alt

দেলদুয়ারে গ্রাহকদের প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা ‘ভুয়া’ এজেন্ট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল : বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার তাঁতের শাড়ি খ্যাত পাথরাইলে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং-এর নাম ব্যবহার করে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাকের এজেন্ট হানিফ সরকার। গ্রামের সহজ সরল শত শত গ্রাহক বিশ্বাস করে এজেন্ট ব্যাংকে টাকা রেখে প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসেছেন। প্রতারক হানিফ সরকার ব্যাংকে টাকা রেখে গ্রাহকদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন আরকেবিএসএস নামক একটি এনজিওর জমা বই। এতে করে গ্রাহকরা ব্যাংকে যে টাকা রেখেছে তার প্রমাণও করতে পারছেন না। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকও এর দায় নিচ্ছে না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে পাথরাইলের এজেন্ট ব্যাংকিং বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকে ওই এজেন্টের জামানত ও কিছু কমিশন পাওনা রয়েছে। এছাড়া কোনো গ্রাহকের একটি টাকাও জমা নেই।

জানা গেছে, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগ বিগত ২০১৭ সালে পাথরাইলে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করে। এজেন্ট ব্যাংকের দায়িত্ব পান টাঙ্গাইল পৌরসভার কাজিপুর এলাকার মৃত হযরত আলীর ছেলে হানিফ সরকার। এছাড়াও তিনি দেলদুয়ারের আরও কয়েকটি ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের আউটলেট শাখায় অর্থসরবরাহের দায়িত্ব পান। বিনিময়ে তিনি পান কমিশন। কয়েক বছর ভালোই চলছিল। তার অমায়িক ব্যবহারে গ্রামের মানুষ মুগ্ধ হন। এক লাখ টাকা ব্যাংকে রাখলে মাস প্রতি এক হাজার টাকা দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রবাসীদের বাড়িতে টার্গেট করে তাদের প্রলুব্ধ করেন। এজেন্ট ব্যাংকে এলাকার পাঁচজনকে নিয়োগও দেন। মঙ্গলহোড় গ্রামের মুক্তা ও নয়ন নামের দুইজনকে হিসাবরক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। এছাড়াও হাসমত ও হালিম চৌধুরী নামের অন্য দুইজনকে প্রবাসীদের পরিবারের কাছ থেকে টার্গেট করে লোভ দেখিয়ে তাদেরকে প্রলুব্ধ করে টাকা আনার কাজে নিয়োগ দেন। তাদেরকে দেখে তাদের আত্বীয়-স্বজন সরল বিশ্বাসে টাকা রাখেন। গ্রাহকরা এজেন্ট ব্যাংকে এসে হিসাবরক্ষক মুক্তার কাছে টাকা জমা দিয়ে যান।

গ্রাহকরা অনেকেই যারা ৫ বছর ও ১০ বছর মেয়াদি আমানত রেখেছেন তাদেরকে প্রতিমাসে কিছুদিন লাখপ্রতি এক হাজার টাকা লাভ দিয়েছেন। এছাড়া চলতি হিসাব ও সঞ্চয়ী হিসাবে যারা টাকা রেখেছেন তারা নিয়মানুযায়ী লেনদেন করেছেন। তাদের টাকাও ঠিকমতো পরিশোধ করেছেন। গত কয়েক বছর ধরে এজেন্ট হানিফ সরকার প্রতারণার বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেন। মাসপ্রতি এক হাজার টাকার লোভে পরে গ্রামের শত শত মানুষ ও প্রবাসীদের প্রায় ২০ কোটি টাকা এজেন্ট ব্যাংকে এসে হিসাবরক্ষক মুক্তা ও নয়নের কাছে জমা দিয়েছেন। এসব টাকা আত্মসাৎ করতেই প্রতারণার আশ্রয় নেন হানিফ সরকার। সে আর কে বি এস এস নামের একটি পাস বই তৈরি করে এজেন্ট ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ওই বইয়ে লিখে দিতেন। বিপরীতে তার সরবরাহকৃত এজেন্ট ব্যাংকের সব চেক গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছেন। এজেন্ট ব্যাংকের হিসাব রক্ষক মুক্তা ও নয়ন জমাকৃত টাকার পরিমাণ পাস বইয়ে লিখে দিতেন। এ বিষয়ে গ্রাহকরা প্রশ্ন করলে হানিফ সরকার উত্তর দিতেন পাস বই হলো এজেন্ট ব্যাংকে টাকা রাখার দলিল। বিগত ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে হঠাৎ করে টাকা নিয়ে হানিফ সরকার উধাও হয়ে যান। তার সব ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষও চলতি বছরের গত (১ জানুয়ারি) পাথরাইল এজেন্ট ব্যাংক শাখা বন্ধ করে অন্য শাখায় লেনদেনের জন্য সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন।

