কারও তিনতলা বাড়ি আছে, কেউ চড়ে প্রাইভেট কারে তবু পেশা দিনমজুর। এভাবে রাজশাহী মহানগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বেড়ে গেছে দিনমজুরের সংখ্যা। কথা বলে জানা গেল, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্ড পেতে এমন চতুরতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এতে বঞ্চিত হয়েছে দুস্থরা। বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কাছেও লিখিত অভিযোগ পড়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারি ফজলুর রহমানকে টিসিবির কার্ড দেওয়া হয়েছে দিনমজুর দেখিয়ে। অথচ তিনতলা বাড়ি আছে তাঁর। ওয়ার্ডের অভিজাত আবাসিক এলাকা ব্যাংক কলোনির আমির হামজা রোডের ২ নম্বর বাড়িটি তার। যোগাযোগ করা হলে ফজলুর রহমান জানান, তিনি কার্ডের আবেদন করেছেন। দিনমজুর লেখার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য না করে কল কেটে দেন তিনি।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী তাজবুল হকও কার্ড পেয়েছেন। দাসপুকুর মোড়ের জব্বারের মহল্লায় তার রয়েছে নিজস্ব বাড়ি। তার চার ছেলে নুরুল, শামিম, স্বপন ও রিপনকে একই পাড়ায় আলাদা চারটি বাড়ি করে দিয়েছেন। এর মধ্যে তাজবুলের বড় ছেলে শামিম বর্তমানে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে কর্মরত। তাকে কল দেওয়া হলেও মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
ওয়ার্ডের বাসিন্দা রবিউল ইসলামও কার্ড পেয়েছেন। শহরের নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকায় তার বড় হোটেল রয়েছে। দাসপুকুর মহল্লায় রয়েছে তিনতলা বাড়ি। ব্যবহার করেন প্রাইভেট কার। এলাকাবাসী জানান, রবিউল বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত। দুস্থরা কার্ড না পেলেও রবিউল পাওয়ায় তাঁরা বিস্মিত।
জানতে চাইলে রবিউল বলেন, আধা কাঠা জমির ওপর আমার একতলা বাড়ি রয়েছে। গাড়ি থাকার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমার পরিচিত লোকজনের গাড়ি রয়েছে। তাদের কাছ থেকে মাঝেমধ্যে নিয়ে ব্যবহার করি। তবে দিনমজুর উল্লেখ করে টিসিবির কার্ড নেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো জবাব দেননি।
কাজী নাজমুল কবির রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমিতে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত। তিনিও টিসিবির কার্ড পেয়েছেন। অন্যদের মতো তার কার্ডেও পেশা হিসেবে দিনমজুর লেখা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, ‘আমার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র মহল্লার লোকজন নিয়েছিলেন। তাঁরা পেশা হিসেবে কার্ডে কী লিখেছেন, সেটা বলতে পারব না।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিটি করপোরেশন আগের কার্ড বাতিল করে। নতুন টিসিবি কার্ডের তালিকা করতে দুটি রাজনৈতিক দলের ওই নেতাদের নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছিল। তারা সম্প্রতি নতুন তালিকা করেছেন। এই ওয়ার্ডে ২ হাজার ৫৩০টি কার্ড আছে। এগুলোর মধ্যে কিছু কার্ড সম্প্রতি বিতরণ করা হয়েছে।
এতে দেখা যাচ্ছে, কার্ড পেয়েছেন সচ্ছলেরা। বাদ পড়েছেন প্রকৃত দুস্থ, গরিব, দিনমজুর, বিধবা এমনকি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও।
তাদের একজন মাসদার আলী (৫০)। এক পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই বাজারে ঝাড়ু দেন। মাস শেষে পান মাত্র সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আগে তার টিসিবির একটি কার্ড ছিল। তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
আজাদ আলীকেও (৬০) এবার টিসিবির কার্ড দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, এই বয়সে আমি রংমিস্ত্রির কাজ করি। নানা রকমের অসুখ রয়েছে। সংসারে সচ্ছলতা থাকলে আমি কাজ করতাম না। আমার কার্ডটাও বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে কার্ডের তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম, প্রকৃত দুস্থদের বাদ দেওয়া এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সালমগীর হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন স্বপন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক এবং সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গত ২৫ জুন, ৮ আগস্ট এবং সর্বশেষ ৪ সেপ্টেম্বর তিন দফা লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তারা প্রণীত কার্ডের তালিকা বাতিল করে নতুনভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে তালিকা প্রণয়নের দাবি জানান।
