পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকরা চমক দেখালেও উৎপাদন খরচ তুলতে ‘হিমসিম’ খায় তারা। প্রতি বছরই উৎপাদন মৌসুমে সীমাহীন দুর্ভোগ ও লোকসানের মুখে পড়তে হয় তাদের। কারণ দেশে পেঁয়াজ চাষের সবচেয়ে বড় সমস্যা সংরক্ষণ।
সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে দেশে প্রতিবছর উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ৩০ ভাগ নষ্ট হয়
পচন ঠেকাতে এবং পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে কৃষি বিভাগ দিচ্ছে এয়ার ফ্লো মেশিন
এরই মধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছে ফরিদপুরের কৃষকরা
সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে দেশে প্রতিবছর উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ৩০ ভাগ নষ্ট হয়ে যায়। এতে মৌসুম শেষে বাজারে ঘাটতি তৈরি হয়। দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। বিদেশ থেকে আমদানির চাপ বাড়ে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এয়ার ফ্লো মেশিনের মাধ্যমে এখন সহজে পেঁয়াজ মজুত রাখা সম্ভব হচ্ছে। মেশিনটি তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বাতাসের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। এতে পেঁয়াজ শুকিয়ে যায় না, আবার পঁচেও না। কৃষকরা একে বলছেন ‘পেঁয়াজের এসি’। কেউ কেউ বলছেন ‘পেঁয়াজের হিমাগার’।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার আয়ুব আলী মৃধা। পেশায় স্কুল শিক্ষক হলেও মন পড়ে থাকে কৃষিতে। গতবছর ৫০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করলেও এবার তা বাড়িয়ে ১০০ বিঘা চাষের লক্ষ্য স্থির করেছেন। তিনি বলেন, ‘পেশাগত জীবনে আমি দেশের শীর্ষ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিলেও মন পড়ে থাকে কৃষিতে। প্রতিবছর দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও কৃষক বা দেশের মানুষ যৌক্তিক মুল্যে তা কিনতে পারেনা। আমার চাষের লক্ষ্যই কৃষক ও ভোক্তার নিকট সাশ্রয়ী দামে পেঁয়াজ তুলে দেওয়া।’
তিনি আরো বলেন, ‘এবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সরকার যে কৃষকের হাতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য এয়ার ফ্লো মেশিন সরবরাহ করবে, তাতে পেঁয়াজের পচন রোধ করা যাবে। এ উদ্যোগটিই আমাকে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে এই ফসলটি চাষ করতে উৎসাহিত করছে।’
একই জেলার সদর উপজেলার কৃষক আলমগীরও দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার জমির পেঁয়াজ প্রতিবছর যতটুকু হয় সব আমি ঘরে সংরক্ষণ করি। এবারও করবো। কৃষি অফিস বলেছে, তারা এয়ার ফ্লো মেশিন সহায়তা দিবে, যাতে পেঁয়াজ নষ্ট হবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিবছর আমার ৪০ কেজি পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলে ১৫-১৮ কেজি নষ্ট হয়ে যেত। এয়ার ফ্লো মেশিন দিয়ে যারা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে তাদের নিকট শুনেছি; ৪০ কেজি পেঁয়াজ মাত্র ২-৩ কেজি নষ্ট হয়। তাই আমি এবার বেশি করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করবো।’
পেঁয়াজ চাষিরা বলেন, ‘উৎপাদন অনুযায়ী যে পরিমাণ পেঁয়াজ হয়, তা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। এই মেশিনের মাধ্যমে সংরক্ষণ করলে পেঁয়াজ আট মাস পর্যন্ত ভালো অবস্থায় থাকবে এবং ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি করা সম্ভব হবে।’
এ উদ্যোগে কোটি টাকার অপচয় রোধ করবে। কৃষকরা বলছেন, এভাবে সংরক্ষণে দেশে পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজন পড়বে না।
এই পরিস্থিতিতে ফরিদপুরের ৫০০ চাষিকে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক এয়ার-ফ্লো মেশিন দিচ্ছে মন্ত্রণালয়। সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১২০ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ শেষে মেশিন হস্তান্তর করা হয়েছে।
সঠিকভাবে এয়ার ফ্লো মেশিন ব্যবহার করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়েই দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে দাবি করছে কৃষি বিভাগ। ঢাকা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক মো. মুরাদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়, তা যথেষ্ট। তবে পেঁয়াজ পচে যাওয়ার কারণে ঘাটতি দেখা দেয়। যদি পেঁয়াজ পঁচে না যায়, তাহলে ঘাটতি হবে না এবং আমাদের কারো ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না।’
সারাদেশে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬ জেলায় ৩ হাজার ৭০০ চাষিকে এয়ার-ফ্লো মেশিন দেয়া হবে। ভবিষ্যতে আরও চাষিকে মেশিন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। পেঁয়াজ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘কোম্পানির সঙ্গে কৃষকের একটি চুক্তি বা অ্যাগ্রিমেন্ট হবে। এরপর কোম্পানি কৃষকের বাড়িতে মেশিন সেট করবে। মেশিন হস্তান্তরের পর উপজেলায় থাকা ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি এটি যাচাই করে আমাদের কাছে প্রত্যায়ন পাঠাবে। সেই প্রত্যায়ন পাওয়ার পরই কৃষকের অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রদান করা হবে।’