এমন ঘটনা সরজমিনে জানতে পাথরাইল বাজারে গেলে লোকজন তাদের জমাকৃত পাস বই নিয়ে আসেন। সেখানে দেখা যায়, মঙ্গলহোড়ের ইয়াসমিন আক্তারের ১৪ লাখ, আমীর হোসেনের ৫ লাখ, শিল্পি বেগমের ৭ লাখ ৫০ হাজার, আজিজুল হাকিমের ৬ লাখ, শিউলী বেগমের ৩ লাখ, আইনাল হকের ১১ লাখ, ছালমা আক্তারের ১৯ লাখ, ছবুর মিয়ার ২ লাখ, রেহেনা আক্তারের ২ লাখ ৫০ হাজার, খাদিজা আক্তারের ২ লাখ, মজিবুর রহমানের ৩ লাখ, মরিয়ম বেগমের ৫ লাখ, সুজন মিয়ার ১২ লাখ, লিপি আক্তারের ৭ লাখ, সুর্যবানুর ২ লাখ, তানিয়া আক্তারের ৬ লাখসহ অসংখ্য লোকজন এজেন্ট ব্যাংকে হানিফ সরকারের কাছে টাকা রেখে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এভাবে পাথরাইল, বোয়ালজান, মঙ্গলহোড়, টুকচানপুর গ্রামের শত শত মানুষ ও প্রবাসীরা প্রায় ২০ কোটি টাকা রেখেছেন বলে জানিয়েছেন।

পাথরাইল বটতলার চা বিক্রেতা ভুক্তভোগী আয়নাল হক বলেন, আমরা ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকে গিয়ে হিসাবরক্ষকের কাছে টাকা জমা দিয়েছি। পরবর্তীতে জমাকৃত টাকা পাস বইয়ে লিখে দিয়েছে। পাস বইয়ের কথা বললে হানিফ বলতো এজেন্ট ব্যাংকে যে টাকা রাখছেন তার প্রমাণ এই পাসবই। আমরা বিশ্বাস করেছি। সে পালিয়ে গেলে এখন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক বলছে আপনারাতো টাকা রাখছেন এনজিওতে। ব্যাংকে রাখেন নাই। টাকা হারিয়ে আমরা পথে বসেছি। আমরা টাকা ফেরত চাই।

১৯ লাখ টাকা হারিয়ে ছালমা এখন পাগলপ্রায়। টাকা পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তিনি হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, আমি জমি-জমা বন্ধক রেখে টাকা রেখেছি। মাসে ১৯ হাজার করে টাকা দিতো। ওই টাকা দিয়ে সংসার চলতো। এক বছর ধরে টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়ে হানিফ পালিয়ে গেছে। আমার টাকার কী হবে। এই টাকা না পেলে আমি না খেয়ে মারা যাবো। আপনারা আমার টাকা উঠিয়ে দেন।

ভুক্তভোগী সুজন মিয়া বলেন, আমাদের সঙ্গে এভাবে যে প্রতারণা করবে ঘুনাক্ষরেই ভাবিনি। জমা নিয়েছে এজেন্ট ব্যাংকে। পরে জমাকৃত রশিদ নিয়ে পাসবই দিয়েছে। আমরা মনে করেছি, ব্যাংকেই জমা রেখেছি। পালিয়ে যাওয়ার পর জানতে পারি এজেন্ট ব্যাংকে কোনো টাকা নাই। সব টাকা নাকি এনজিওতে রেখেছি।

