চকরিয়া (কক্সবাজার) : উপজেলার খুটাখালী হরিখোলা এলাকায় নদীতে সেলো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন -সংবাদ
অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা আদেশ থাকার পরও কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের হরিখোলা নামক এলাকায় প্রকাশ্যে সেলো মেশিন বসিয়ে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব। স্থানীয় কতিপয় চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে খুটাখালী বনবিটের আওতাধীন বনের পাশে ডিপো তৈরি করে সেখান থেকে বালু বাণিজ্য চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে খুটাখালী হরিখোলা এলাকায়
বেসুমার বসতবাড়ি, ফসলি জমি, গাছের বাগান নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে অদুর ভবিষ্যতে স্থানীয় লোকজনের বসতভিটা, ফসলি জমি নদী গর্ভে তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী-১ বালু মহাল ইজারা নিয়ে খুটাখালী ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করে সংরক্ষিত বনের পাশে একাধিক ডিপো করে অর্থাৎ বালু জমিয়ে ট্রাক যোগে অন্যত্র সরবরাহ করা হচ্ছিল বেশকিছু দিন ধরে।
এ অবস্থায় খুটাখালী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে গত ১০ আগস্ট হাইকোর্টে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি রিট মামলা করেন। ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ চকরিয়ার খুটাখালীর ওই মহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং মহালটি ইজারার ওপর স্থগিতাদেশ দেন। একই আদেশে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী-১ বালু মহালসহ কক্সবাজার জেলার মোট ৯টি বালু মহালের ইজারা কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা আদেশ লঙ্ঘন করে স্থানীয় দাপটশালী কতিপয় চক্র খুটাখালী ইউনিয়নের বনাঞ্চলের আশপাশ এলাকা থেকে ঠিকই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।
খুটাখালী হরিখোলা এলাকা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন মিশকাত নামের স্থানীয় এক ভুক্তভোগী।
সরেজমিনে স্থানীয় সূত্রে প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, বেশকিছু দিন ধরে উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হরিখোলা এলাকায় বনাঞ্চলের পাশে প্রবাহিত নদী থেকে সেলো মেশিন বসিয়ে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
স্থানীয় জয় নগর পাড়ার মৃত কবির আহমদের ছেলে জালাল আহমদ, তাঁর ছেলে আব্দুর রশিদ, আবদু শুক্কুর, একই এলাকার আবদুল আলীর ছেলে জিয়াউর রহমান, হরিখোলা এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে নুরুল আবছার, মোস্তাক আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ফোরকান ও মোহাম্মদ আরকানের নেতৃত্বে কতিপয় প্রভাবশালী চক্র এই অবৈধ বালু উত্তোলন ও বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, বালু উত্তোলনে বাধা দিলে জড়িতরা নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। বালু লুটেরা চক্র স্থানীয়ভাবে দাপটশালী হওয়ায় ভুক্তভোগী লোকজন অনেকসময় হামলা মামলার ভয়ে বালু উত্তোলনে বাঁধা দিতে সাহস পাচ্ছে না।
ইউএনও দপ্তরে লিখিত অভিযোগকারী ভুক্তভোগী মোহাম্মদ মিশকাত বলেন, আমার পরিবারের দীর্ঘ ৩০ বছরের ৮০ শতক বসতভিটা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আমার বসতভিটা ফসলি জমি ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগান। এ অবস্থায় পরিবার সদস্যদের নিয়ে বাড়িতে নিরাপদে বসবাস করাও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অভিযুক্তরা বেশকিছু দিন ধরে দুটি সেলো মেশিন বসিয়ে রাতদিন বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে।
আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে যাচ্ছে, তাই বালু উত্তোলন বন্ধ করতে বললে উল্টো জড়িতরা প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।
এব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জড়িত অবৈধ বালু লুটেরা চক্রের বিরুদ্ধে জেল জরিমানা করা হবে।
তিনি বলেন, খুটাখালীতে বসতভিটা থেকে মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ হাতে পেয়েছি। এব্যাপারে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী বনবিট কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রচারিত হওয়ার পর থেকে খুটাখালীছড়া থেকে কোন বালু তোলা হচ্ছে না। তবে জড়িতরা অন্য জায়গা থেকে বালু এনে জমা করে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বালুর ডিপো তৈরি করা এলাকা বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরে ব্যক্তিগত খতিয়ানী জমিতে হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না বনবিভাগ।