তিনি আরা বলেণ, ‘পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য ১২ বর্গফুট আকারের একটি ঘর বানাতে হয়। ভেতরে ১০ ইঞ্চি উঁচু করে বাঁশের মাচা তৈরি করতে হয়। এরপর ঘরের মাঝখানে বসানো হয় এয়ার ফ্লো মেশিন। মেশিনের সাহায্যে বাতাস নিচ থেকে ওপরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ঘরে রাখা পেঁয়াজের তাপমাত্রা সঠিক থাকে।’
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, প্রতিটি মেশিনের জন্য খরচ হচ্ছে ২৭ হাজার টাকা। হিসেব করে দেখা গেছে, প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭০০ টি এয়ার ফ্লো মেশিন সরবরাহ করতে পারলে বছরে ৩ শ ২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
আর প্রতিটি এয়ার ফ্লো মেশিন প্রায় ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত কার্যকরী থাকবে। ধীরে ধীরে আমাদের দেশ পেঁয়াজে স্বনির্ভরতা অর্জন করবে। সারা বছর পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল থাকবে বলে মত এই প্রকল্প পরিচালকের।
কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, পেঁয়াজের পচন রোধে আধুনিক এয়ার-ফ্লো মেশিনের এই প্রযুক্তি কার্যকর হলে আগামীতে পেঁয়াজ চাষিরা সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণে উদ্যোগী হবেন। তা সম্ভব হলে আমরা নিজস্ব উৎপাদন দিয়েই পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে পারব। আমদানির জন্য আর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হবে না।
‘এ ছাড়া কৃষকের লোকসান ঠেকাতে পেঁয়াজ আমদানিকে আমরা নিরুৎসাহিত করছি’, বলে জানান কৃষি সচিব।
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কিন্তু আধুনিক সংরক্ষণ পদ্ধতি না থাকায় ‘সানাতন’ বা মাচা পদ্ধতিতে সংরক্ষণের কারণে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ২৫-৩০শতাংশ অর্থাৎ ১০-১২ লক্ষ মেটন পেঁয়াজ পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য বছরে ৪-৭ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজের ঘাটতি থাকে, যেটা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজ আমদানিতে প্রচুর অর্থ খরচ হয় ।
শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকরা চমক দেখালেও উৎপাদন খরচ তুলতে ‘হিমসিম’ খায় তারা। প্রতি বছরই উৎপাদন মৌসুমে সীমাহীন দুর্ভোগ ও লোকসানের মুখে পড়তে হয় তাদের। কারণ দেশে পেঁয়াজ চাষের সবচেয়ে বড় সমস্যা সংরক্ষণ।
সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে দেশে প্রতিবছর উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ৩০ ভাগ নষ্ট হয়
পচন ঠেকাতে এবং পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে কৃষি বিভাগ দিচ্ছে এয়ার ফ্লো মেশিন
এরই মধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছে ফরিদপুরের কৃষকরা
সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে দেশে প্রতিবছর উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ৩০ ভাগ নষ্ট হয়ে যায়। এতে মৌসুম শেষে বাজারে ঘাটতি তৈরি হয়। দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। বিদেশ থেকে আমদানির চাপ বাড়ে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এয়ার ফ্লো মেশিনের মাধ্যমে এখন সহজে পেঁয়াজ মজুত রাখা সম্ভব হচ্ছে। মেশিনটি তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বাতাসের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। এতে পেঁয়াজ শুকিয়ে যায় না, আবার পঁচেও না। কৃষকরা একে বলছেন ‘পেঁয়াজের এসি’। কেউ কেউ বলছেন ‘পেঁয়াজের হিমাগার’।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার আয়ুব আলী মৃধা। পেশায় স্কুল শিক্ষক হলেও মন পড়ে থাকে কৃষিতে। গতবছর ৫০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করলেও এবার তা বাড়িয়ে ১০০ বিঘা চাষের লক্ষ্য স্থির করেছেন। তিনি বলেন, ‘পেশাগত জীবনে আমি দেশের শীর্ষ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিলেও মন পড়ে থাকে কৃষিতে। প্রতিবছর দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও কৃষক বা দেশের মানুষ যৌক্তিক মুল্যে তা কিনতে পারেনা। আমার চাষের লক্ষ্যই কৃষক ও ভোক্তার নিকট সাশ্রয়ী দামে পেঁয়াজ তুলে দেওয়া।’
তিনি আরো বলেন, ‘এবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সরকার যে কৃষকের হাতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য এয়ার ফ্লো মেশিন সরবরাহ করবে, তাতে পেঁয়াজের পচন রোধ করা যাবে। এ উদ্যোগটিই আমাকে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে এই ফসলটি চাষ করতে উৎসাহিত করছে।’