এজেন্ট ব্যাংকের পাথরাইল শাখার হিসাবরক্ষক মুক্তার ভাষ্য, হাসমত ভাইয়ের মাধ্যমে আমি নিয়োগ পাই। মালিক পালিয়ে গেলেও আমি পালাইনি। কারণ আমি কোনো অপরাধ করিনি। মালিক গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। টাকা গ্রহণ করে পাস বইয়ে লিখে দিতে হয়েছে মালিককের আদেশে। তাকে আমরা জিজ্ঞাসা করেছি। যে টাকা গ্রহণ করলেন এজেন্ট ব্যাংকে লিখে দিলাম আরকেবিএসএস পাস বইয়ে। তিনি বলতেন যা বলেছি তাই করেন। এখন টাকার জন্য অনেকেই আমার বাড়িতে এসে চাপ দেন, হুমকিও দেন।

এ বিষয়ে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগ টাঙ্গাইলের জোনাল ম্যানেজার মাহবুবুল আলম বলেন, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল এজেন্ট শাখার পাশাপাশি তাকে দেলদুয়ারের অন্যান্য শাখার অর্থ সরবরাহের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। বিনিময়ে তিনি কমিশন পেতেন। একটি আউটলেট শাখার অভিযোগের ভিত্তিতে তার এজেন্ট শাখা বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর আমরা জানতে পারি, সে অনেক মানুষের টাকা নিয়েছে। এ ঘটনায় আমরা ভুক্তভোগীদের বাড়িতে যাই। এজেন্ট ব্যাংকে টাকা রাখার প্রমাণ বা ডকুমেন্ট চাই। ভুক্তভোগীরা প্রমাণ হিসেবে আরকেবিএসএস পাস বই দেখায়। এজেন্ট হানিফ সরকারের একটি এনজিও ছিল। সব টাকা তার এনজিওতে রেখেছে। এর দায়তো ব্যাংক নিবে না। এজেন্ট নেয়ার সময় জামানত ও কিছু কমিশন ছাড়া হানিফ সরকারের আর কোনো টাকা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে জমা নেই।

এ বিষয়ে হানিফ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর ০১৭৫৩১৪৬৩৫৪ কল দিলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ছবি

নির্বাচনী আসন ফিরে পেতে ডাকা হরতালে বাগেরহাট সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন

ছবি

ভূমি অফিসে হয়রানির অভিযোগে ক্ষুব্ধ সেবাপ্রত্যাশীরা

ছবি

সৈয়দপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সঞ্চয়ের ৮ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ

ছবি

জাতীয়ভাবে পালিত হবে লালন তিরোধান দিবস

ছবি

পাটগ্রামে ট্রাকের চাপায় বাইক আরোহীর মৃত্যু

ছবি

সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ না থাকলে কোন সুফল আসবে না - প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান

ছবি

ফরিদপুরে রেলপথ অবরোধ, ট্রেন চলাচল বন্ধ

ছবি

ব্যাবসায়ী আলম হত্যার রহস্য উন্মোচন ছেলের হাতেই বাবা খুন

ছবি

পুত্রবধূদের সাথে ঝগড়ার জেরে শাশুড়ির রহস্যজনক মৃত্যু

ছবি

সাদ্রি: বাংলাদেশের চা-বাগানের অদৃশ্য সেতুবন্ধন

ছবি

জয়পুরহাটে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তির চেক বিতরণ

ছবি

চাটখিল পোস্ট অফিস কর্মচারীদের অবহেলায় দুর্ভোগে এলাকাবাসী

ছবি

কলাপাড়ায় কন্যা শিশুদের গাছের চারা বিতরণ

ছবি

দৌলতপুরে মাকে গলা কেটে হত্যা, ছেলে পলাতক

ছবি

মহেশপুর সীমান্তে ১৩ বাংলাদেশি আটক

ছবি

পলাশের জজ মিয়া নিজেই নির্মান করে দিলেন অবহেলিত গ্রামের রাস্তাটি

ছবি

গৌরনদীতে বিনামূল্যে পিপিআর রোগের টিকা

ছবি

ফসলের খেতে ইঁদুরের হানা, দুশ্চিন্তায় কৃষক

ছবি

চান্দিনায় অতিরিক্ত ওজনের ড্রাম্প ট্রাকে ভাঙছে আঞ্চলিক সড়ক-ব্রিজ-কালভার্ট

ছবি

দোয়ারাবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নারীর মৃত্যু ও যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

