মধুপুর (টাঙ্গাইল) : মধুপুরের বিজোড় সংখ্যায় এ বাজারের নাম ২৫ মাইল বাজার। ছবিটি বাজারের শোলাকুড়ির রোড়ের একাংশের -সংবাদ
গাণিতিক বিজোড় সংখ্যায় একটি বাজারের নাম ২৫ মাইল। বাজারের নামটি নিয়ে নানা মানুষের ভিন্ন ভিন্ন কৌতুহল। এমন নাম খুব একটা শোনা যায় না। ভিন্ন ভিন্ন কারণে স্থান বা বাজারের নাম শোনা যায়। কিন্তু গাণিতিক বিজোড় সংখ্যায় এমন নামটি দূর থেকে আগতদের মধ্যে কৌতূহলের জন্ম নেয়। আগ্রহ বেড়ে যায়। এমন নামের একটি বাজার রয়েছে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায়। ২৫ মাইল বাজারটি স্থানীয় অরণখোলা ইউনিয়নের গাছাবাড়ি মৌজায় অবস্থিত। এ বাজারে এখন রয়েছে নানা জাতিগোষ্ঠী মানুষের বসবাস ও দোকান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় গারো কোচদের বাহারি পোশাক ও মৌসুমী ফলের বাজার দোকানপাটের কারনে বাজারটির রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য আর বেচিত্র্য। স্থাণীয়রা ছাড়াও পর্যটকরাও গারোদের বিভিন্ন পোশাক কিনে থাকে আর ফল কিনতেও আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজনেরা। যে কারণে বাজারটির চারদিকে সুনাম যশ-খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
সরজমিনে মধুপুর শহর থেকে ৫ মাইল দূরে ২৫ মাইল বাজারে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় বাজারটির নামকরণের ইতিহাস। এক সময় ইতিহাসখ্যাত ঐতিহ্যে ভরা মধুপুর গড়ের শালবন ছিল গহীন অরণ্য ঘেরা। নানা জীবজন্তু বৃক্ষলতা পাতায় ছিল দূর্ভেদ্য। একা বনে যাওয়া যেত না বন্যপ্রাণীদের ভয়ে। এক সময় লোকজন কম ছিল। যানবাহন ছিল হাতে গোনা। পায়ে হেঁটে স্থানীয়রা তৎকালীন সময়ে ময়মনসিংহ জেলায় তাদের দৈনন্দিন কাজে যাতায়াত করত। শালবনের ভেতর দিয়ে ছিল টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক। একা বন পাড় হওয়া ছিল কঠিণ ও সাহসী কাজ। তাই কয়েকজন একত্র হয়ে এক সাথে বন পাড়ি দিতে হতো। কয়েকজন একত্রে জড়ো হওয়ার এ স্থান থেকে ময়মনসিংহে যেত। দুরত্ব ছিল ২৫ মাইল। আবার ময়মনসিংহ থেকে এ বাজারের দুরত্বও ২৫ মাইল। বন এরিয়ার এ স্থান থেকে ময়মনসিংহের দুরত্ব ২৫ মাইল বিধায় এ বাজারের নামকরণ হয়েছে ২৫ মাইল। আশপাশের বসতিদের মধ্যে গারো হিন্দু কোচ বর্মন ও মুসলিমদের বসবাস ছিল। তবে সংখ্যায় কম হলে সবাই মিলে মিশে চলত। প্রয়োজনের তাগিদেই গড়ে উঠে বাজার। সে থেকেই এ বাজারের নামকরণ হয় ২৫ মাইল। তবে কখন কে নাম করণ করেছে এমন সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলে নাম করণের ইতিহাস জানিয়েছে তারা।
স্থানীয়রা জানালেন, বাজারটি নানা কারণে পরিচিত ও বিখ্যাত। বাজার পেরুলেই মধুপুর বন। দোখলা জাতীয় উদ্যানে যেতে হলে বাজার দিয়েই যেতে হয়। দেশের বড় আনারসের হাট এ বাজারের পাশেই জলছত্র। কাঁঠালের বাজার এখানেই। খ্রিস্টানদের ধর্মপল্লী, বাজারেই গারো জাতিগোষ্ঠীর বাহারি পোশাক পণ্যের দোকান, কারিতাসের সিল্ক, গারো সম্প্রদায়ের বসবাস, কোচবর্মনদের বসবাস, পর্যটকের যাওয়া আসা, আনারস, কলার ব্যাপক চাষসহ নানা কারণে বাজারটি পরিচিত। তৎকালীন রাজা ভগদত্তের স্মৃতি বিজড়িত শোলাকুড়ির বারোতীর্থেও যেতে হয় এ বাজার হয়েই।
ফারুক হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী জানালেন তারা কয়েকজন মিলে কাঁঠাল হাটের খাজনা আদায় করে। তারমতে,এ বাজারের কাঁঠাল নিতে দেশের বিভিন্ন জেলার লোকজন আসে। কাঁচামালের কারণে বাজারটি আরো বেশি পরিচিতি লাভ করেছে।
জিএমএডিসির সভাপতি অজয় এ মৃ বলেন, ১৯৬২ সাল থেকে দুপায়ের রাস্ত ছিল। ধীরে ধীরে ৭৪-৭৫ সালের দিকে দুই একটা দোকান হয়। প্রথমে মাইকেল নামের একজন এখানে প্রথম দোকান করেন। এভাবেই বন কমতে থাকে মানুষ বাড়তে শুরু করে। বাড়ে সামাজিক বনায়ন। কমে যায় শালবন। আকার পরিধি বাড়ে বাজারের। এখন এ বাজারটি চারদিকেই পরিচিত।
