ছবি: পাহাড়ি জনপদের জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে হারবাং রেলস্টেশন।
চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী হয়ে চালু হওয়া কক্সবাজার রেলপথে চকরিয়া উপজেলার হারবাং পাহাড়ি জনপদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকায় অর্থাৎ বিলের মাঝে স্থাপন করা হয়েছে হারবাং রেল স্টেশনটি। এখন এটি যাত্রী সাধারণের কাছে কাক্সিক্ষত সেবার বদলে দুর্ভোগের নরক যন্ত্রণা হয়ে দেখা দিয়েছে। রেলস্টেশনে যাবার পথ তৈরি না করে বিচ্ছিন্ন এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে এ স্টেশনটি করায়, যাত্রীরা চেষ্টা করলেও ঠিকমতো হারবাং রেলস্টেশন এর সুবিধা ভোগ করতে পারছে না।
রেলস্টেশনে যাতায়াত দুর্ভোগে চার উপজেলার যাত্রী সাধারণ
হারবাং স্টেশন থেকে মছনিয়াকাটা পর্যন্ত রেল লাইনের পাশ দিয়ে একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর
স্থানীয়রা জানান, ভুল জায়গায় রেলস্টেশনটি নির্মিত হওয়ায় এখন যাত্রীদের প্রায় ৩ কিলোমিটার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে স্টেশনে যেতে হচ্ছে। ফলে এ রুটে চলাচলকারী ট্রেন এ স্টেশন থেকে কাক্সিক্ষত যাত্রীও পাচ্ছে না।
সরকারি হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে পর্যটন জেলা কক্সবাজারের জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটাতে স্বপ্নের রেলপথ চালু করলেও যাতায়াত সুবিধা না থাকায় হারবাং স্টেশন থেকে রেলযাত্রার সুফল অধরা থেকে যাচ্ছে এতদাঞ্চলের মানুষের কাছে।
মূলত হারবাং রেলস্টেশনটি জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় স্থাপিত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রকট দৈন্যদশার কারণে চকরিয়া উপজেলা এবং পাশের পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও বাশখালী উপজেলার যাত্রী সাধারণকে রেলযাত্রায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরজমিনে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার হারবাং রেলস্টেশনের পশ্চিম পাশে পাহাড়, পূর্ব পাশে সমতল এলাকা। আশপাশে তেমন কোনো জনবসতি নেই। স্টেশনের সঙ্গে লাগোয়া দক্ষিণে বিশাল হারবাং বিল। বিলের ঠিক মাঝখান দিয়ে চলে গেছে দুই লেনের সুদৃশ্য বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়ক। রেলস্টেশনে আসা-যাওয়ার জন্য পূর্ব দিকে একটি ছোট (সরু) সড়ক রয়েছে। অবশ্য সেই সড়কটি আবার কাঁচাও। এ ছোট সড়কটি হারবাং বাজার হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে মিশেছে।
রেলস্টেশন থেকে হারবাংছড়া পর্যন্ত সড়কটি এতই সরু যে দুটি রিকশা পাশাপাশি চলতে পারে না। যাতায়াতের ব্যবস্থা আগে থেকে তৈরি না করায় মূলত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের হারবাং স্টেশনটি চালুর পর থেকে একটি মরা স্টেশনে পরিণত হয়েছে।
রেলস্টেশন লাগোয়া স্থানীয় বরইতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা সাংবাদিক নাছির উদ্দিন হায়দার বলেন, হারবাং রেলস্টেশনে প্রতিদিন সকাল, বিকেল ও রাতে দুই জোড়া ট্রেন থামলেও দিনে সর্বোচ্চ ৪০-৫০ জন যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে আসা-যাওয়া করেন। অথচ রেল লাইন নির্মাণের সময় স্টেশনটি যদি দেড় কিলোমিটার দূরে বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়কের মছনিয়াকাটা অংশে স্থাপন করা হতো তাহলে যাত্রীর কোনো অভাব হতো না।
