চান্দিনা (কুমিল্লা) : পেরেক-তারকাঁটা দিয়ে গাছে গাছে ঝুলছে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার -সংবাদ
গাছের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে পেরেক আর তারকাঁটা। এগুলোর উপর ভর করে গাছে গাছে ঝুলছে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার আর সাইনবোর্ডের বিশৃঙ্খল পসরা। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার প্রতিটি সড়ক এখন যেন বিজ্ঞাপনের দোকানে পরিণত হয়েছে। নিত্যপণ্যের মতো করে ঝুলছে বিজ্ঞাপন।
রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের প্রচারণা, চিকিৎসা সেবা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা কিংবা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন- সবই ঠাঁই পাচ্ছে উপজেলার জীবন্ত গাছগুলোর গায়ে। আর এসব বোঁঝা বইতে নুব্জ হয়ে পড়ছে গাছগুলো। প্রচারণার এমন ভার বহন করা থেকে ছোট ছোট চারা গাছও বাদ যায়নি।
বেদনাদায়ক হলেও সত্য, খোদ চান্দিনা উপজেলা পরিষদের সামনে পেরেক ঠুকে গাছে সাঁটানো হচ্ছে এসব প্রচারণার সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড।
অথচ প্রতিদিন প্রশাসনের লোকজন যাওয়া-আসা করছে এ গাছের সামনে দিয়ে। বিশেষ করে থানা, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা পরিষদ, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, ভূমি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ ও বিভিন্ন মোড়ের গাছে ব্যানার ফেস্টুন সাঁটানো হয়। এমনকি উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা সৌন্দর্যবর্ধক গাছগুলোও ছাড় নেই। যা দেখে মনে হয়, গাছ নয়-বিজ্ঞাপন সাঁটানোর ‘ফ্রি হোর্ডিং বোর্ড’!
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে উপজেলা সদরের কেন্দ্রস্থল ছাড়িয়ে ছায়কোট-শ্রীমন্তপুর, বরকইট মাধাইয়া, নবাবপুর, কুটুম্বপুর-কালিয়ারচর ও চান্দিনা মোকামবাড়ি এবং বাড়েরা-মাইজখার সড়কপথের দু’পাশজুড়ে এই দৃষ্টিকটু চিত্র দেখা যাচ্ছে। যেখানে শত শত গাছ গায়ে পেরেক বিধে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে দিনের পর দিন। পেরেকের জ্বালা, সূর্যের তাপ ও জৈব ক্ষত একত্রে গাছগুলোর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করছে। অনেক গাছ ইতিমধ্যে শুকিয়ে গিয়েছে, আরও অনেক গাছ রোগগ্রস্ত হয়ে ধ্বংসের পথে।
জীবন্ত গাছে পেরেক ঠোকা পরিবেশ ও বন আইনে স্পষ্টভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবুও এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি নেই বললেই চলে।
প্রশাসন নীরব থাকায় কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গাছকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিজ্ঞাপন সাঁটানোর মাধ্যম হিসেবে, ব্যানার সাঁটানোকে কেন্দ্র করে গাছের গায়ে ঠোকানো হচ্ছে বড় বড় পেরেক, যেগুলো গাছের অভ্যন্তরীণ কোষ ধ্বংস করে দেয়। এতে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছ ধীরে ধীরে মরে যায়। যা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি।
এবিষয়ে জাতীয় পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত এআইপি অধ্যাপক মতিন সৈকত বলেন- বৃক্ষ শুধু ফুল, ফল, ছায়া বা শীতল আশ্রয়স্থলই নয় এটি জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের অপরিহার্য উপাদান। বৃক্ষ পরিবেশকে সবুজ রাখে, অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কার্বনডাইঅক্সাইড শোষণ করে। তিনি দুঃখজনকভাবে আরও বলেন, বর্তমানে বৃক্ষের ওপর চলছে ‘পেরেক নির্যাতন’। ব্যানার, ফেস্টুন, সাইনবোর্ড ও প্লেকার্ড গাঁথতে গাঁথতে গাছগুলোকে প্রায় মুমূর্ষূ করে তোলা হচ্ছে।
এব্যাপারে জানতে চান্দিনা উপজেলা সামাজিক বন ও নার্সারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করে করলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার অফিস কার্যালয়ে গিয়েও তাকে না পাওয়ায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান, গাছে পেরেক ঠুকানো নিষেধ, যে যে জীবন্ত গাছ গুলোতে পেরেক ঠুকে প্রচারসামগ্রী লাগানো হয়েছে খুঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চান্দিনা (কুমিল্লা) : পেরেক-তারকাঁটা দিয়ে গাছে গাছে ঝুলছে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার -সংবাদ
মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গাছের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে পেরেক আর তারকাঁটা। এগুলোর উপর ভর করে গাছে গাছে ঝুলছে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার আর সাইনবোর্ডের বিশৃঙ্খল পসরা। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার প্রতিটি সড়ক এখন যেন বিজ্ঞাপনের দোকানে পরিণত হয়েছে। নিত্যপণ্যের মতো করে ঝুলছে বিজ্ঞাপন।
রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের প্রচারণা, চিকিৎসা সেবা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা কিংবা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন- সবই ঠাঁই পাচ্ছে উপজেলার জীবন্ত গাছগুলোর গায়ে। আর এসব বোঁঝা বইতে নুব্জ হয়ে পড়ছে গাছগুলো। প্রচারণার এমন ভার বহন করা থেকে ছোট ছোট চারা গাছও বাদ যায়নি।
বেদনাদায়ক হলেও সত্য, খোদ চান্দিনা উপজেলা পরিষদের সামনে পেরেক ঠুকে গাছে সাঁটানো হচ্ছে এসব প্রচারণার সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড।
অথচ প্রতিদিন প্রশাসনের লোকজন যাওয়া-আসা করছে এ গাছের সামনে দিয়ে। বিশেষ করে থানা, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা পরিষদ, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, ভূমি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ ও বিভিন্ন মোড়ের গাছে ব্যানার ফেস্টুন সাঁটানো হয়। এমনকি উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা সৌন্দর্যবর্ধক গাছগুলোও ছাড় নেই। যা দেখে মনে হয়, গাছ নয়-বিজ্ঞাপন সাঁটানোর ‘ফ্রি হোর্ডিং বোর্ড’!
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে উপজেলা সদরের কেন্দ্রস্থল ছাড়িয়ে ছায়কোট-শ্রীমন্তপুর, বরকইট মাধাইয়া, নবাবপুর, কুটুম্বপুর-কালিয়ারচর ও চান্দিনা মোকামবাড়ি এবং বাড়েরা-মাইজখার সড়কপথের দু’পাশজুড়ে এই দৃষ্টিকটু চিত্র দেখা যাচ্ছে। যেখানে শত শত গাছ গায়ে পেরেক বিধে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে দিনের পর দিন। পেরেকের জ্বালা, সূর্যের তাপ ও জৈব ক্ষত একত্রে গাছগুলোর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করছে। অনেক গাছ ইতিমধ্যে শুকিয়ে গিয়েছে, আরও অনেক গাছ রোগগ্রস্ত হয়ে ধ্বংসের পথে।
জীবন্ত গাছে পেরেক ঠোকা পরিবেশ ও বন আইনে স্পষ্টভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবুও এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি নেই বললেই চলে।
প্রশাসন নীরব থাকায় কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গাছকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিজ্ঞাপন সাঁটানোর মাধ্যম হিসেবে, ব্যানার সাঁটানোকে কেন্দ্র করে গাছের গায়ে ঠোকানো হচ্ছে বড় বড় পেরেক, যেগুলো গাছের অভ্যন্তরীণ কোষ ধ্বংস করে দেয়। এতে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছ ধীরে ধীরে মরে যায়। যা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি।
এবিষয়ে জাতীয় পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত এআইপি অধ্যাপক মতিন সৈকত বলেন- বৃক্ষ শুধু ফুল, ফল, ছায়া বা শীতল আশ্রয়স্থলই নয় এটি জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের অপরিহার্য উপাদান। বৃক্ষ পরিবেশকে সবুজ রাখে, অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কার্বনডাইঅক্সাইড শোষণ করে। তিনি দুঃখজনকভাবে আরও বলেন, বর্তমানে বৃক্ষের ওপর চলছে ‘পেরেক নির্যাতন’। ব্যানার, ফেস্টুন, সাইনবোর্ড ও প্লেকার্ড গাঁথতে গাঁথতে গাছগুলোকে প্রায় মুমূর্ষূ করে তোলা হচ্ছে।
এব্যাপারে জানতে চান্দিনা উপজেলা সামাজিক বন ও নার্সারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করে করলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার অফিস কার্যালয়ে গিয়েও তাকে না পাওয়ায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান, গাছে পেরেক ঠুকানো নিষেধ, যে যে জীবন্ত গাছ গুলোতে পেরেক ঠুকে প্রচারসামগ্রী লাগানো হয়েছে খুঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।