চুয়াডাঙ্গা : সবচেয়ে পুরনো চিনি উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর একটি হলো কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড -সংবাদ
চুয়াডাঙ্গা তথা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। চিনি, ভিনেগার, সার, দেশি-বিদেশি মদ উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে সরকারকে বিপুল রাজস্ব প্রদান করছে। প্রতিবছর শত কোটি টাকা রাজস্বের পাশাপাশি মুনাফা অর্জন করে আসছে এ শিল্প প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কারখানা বর্তমানে দেশের সবচেয়ে পুরনো চিনি উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর একটি। তবে সময়ের সাথে সাথে কারখানার যন্ত্রাংশ হয়ে পড়েছে একেবারেই অচল। জোড়া-তালি দিয়ে কোনোরকমে আখ মাড়াই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। দীর্ঘ অবহেলার পর ১৩ বছর আগে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে কেরুজ চিনিকলের আধুনিকায়ন পরিকল্পনা। ২০১২ সালে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আধুনিকায়নের কাজের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, যারা সাব কন্ট্রাক্ট দেয় ভারতের ‘সায়সিদা সুগার ইকুইপমেন্ট কোম্পানি’-কে। একই বছরের জুলাই থেকে পুরোনো যন্ত্রাংশ অপসারণ শুরু হয়, আর আগস্টে সায়সিদা কোম্পানি হাতে নেয় কাজ। কিন্তু ২০১৬ সালে কাজ অসমাপ্ত রেখে সরে দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে নতুনভাবে বরাদ্দ বাড়িয়ে দাঁড় করানো হয় ১০২ কোটি ২১ লাখ টাকায়। কিন্তু কাজের গতি বাড়েনি। বরং নতুন সাব কন্ট্রাক্টর হিসেবে আসে ভারতের ‘উত্তম এনার্জি লিমিটেড’। দুই বছরের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলেও আজও শেষ হয়নি কাজ। আধুনিকায়নের নামে টানা ১৩ বছর কেটে গেলেও উৎপাদন শুরু করতে পারেনি কেরুজ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ভারতীয় প্রকৌশলীসহ ২২ জন বিদেশি বিশেষজ্ঞ বছরের পর বছর বসে থেকে ডলারের হিসাবে বেতন তুলছেন। থাকছেন কেরুজ অতিথিশালায়, খাচ্ছেন-দাচ্ছেন নিয়মিতকিন্তু কাজের অগ্রগতি নেই বললেই চলে। ইতোমধ্যেই সাতবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা, অথচ আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৭৮.৩২ শতাংশ।
শুধু গত মার্চে প্রকল্পের যন্ত্রপাতি দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে একটি ওয়াটার ট্রায়াল রান। আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদনে এর কার্যকারিতা দেখা গেছে মাত্র ৫০ শতাংশ। অথচ গত ২০২৪-২৫ মৌসুমে পরীক্ষামূলক আখ মাড়াই করার কথা থাকলেও তা হয়নি। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। এর মধ্যেই অষ্টমবারের মতো একনেক সভায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। তবে শর্ত হলো এবার আর কোনো খরচ বাড়ানো হবে না। আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে, তাই শেষ করার জন্য এক বছর সময় দেওয়া যেতে পারে। তবে এটিই হবে শেষ সময়সীমা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হলে স্থানীয় কৃষক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করছে পরিকল্পনা কমিশন। একই সঙ্গে প্রসেস লস কমে চিনি উৎপাদন হবে আরও লাভজনক।
কেরুজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, কাজ এখনো আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি কাজ বুঝিয়ে দিলে আমরা তা গ্রহণ করব। প্রকল্প পরিচালক ফিদাহ হাসান বাদশা জানান,সবকিছু প্রায় শেষ আগামি মৌসুমে কার্যক্রম শুরু হতে পারে ইনশাল্লাহ। এদিকে গত রোববার দুপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে। মেজর জেনারেল নাহিদ আজগার, ব্রিগেডিয়ার সাজ্জাদ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলামিন হোসেন নেতৃত্ব দেন এ প্রতিনিধিদলে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে তারা প্রকল্পের অগ্রগতি, যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঘুরে ঘুরে দেখেন। ১৩ বছরেও শেষ না হওয়া কেরুজ চিনিকলের আধুনিকায়ন প্রকল্প নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে হতাশা বাড়ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, সঠিক নজরদারি ও জবাবদিহিতা না থাকায় প্রকল্পটি এত দীর্ঘসূত্রিতায় পড়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী আগামী মৌসুমেই আধুনিক কেরুজে আখ মাড়াই শুরু হবে, আর সেই স্বপ্নের দিনটি দেখতে আর অপেক্ষা দীর্ঘ হতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা : সবচেয়ে পুরনো চিনি উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর একটি হলো কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড -সংবাদ
