চুয়াডাঙ্গা : নির্মাণাধীন ওভারপাস -সংবাদ
পথচারীদের ভোগান্তি কমাতে ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট শুরু হয় চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণকাজ। ৭৪৮ দশমিক ৬৯৬ মিটার দীর্ঘ এই ওভারপাস নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০২৪ সালের জুন মাসে।
৭৫ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার টাকা ব্যায়ে এই ওভারপাসের নির্মাণকাজ এক বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই বছরে শেষ হয়নি। বরং ধীরগতিতে চলা এ প্রকল্প নানা জটিলতায় আরও পিছিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া ওভারপাস নির্মাণ এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখায় প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। যানজটের পাশাপাশি বর্ষায় রাস্তায় খানাখন্দে পানি জমে চলাচল আরও কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
অটোরিকশা চালক জয়নাল বলেন, খানাখন্দে ভরা রাস্তায় চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে, যা জীবিকা নির্বাহকে আরও কষ্টসাধ্য করে তুলছে।
রকিবুল নামে এক ভ্যানচালক বলেন, এই ওভারপাস নির্মানের কারণে রাস্তা খোঁড়া হয়েছে। যে কারণে প্রতিদিন গাড়ি চালানো আমাদের জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে। কবে ঠিক হবে তা জানিনা।
মোটরসাইকেলের চালক হাসানুজ্জামান খসরু বলেন, চুয়াডাঙ্গাবাসীর বহু দিনের স্বপ্ন ছিল এই ওভারপাস। আমরা ভেনেছিলাম ভোগান্তি কমবে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কাজ শেষ না হওয়ায় বরং ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।
অটোরিকশার যাত্রী তানজিলা হাসান বলেন, প্রতিদিনই আমাদের এই রাস্তায় যাতায়াত করতে হয়। রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের যাতায়াত চরম ভোগান্তিকর হয়ে উঠেছে। আমরা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই।
নিরাপদ সড়ক চাই চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মানিক আকবর বলেন, প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি ট্রেন চলাচলের কারণে দিনে প্রায় চার ঘণ্টা রেলগেট বন্ধ থাকে। এতে শহরের যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এজন্যই এ ওভারপাস ছিল চুয়াডাঙ্গাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের অনিহা ও দায়িত্বহীনতার কারণে প্রকল্পটি ঝুলে আছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে চলমান এই প্রকল্পের কাজ থেমে যেতে পারে।
তথ্য অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে ওভারপাসের নকশার র্যাম্পের দৈর্ঘ্য প্রথমে ৩৩০ মিটার ধরা হয়েছিল। এতে ওভারপাসে উঠতে সংযোগ সড়ক খাড়া হয়ে যাচ্ছিল। ফলে নতুন করে সংশোধিত নকশা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। নতুন নকশায় দু’প্রান্তের র্যাম্পের দৈর্ঘ্য বেড়ে হয়েছে আরও ১০২ মিটার।
এর ফলে অতিরিক্ত ১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। একইসঙ্গে সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রথমদিকে প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগোলেও পরবর্তীতে জমি অধিগ্রহণ, নকশায় ত্রুটি, বিদ্যুৎ ও রেল কর্তৃপক্ষের খরচ বাড়া এবং সার্ভিস সড়ক না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্টরাও দায় স্বীকার করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে প্রকল্পের কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় সংশোধিত উন্নয়ন প্রস্তাব (আরডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে।
তারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন সড়ক ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। সার্ভিস সড়ক না থাকায় যাতায়াতের চাপ মূল সড়কে পড়ছে। বর্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামত করা হবে। এতে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৮ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটির (একনেক) বৈঠকে ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে দরপত্র আহ্বান করে কাজ পায় ঢাকা বনানীর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (এনডিই)।
চুয়াডাঙ্গা : নির্মাণাধীন ওভারপাস -সংবাদ
মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পথচারীদের ভোগান্তি কমাতে ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট শুরু হয় চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণকাজ। ৭৪৮ দশমিক ৬৯৬ মিটার দীর্ঘ এই ওভারপাস নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০২৪ সালের জুন মাসে।
৭৫ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার টাকা ব্যায়ে এই ওভারপাসের নির্মাণকাজ এক বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই বছরে শেষ হয়নি। বরং ধীরগতিতে চলা এ প্রকল্প নানা জটিলতায় আরও পিছিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া ওভারপাস নির্মাণ এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখায় প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। যানজটের পাশাপাশি বর্ষায় রাস্তায় খানাখন্দে পানি জমে চলাচল আরও কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
অটোরিকশা চালক জয়নাল বলেন, খানাখন্দে ভরা রাস্তায় চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে, যা জীবিকা নির্বাহকে আরও কষ্টসাধ্য করে তুলছে।
রকিবুল নামে এক ভ্যানচালক বলেন, এই ওভারপাস নির্মানের কারণে রাস্তা খোঁড়া হয়েছে। যে কারণে প্রতিদিন গাড়ি চালানো আমাদের জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে। কবে ঠিক হবে তা জানিনা।
মোটরসাইকেলের চালক হাসানুজ্জামান খসরু বলেন, চুয়াডাঙ্গাবাসীর বহু দিনের স্বপ্ন ছিল এই ওভারপাস। আমরা ভেনেছিলাম ভোগান্তি কমবে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কাজ শেষ না হওয়ায় বরং ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।
অটোরিকশার যাত্রী তানজিলা হাসান বলেন, প্রতিদিনই আমাদের এই রাস্তায় যাতায়াত করতে হয়। রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের যাতায়াত চরম ভোগান্তিকর হয়ে উঠেছে। আমরা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই।
নিরাপদ সড়ক চাই চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মানিক আকবর বলেন, প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি ট্রেন চলাচলের কারণে দিনে প্রায় চার ঘণ্টা রেলগেট বন্ধ থাকে। এতে শহরের যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এজন্যই এ ওভারপাস ছিল চুয়াডাঙ্গাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের অনিহা ও দায়িত্বহীনতার কারণে প্রকল্পটি ঝুলে আছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে চলমান এই প্রকল্পের কাজ থেমে যেতে পারে।
তথ্য অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে ওভারপাসের নকশার র্যাম্পের দৈর্ঘ্য প্রথমে ৩৩০ মিটার ধরা হয়েছিল। এতে ওভারপাসে উঠতে সংযোগ সড়ক খাড়া হয়ে যাচ্ছিল। ফলে নতুন করে সংশোধিত নকশা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। নতুন নকশায় দু’প্রান্তের র্যাম্পের দৈর্ঘ্য বেড়ে হয়েছে আরও ১০২ মিটার।
এর ফলে অতিরিক্ত ১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। একইসঙ্গে সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রথমদিকে প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগোলেও পরবর্তীতে জমি অধিগ্রহণ, নকশায় ত্রুটি, বিদ্যুৎ ও রেল কর্তৃপক্ষের খরচ বাড়া এবং সার্ভিস সড়ক না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্টরাও দায় স্বীকার করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে প্রকল্পের কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় সংশোধিত উন্নয়ন প্রস্তাব (আরডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে।
তারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন সড়ক ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। সার্ভিস সড়ক না থাকায় যাতায়াতের চাপ মূল সড়কে পড়ছে। বর্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামত করা হবে। এতে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৮ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটির (একনেক) বৈঠকে ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে দরপত্র আহ্বান করে কাজ পায় ঢাকা বনানীর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (এনডিই)।