কারণ বানৌজা সড়ক দিয়ে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীর মানুষ চলাচল করেন। হারবাংয়ে স্টেশন না করে যদি মছনিয়াকাটায় করা হতো তাহলে ৪ উপজেলার মানুষকে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
তিনি বলেন, রেল কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে হারবাংয়ের বিচ্ছিন্ন এলাকা তথা পাহাড়ি জনপদে রেলস্টেশন করায় চার উপজেলার মানুষ ট্রেনযোগে যাতায়াতের সুবিধা পাচ্ছেন না। এমতাবস্থায় ভুল জায়গায় স্টেশনটি নির্মিত হওয়ায় এখন যাত্রীদের প্রায় ৩ কিলোমিটার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে স্টেশনে যেতে হচ্ছে। এতে ট্রেন যাত্রায় বিমুখ হচ্ছেন যাত্রীরা।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান বলেন, হারবাং রেলস্টেশন থেকে মছনিয়া কাটা পর্যন্ত রেললাইনের পাশ দিয়ে একটি সড়ক নির্মাণ করা হলে যাত্রীরা সহজে স্টেশনে যাতায়াত করতে পারবেন এবং স্টেশনটি ক্রমান্বয়ে জমজমাট হয়ে উঠবে। আশাকরি রেল কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
স্থানীয় বরইতলী ইউনিয়নের কৃতিসন্তান কক্সবাজার জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি এএইচ সালাহউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন হয়েছে, এটি যুগান্তকারী উন্নয়ন। তবে রেলস্টেশনগুলো করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। পাহাড়ের
খোপে, হারবাংয়ে যেখানে যাত্রীদের যাতায়াতের কোনো সুব্যবস্থা নেই সেখানে কেন স্টেশন করা হলো সেটি রহস্যজনক।
হারবাং থেকে মাত্র এক-দেড় কিলোমিটার দূরে বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়ক। সেই সড়কের পাশে স্টেশনটি করা হলে চকরিয়া ছাড়াও পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীর মানুষও সহজে রেল সেবা পেতেন। রেল কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের কারণে হারবাং স্টেশনের সুবিধা পাচ্ছেন না যাত্রী সাধারণ।
গত সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা প্রবল এক্সপ্রেস হারবাং স্টেশন পার হয়। এ সময় দেখা যায়, তিনজন যাত্রী ট্রেন থেকে নেমেছেন, পাঁচজন ট্রেনে ওঠেন। ট্রেন থেকে নেমে হারবাং বাজারে যাওয়ার জন্য গাড়ি খুঁজছিলেন দুই যাত্রী। প্রায় ১০ মিনিট অপেক্ষার পর কোনো গাড়ি পাননি। অবশেষে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দিলেন তারা।
তাদের একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী অহিদুর রহমান বলেন, টিসিবির পণ্য সামগ্রী উত্তোলনসংক্রান্ত কাজে কক্সবাজার ডিসি অফিসে গিয়েছিলাম। বাড়ির পাশে রেল স্টেশন হওয়ায় কক্সবাজার থেকে রেলে হারবাং স্টেশনে নামী।
তিনি বলেন, রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যাওয়া যায়। তবে প্রায় এক কিলোমিটার অংশ কাঁচা একটি সড়ক আছে। সড়কের বিভিন্ন অংশে অসংখ্য খানাখন্দে ভরা। সে কারণে এদিকে তেমন গাড়ি আসে না।’
জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী হয়ে কক্সবাজার রেললাইনে চকরিয়া উপজেলায় তিনটি রেলস্টেশন আছে। মালুমঘাটে ডুলহাজারা ও রামপুরে চকরিয়া স্টেশনে প্রতিদিন ভালো যাত্রী থাকলেও হারবাং রেলস্টেশনে একেকটি ট্রেনে ১০/১২ জনের বেশি যাত্রী যাতায়াত করেন না। এছাড়া এ স্টেশনে যাত্রী সুবিধাও এখনও নিশ্চিত হয়নি। শৌচাগার, বিশ্রামাগার, এমনকি যানবাহন রাখার স্ট্যান্ডও করা হয়নি।
