ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
মাদারীপুরে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা সংকটে মন্থর গতিতে চাষাবাদ কার্যক্রমের তদারকি চলছে। এতে সরকারের গৃহীত উন্নয়নমূলক সেবা প্রান্তিক কৃষকদের কাছে পৌছাতে পারছে না বলে কৃষকদের অভিযোগ। প্রতিটি ইউনিয়নে তিন জন উপসহকারী কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও অনেক ইউনিয়নে মাত্র একজন কৃষি কর্মকর্তাই পুরো ইউনিয়নের তদারকির দায়িত্ব পালন করছেন। এতে সরকারি সেবা থেকে প্রান্তি কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে জেলার উর্ধ্বতন কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কৃষি অধিদপ্তরের বদলী ও অবসর জনিত এসব জনবল সংকটের চাহিদা জানিয়ে প্রতি মাসেই প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়।
মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার ৫৯ টি ইউনিয়ন ও ৪ টি পৌরসভায় ১৮১ কৃষি ব্লকের রয়েছে। প্রতিটি ব্লকে একজন করে কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা সরকারের নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। সেই হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়নে ৩ টি করে কৃষি ব্লক মোট ১৮১ জন কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট পদে কর্মরত থাকার কথা। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮১ টি ব্লকের মধ্যে ১০৩ টি ব্লকে বর্তমানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। এদের মধ্যে ৭৮ টি ব্লকে দীর্ঘ বছর ধরেই কোন উপসহারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এই ৭৮ টি ব্লকে পাশর্^বর্তী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে সরকার কাজ করাচ্ছে। অনেক ইউনিয়নে তিনটি ব্লকেই মাত্র একজন কৃষি কর্মকর্তা দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে। ফলে একজন কর্মকর্তার পক্ষে পুরো ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষকদের কাছে সরকারের উন্নয়ন মূলক সেবা পৌছাতে পারছে না। এতে জেলার প্রান্তিক কৃষকরা সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচেছন।
মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নে ২০১৭ সাল থেকে মিলটন পান্ডে কৃষি উপসহকারী পদে যোগ করেছেন। তিনি বর্তমানে ধুরাইল ইউনিয়নের তিনটি কৃষি ব্লকের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তার দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল একটি ব্লকে। এই বিষয়ে ধুরাইল ইউনিয়নের কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মিলটন পান্ডে বলেন, আমি ২০১৭ সালে ধুরাইল ইউনিয়নের ধুরাইল ব্লকে যোগদান করার পর থেকেই বাজিতপুর ও বীরাঙ্গল নামের আরো দুইটি ব্লকে শূন্য পদ দেখছি। আমার ব্লক ব্যাতীত শূন্য পদ থাকা ওই দুটি ব্লকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু আমার একার পক্ষে তিন ব্লক তদারকি করতে অনেক হিমশিম খেতে হয়। তারপরও সরকার যেহেতু কাউকে নিয়োগ দেয়নি ওই দুটি ব্লকে তাই বাধ্য হয়েই আমি আমার দায়িত্বের চেয়েও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে আরো দুটি ব্লক সুপার ভিশন করছি। এই কারণে অনেক কৃষকদের কাছে সব সময় আমি পৌছাতে পারি না। যদি সরকার জনবল নিয়োগ দেয় তাহলে এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের কুনিয়া ব্লকের কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা জামাল হোসাইন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলার ধুরাইল কৃষি ব্লকে মূল দায়িত্ব পালন করছি। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত হিসেবে আদিত্যপুর কৃষি ব্লকের দায়িত্বও পালন করছি। দুটি ব্লকের দায়িত্ব থাকায় কৃষকদের সাথে কাজ করতে আমাকে হিমশিম খেতে হয়। তিনি বলেন, আমি তো দুটো ব্লকের দায়িত্বে আছি, অনেক ইউনিয়নে একজন কর্মকর্তা দিয়েই পুরো তিন টি কৃষি ব্লক সুপার ভিশন করানো হয়। অতিরিক্ত কাজের পেশার থাকায় অনেক ক্ষেত্রে কাজের গতি অনেক মন্থর হয়ে যায় বলে তিনি জানান।