মধুপুর (টাঙ্গাইল) : মধুপুরের বিজোড় সংখ্যায় এ বাজারের নাম ২৫ মাইল বাজার। ছবিটি বাজারের শোলাকুড়ির রোড়ের একাংশের -সংবাদ
মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গাণিতিক বিজোড় সংখ্যায় একটি বাজারের নাম ২৫ মাইল। বাজারের নামটি নিয়ে নানা মানুষের ভিন্ন ভিন্ন কৌতুহল। এমন নাম খুব একটা শোনা যায় না। ভিন্ন ভিন্ন কারণে স্থান বা বাজারের নাম শোনা যায়। কিন্তু গাণিতিক বিজোড় সংখ্যায় এমন নামটি দূর থেকে আগতদের মধ্যে কৌতূহলের জন্ম নেয়। আগ্রহ বেড়ে যায়। এমন নামের একটি বাজার রয়েছে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায়। ২৫ মাইল বাজারটি স্থানীয় অরণখোলা ইউনিয়নের গাছাবাড়ি মৌজায় অবস্থিত। এ বাজারে এখন রয়েছে নানা জাতিগোষ্ঠী মানুষের বসবাস ও দোকান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় গারো কোচদের বাহারি পোশাক ও মৌসুমী ফলের বাজার দোকানপাটের কারনে বাজারটির রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য আর বেচিত্র্য। স্থাণীয়রা ছাড়াও পর্যটকরাও গারোদের বিভিন্ন পোশাক কিনে থাকে আর ফল কিনতেও আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজনেরা। যে কারণে বাজারটির চারদিকে সুনাম যশ-খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
সরজমিনে মধুপুর শহর থেকে ৫ মাইল দূরে ২৫ মাইল বাজারে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় বাজারটির নামকরণের ইতিহাস। এক সময় ইতিহাসখ্যাত ঐতিহ্যে ভরা মধুপুর গড়ের শালবন ছিল গহীন অরণ্য ঘেরা। নানা জীবজন্তু বৃক্ষলতা পাতায় ছিল দূর্ভেদ্য। একা বনে যাওয়া যেত না বন্যপ্রাণীদের ভয়ে। এক সময় লোকজন কম ছিল। যানবাহন ছিল হাতে গোনা। পায়ে হেঁটে স্থানীয়রা তৎকালীন সময়ে ময়মনসিংহ জেলায় তাদের দৈনন্দিন কাজে যাতায়াত করত। শালবনের ভেতর দিয়ে ছিল টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক। একা বন পাড় হওয়া ছিল কঠিণ ও সাহসী কাজ। তাই কয়েকজন একত্র হয়ে এক সাথে বন পাড়ি দিতে হতো। কয়েকজন একত্রে জড়ো হওয়ার এ স্থান থেকে ময়মনসিংহে যেত। দুরত্ব ছিল ২৫ মাইল। আবার ময়মনসিংহ থেকে এ বাজারের দুরত্বও ২৫ মাইল। বন এরিয়ার এ স্থান থেকে ময়মনসিংহের দুরত্ব ২৫ মাইল বিধায় এ বাজারের নামকরণ হয়েছে ২৫ মাইল। আশপাশের বসতিদের মধ্যে গারো হিন্দু কোচ বর্মন ও মুসলিমদের বসবাস ছিল। তবে সংখ্যায় কম হলে সবাই মিলে মিশে চলত। প্রয়োজনের তাগিদেই গড়ে উঠে বাজার। সে থেকেই এ বাজারের নামকরণ হয় ২৫ মাইল। তবে কখন কে নাম করণ করেছে এমন সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলে নাম করণের ইতিহাস জানিয়েছে তারা।
স্থানীয়রা জানালেন, বাজারটি নানা কারণে পরিচিত ও বিখ্যাত। বাজার পেরুলেই মধুপুর বন। দোখলা জাতীয় উদ্যানে যেতে হলে বাজার দিয়েই যেতে হয়। দেশের বড় আনারসের হাট এ বাজারের পাশেই জলছত্র। কাঁঠালের বাজার এখানেই। খ্রিস্টানদের ধর্মপল্লী, বাজারেই গারো জাতিগোষ্ঠীর বাহারি পোশাক পণ্যের দোকান, কারিতাসের সিল্ক, গারো সম্প্রদায়ের বসবাস, কোচবর্মনদের বসবাস, পর্যটকের যাওয়া আসা, আনারস, কলার ব্যাপক চাষসহ নানা কারণে বাজারটি পরিচিত। তৎকালীন রাজা ভগদত্তের স্মৃতি বিজড়িত শোলাকুড়ির বারোতীর্থেও যেতে হয় এ বাজার হয়েই।
ফারুক হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী জানালেন তারা কয়েকজন মিলে কাঁঠাল হাটের খাজনা আদায় করে। তারমতে,এ বাজারের কাঁঠাল নিতে দেশের বিভিন্ন জেলার লোকজন আসে। কাঁচামালের কারণে বাজারটি আরো বেশি পরিচিতি লাভ করেছে।
জিএমএডিসির সভাপতি অজয় এ মৃ বলেন, ১৯৬২ সাল থেকে দুপায়ের রাস্ত ছিল। ধীরে ধীরে ৭৪-৭৫ সালের দিকে দুই একটা দোকান হয়। প্রথমে মাইকেল নামের একজন এখানে প্রথম দোকান করেন। এভাবেই বন কমতে থাকে মানুষ বাড়তে শুরু করে। বাড়ে সামাজিক বনায়ন। কমে যায় শালবন। আকার পরিধি বাড়ে বাজারের। এখন এ বাজারটি চারদিকেই পরিচিত।