জানতে চাইলে হারবাং স্টেশনমাস্টার আব্দুস সালাম বলেন, ‘মাত্র ৬ জন জনবল নিয়ে এ স্টেশনটি পরিচালনা করা হচ্ছে। স্টেশনে আসা-যাওয়ার জন্য ভালো কোনো সংযোগ সড়ক নেই। ফলে চকরিয়ার বরইতলী, হারবাং, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার যাত্রীরা ট্রেনে যাতায়াতের ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নন।’
হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন আহমদ বাবর বলেন, ‘হারবাং বাজার থেকে রেলস্টেশনে যাওয়ার সড়কটি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী। এক সময়ে উপকূলীয় পেকুয়ার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হারবাং-বারবাকিয়া সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অথচ সড়কটি পুনরায় চালু করা গেলে পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার যাত্রীদের রেলস্টেশনে আসতে অনেকটা সুবিধা হতো।’ যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ অনেক অংশে কমে যেত।
চকরিয়া উপজেলা পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মাহমুদ বলেন, হারবাং ‘রেলস্টেশনটির জন্য উপযুক্ত স্থান ছিল বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়কের মছনিয়াকাটা এলাকা। অথচ রেল কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থের বিষয়টি চিন্তা না করে কারও প্ররোচনায় এ রেলস্টেশনটি হারবাংয়ে স্থাপন করেছে বলে মনে হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে এখন চার উপজেলার সিংহভাগ মানুষ রেলপথের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে এখনও সময় আছে, হারবাং স্টেশন থেকে মছনিয়াকাটা পর্যন্ত রেল লাইনের পাশ দিয়ে একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলে যাত্রী সাধারণ সহজে রেলস্টেশনে যাতায়াত করতে পারবে। এতে করে রেলযাত্রার সুফল ভোগ করতে পারবেন।
ছবি: পাহাড়ি জনপদের জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে হারবাং রেলস্টেশন।
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী হয়ে চালু হওয়া কক্সবাজার রেলপথে চকরিয়া উপজেলার হারবাং পাহাড়ি জনপদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকায় অর্থাৎ বিলের মাঝে স্থাপন করা হয়েছে হারবাং রেল স্টেশনটি। এখন এটি যাত্রী সাধারণের কাছে কাক্সিক্ষত সেবার বদলে দুর্ভোগের নরক যন্ত্রণা হয়ে দেখা দিয়েছে। রেলস্টেশনে যাবার পথ তৈরি না করে বিচ্ছিন্ন এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে এ স্টেশনটি করায়, যাত্রীরা চেষ্টা করলেও ঠিকমতো হারবাং রেলস্টেশন এর সুবিধা ভোগ করতে পারছে না।
রেলস্টেশনে যাতায়াত দুর্ভোগে চার উপজেলার যাত্রী সাধারণ
হারবাং স্টেশন থেকে মছনিয়াকাটা পর্যন্ত রেল লাইনের পাশ দিয়ে একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর
স্থানীয়রা জানান, ভুল জায়গায় রেলস্টেশনটি নির্মিত হওয়ায় এখন যাত্রীদের প্রায় ৩ কিলোমিটার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে স্টেশনে যেতে হচ্ছে। ফলে এ রুটে চলাচলকারী ট্রেন এ স্টেশন থেকে কাক্সিক্ষত যাত্রীও পাচ্ছে না।
সরকারি হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে পর্যটন জেলা কক্সবাজারের জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটাতে স্বপ্নের রেলপথ চালু করলেও যাতায়াত সুবিধা না থাকায় হারবাং স্টেশন থেকে রেলযাত্রার সুফল অধরা থেকে যাচ্ছে এতদাঞ্চলের মানুষের কাছে।
