসহ ৮১ জেলেকে আটক করে নিয়ে যায়। আপাতত ওইসব জেলেদের মুক্তির কোনো খবর নেই পরিবারের কাছে।

আরাকান আর্মির বাধায় বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ

গত ৮ মাসে আরাকান আর্মি ২৫০ বাংলাদেশি জেলেকে নিয়ে গেছে, ফেরত এসেছে ১৮৯ জেলে

আরাকান আর্মি জেলেদের আটক ছাড়াও ইয়াঙ্গুন ও রাখাইনের সিত্তুয়ে বন্দর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরের উদ্দেশে আসা পণ্যবাহী ট্রলারে বাধা সৃষ্টি ও মাল লুটের ঘটনায় বছরখানেক সময় ধরে বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। আপাতত টেকনাফ বন্দর পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। কবে তা পুনরায় চালু হবে তার কোনো সদুত্তর নেই কারও কাছে।

টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপ ট্রলার মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে গত ৫ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একমাসে আরাকান আর্মি ১৩টি ট্রলারসহ ৮১ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। বোট জাল ও খাদ্যসামগ্রী মিলে যার মূল্য ৩ কোটি টাকার বেশি। আটক জেলেদের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। পরিবারগুলো জানেন না তাদের স্বজনরা কবে মুক্তি পাবেন। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আরাকান আর্মির হাতে বন্দী থাকায় জেলে পরিবারগুলোতে ভর করেছে অভাব অনটন।

গত আগস্ট মাসের শুরুতে নাফ নদে মাছ শিকারের সময় আটক করা হয়েছিল শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার জেলে মোহাম্মদ ইলিয়াছ ও তার নৌকার আরও চার জেলেকে। সেখানে তার দুই ছেলেও ছিল। এতোদিনেও তাদের মুক্তি দেয়নি আরাকান আর্মি।

জেলে ইলিয়াছের বৃদ্ধা মা শাম বানু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে ইলিয়াছ ও দুই নাতিকে নাফ নদে মাছ ধরার সময় আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে। এখনও তাদের কোনো খোঁজ নাই। তাদের আয়ে চলে আমাদের সাত সদস্যের পরিবার। কিন্তু তারা আরাকান আর্মির হাতে বন্দী থাকায় দুইবেলা দুই মুঠো খাবারের যোগান দিতেও আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। খুব কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে আমাদের।

সম্প্রতি আরাকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশি একটি ট্রলারসহ জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় বার্মিজ ভাষায় একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরালও হয়েছে। ওই ভিডিওতে আরাকান আর্মির এক সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘তোমরা চুরি করে আমাদের সীমান্তে ঢুকে পড়েছো কেন? সীমান্ত অতিক্রম করে খারাপ চিন্তা-ভাবনার মানুষ। তোমরা আমাদের মংডু এলাকায় চলে এসেছ। এখন তোমাদেরকে আমাদের দেশের (মায়ানমার) প্রচলিত আইনে মামলা দেয়া হবে।’

বিজিবি ও জেলেদের দেয়া তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি ২৫০ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জন জেলে এবং ২৭টি ট্রলার-নৌকা ফেরত আনা হয়েছে।

কায়ুকখালী ঘাটের মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, আরাকান আর্মি নাফ নদীতে আধিপত্য বিস্তার করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমাদের চৌদ্দপুরুষ যে স্থানে নৌকায় মাছ শিকার করতে যেতো, এখন সেই স্থানে আরাকান আর্মি ফাঁদ পেতে বসে থাকে এবং জেলেদের ধরে নিয়ে যায় তারা (এএ)। ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের এখনও কোনো হদিস নেই।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।

রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ দখলে নেয়ার পর, গত ১২ জানুয়ারি ২০২৫ সালে টেকনাফ স্থলবন্দরের উদ্দেশে ইয়াঙ্গুন থেকে ছেড়ে আসা ৪টি বাণিজ্যিক ট্রলার নাফ নদীর হায়ুনখালী থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে কিছু মালামাল লুটপাট করে ছেড়ে দেয় তারা। এ সময় তারা কমিশন পদ্ধতিতে আরাকান আর্মি জলসীমা দিয়ে মালবাহী ট্রলার যাতায়াত করার প্রস্তাব দেয়। তখন থেকে বাংলাদেশ মায়ানমারের ব্যবসা-বাণিজ্য পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায় আরাকান আার্মি।