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
চুয়াডাঙ্গা তথা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। চিনি, ভিনেগার, সার, দেশি-বিদেশি মদ উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে সরকারকে বিপুল রাজস্ব প্রদান করছে। প্রতিবছর শত কোটি টাকা রাজস্বের পাশাপাশি মুনাফা অর্জন করে আসছে এ শিল্প প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কারখানা বর্তমানে দেশের সবচেয়ে পুরনো চিনি উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর একটি। তবে সময়ের সাথে সাথে কারখানার যন্ত্রাংশ হয়ে পড়েছে একেবারেই অচল। জোড়া-তালি দিয়ে কোনোরকমে আখ মাড়াই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। দীর্ঘ অবহেলার পর ১৩ বছর আগে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে কেরুজ চিনিকলের আধুনিকায়ন পরিকল্পনা। ২০১২ সালে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আধুনিকায়নের কাজের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, যারা সাব কন্ট্রাক্ট দেয় ভারতের ‘সায়সিদা সুগার ইকুইপমেন্ট কোম্পানি’-কে। একই বছরের জুলাই থেকে পুরোনো যন্ত্রাংশ অপসারণ শুরু হয়, আর আগস্টে সায়সিদা কোম্পানি হাতে নেয় কাজ। কিন্তু ২০১৬ সালে কাজ অসমাপ্ত রেখে সরে দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে নতুনভাবে বরাদ্দ বাড়িয়ে দাঁড় করানো হয় ১০২ কোটি ২১ লাখ টাকায়। কিন্তু কাজের গতি বাড়েনি। বরং নতুন সাব কন্ট্রাক্টর হিসেবে আসে ভারতের ‘উত্তম এনার্জি লিমিটেড’। দুই বছরের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলেও আজও শেষ হয়নি কাজ। আধুনিকায়নের নামে টানা ১৩ বছর কেটে গেলেও উৎপাদন শুরু করতে পারেনি কেরুজ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ভারতীয় প্রকৌশলীসহ ২২ জন বিদেশি বিশেষজ্ঞ বছরের পর বছর বসে থেকে ডলারের হিসাবে বেতন তুলছেন। থাকছেন কেরুজ অতিথিশালায়, খাচ্ছেন-দাচ্ছেন নিয়মিতকিন্তু কাজের অগ্রগতি নেই বললেই চলে। ইতোমধ্যেই সাতবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা, অথচ আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৭৮.৩২ শতাংশ।
শুধু গত মার্চে প্রকল্পের যন্ত্রপাতি দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে একটি ওয়াটার ট্রায়াল রান। আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদনে এর কার্যকারিতা দেখা গেছে মাত্র ৫০ শতাংশ। অথচ গত ২০২৪-২৫ মৌসুমে পরীক্ষামূলক আখ মাড়াই করার কথা থাকলেও তা হয়নি। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। এর মধ্যেই অষ্টমবারের মতো একনেক সভায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। তবে শর্ত হলো এবার আর কোনো খরচ বাড়ানো হবে না। আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে, তাই শেষ করার জন্য এক বছর সময় দেওয়া যেতে পারে। তবে এটিই হবে শেষ সময়সীমা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হলে স্থানীয় কৃষক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করছে পরিকল্পনা কমিশন। একই সঙ্গে প্রসেস লস কমে চিনি উৎপাদন হবে আরও লাভজনক।
কেরুজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, কাজ এখনো আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি কাজ বুঝিয়ে দিলে আমরা তা গ্রহণ করব। প্রকল্প পরিচালক ফিদাহ হাসান বাদশা জানান,সবকিছু প্রায় শেষ আগামি মৌসুমে কার্যক্রম শুরু হতে পারে ইনশাল্লাহ। এদিকে গত রোববার দুপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে। মেজর জেনারেল নাহিদ আজগার, ব্রিগেডিয়ার সাজ্জাদ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলামিন হোসেন নেতৃত্ব দেন এ প্রতিনিধিদলে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে তারা প্রকল্পের অগ্রগতি, যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঘুরে ঘুরে দেখেন। ১৩ বছরেও শেষ না হওয়া কেরুজ চিনিকলের আধুনিকায়ন প্রকল্প নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে হতাশা বাড়ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, সঠিক নজরদারি ও জবাবদিহিতা না থাকায় প্রকল্পটি এত দীর্ঘসূত্রিতায় পড়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী আগামী মৌসুমেই আধুনিক কেরুজে আখ মাড়াই শুরু হবে, আর সেই স্বপ্নের দিনটি দেখতে আর অপেক্ষা দীর্ঘ হতে পারে।