মূলত হারবাং রেলস্টেশনটি জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় স্থাপিত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রকট দৈন্যদশার কারণে চকরিয়া উপজেলা এবং পাশের পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও বাশখালী উপজেলার যাত্রী সাধারণকে রেলযাত্রায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরজমিনে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার হারবাং রেলস্টেশনের পশ্চিম পাশে পাহাড়, পূর্ব পাশে সমতল এলাকা। আশপাশে তেমন কোনো জনবসতি নেই। স্টেশনের সঙ্গে লাগোয়া দক্ষিণে বিশাল হারবাং বিল। বিলের ঠিক মাঝখান দিয়ে চলে গেছে দুই লেনের সুদৃশ্য বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়ক। রেলস্টেশনে আসা-যাওয়ার জন্য পূর্ব দিকে একটি ছোট (সরু) সড়ক রয়েছে। অবশ্য সেই সড়কটি আবার কাঁচাও। এ ছোট সড়কটি হারবাং বাজার হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে মিশেছে।
রেলস্টেশন থেকে হারবাংছড়া পর্যন্ত সড়কটি এতই সরু যে দুটি রিকশা পাশাপাশি চলতে পারে না। যাতায়াতের ব্যবস্থা আগে থেকে তৈরি না করায় মূলত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের হারবাং স্টেশনটি চালুর পর থেকে একটি মরা স্টেশনে পরিণত হয়েছে।
রেলস্টেশন লাগোয়া স্থানীয় বরইতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা সাংবাদিক নাছির উদ্দিন হায়দার বলেন, হারবাং রেলস্টেশনে প্রতিদিন সকাল, বিকেল ও রাতে দুই জোড়া ট্রেন থামলেও দিনে সর্বোচ্চ ৪০-৫০ জন যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে আসা-যাওয়া করেন। অথচ রেল লাইন নির্মাণের সময় স্টেশনটি যদি দেড় কিলোমিটার দূরে বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়কের মছনিয়াকাটা অংশে স্থাপন করা হতো তাহলে যাত্রীর কোনো অভাব হতো না।
কারণ বানৌজা সড়ক দিয়ে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীর মানুষ চলাচল করেন। হারবাংয়ে স্টেশন না করে যদি মছনিয়াকাটায় করা হতো তাহলে ৪ উপজেলার মানুষকে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
তিনি বলেন, রেল কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে হারবাংয়ের বিচ্ছিন্ন এলাকা তথা পাহাড়ি জনপদে রেলস্টেশন করায় চার উপজেলার মানুষ ট্রেনযোগে যাতায়াতের সুবিধা পাচ্ছেন না। এমতাবস্থায় ভুল জায়গায় স্টেশনটি নির্মিত হওয়ায় এখন যাত্রীদের প্রায় ৩ কিলোমিটার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে স্টেশনে যেতে হচ্ছে। এতে ট্রেন যাত্রায় বিমুখ হচ্ছেন যাত্রীরা।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান বলেন, হারবাং রেলস্টেশন থেকে মছনিয়া কাটা পর্যন্ত রেললাইনের পাশ দিয়ে একটি সড়ক নির্মাণ করা হলে যাত্রীরা সহজে স্টেশনে যাতায়াত করতে পারবেন এবং স্টেশনটি ক্রমান্বয়ে জমজমাট হয়ে উঠবে। আশাকরি রেল কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
স্থানীয় বরইতলী ইউনিয়নের কৃতিসন্তান কক্সবাজার জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি এএইচ সালাহউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন হয়েছে, এটি যুগান্তকারী উন্নয়ন। তবে রেলস্টেশনগুলো করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। পাহাড়ের
খোপে, হারবাংয়ে যেখানে যাত্রীদের যাতায়াতের কোনো সুব্যবস্থা নেই সেখানে কেন স্টেশন করা হলো সেটি রহস্যজনক।
হারবাং থেকে মাত্র এক-দেড় কিলোমিটার দূরে বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়ক। সেই সড়কের পাশে স্টেশনটি করা হলে চকরিয়া ছাড়াও পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীর মানুষও সহজে রেল সেবা পেতেন। রেল কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের কারণে হারবাং স্টেশনের সুবিধা পাচ্ছেন না যাত্রী সাধারণ।