গত ৯ মাসের মধ্যে মায়ানমার থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরে ভিড়েনি।

টেকনাফ স্থলবন্দরের সহকারী ম্যানেজার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বন্দর খোলা থাকলেও মায়ানমার থেকে পণ্যবাহী জাহাজ আসা বন্ধ রয়েছে। কারণ হচ্ছে মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে মায়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। যেহেতু দেশটির জলসীমা আরাকান আর্মি দখলে রেখেছে, তাই ইয়াঙ্গুন থেকে পণ্যবাহী জাহাজ আসতে হলে জান্তা সরকারের ব্যবসায়ী পণ্য আরাকান আর্মির মংডুর জলসীমা অতিক্রম করলে পণ্যবাহী জাহাজ ধরে নিয়ে যায় তারা (এএ)।

টেকনাফ কোস্ট গার্ড স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট সালাহ উদ্দিন রশিদ তানভীর বলেন, বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্তে যে অস্থিতিশীল পরিবেশ এবং সংঘাতময় পরিস্থিতি চলমান রয়েছে, এ অবস্থায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড নাফ নদের সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি বিশেষ পরিচালনা করছি। আমরা নজরদারি রেখেছি যাতে সীমান্তের জিরো লাইনে কেউ যেন অতিক্রম করতে না পারে। রাডার ও মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে উপকূল ও সমুদ্রসীমা কার্যকর ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সুনিশ্চিত করছেন।

গত বছরের ৮ ডিসেম্বর দেশটির জান্তা সরকার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের ২৭২ কিলোমিটার সীমান্ত পুরোটাই আরাকান আর্মি (এএ) নিয়ন্ত্রণে নেয়। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তারা খাদ্য সংকট ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনার অর্থের অভাবে পড়ে। তখন থেকে বিভিন্ন পন্থায় বাংলাদেশের জলসীমায় এসে জলদস্যদের কায়দায় বাংলাদেশি জেলেদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মায়ানমারের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়।

ছবি

হিলি স্থলবন্দর: ৩ মাসে ভারতে ৩,১০০ টন পণ্য রপ্তানি, ৩০ কোটি টাকা আয়

ছবি

দেশে নিরক্ষতার হার ২২ দশমিক ১ শতাংশ

ছবি

ডেঙ্গু: ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৫৮০, ৩ জনের মৃত্যু

ছবি

৫৪৬ মায়ানমার নাগরিককে ফেরত পাঠালো বিজিবি

ছবি

এবার সংসদ ভবন এলাকায় নিষিদ্ধ আ’লীগের মিছিল

সিরাতুন্নবী উপলক্ষে আলোচনা সভা

ধোবাউড়ায় সোনালী ব্যাংকে গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা ঝাড়–দার

ছবি

জামালপুরে গণপিটুনিতে চোর নিহত

ছবি

অবৈধ সংযোগ কর্তন করতে গিয়ে বৈধ সংযোগও বন্ধ

ছবি

মুন্সীগঞ্জে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ৩

ছবি

কুবির দ্বিতীয় সমাবর্তন ৭ ডিসেম্বর

ছবি

নারায়ণগঞ্জে রেডিমিক্স সিমেন্ট কারখানায় যুবক পিটিয়ে হত্যা

ছবি

বগুড়ায় ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসার পরিচালক গ্রেপ্তার

ছবি

কলাপাড়ায় গৃহবধূকে ডাকাতি শেষে গণধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৩

ছবি

ভেঙে যাওয়া সুইস গেইট নির্মাণের খবরে স্বস্তি ফিরেছে এলাকায়

ছবি

চলন বিলে শামুকে জীবিকা নির্বাহ হাজারো মানুষের

ছবি

ধামরাইয়ে সাদ হত্যায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

ছবি

গাইবান্ধায় আউশের ফলনে খুশি কৃষক

ছবি

বোয়ালমারীতে পাগলা ঘোড়ার আক্রমনে আহত ১০

ছবি

খানা খন্দে ভরা চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা সড়ক

ছবি

দুর্গাপুরের হাট-বাজার পলিথিনে সয়লাব

ছবি

চাঁদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযান মাদকসহ আটক ১১

ছবি

রাউজানে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়া, আটক ১

ছবি

ডলফিন রক্ষায় সুন্দরবন অভয়ারণ্যে লাল ফ্ল্যাগ, মাছ ধরায় বিধি নিষেধ

ছবি

বাসর রাতে স্বামীর গোপনাঙ্গ কেটে দিল নববধূ

ছবি

জলদস্যুর আস্তানায় মিলল অস্ত্র-গুলি

ছবি

কুষ্টিয়ার লালন আখড়াবাড়িতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার

ছবি

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে যারা জুটমিলগুলো ধ্বংস করেছে তাদের বিচার করা হবে -ড. মঈন খান

ছবি

চিরিরবন্দরে সাপের কামড়ে মৃত্যু ১

ছবি

জয়পুরহাটে ৩৩ বছরেও জমি দখল না পেয়ে ভুক্তভোগীর মানববন্ধন

ছবি

বগুড়ায় ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, আটক ৫

ছবি

বাঞ্ছারামপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

ছবি

লালপুরে অপরিকল্পিত নদী খননে গ্রামীণ সড়ক, ঘরবাড়ি নদীগর্ভে

ছবি

বসতভিটা উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন

ছবি

দাবদাহে বিপর্যস্ত শ্রীমঙ্গল

ছবি

হিলি-ঘোড়াঘাট মহাসড়কের কাজ ৩ বছরেও শেষ হয়নি

tab

news » bangladesh

বেপরোয়া আরাকান আর্মির দাপট এখন নাফ নদে

প্রতিনিধি, টেকনাফ (কক্সবাজার)

আরাকান আর্মির কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া জেলেদের কয়েকজন -সংবাদ

রোববার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকাজুড়ে দখলে থাকা সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির দাপট রাখাইন ছাড়িয়ে এখন বাংলাদেশের নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরেও চলছে। এ কারণে বাংলাদেশি জেলেদের প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে তারা। নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের আটকের ঘটনা আগেও অনেকবার ঘটেছে। সম্প্রতি নতুন করে আরাকান আর্মি নাফ নদ ও সাগরে মাছ শিকারে ফেরার পথে বাংলাদেশি ১৩টি ট্রলারসহ ৮১ জেলেকে আটক করে নিয়ে যায়। আপাতত ওইসব জেলেদের মুক্তির কোনো খবর নেই পরিবারের কাছে।

আরাকান আর্মির বাধায় বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ

গত ৮ মাসে আরাকান আর্মি ২৫০ বাংলাদেশি জেলেকে নিয়ে গেছে, ফেরত এসেছে ১৮৯ জেলে

আরাকান আর্মি জেলেদের আটক ছাড়াও ইয়াঙ্গুন ও রাখাইনের সিত্তুয়ে বন্দর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরের উদ্দেশে আসা পণ্যবাহী ট্রলারে বাধা সৃষ্টি ও মাল লুটের ঘটনায় বছরখানেক সময় ধরে বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। আপাতত টেকনাফ বন্দর পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। কবে তা পুনরায় চালু হবে তার কোনো সদুত্তর নেই কারও কাছে।

টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপ ট্রলার মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে গত ৫ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একমাসে আরাকান আর্মি ১৩টি ট্রলারসহ ৮১ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। বোট জাল ও খাদ্যসামগ্রী মিলে যার মূল্য ৩ কোটি টাকার বেশি। আটক জেলেদের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। পরিবারগুলো জানেন না তাদের স্বজনরা কবে মুক্তি পাবেন। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আরাকান আর্মির হাতে বন্দী থাকায় জেলে পরিবারগুলোতে ভর করেছে অভাব অনটন।

গত আগস্ট মাসের শুরুতে নাফ নদে মাছ শিকারের সময় আটক করা হয়েছিল শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার জেলে মোহাম্মদ ইলিয়াছ ও তার নৌকার আরও চার জেলেকে। সেখানে তার দুই ছেলেও ছিল। এতোদিনেও তাদের মুক্তি দেয়নি আরাকান আর্মি।