চকরিয়া (কক্সবাজার) : উপজেলার খুটাখালী হরিখোলা এলাকায় নদীতে সেলো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন -সংবাদ
মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা আদেশ থাকার পরও কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের হরিখোলা নামক এলাকায় প্রকাশ্যে সেলো মেশিন বসিয়ে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব। স্থানীয় কতিপয় চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে খুটাখালী বনবিটের আওতাধীন বনের পাশে ডিপো তৈরি করে সেখান থেকে বালু বাণিজ্য চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে খুটাখালী হরিখোলা এলাকায়
বেসুমার বসতবাড়ি, ফসলি জমি, গাছের বাগান নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে অদুর ভবিষ্যতে স্থানীয় লোকজনের বসতভিটা, ফসলি জমি নদী গর্ভে তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী-১ বালু মহাল ইজারা নিয়ে খুটাখালী ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করে সংরক্ষিত বনের পাশে একাধিক ডিপো করে অর্থাৎ বালু জমিয়ে ট্রাক যোগে অন্যত্র সরবরাহ করা হচ্ছিল বেশকিছু দিন ধরে।
এ অবস্থায় খুটাখালী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে গত ১০ আগস্ট হাইকোর্টে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি রিট মামলা করেন। ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ চকরিয়ার খুটাখালীর ওই মহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং মহালটি ইজারার ওপর স্থগিতাদেশ দেন। একই আদেশে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী-১ বালু মহালসহ কক্সবাজার জেলার মোট ৯টি বালু মহালের ইজারা কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা আদেশ লঙ্ঘন করে স্থানীয় দাপটশালী কতিপয় চক্র খুটাখালী ইউনিয়নের বনাঞ্চলের আশপাশ এলাকা থেকে ঠিকই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।
খুটাখালী হরিখোলা এলাকা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন মিশকাত নামের স্থানীয় এক ভুক্তভোগী।
সরেজমিনে স্থানীয় সূত্রে প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, বেশকিছু দিন ধরে উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হরিখোলা এলাকায় বনাঞ্চলের পাশে প্রবাহিত নদী থেকে সেলো মেশিন বসিয়ে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
স্থানীয় জয় নগর পাড়ার মৃত কবির আহমদের ছেলে জালাল আহমদ, তাঁর ছেলে আব্দুর রশিদ, আবদু শুক্কুর, একই এলাকার আবদুল আলীর ছেলে জিয়াউর রহমান, হরিখোলা এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে নুরুল আবছার, মোস্তাক আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ফোরকান ও মোহাম্মদ আরকানের নেতৃত্বে কতিপয় প্রভাবশালী চক্র এই অবৈধ বালু উত্তোলন ও বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, বালু উত্তোলনে বাধা দিলে জড়িতরা নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। বালু লুটেরা চক্র স্থানীয়ভাবে দাপটশালী হওয়ায় ভুক্তভোগী লোকজন অনেকসময় হামলা মামলার ভয়ে বালু উত্তোলনে বাঁধা দিতে সাহস পাচ্ছে না।
ইউএনও দপ্তরে লিখিত অভিযোগকারী ভুক্তভোগী মোহাম্মদ মিশকাত বলেন, আমার পরিবারের দীর্ঘ ৩০ বছরের ৮০ শতক বসতভিটা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আমার বসতভিটা ফসলি জমি ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগান। এ অবস্থায় পরিবার সদস্যদের নিয়ে বাড়িতে নিরাপদে বসবাস করাও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অভিযুক্তরা বেশকিছু দিন ধরে দুটি সেলো মেশিন বসিয়ে রাতদিন বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে।
আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে যাচ্ছে, তাই বালু উত্তোলন বন্ধ করতে বললে উল্টো জড়িতরা প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।
এব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জড়িত অবৈধ বালু লুটেরা চক্রের বিরুদ্ধে জেল জরিমানা করা হবে।
তিনি বলেন, খুটাখালীতে বসতভিটা থেকে মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ হাতে পেয়েছি। এব্যাপারে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী বনবিট কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রচারিত হওয়ার পর থেকে খুটাখালীছড়া থেকে কোন বালু তোলা হচ্ছে না। তবে জড়িতরা অন্য জায়গা থেকে বালু এনে জমা করে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বালুর ডিপো তৈরি করা এলাকা বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরে ব্যক্তিগত খতিয়ানী জমিতে হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না বনবিভাগ।