ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
পৃথিবীর সবাইকে কখনই কোনো একটি ধর্মে দীক্ষিত করে ফেলা যাবে না। কারণ, প্রতিটি সত্তা-অস্তিত্বই অনন্য। সামান্য কিছু মিল হয়তো থাকে। এই ভিন্নতা মেনে নিয়েই ভিন্নতার ঊর্ধ্বে উঠেই একসঙ্গে পথ চলতে হবে। তাই আমাদের সবার ধর্মই হোক শান্তির শক্তি, কোনো বিভেদের নয়।
‘আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সম্প্রীতি সম্মেলনে’ উপস্থিত বক্তারা এ কথা বলেন। মঙ্গলবার,(০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ‘গড়ে তুলি সম্প্রীতির সংস্কৃতি’ শীর্ষক এ সংলাপের আয়োজন করেছে ‘খ্রিষ্টান ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপবিষয়ক এপিস্কোপাল কমিশন (ইসিসিইউআইআরডি)’।
সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি বলেন, ঈশ্বরকে কেউ কেউ ভাবেন অতীন্দ্রিয়, সবকিছুর স্রষ্টা হিসেবে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, ঈশ্বর সবার মধ্যেই বিরাজমান। প্রতিটি সত্ত্বা, প্রতিটি অস্তিত্বই অনন্য। তবু সব সত্ত্বার মধ্যেই কিছু মিল বিদ্যমান। অর্থাৎ প্রতিটি সত্ত্বার দুটি দিক, একদিকে অনন্যতা, অন্যদিকে সাধারণত্ব। এ কথা ভুলে গিয়ে মনে করা হয়, সবাইকে এক রকম করার। আমাদের ভিন্নতা ও মিল থাকার বিষয়টি বিশ্বাস করতে হবে। এভাবেই পৃথিবীতে বাঁচতে হবে।
সম্মেলনের মূল সুর ‘গড়ে তুলি সম্প্রীতির সংস্কৃতি’র ওপর বক্তব্য দেন ভ্যাটিকানের আন্তঃধর্মীয় সংলাপবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধান কার্ডিনাল জর্জ জাকোব কভোকাদ। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে সমবেত হয়েছি কেবল ধর্মীয় নেতা হিসেবে নয়; কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, নাগরিক সমাজের সদস্য হিসেবে। আমরা সবাই একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। পরিবর্তনের জন্য আমাদের ভিন্নতার ঊর্ধ্বে উঠে একসঙ্গে পথ চলতে হবে।’
কার্ডিনাল জর্জ জাকোব বলেন, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ পরিষদের দায়িত্ব হলো- বিভিন্ন ধর্মীয় ঐতিহ্যের মানুষের মাঝে শান্তি ও সম্প্রীতি গড়ে তোলা। ক্যাথলিক চার্চ বিশ্বাস করে সংলাপ হলো- তার মিশনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেখানে একে অন্যকে সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে দেখা হয় ও সম্মান জানানো হয়। বাংলাদেশের মতো বহুধর্মীয় সমাজে সংলাপ শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, টিকে থাকার পথ। ধর্ম কখনো বিভাজন বা সহিংসতার উৎস নয়; বরং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তি।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ কেভিন রেনডাল বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে। আধুনিক সংকটের মূল কারণ হচ্ছে ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে যাওয়া। তাই প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠায় দরকার ভ্রাতৃত্ব, মূল্যবোধ ও সম্মিলিত দায়িত্বশীলতা।
হিন্দুধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি গীতা সংঘের সভাপতি নিত্যানন্দ চক্রবর্তী বলেন, বিশ্বে শান্তি ও সামাজিক সংহতির জন্য ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলা জরুরি। হিন্দুধর্মের বেদ ও গীতায় বলা হয়েছে, সর্বত্র ঈশ্বর আছেন, মানুষ ভিন্ন ভিন্ন পথে তাকে খোঁজে। আন্তঃধর্মীয় সংলাপ, পারস্পরিক আস্থা ও সত্যের প্রতি ভালোবাসার মাধ্যমেই ঘৃণা দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
বৌদ্ধধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, ধর্মীয় সম্প্রীতি গড়ে তোলা আজকের বিশ্বের জরুরি বিষয়। বৌদ্ধধর্ম শেখায়- মৈত্রী, করুণা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে ব্যক্তিগত শান্তি থেকে শুরু হয় সমাজে ন্যায় ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশের মানুষ ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী হয়ে যুগ যুগ ধরে মিলেমিশে বাস করছে।
ভ্রাতৃত্বের বিষয়ে খ্রিষ্টধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফাদার মার্কাস সলো কেউটা বলেন, বিশ্ব আজ বহুধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গঠিত। ধর্মীয় সংলাপ কেবল আলাপ নয় বরং পারস্পরিক বোঝাপড়া, পূর্বাগ্রহ দূর করা ও সম্পর্কের মাধ্যমে পরিবর্তন আনার পথ। প্রত্যেক ধর্ম মানুষকে সৎ, বিনয়ী ও মানবপ্রেমী হতে শেখায়। ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার কল্যাণ।
সংলাপ শেষে ভ্যাটিকানের হয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ভ্যাটিকানের আন্তঃধর্মীয় সংলাপবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি মুন্সিনিয়র ইন্দুনীল জনাকারত্নে কদিথুওয়াক্কু কনকানামালাগে। বাংলাদেশের হয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত রোজারিও সিএসসি। আয়োজকেরা জানান, সম্মেলনে প্রায় ৯৫০ জন অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে কূটনীতিক, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা ছিলেন।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পৃথিবীর সবাইকে কখনই কোনো একটি ধর্মে দীক্ষিত করে ফেলা যাবে না। কারণ, প্রতিটি সত্তা-অস্তিত্বই অনন্য। সামান্য কিছু মিল হয়তো থাকে। এই ভিন্নতা মেনে নিয়েই ভিন্নতার ঊর্ধ্বে উঠেই একসঙ্গে পথ চলতে হবে। তাই আমাদের সবার ধর্মই হোক শান্তির শক্তি, কোনো বিভেদের নয়।