‘প্রতি ৪ জনে ১ জন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত’

ছবি

বেতাগিতে জামায়াত নেতার বাড়িতে তালা ভেঙে চুরি

ছবি

নরসিংদীতে তুচ্ছ ঘটনায় দুই সহোদরকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

নরসিংদীতে নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ক কর্মশালা

ছবি

গাইবান্ধার চরাঞ্চলে ওয়ানস্টপ নাগরিক সেবা কেন্দ্রের উদ্বোধন

ছবি

দৌলতপুরে চাঁদা না দেয়ায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা

ছবি

চকরিয়ায় ৩১ বছর পর তিনবছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

হালদা নদী থেকে কারেন্ট জাল জব্দ

ছবি

পাত্রখলার এক সমাধিক্ষেত্রই মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টানদের শেষ আশ্রয়

ছবি

মির্জাগঞ্জে বিষ প্রয়োগে লক্ষাধিক টাকার মাছ নিধন

ছবি

গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ পোশাক শ্রমিকদের

ছবি

বোয়ালখালী রেলওেয়ের উচ্ছেদ অভিযান

ছবি

ভেড়ামারায় পদ্মার ভাঙনে বিলীন ফসলি জমি ও শ্মশানঘাট

ছবি

দ্বিতীয় বিয়ের প্রতিবাদ করায় পিতার ছুরিকাঘাতে ছেলে খুন

ছবি

শিবগঞ্জে বিনামূল্যে মাসকলাই বীজ-রাসায়নিক সার বিতরণ

ছবি

সাপাহার জবই বিলে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

tab

news » bangladesh

দেলদুয়ারে গ্রাহকদের প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা ‘ভুয়া’ এজেন্ট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার তাঁতের শাড়ি খ্যাত পাথরাইলে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং-এর নাম ব্যবহার করে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাকের এজেন্ট হানিফ সরকার। গ্রামের সহজ সরল শত শত গ্রাহক বিশ্বাস করে এজেন্ট ব্যাংকে টাকা রেখে প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসেছেন। প্রতারক হানিফ সরকার ব্যাংকে টাকা রেখে গ্রাহকদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন আরকেবিএসএস নামক একটি এনজিওর জমা বই। এতে করে গ্রাহকরা ব্যাংকে যে টাকা রেখেছে তার প্রমাণও করতে পারছেন না। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকও এর দায় নিচ্ছে না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে পাথরাইলের এজেন্ট ব্যাংকিং বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকে ওই এজেন্টের জামানত ও কিছু কমিশন পাওনা রয়েছে। এছাড়া কোনো গ্রাহকের একটি টাকাও জমা নেই।

জানা গেছে, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগ বিগত ২০১৭ সালে পাথরাইলে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করে। এজেন্ট ব্যাংকের দায়িত্ব পান টাঙ্গাইল পৌরসভার কাজিপুর এলাকার মৃত হযরত আলীর ছেলে হানিফ সরকার। এছাড়াও তিনি দেলদুয়ারের আরও কয়েকটি ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের আউটলেট শাখায় অর্থসরবরাহের দায়িত্ব পান। বিনিময়ে তিনি পান কমিশন। কয়েক বছর ভালোই চলছিল। তার অমায়িক ব্যবহারে গ্রামের মানুষ মুগ্ধ হন। এক লাখ টাকা ব্যাংকে রাখলে মাস প্রতি এক হাজার টাকা দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রবাসীদের বাড়িতে টার্গেট করে তাদের প্রলুব্ধ করেন। এজেন্ট ব্যাংকে এলাকার পাঁচজনকে নিয়োগও দেন। মঙ্গলহোড় গ্রামের মুক্তা ও নয়ন নামের দুইজনকে হিসাবরক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। এছাড়াও হাসমত ও হালিম চৌধুরী নামের অন্য দুইজনকে প্রবাসীদের পরিবারের কাছ থেকে টার্গেট করে লোভ দেখিয়ে তাদেরকে প্রলুব্ধ করে টাকা আনার কাজে নিয়োগ দেন। তাদেরকে দেখে তাদের আত্বীয়-স্বজন সরল বিশ্বাসে টাকা রাখেন। গ্রাহকরা এজেন্ট ব্যাংকে এসে হিসাবরক্ষক মুক্তার কাছে টাকা জমা দিয়ে যান।