জেলে ইলিয়াছের বৃদ্ধা মা শাম বানু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে ইলিয়াছ ও দুই নাতিকে নাফ নদে মাছ ধরার সময় আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে। এখনও তাদের কোনো খোঁজ নাই। তাদের আয়ে চলে আমাদের সাত সদস্যের পরিবার। কিন্তু তারা আরাকান আর্মির হাতে বন্দী থাকায় দুইবেলা দুই মুঠো খাবারের যোগান দিতেও আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। খুব কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে আমাদের।

সম্প্রতি আরাকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশি একটি ট্রলারসহ জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় বার্মিজ ভাষায় একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরালও হয়েছে। ওই ভিডিওতে আরাকান আর্মির এক সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘তোমরা চুরি করে আমাদের সীমান্তে ঢুকে পড়েছো কেন? সীমান্ত অতিক্রম করে খারাপ চিন্তা-ভাবনার মানুষ। তোমরা আমাদের মংডু এলাকায় চলে এসেছ। এখন তোমাদেরকে আমাদের দেশের (মায়ানমার) প্রচলিত আইনে মামলা দেয়া হবে।’

বিজিবি ও জেলেদের দেয়া তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি ২৫০ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জন জেলে এবং ২৭টি ট্রলার-নৌকা ফেরত আনা হয়েছে।

কায়ুকখালী ঘাটের মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, আরাকান আর্মি নাফ নদীতে আধিপত্য বিস্তার করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমাদের চৌদ্দপুরুষ যে স্থানে নৌকায় মাছ শিকার করতে যেতো, এখন সেই স্থানে আরাকান আর্মি ফাঁদ পেতে বসে থাকে এবং জেলেদের ধরে নিয়ে যায় তারা (এএ)। ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের এখনও কোনো হদিস নেই।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।

রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ দখলে নেয়ার পর, গত ১২ জানুয়ারি ২০২৫ সালে টেকনাফ স্থলবন্দরের উদ্দেশে ইয়াঙ্গুন থেকে ছেড়ে আসা ৪টি বাণিজ্যিক ট্রলার নাফ নদীর হায়ুনখালী থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে কিছু মালামাল লুটপাট করে ছেড়ে দেয় তারা। এ সময় তারা কমিশন পদ্ধতিতে আরাকান আর্মি জলসীমা দিয়ে মালবাহী ট্রলার যাতায়াত করার প্রস্তাব দেয়। তখন থেকে বাংলাদেশ মায়ানমারের ব্যবসা-বাণিজ্য পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায় আরাকান আার্মি।

গত ৯ মাসের মধ্যে মায়ানমার থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরে ভিড়েনি।

টেকনাফ স্থলবন্দরের সহকারী ম্যানেজার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বন্দর খোলা থাকলেও মায়ানমার থেকে পণ্যবাহী জাহাজ আসা বন্ধ রয়েছে। কারণ হচ্ছে মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে মায়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। যেহেতু দেশটির জলসীমা আরাকান আর্মি দখলে রেখেছে, তাই ইয়াঙ্গুন থেকে পণ্যবাহী জাহাজ আসতে হলে জান্তা সরকারের ব্যবসায়ী পণ্য আরাকান আর্মির মংডুর জলসীমা অতিক্রম করলে পণ্যবাহী জাহাজ ধরে নিয়ে যায় তারা (এএ)।

টেকনাফ কোস্ট গার্ড স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট সালাহ উদ্দিন রশিদ তানভীর বলেন, বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্তে যে অস্থিতিশীল পরিবেশ এবং সংঘাতময় পরিস্থিতি চলমান রয়েছে, এ অবস্থায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড নাফ নদের সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি বিশেষ পরিচালনা করছি। আমরা নজরদারি রেখেছি যাতে সীমান্তের জিরো লাইনে কেউ যেন অতিক্রম করতে না পারে। রাডার ও মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে উপকূল ও সমুদ্রসীমা কার্যকর ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সুনিশ্চিত করছেন।

গত বছরের ৮ ডিসেম্বর দেশটির জান্তা সরকার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের ২৭২ কিলোমিটার সীমান্ত পুরোটাই আরাকান আর্মি (এএ) নিয়ন্ত্রণে নেয়। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তারা খাদ্য সংকট ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনার অর্থের অভাবে পড়ে। তখন থেকে বিভিন্ন পন্থায় বাংলাদেশের জলসীমায় এসে জলদস্যদের কায়দায় বাংলাদেশি জেলেদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মায়ানমারের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়।

back to top