‘আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সম্প্রীতি সম্মেলনে’ উপস্থিত বক্তারা এ কথা বলেন। মঙ্গলবার,(০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ‘গড়ে তুলি সম্প্রীতির সংস্কৃতি’ শীর্ষক এ সংলাপের আয়োজন করেছে ‘খ্রিষ্টান ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপবিষয়ক এপিস্কোপাল কমিশন (ইসিসিইউআইআরডি)’।
সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি বলেন, ঈশ্বরকে কেউ কেউ ভাবেন অতীন্দ্রিয়, সবকিছুর স্রষ্টা হিসেবে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, ঈশ্বর সবার মধ্যেই বিরাজমান। প্রতিটি সত্ত্বা, প্রতিটি অস্তিত্বই অনন্য। তবু সব সত্ত্বার মধ্যেই কিছু মিল বিদ্যমান। অর্থাৎ প্রতিটি সত্ত্বার দুটি দিক, একদিকে অনন্যতা, অন্যদিকে সাধারণত্ব। এ কথা ভুলে গিয়ে মনে করা হয়, সবাইকে এক রকম করার। আমাদের ভিন্নতা ও মিল থাকার বিষয়টি বিশ্বাস করতে হবে। এভাবেই পৃথিবীতে বাঁচতে হবে।
সম্মেলনের মূল সুর ‘গড়ে তুলি সম্প্রীতির সংস্কৃতি’র ওপর বক্তব্য দেন ভ্যাটিকানের আন্তঃধর্মীয় সংলাপবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধান কার্ডিনাল জর্জ জাকোব কভোকাদ। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে সমবেত হয়েছি কেবল ধর্মীয় নেতা হিসেবে নয়; কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, নাগরিক সমাজের সদস্য হিসেবে। আমরা সবাই একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। পরিবর্তনের জন্য আমাদের ভিন্নতার ঊর্ধ্বে উঠে একসঙ্গে পথ চলতে হবে।’
কার্ডিনাল জর্জ জাকোব বলেন, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ পরিষদের দায়িত্ব হলো- বিভিন্ন ধর্মীয় ঐতিহ্যের মানুষের মাঝে শান্তি ও সম্প্রীতি গড়ে তোলা। ক্যাথলিক চার্চ বিশ্বাস করে সংলাপ হলো- তার মিশনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেখানে একে অন্যকে সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে দেখা হয় ও সম্মান জানানো হয়। বাংলাদেশের মতো বহুধর্মীয় সমাজে সংলাপ শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, টিকে থাকার পথ। ধর্ম কখনো বিভাজন বা সহিংসতার উৎস নয়; বরং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তি।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ কেভিন রেনডাল বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে। আধুনিক সংকটের মূল কারণ হচ্ছে ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে যাওয়া। তাই প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠায় দরকার ভ্রাতৃত্ব, মূল্যবোধ ও সম্মিলিত দায়িত্বশীলতা।
হিন্দুধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি গীতা সংঘের সভাপতি নিত্যানন্দ চক্রবর্তী বলেন, বিশ্বে শান্তি ও সামাজিক সংহতির জন্য ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলা জরুরি। হিন্দুধর্মের বেদ ও গীতায় বলা হয়েছে, সর্বত্র ঈশ্বর আছেন, মানুষ ভিন্ন ভিন্ন পথে তাকে খোঁজে। আন্তঃধর্মীয় সংলাপ, পারস্পরিক আস্থা ও সত্যের প্রতি ভালোবাসার মাধ্যমেই ঘৃণা দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
বৌদ্ধধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, ধর্মীয় সম্প্রীতি গড়ে তোলা আজকের বিশ্বের জরুরি বিষয়। বৌদ্ধধর্ম শেখায়- মৈত্রী, করুণা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে ব্যক্তিগত শান্তি থেকে শুরু হয় সমাজে ন্যায় ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশের মানুষ ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী হয়ে যুগ যুগ ধরে মিলেমিশে বাস করছে।
ভ্রাতৃত্বের বিষয়ে খ্রিষ্টধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফাদার মার্কাস সলো কেউটা বলেন, বিশ্ব আজ বহুধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গঠিত। ধর্মীয় সংলাপ কেবল আলাপ নয় বরং পারস্পরিক বোঝাপড়া, পূর্বাগ্রহ দূর করা ও সম্পর্কের মাধ্যমে পরিবর্তন আনার পথ। প্রত্যেক ধর্ম মানুষকে সৎ, বিনয়ী ও মানবপ্রেমী হতে শেখায়। ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার কল্যাণ।
সংলাপ শেষে ভ্যাটিকানের হয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ভ্যাটিকানের আন্তঃধর্মীয় সংলাপবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি মুন্সিনিয়র ইন্দুনীল জনাকারত্নে কদিথুওয়াক্কু কনকানামালাগে। বাংলাদেশের হয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত রোজারিও সিএসসি। আয়োজকেরা জানান, সম্মেলনে প্রায় ৯৫০ জন অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে কূটনীতিক, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা ছিলেন।