ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের পানিশাইল চন্দ্রপুকুর গ্রামে দেড় শতাধিক বিক্ষুব্ধ মুসল্লির হামলার তিন দিন পার হলেও খানকা শরিফ এবং আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর হামলার ঘটনা ঘটে। থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ না থাকায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।
সরজমিনে গতকাল মঙ্গলবার সকালে পানিশাইল চন্দ্রপুকুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এক অস্বাভাবিক নীরবতা। সেখানে হামলার ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট, তবে মেরামতের কোনো উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি। সাধারণত কর্মচঞ্চল এই গ্রামটিতে এখন মানুষের আনাগোনা অনেকটাই কম। হামলার শিকার হওয়া খানকার মূল কাঠামোর ভাঙা টিনের টুকরো, ভাঙা আসবাবপত্র এবং চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইট-পাথরের টুকরোগুলো এখনও হামলার ভয়াবহতার সাক্ষ্য বহন করছে। স্থানীয় দোকানপাট অধিকাংশই বন্ধ, স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নগণ্য এবং স্থানীয়রা প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে ভয় পাচ্ছে, প্রতিটি পদক্ষেপে তাদের মধ্যে এক ধরনের সতর্কতা ও আতঙ্ক কাজ করছে ।
খানকার প্রতিষ্ঠাতা আজিজুর রহমান ভান্ডারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে তিনি নিজের পৈতৃক বাড়ির পাশেই এই ‘হক বাবা গাউছুল আজম মাইজ ভান্ডারি গাউছিয়া পাক দরবার শরিফ’ খানকাটি প্রতিষ্ঠা করেন। আধ্যাত্মিক সাধনা ও ধর্মীয় আলোচনার কেন্দ্র হিসেবে এটি এলাকায় একটি বিশেষ পরিচিতি লাভ করে। প্রতি বছর এখানে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হয়, যা অসংখ্য ভক্ত ও অনুসারীদের একত্রিত করে। এ বছর গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল।
ভান্ডারির অভিযোগ অনুযায়ী, মিলাদ শুরুর কয়েকদিন আগ থেকেই স্থানীয় কিছু কট্টরপন্থী মানুষ অনুষ্ঠান বন্ধের জন্য চাপ দিচ্ছিল। তাদের দাবি ছিল, এই ধরনের অনুষ্ঠান সুন্নি আকিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই চাপ একপর্যায়ে হুমকি-ধমকিতে রূপ নেয়।
আজিজুর রহমান ভান্ডারি জানান, গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর স্থানীয় মসজিদগুলোতে মাইকে বহিরাগতদের একত্রিত হওয়ার জন্য ঘোষণা দেয়া হয়। এরপরই দেড় শতাধিক বহিরাগত লোক লাঠিসোঁটা ও ইট-পাটকেল নিয়ে হঠাৎ করে খানকায় হামলা চালায়। অতর্কিত এই হামলায় খানকার মূল ভবন, আসবাবপত্র ও অন্যান্য সামগ্রীর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলার আকস্মিকতা এবং হামলাকারীদের ব্যাপকতায় স্থানীয়রা হতভম্ব হয়ে পড়ে।
হামলার শিকার হয়েও আজিজুর রহমান ভান্ডারি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। তিনি তার এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমি মানবধর্ম করি, সবাইকে মাফ করে দিয়েছি। ধর্ম আমাকে ক্ষমা করতে শিখিয়েছে। প্রতিশোধের পথে না হেঁটে আমি সহিষ্ণুতা ও ভালোবাসার পথেই বিশ্বাসী। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। যারা হামলা করেছে, তারা ভুল করেছে। তাদের ভুল একদিন ভাঙবে। আমি সেই অপেক্ষায় আছি। আমি চাই না এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমাজে আরও বিভেদ তৈরি হোক।’ তার এই বক্তব্য এলাকার অনেকের কাছেই আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (শাহমখদুম) সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনিও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ না আসায় আমরা এখনও আনুষ্ঠানিক মামলা দায়ের করতে পারিনি। তবে আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং স্থানীয়দের শান্তি বজায় রাখার জন্য সতর্ক করছি।’
এ বিষয়ে পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ আসলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। তবে হামলার পর থেকে এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের পানিশাইল চন্দ্রপুকুর গ্রামে দেড় শতাধিক বিক্ষুব্ধ মুসল্লির হামলার তিন দিন পার হলেও খানকা শরিফ এবং আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর হামলার ঘটনা ঘটে। থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ না থাকায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।
সরজমিনে গতকাল মঙ্গলবার সকালে পানিশাইল চন্দ্রপুকুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এক অস্বাভাবিক নীরবতা। সেখানে হামলার ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট, তবে মেরামতের কোনো উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি। সাধারণত কর্মচঞ্চল এই গ্রামটিতে এখন মানুষের আনাগোনা অনেকটাই কম। হামলার শিকার হওয়া খানকার মূল কাঠামোর ভাঙা টিনের টুকরো, ভাঙা আসবাবপত্র এবং চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইট-পাথরের টুকরোগুলো এখনও হামলার ভয়াবহতার সাক্ষ্য বহন করছে। স্থানীয় দোকানপাট অধিকাংশই বন্ধ, স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নগণ্য এবং স্থানীয়রা প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে ভয় পাচ্ছে, প্রতিটি পদক্ষেপে তাদের মধ্যে এক ধরনের সতর্কতা ও আতঙ্ক কাজ করছে ।
খানকার প্রতিষ্ঠাতা আজিজুর রহমান ভান্ডারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে তিনি নিজের পৈতৃক বাড়ির পাশেই এই ‘হক বাবা গাউছুল আজম মাইজ ভান্ডারি গাউছিয়া পাক দরবার শরিফ’ খানকাটি প্রতিষ্ঠা করেন। আধ্যাত্মিক সাধনা ও ধর্মীয় আলোচনার কেন্দ্র হিসেবে এটি এলাকায় একটি বিশেষ পরিচিতি লাভ করে। প্রতি বছর এখানে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হয়, যা অসংখ্য ভক্ত ও অনুসারীদের একত্রিত করে। এ বছর গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল।
ভান্ডারির অভিযোগ অনুযায়ী, মিলাদ শুরুর কয়েকদিন আগ থেকেই স্থানীয় কিছু কট্টরপন্থী মানুষ অনুষ্ঠান বন্ধের জন্য চাপ দিচ্ছিল। তাদের দাবি ছিল, এই ধরনের অনুষ্ঠান সুন্নি আকিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই চাপ একপর্যায়ে হুমকি-ধমকিতে রূপ নেয়।
আজিজুর রহমান ভান্ডারি জানান, গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর স্থানীয় মসজিদগুলোতে মাইকে বহিরাগতদের একত্রিত হওয়ার জন্য ঘোষণা দেয়া হয়। এরপরই দেড় শতাধিক বহিরাগত লোক লাঠিসোঁটা ও ইট-পাটকেল নিয়ে হঠাৎ করে খানকায় হামলা চালায়। অতর্কিত এই হামলায় খানকার মূল ভবন, আসবাবপত্র ও অন্যান্য সামগ্রীর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলার আকস্মিকতা এবং হামলাকারীদের ব্যাপকতায় স্থানীয়রা হতভম্ব হয়ে পড়ে।
হামলার শিকার হয়েও আজিজুর রহমান ভান্ডারি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। তিনি তার এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমি মানবধর্ম করি, সবাইকে মাফ করে দিয়েছি। ধর্ম আমাকে ক্ষমা করতে শিখিয়েছে। প্রতিশোধের পথে না হেঁটে আমি সহিষ্ণুতা ও ভালোবাসার পথেই বিশ্বাসী। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। যারা হামলা করেছে, তারা ভুল করেছে। তাদের ভুল একদিন ভাঙবে। আমি সেই অপেক্ষায় আছি। আমি চাই না এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমাজে আরও বিভেদ তৈরি হোক।’ তার এই বক্তব্য এলাকার অনেকের কাছেই আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (শাহমখদুম) সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনিও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ না আসায় আমরা এখনও আনুষ্ঠানিক মামলা দায়ের করতে পারিনি। তবে আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং স্থানীয়দের শান্তি বজায় রাখার জন্য সতর্ক করছি।’
এ বিষয়ে পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ আসলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। তবে হামলার পর থেকে এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’