গত সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা প্রবল এক্সপ্রেস হারবাং স্টেশন পার হয়। এ সময় দেখা যায়, তিনজন যাত্রী ট্রেন থেকে নেমেছেন, পাঁচজন ট্রেনে ওঠেন। ট্রেন থেকে নেমে হারবাং বাজারে যাওয়ার জন্য গাড়ি খুঁজছিলেন দুই যাত্রী। প্রায় ১০ মিনিট অপেক্ষার পর কোনো গাড়ি পাননি। অবশেষে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দিলেন তারা।
তাদের একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী অহিদুর রহমান বলেন, টিসিবির পণ্য সামগ্রী উত্তোলনসংক্রান্ত কাজে কক্সবাজার ডিসি অফিসে গিয়েছিলাম। বাড়ির পাশে রেল স্টেশন হওয়ায় কক্সবাজার থেকে রেলে হারবাং স্টেশনে নামী।
তিনি বলেন, রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যাওয়া যায়। তবে প্রায় এক কিলোমিটার অংশ কাঁচা একটি সড়ক আছে। সড়কের বিভিন্ন অংশে অসংখ্য খানাখন্দে ভরা। সে কারণে এদিকে তেমন গাড়ি আসে না।’
জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী হয়ে কক্সবাজার রেললাইনে চকরিয়া উপজেলায় তিনটি রেলস্টেশন আছে। মালুমঘাটে ডুলহাজারা ও রামপুরে চকরিয়া স্টেশনে প্রতিদিন ভালো যাত্রী থাকলেও হারবাং রেলস্টেশনে একেকটি ট্রেনে ১০/১২ জনের বেশি যাত্রী যাতায়াত করেন না। এছাড়া এ স্টেশনে যাত্রী সুবিধাও এখনও নিশ্চিত হয়নি। শৌচাগার, বিশ্রামাগার, এমনকি যানবাহন রাখার স্ট্যান্ডও করা হয়নি।
জানতে চাইলে হারবাং স্টেশনমাস্টার আব্দুস সালাম বলেন, ‘মাত্র ৬ জন জনবল নিয়ে এ স্টেশনটি পরিচালনা করা হচ্ছে। স্টেশনে আসা-যাওয়ার জন্য ভালো কোনো সংযোগ সড়ক নেই। ফলে চকরিয়ার বরইতলী, হারবাং, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার যাত্রীরা ট্রেনে যাতায়াতের ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নন।’
হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন আহমদ বাবর বলেন, ‘হারবাং বাজার থেকে রেলস্টেশনে যাওয়ার সড়কটি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী। এক সময়ে উপকূলীয় পেকুয়ার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হারবাং-বারবাকিয়া সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অথচ সড়কটি পুনরায় চালু করা গেলে পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার যাত্রীদের রেলস্টেশনে আসতে অনেকটা সুবিধা হতো।’ যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ অনেক অংশে কমে যেত।
চকরিয়া উপজেলা পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মাহমুদ বলেন, হারবাং ‘রেলস্টেশনটির জন্য উপযুক্ত স্থান ছিল বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়কের মছনিয়াকাটা এলাকা। অথচ রেল কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থের বিষয়টি চিন্তা না করে কারও প্ররোচনায় এ রেলস্টেশনটি হারবাংয়ে স্থাপন করেছে বলে মনে হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে এখন চার উপজেলার সিংহভাগ মানুষ রেলপথের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে এখনও সময় আছে, হারবাং স্টেশন থেকে মছনিয়াকাটা পর্যন্ত রেল লাইনের পাশ দিয়ে একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলে যাত্রী সাধারণ সহজে রেলস্টেশনে যাতায়াত করতে পারবে। এতে করে রেলযাত্রার সুফল ভোগ করতে পারবেন।