গ্রাহকরা অনেকেই যারা ৫ বছর ও ১০ বছর মেয়াদি আমানত রেখেছেন তাদেরকে প্রতিমাসে কিছুদিন লাখপ্রতি এক হাজার টাকা লাভ দিয়েছেন। এছাড়া চলতি হিসাব ও সঞ্চয়ী হিসাবে যারা টাকা রেখেছেন তারা নিয়মানুযায়ী লেনদেন করেছেন। তাদের টাকাও ঠিকমতো পরিশোধ করেছেন। গত কয়েক বছর ধরে এজেন্ট হানিফ সরকার প্রতারণার বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেন। মাসপ্রতি এক হাজার টাকার লোভে পরে গ্রামের শত শত মানুষ ও প্রবাসীদের প্রায় ২০ কোটি টাকা এজেন্ট ব্যাংকে এসে হিসাবরক্ষক মুক্তা ও নয়নের কাছে জমা দিয়েছেন। এসব টাকা আত্মসাৎ করতেই প্রতারণার আশ্রয় নেন হানিফ সরকার। সে আর কে বি এস এস নামের একটি পাস বই তৈরি করে এজেন্ট ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ওই বইয়ে লিখে দিতেন। বিপরীতে তার সরবরাহকৃত এজেন্ট ব্যাংকের সব চেক গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছেন। এজেন্ট ব্যাংকের হিসাব রক্ষক মুক্তা ও নয়ন জমাকৃত টাকার পরিমাণ পাস বইয়ে লিখে দিতেন। এ বিষয়ে গ্রাহকরা প্রশ্ন করলে হানিফ সরকার উত্তর দিতেন পাস বই হলো এজেন্ট ব্যাংকে টাকা রাখার দলিল। বিগত ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে হঠাৎ করে টাকা নিয়ে হানিফ সরকার উধাও হয়ে যান। তার সব ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষও চলতি বছরের গত (১ জানুয়ারি) পাথরাইল এজেন্ট ব্যাংক শাখা বন্ধ করে অন্য শাখায় লেনদেনের জন্য সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন।

এমন ঘটনা সরজমিনে জানতে পাথরাইল বাজারে গেলে লোকজন তাদের জমাকৃত পাস বই নিয়ে আসেন। সেখানে দেখা যায়, মঙ্গলহোড়ের ইয়াসমিন আক্তারের ১৪ লাখ, আমীর হোসেনের ৫ লাখ, শিল্পি বেগমের ৭ লাখ ৫০ হাজার, আজিজুল হাকিমের ৬ লাখ, শিউলী বেগমের ৩ লাখ, আইনাল হকের ১১ লাখ, ছালমা আক্তারের ১৯ লাখ, ছবুর মিয়ার ২ লাখ, রেহেনা আক্তারের ২ লাখ ৫০ হাজার, খাদিজা আক্তারের ২ লাখ, মজিবুর রহমানের ৩ লাখ, মরিয়ম বেগমের ৫ লাখ, সুজন মিয়ার ১২ লাখ, লিপি আক্তারের ৭ লাখ, সুর্যবানুর ২ লাখ, তানিয়া আক্তারের ৬ লাখসহ অসংখ্য লোকজন এজেন্ট ব্যাংকে হানিফ সরকারের কাছে টাকা রেখে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এভাবে পাথরাইল, বোয়ালজান, মঙ্গলহোড়, টুকচানপুর গ্রামের শত শত মানুষ ও প্রবাসীরা প্রায় ২০ কোটি টাকা রেখেছেন বলে জানিয়েছেন।