একই জেলার সদর উপজেলার কৃষক আলমগীরও দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার জমির পেঁয়াজ প্রতিবছর যতটুকু হয় সব আমি ঘরে সংরক্ষণ করি। এবারও করবো। কৃষি অফিস বলেছে, তারা এয়ার ফ্লো মেশিন সহায়তা দিবে, যাতে পেঁয়াজ নষ্ট হবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিবছর আমার ৪০ কেজি পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলে ১৫-১৮ কেজি নষ্ট হয়ে যেত। এয়ার ফ্লো মেশিন দিয়ে যারা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে তাদের নিকট শুনেছি; ৪০ কেজি পেঁয়াজ মাত্র ২-৩ কেজি নষ্ট হয়। তাই আমি এবার বেশি করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করবো।’
পেঁয়াজ চাষিরা বলেন, ‘উৎপাদন অনুযায়ী যে পরিমাণ পেঁয়াজ হয়, তা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। এই মেশিনের মাধ্যমে সংরক্ষণ করলে পেঁয়াজ আট মাস পর্যন্ত ভালো অবস্থায় থাকবে এবং ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি করা সম্ভব হবে।’
এ উদ্যোগে কোটি টাকার অপচয় রোধ করবে। কৃষকরা বলছেন, এভাবে সংরক্ষণে দেশে পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজন পড়বে না।
এই পরিস্থিতিতে ফরিদপুরের ৫০০ চাষিকে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক এয়ার-ফ্লো মেশিন দিচ্ছে মন্ত্রণালয়। সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১২০ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ শেষে মেশিন হস্তান্তর করা হয়েছে।
সঠিকভাবে এয়ার ফ্লো মেশিন ব্যবহার করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়েই দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে দাবি করছে কৃষি বিভাগ। ঢাকা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক মো. মুরাদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়, তা যথেষ্ট। তবে পেঁয়াজ পচে যাওয়ার কারণে ঘাটতি দেখা দেয়। যদি পেঁয়াজ পঁচে না যায়, তাহলে ঘাটতি হবে না এবং আমাদের কারো ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না।’
সারাদেশে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬ জেলায় ৩ হাজার ৭০০ চাষিকে এয়ার-ফ্লো মেশিন দেয়া হবে। ভবিষ্যতে আরও চাষিকে মেশিন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। পেঁয়াজ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘কোম্পানির সঙ্গে কৃষকের একটি চুক্তি বা অ্যাগ্রিমেন্ট হবে। এরপর কোম্পানি কৃষকের বাড়িতে মেশিন সেট করবে। মেশিন হস্তান্তরের পর উপজেলায় থাকা ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি এটি যাচাই করে আমাদের কাছে প্রত্যায়ন পাঠাবে। সেই প্রত্যায়ন পাওয়ার পরই কৃষকের অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রদান করা হবে।’
তিনি আরা বলেণ, ‘পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য ১২ বর্গফুট আকারের একটি ঘর বানাতে হয়। ভেতরে ১০ ইঞ্চি উঁচু করে বাঁশের মাচা তৈরি করতে হয়। এরপর ঘরের মাঝখানে বসানো হয় এয়ার ফ্লো মেশিন। মেশিনের সাহায্যে বাতাস নিচ থেকে ওপরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ঘরে রাখা পেঁয়াজের তাপমাত্রা সঠিক থাকে।’
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, প্রতিটি মেশিনের জন্য খরচ হচ্ছে ২৭ হাজার টাকা। হিসেব করে দেখা গেছে, প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭০০ টি এয়ার ফ্লো মেশিন সরবরাহ করতে পারলে বছরে ৩ শ ২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
আর প্রতিটি এয়ার ফ্লো মেশিন প্রায় ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত কার্যকরী থাকবে। ধীরে ধীরে আমাদের দেশ পেঁয়াজে স্বনির্ভরতা অর্জন করবে। সারা বছর পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল থাকবে বলে মত এই প্রকল্প পরিচালকের।
কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, পেঁয়াজের পচন রোধে আধুনিক এয়ার-ফ্লো মেশিনের এই প্রযুক্তি কার্যকর হলে আগামীতে পেঁয়াজ চাষিরা সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণে উদ্যোগী হবেন। তা সম্ভব হলে আমরা নিজস্ব উৎপাদন দিয়েই পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে পারব। আমদানির জন্য আর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হবে না।
‘এ ছাড়া কৃষকের লোকসান ঠেকাতে পেঁয়াজ আমদানিকে আমরা নিরুৎসাহিত করছি’, বলে জানান কৃষি সচিব।
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কিন্তু আধুনিক সংরক্ষণ পদ্ধতি না থাকায় ‘সানাতন’ বা মাচা পদ্ধতিতে সংরক্ষণের কারণে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ২৫-৩০শতাংশ অর্থাৎ ১০-১২ লক্ষ মেটন পেঁয়াজ পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য বছরে ৪-৭ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজের ঘাটতি থাকে, যেটা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজ আমদানিতে প্রচুর অর্থ খরচ হয় ।