এ বিষয়ে সালমগীর হোসেন বলেন, তালিকা বাতিল করে নিয়ম অনুযায়ী তালিকা করার জন্য আমরা তিনবার আবেদন করেছি। তারপরেও বাতিল হয়নি। এটি সত্যিই উদ্বেগজনক। এর ফলে এই ওয়ার্ডের গরিব, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং অসহায় মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। তালিকা বাতিল না করা হলে অচিরেই এলাকাবাসীকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কারও তিনতলা বাড়ি আছে, কেউ চড়ে প্রাইভেট কারে তবু পেশা দিনমজুর। এভাবে রাজশাহী মহানগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বেড়ে গেছে দিনমজুরের সংখ্যা। কথা বলে জানা গেল, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্ড পেতে এমন চতুরতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এতে বঞ্চিত হয়েছে দুস্থরা। বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কাছেও লিখিত অভিযোগ পড়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারি ফজলুর রহমানকে টিসিবির কার্ড দেওয়া হয়েছে দিনমজুর দেখিয়ে। অথচ তিনতলা বাড়ি আছে তাঁর। ওয়ার্ডের অভিজাত আবাসিক এলাকা ব্যাংক কলোনির আমির হামজা রোডের ২ নম্বর বাড়িটি তার। যোগাযোগ করা হলে ফজলুর রহমান জানান, তিনি কার্ডের আবেদন করেছেন। দিনমজুর লেখার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য না করে কল কেটে দেন তিনি।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী তাজবুল হকও কার্ড পেয়েছেন। দাসপুকুর মোড়ের জব্বারের মহল্লায় তার রয়েছে নিজস্ব বাড়ি। তার চার ছেলে নুরুল, শামিম, স্বপন ও রিপনকে একই পাড়ায় আলাদা চারটি বাড়ি করে দিয়েছেন। এর মধ্যে তাজবুলের বড় ছেলে শামিম বর্তমানে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে কর্মরত। তাকে কল দেওয়া হলেও মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
ওয়ার্ডের বাসিন্দা রবিউল ইসলামও কার্ড পেয়েছেন। শহরের নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকায় তার বড় হোটেল রয়েছে। দাসপুকুর মহল্লায় রয়েছে তিনতলা বাড়ি। ব্যবহার করেন প্রাইভেট কার। এলাকাবাসী জানান, রবিউল বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত। দুস্থরা কার্ড না পেলেও রবিউল পাওয়ায় তাঁরা বিস্মিত।
জানতে চাইলে রবিউল বলেন, আধা কাঠা জমির ওপর আমার একতলা বাড়ি রয়েছে। গাড়ি থাকার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমার পরিচিত লোকজনের গাড়ি রয়েছে। তাদের কাছ থেকে মাঝেমধ্যে নিয়ে ব্যবহার করি। তবে দিনমজুর উল্লেখ করে টিসিবির কার্ড নেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো জবাব দেননি।
কাজী নাজমুল কবির রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমিতে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত। তিনিও টিসিবির কার্ড পেয়েছেন। অন্যদের মতো তার কার্ডেও পেশা হিসেবে দিনমজুর লেখা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, ‘আমার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র মহল্লার লোকজন নিয়েছিলেন। তাঁরা পেশা হিসেবে কার্ডে কী লিখেছেন, সেটা বলতে পারব না।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিটি করপোরেশন আগের কার্ড বাতিল করে। নতুন টিসিবি কার্ডের তালিকা করতে দুটি রাজনৈতিক দলের ওই নেতাদের নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছিল। তারা সম্প্রতি নতুন তালিকা করেছেন। এই ওয়ার্ডে ২ হাজার ৫৩০টি কার্ড আছে। এগুলোর মধ্যে কিছু কার্ড সম্প্রতি বিতরণ করা হয়েছে।
এতে দেখা যাচ্ছে, কার্ড পেয়েছেন সচ্ছলেরা। বাদ পড়েছেন প্রকৃত দুস্থ, গরিব, দিনমজুর, বিধবা এমনকি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও।
তাদের একজন মাসদার আলী (৫০)। এক পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই বাজারে ঝাড়ু দেন। মাস শেষে পান মাত্র সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আগে তার টিসিবির একটি কার্ড ছিল। তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
আজাদ আলীকেও (৬০) এবার টিসিবির কার্ড দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, এই বয়সে আমি রংমিস্ত্রির কাজ করি। নানা রকমের অসুখ রয়েছে। সংসারে সচ্ছলতা থাকলে আমি কাজ করতাম না। আমার কার্ডটাও বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে কার্ডের তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম, প্রকৃত দুস্থদের বাদ দেওয়া এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সালমগীর হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন স্বপন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক এবং সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গত ২৫ জুন, ৮ আগস্ট এবং সর্বশেষ ৪ সেপ্টেম্বর তিন দফা লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তারা প্রণীত কার্ডের তালিকা বাতিল করে নতুনভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে তালিকা প্রণয়নের দাবি জানান।
এ বিষয়ে সালমগীর হোসেন বলেন, তালিকা বাতিল করে নিয়ম অনুযায়ী তালিকা করার জন্য আমরা তিনবার আবেদন করেছি। তারপরেও বাতিল হয়নি। এটি সত্যিই উদ্বেগজনক। এর ফলে এই ওয়ার্ডের গরিব, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং অসহায় মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। তালিকা বাতিল না করা হলে অচিরেই এলাকাবাসীকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।