পাথরাইল বটতলার চা বিক্রেতা ভুক্তভোগী আয়নাল হক বলেন, আমরা ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকে গিয়ে হিসাবরক্ষকের কাছে টাকা জমা দিয়েছি। পরবর্তীতে জমাকৃত টাকা পাস বইয়ে লিখে দিয়েছে। পাস বইয়ের কথা বললে হানিফ বলতো এজেন্ট ব্যাংকে যে টাকা রাখছেন তার প্রমাণ এই পাসবই। আমরা বিশ্বাস করেছি। সে পালিয়ে গেলে এখন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক বলছে আপনারাতো টাকা রাখছেন এনজিওতে। ব্যাংকে রাখেন নাই। টাকা হারিয়ে আমরা পথে বসেছি। আমরা টাকা ফেরত চাই।

১৯ লাখ টাকা হারিয়ে ছালমা এখন পাগলপ্রায়। টাকা পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তিনি হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, আমি জমি-জমা বন্ধক রেখে টাকা রেখেছি। মাসে ১৯ হাজার করে টাকা দিতো। ওই টাকা দিয়ে সংসার চলতো। এক বছর ধরে টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়ে হানিফ পালিয়ে গেছে। আমার টাকার কী হবে। এই টাকা না পেলে আমি না খেয়ে মারা যাবো। আপনারা আমার টাকা উঠিয়ে দেন।

ভুক্তভোগী সুজন মিয়া বলেন, আমাদের সঙ্গে এভাবে যে প্রতারণা করবে ঘুনাক্ষরেই ভাবিনি। জমা নিয়েছে এজেন্ট ব্যাংকে। পরে জমাকৃত রশিদ নিয়ে পাসবই দিয়েছে। আমরা মনে করেছি, ব্যাংকেই জমা রেখেছি। পালিয়ে যাওয়ার পর জানতে পারি এজেন্ট ব্যাংকে কোনো টাকা নাই। সব টাকা নাকি এনজিওতে রেখেছি।

এজেন্ট ব্যাংকের পাথরাইল শাখার হিসাবরক্ষক মুক্তার ভাষ্য, হাসমত ভাইয়ের মাধ্যমে আমি নিয়োগ পাই। মালিক পালিয়ে গেলেও আমি পালাইনি। কারণ আমি কোনো অপরাধ করিনি। মালিক গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। টাকা গ্রহণ করে পাস বইয়ে লিখে দিতে হয়েছে মালিককের আদেশে। তাকে আমরা জিজ্ঞাসা করেছি। যে টাকা গ্রহণ করলেন এজেন্ট ব্যাংকে লিখে দিলাম আরকেবিএসএস পাস বইয়ে। তিনি বলতেন যা বলেছি তাই করেন। এখন টাকার জন্য অনেকেই আমার বাড়িতে এসে চাপ দেন, হুমকিও দেন।

এ বিষয়ে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগ টাঙ্গাইলের জোনাল ম্যানেজার মাহবুবুল আলম বলেন, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল এজেন্ট শাখার পাশাপাশি তাকে দেলদুয়ারের অন্যান্য শাখার অর্থ সরবরাহের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। বিনিময়ে তিনি কমিশন পেতেন। একটি আউটলেট শাখার অভিযোগের ভিত্তিতে তার এজেন্ট শাখা বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর আমরা জানতে পারি, সে অনেক মানুষের টাকা নিয়েছে। এ ঘটনায় আমরা ভুক্তভোগীদের বাড়িতে যাই। এজেন্ট ব্যাংকে টাকা রাখার প্রমাণ বা ডকুমেন্ট চাই। ভুক্তভোগীরা প্রমাণ হিসেবে আরকেবিএসএস পাস বই দেখায়। এজেন্ট হানিফ সরকারের একটি এনজিও ছিল। সব টাকা তার এনজিওতে রেখেছে। এর দায়তো ব্যাংক নিবে না। এজেন্ট নেয়ার সময় জামানত ও কিছু কমিশন ছাড়া হানিফ সরকারের আর কোনো টাকা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে জমা নেই।

এ বিষয়ে হানিফ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর ০১৭৫৩১৪৬৩৫৪ কল দিলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

back to top