এদিকে মাদারীপু সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের কৃষক বাবুল হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় কৃষি কর্মকর্তা পদে লোক কম। তাই সব সময় তারা আমাদের সাথে দেখা করতে আসতে পারে না। কম আসার কারণে সরকার থেকে নানা ধরনের কৃষি প্রণোদনার উন্নয়ন মূলক সেবাগুলো থেকে আমরা নিয়মত বঞ্চিত হচ্ছি। -একই ধরনের কথা জানালেন মাদারীপুর ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের শশীকর গ্রামের কৃষক নিরঞ্জন বাড়ৈ। তিনি বলেন, আমার জমি-জমা কম। সেই কম জমিতে কিভাবে বেশি ফলন ফলাতে পারি তার যদি সুপরামর্শ কৃষি অফিসে থেকে পেতাম, তাহলে অনেক উপকার হত। কিন্তু আমাদের এখানে তো সেভাবে কৃষি অফিসের স্যারেরা আসে না। তাই পরামর্শও পাই না। সুযোগ সুবিধার কথার তো কোন প্রশ্নই আসে না। একই কথা জানালেন কালকিনি, রাজৈর ও শিবচরের বেশ কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক।
এই বিষয়ে মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ বলেন, অবসর ও বদলী জনিত কারণে মাদারীপুর জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি ব্লকের উপসহকারী কর্মকর্তার ৭৮ টি পদ এখন শূন্য রয়েছে। আমরা প্রতি মাসেই ঢাকায় এসব শূন্য পদের বিপরীতে জনবল চাহিদা লিখিত ভাবে পাঠাই। এখন কেন্দ্র থেকে কর্মকর্তা না পাঠালে তো আমদের কিছুই করার থাকে না। অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর তেমন কোন কাজ নেই। তাই শূন্য থাকা ব্লকগুলোতে পাশর্^বর্তী ব্লকের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মাদারীপুরে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা সংকটে মন্থর গতিতে চাষাবাদ কার্যক্রমের তদারকি চলছে। এতে সরকারের গৃহীত উন্নয়নমূলক সেবা প্রান্তিক কৃষকদের কাছে পৌছাতে পারছে না বলে কৃষকদের অভিযোগ। প্রতিটি ইউনিয়নে তিন জন উপসহকারী কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও অনেক ইউনিয়নে মাত্র একজন কৃষি কর্মকর্তাই পুরো ইউনিয়নের তদারকির দায়িত্ব পালন করছেন। এতে সরকারি সেবা থেকে প্রান্তি কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে জেলার উর্ধ্বতন কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কৃষি অধিদপ্তরের বদলী ও অবসর জনিত এসব জনবল সংকটের চাহিদা জানিয়ে প্রতি মাসেই প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়।
মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার ৫৯ টি ইউনিয়ন ও ৪ টি পৌরসভায় ১৮১ কৃষি ব্লকের রয়েছে। প্রতিটি ব্লকে একজন করে কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা সরকারের নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। সেই হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়নে ৩ টি করে কৃষি ব্লক মোট ১৮১ জন কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট পদে কর্মরত থাকার কথা। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮১ টি ব্লকের মধ্যে ১০৩ টি ব্লকে বর্তমানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। এদের মধ্যে ৭৮ টি ব্লকে দীর্ঘ বছর ধরেই কোন উপসহারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এই ৭৮ টি ব্লকে পাশর্^বর্তী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে সরকার কাজ করাচ্ছে। অনেক ইউনিয়নে তিনটি ব্লকেই মাত্র একজন কৃষি কর্মকর্তা দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে। ফলে একজন কর্মকর্তার পক্ষে পুরো ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষকদের কাছে সরকারের উন্নয়ন মূলক সেবা পৌছাতে পারছে না। এতে জেলার প্রান্তিক কৃষকরা সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচেছন।
মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নে ২০১৭ সাল থেকে মিলটন পান্ডে কৃষি উপসহকারী পদে যোগ করেছেন। তিনি বর্তমানে ধুরাইল ইউনিয়নের তিনটি কৃষি ব্লকের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তার দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল একটি ব্লকে। এই বিষয়ে ধুরাইল ইউনিয়নের কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মিলটন পান্ডে বলেন, আমি ২০১৭ সালে ধুরাইল ইউনিয়নের ধুরাইল ব্লকে যোগদান করার পর থেকেই বাজিতপুর ও বীরাঙ্গল নামের আরো দুইটি ব্লকে শূন্য পদ দেখছি। আমার ব্লক ব্যাতীত শূন্য পদ থাকা ওই দুটি ব্লকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু আমার একার পক্ষে তিন ব্লক তদারকি করতে অনেক হিমশিম খেতে হয়। তারপরও সরকার যেহেতু কাউকে নিয়োগ দেয়নি ওই দুটি ব্লকে তাই বাধ্য হয়েই আমি আমার দায়িত্বের চেয়েও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে আরো দুটি ব্লক সুপার ভিশন করছি। এই কারণে অনেক কৃষকদের কাছে সব সময় আমি পৌছাতে পারি না। যদি সরকার জনবল নিয়োগ দেয় তাহলে এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের কুনিয়া ব্লকের কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা জামাল হোসাইন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলার ধুরাইল কৃষি ব্লকে মূল দায়িত্ব পালন করছি। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত হিসেবে আদিত্যপুর কৃষি ব্লকের দায়িত্বও পালন করছি। দুটি ব্লকের দায়িত্ব থাকায় কৃষকদের সাথে কাজ করতে আমাকে হিমশিম খেতে হয়। তিনি বলেন, আমি তো দুটো ব্লকের দায়িত্বে আছি, অনেক ইউনিয়নে একজন কর্মকর্তা দিয়েই পুরো তিন টি কৃষি ব্লক সুপার ভিশন করানো হয়। অতিরিক্ত কাজের পেশার থাকায় অনেক ক্ষেত্রে কাজের গতি অনেক মন্থর হয়ে যায় বলে তিনি জানান।
এদিকে মাদারীপু সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের কৃষক বাবুল হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় কৃষি কর্মকর্তা পদে লোক কম। তাই সব সময় তারা আমাদের সাথে দেখা করতে আসতে পারে না। কম আসার কারণে সরকার থেকে নানা ধরনের কৃষি প্রণোদনার উন্নয়ন মূলক সেবাগুলো থেকে আমরা নিয়মত বঞ্চিত হচ্ছি। -একই ধরনের কথা জানালেন মাদারীপুর ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের শশীকর গ্রামের কৃষক নিরঞ্জন বাড়ৈ। তিনি বলেন, আমার জমি-জমা কম। সেই কম জমিতে কিভাবে বেশি ফলন ফলাতে পারি তার যদি সুপরামর্শ কৃষি অফিসে থেকে পেতাম, তাহলে অনেক উপকার হত। কিন্তু আমাদের এখানে তো সেভাবে কৃষি অফিসের স্যারেরা আসে না। তাই পরামর্শও পাই না। সুযোগ সুবিধার কথার তো কোন প্রশ্নই আসে না। একই কথা জানালেন কালকিনি, রাজৈর ও শিবচরের বেশ কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক।
এই বিষয়ে মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ বলেন, অবসর ও বদলী জনিত কারণে মাদারীপুর জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি ব্লকের উপসহকারী কর্মকর্তার ৭৮ টি পদ এখন শূন্য রয়েছে। আমরা প্রতি মাসেই ঢাকায় এসব শূন্য পদের বিপরীতে জনবল চাহিদা লিখিত ভাবে পাঠাই। এখন কেন্দ্র থেকে কর্মকর্তা না পাঠালে তো আমদের কিছুই করার থাকে না। অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর তেমন কোন কাজ নেই। তাই শূন্য থাকা ব্লকগুলোতে পাশর্^বর্তী ব্লকের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে।