বেতাগী (বরগুনা) : আমনের চারা রোপণ করছেন শ্রমিকরা -সংবাদ
স্বপন মোল্লা (৫৩) এবার আমন চাষ করছেন ৩ একর জমিতে। প্রবল বর্ষণে তাঁর আমনের বীজতলা বৃষ্টিতে তলিয়ে গিয়েছিল। নতুন করে আবার বীজতলা তৈরি করেছেন। চারাগুলোও বড় হয়েছে। কিন্তু চারা রোপণ নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। কারণ, শ্রমিক-সংকট। ফলে নিজেই ধানের চারা রোপণে নেমে পড়েছেন। স্বপন মোল্লার বাড়ি বরগুনার বেতাগী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঢালীকান্দা গ্রামে। স্বপন মোল্লা বলেন, ‘আমন রোপণের মৌসুম পার হয়ে যাচ্ছে। এ বছর মজুরি গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। মজুরও পাওয়া যাচ্ছে না। সারা বছর এই একটা ফসলের ওপর ভরসা করতে হয়। শ্রমিক যথা সময় বেশি টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। বেতাগী পৌরসভাসহ ৭ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কোনো জায়গায় ধান রোপণ চলছে। তবে চাহিদামতো শ্রমিক না পাওয়ায় কাজ চলছে ধীর গতিতে। আবার অনেক এলাকায় এখনো ধান রোপণ শুরু হয়নি। বেতাগী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ বলেন, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ১০ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমি। শ্রমিক-সংকটে রোপণ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।
উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের জলিসা গ্রামের কৃষক লিয়াকত আলী (৭২) বলেন, শ্রাবণের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমনের চারা রোপণ করা হয়। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রায় সব জমিতেই ধান লাগানো হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে বীজতলা ডুবে থাকায় চারা লাগাতে দেরি হয়েছে। এসময় পাশেই আরেকজন কৃষক ভবরঞ্জন ঢালী (৫৫) বলেন, মৌসুম শেষ হয়ে যাচ্ছে।
সবাই ধান রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ জন্য শ্রমিকের চাহিদা ও মজুরি বেড়েছে। মোকামিয়া ইউনিয়নের কৃষক রতন হাওলাদার বলেন, বেতাগীর বিভিন্ন এলাকায় এবার লোকজন এসেছেন কম। শ্রমিকের তিন বেলা খাবারের দায়িত্ব থাকে জমির মালিকের। শ্রমিক-সংকটের কারণে মজুরিও অনেক বেশি। একজন শ্রমিককে দৈনিক ৮০০-১০০০ টাকা দিতে হয়। গত বছর একজন শ্রমিককে ৬০০-৮০০ টাকা দিতে হচ্ছে। এবার তা অনেক বেড়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, চাহিদার তুলনায় শ্রমিকও কম। স্থানীয় শ্রমিকদের মজুরি আরও বেশি।
বেতাগী সদর ইউনিয়নের বাসন্ডা গ্রামের কৃষক বাবুল বিশ্বাস বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে চারা লাগাতে দেরি হয়েছে আমাদের। এখন মজুরি বেশি। আবার সময়ও চলে যাচ্ছে। তাই মানুষ ঋণ করে হলেও দ্রুত ধান লাগানো শেষ করতে চাচ্ছেন। প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন হাটে যাচ্ছি। শ্রমিক নিতে পারছি না। যেসব জমিমালিকের টাকা আছে, তাঁরা বেশি দাম দিয়ে শ্রমিক নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের মতো ছোট চাষিরা দাম কমার অপেক্ষায় আছেন। বিবিচিনি ইউনিয়নের পুটিয়াখালী গ্রামের কৃষক সুকুমার হাওলাদার (৭৫) বলেন, বীজধান, চাষ, শ্রমিক, সার সব খরচ মিলিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে ৬-৭ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সঠিক সময়ে ধান লাগাতে না পারলে ফলন কমে যায়। তখন তো শ্রমিককের মজুরি টাকা ও আমনধান রোপনের খরচ ওঠানোই দায় হয়ে যাবে।
বেতাগী (বরগুনা) : আমনের চারা রোপণ করছেন শ্রমিকরা -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
স্বপন মোল্লা (৫৩) এবার আমন চাষ করছেন ৩ একর জমিতে। প্রবল বর্ষণে তাঁর আমনের বীজতলা বৃষ্টিতে তলিয়ে গিয়েছিল। নতুন করে আবার বীজতলা তৈরি করেছেন। চারাগুলোও বড় হয়েছে। কিন্তু চারা রোপণ নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। কারণ, শ্রমিক-সংকট। ফলে নিজেই ধানের চারা রোপণে নেমে পড়েছেন। স্বপন মোল্লার বাড়ি বরগুনার বেতাগী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঢালীকান্দা গ্রামে। স্বপন মোল্লা বলেন, ‘আমন রোপণের মৌসুম পার হয়ে যাচ্ছে। এ বছর মজুরি গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। মজুরও পাওয়া যাচ্ছে না। সারা বছর এই একটা ফসলের ওপর ভরসা করতে হয়। শ্রমিক যথা সময় বেশি টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। বেতাগী পৌরসভাসহ ৭ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কোনো জায়গায় ধান রোপণ চলছে। তবে চাহিদামতো শ্রমিক না পাওয়ায় কাজ চলছে ধীর গতিতে। আবার অনেক এলাকায় এখনো ধান রোপণ শুরু হয়নি। বেতাগী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ বলেন, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ১০ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমি। শ্রমিক-সংকটে রোপণ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।
উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের জলিসা গ্রামের কৃষক লিয়াকত আলী (৭২) বলেন, শ্রাবণের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমনের চারা রোপণ করা হয়। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রায় সব জমিতেই ধান লাগানো হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে বীজতলা ডুবে থাকায় চারা লাগাতে দেরি হয়েছে। এসময় পাশেই আরেকজন কৃষক ভবরঞ্জন ঢালী (৫৫) বলেন, মৌসুম শেষ হয়ে যাচ্ছে।
সবাই ধান রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ জন্য শ্রমিকের চাহিদা ও মজুরি বেড়েছে। মোকামিয়া ইউনিয়নের কৃষক রতন হাওলাদার বলেন, বেতাগীর বিভিন্ন এলাকায় এবার লোকজন এসেছেন কম। শ্রমিকের তিন বেলা খাবারের দায়িত্ব থাকে জমির মালিকের। শ্রমিক-সংকটের কারণে মজুরিও অনেক বেশি। একজন শ্রমিককে দৈনিক ৮০০-১০০০ টাকা দিতে হয়। গত বছর একজন শ্রমিককে ৬০০-৮০০ টাকা দিতে হচ্ছে। এবার তা অনেক বেড়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, চাহিদার তুলনায় শ্রমিকও কম। স্থানীয় শ্রমিকদের মজুরি আরও বেশি।
বেতাগী সদর ইউনিয়নের বাসন্ডা গ্রামের কৃষক বাবুল বিশ্বাস বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে চারা লাগাতে দেরি হয়েছে আমাদের। এখন মজুরি বেশি। আবার সময়ও চলে যাচ্ছে। তাই মানুষ ঋণ করে হলেও দ্রুত ধান লাগানো শেষ করতে চাচ্ছেন। প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন হাটে যাচ্ছি। শ্রমিক নিতে পারছি না। যেসব জমিমালিকের টাকা আছে, তাঁরা বেশি দাম দিয়ে শ্রমিক নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের মতো ছোট চাষিরা দাম কমার অপেক্ষায় আছেন। বিবিচিনি ইউনিয়নের পুটিয়াখালী গ্রামের কৃষক সুকুমার হাওলাদার (৭৫) বলেন, বীজধান, চাষ, শ্রমিক, সার সব খরচ মিলিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে ৬-৭ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সঠিক সময়ে ধান লাগাতে না পারলে ফলন কমে যায়। তখন তো শ্রমিককের মজুরি টাকা ও আমনধান রোপনের খরচ ওঠানোই দায় হয়ে যাবে।