alt

দামুড়হুদার এক ফেরিওয়ালার বেঁচে থাকার গল্প

প্রতিনিধি, দামুড়হুদা ( চুয়াডাঙ্গা) : শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফুলুলি গো ফুলুলি। আজকের ভোরের টাটকা ভাজা ফুলুলি। এই ভাবে ডাক হাঁক দিয়ে রোজ সকালে পায়ে হেঁটে গ্রামের পথে পথে বাঁকে ঝুঁড়ি বেঁধে ফুলুলি বিক্রি করতে আসে এক ফেরিওয়ালা। নাম তার ইমদাদুল। বয়স তিন কুড়ি ছুঁই ছুঁই করছে। সে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সুবলপুর গ্রামের হবিবর মন্ডলের ছেলে।

তিনি বলেন, গেছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সুবলপুর গ্রামে তার স্থায়ী ঠিকানা। নিজের কোন জমা জমি নেই।কখনো কামলা খেটে আবার কখনো ফেরি করেবেঁচে আছেন তিনি। প্রতিদিন সকাল হলেই নেমে পড়েন জীবন সংগ্রামে রুটি রুজির জন্য জীবন সংগ্রামে নেমে পড়লেই সৃষ্টি কর্তা রুজি মিলিয়ে দেন। তিনি যা রুজি দেন তাই নিয়ে খুশি মনে বাড়ী ফেরে প্রতিদিন।এই রুজি দিয়ে স্বামী স্ত্রীর দুজনের সংসার চলে যায়।ছেলে মেয়ে আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকতে। চোখ মুছে বলে উঠে কপাল খারাপ। অনেক কষ্ট করে কামলা খেটে ফেরি করে দুই ছেলে কে বড় করে ছিলাম। তারা বড় হয়ে বিয়ে করে শশুর বাড়ীতে সংসার পেতেছে। আমাদের কোন খোঁজ নেই না। বেঁচে থাকার তাগিদে এখন বারো মাসই নানা রকম জিনিস ফেরি করি। রোজ ভোরে বাড়ীওয়ালী আর আমি দুজনে মিলে এখন ফুলুলি ভেজে সাথে কখনো নিমকি নিয়ে আমি রোজ সকালে ফেরি করতে বের হয়। সপ্তাহে শনিবার আর মঙ্গলবার আসি দামুড়হুদা সদরে ফেরি করতে। এখানে এলে দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। হাজার টাকা পুঁজি খাটিয়ে প্রতিদিন ৩/৪শত টাকা লাভ হয়। রোগ শোকে বিছানায় পড়ে গেলে পুঁজি হারাবার ভয় থাকে। বয়স বাড়ায় আগের মত আর ডাক হাঁক দিতে পারি না। পথ চলতে ভয় করে। পথ চলতে প্রায় আমি ক্লান্ত। এখন দরকার বিশ্রাম। হয়তো বা একদিন পথচলতে আমি হারিয়ে যাবো তোমার মাঝ থেকে। চলার পথে ভুল গুলো ক্ষমা করে দিয়ো মরে। তবে ফেরি করতে বড়ই কস্ট হচ্ছে। জানি না এ পথ চলা কবে শেষ হবে।শাহীন ও জাহাঙ্গীর নামের ফুলুলি ক্রেতা বলেন, তার হাতে তৈরী ফুলুলি ভাজা ভাল । আমার প্রায় তার কাছ থেকে ফুলুলি কিনি সে খুব সহজ সরল মানুষ ।

পথে ঘাটে খুব দ্রুত তার ফুলুলি বিক্রয় হয়ে যায় ।দশমী গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন, বর্তমান সময়ে, গ্রামীণ অর্থনীতি এবং আধুনিক বাণিজ্যের সাথে তাল মিলিয়ে গ্রামগুলোতে ফেরিওযালাদের সংখ্যা কমেছে। সাপ্তাহিক হাট-বাজার এবং আধুনিক শপিং সেন্টারের প্রভাবে তাদের পেশা অনেকটাই বিলুপ্ত। এখন আর সেই চিরচেনা ফেরিওয়ালাদের হাক ডাক তেমন শোনা যায় না। তবুও অনেকে, তার মত অসহায় মানুষ গুলো বেচে থাকার তাগিদে তাদের জীবনের ভালোবাসা থেকে এই পেশা ধরে রেখেছেন। কাজ ছাড়া তিনি থাকতে পারবেন না। কাজই তাকে সুস্থ ও প্রাণ বন্ত রাখে। এই ফেরিওয়ালার পেশা এবং জীবন সংগ্রাম আমাদের গ্রামীণ সমাজের বিস্তর জুড়ে কিছু মানুষের সাথে একটা আত্নীকতা গড়ে ওঠে। যাদের কোনো উৎসবে দাওয়াত দেওয়া হয়না বা তাদের পাশে বসে তাদের গল্প কখনো শোনা হয় না।ছোটবেলা থেকেই এ ধরনের মানুষদের সাথে একটা অতীব পরিচিত আর এক অকৃত্রিম মিল তৈরি হয়। সে সারাদিন ফেরি করে ফুলুলি বিক্রি করে বেড়ায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই এসব মানুষদের চেহারা গুলো এক অদ্ভুত মায়াতে মিলন তৈরি করে। যাদেরকে দেখা হলেই আত্নীকতা যেন মন থেকেই বেড়ে যায। এই মানুষগুলো এতটাই আপন হয়। তারা অনেক সময় বাকীতেই জিনিস পাতি দিয়ে যায। সপ্তাহে একবার এই লোক গুলোকে দেখা যায়। এদের এক নির্দিষ্ট একটা নাম আছে। তাদের নাম পাল্টে দিয়ে আলাদা ভাবে ডাকা হয় “ফেরিওয়ালা”। তাই কোন অবজ্ঞা নয় ওরা মানুষ তাদের প্রতি সবার সম্মান দেওয়া উচিত। কালের পরিক্রমায় গ্রামীণ বাংলার অনেক ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে। এর মধ্যে অন্যতম হলো গ্রাম্য ফেরিওয়ালাদের জীবন। সেই এক সময়ের পরিচিত মাটির হাড়ি পাতিল, চানাচুর, আইসক্রিমের হাঁকডাক আজ গ্রামীণ জীবনে বিরল। কিন্তু আজও কিছু মানুষ আছেন যারা তাদের প্রাচীন পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন ৬০ বছরেরও বেশি বয়সী এই মানুষটি এখনো প্রতিদিন গ্রামের পথে ফেরি করে যান। জীবনের এই চলার পথে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে তাঁর জীবন এক অনন্য উদাহরণ। দামুড়হুদা সাহিত্য পরিসদের সম্পাদক আব্দুল আলীম বলেন, বিংশ শতকের শেষ দিকে গ্রামের প্রতিটি পথ ছিল ফেরিওয়ালাদের হাঁক ডাকে ভরা। “আইসক্রিম-মালাই”,-কুলফি মালাই এই ধরনের ডাক গুলো গ্রাম জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। ফেরিওয়ালারা তাদের কাঁধে দু’পাশে বাকে ঝুলিয়ে তেল, সাবান, নুন, মশলা থেকে শুরু করে কাচের বাক্সে করে মেয়েদের আলতা, ফিতা, স্নো-পাউডার বিক্রি করতেন। পাড়ার ছেলেমেয়েরা তাদের দেখলেই ছুটে আসত। আর মা-বাবারা ছোটখাটো সামগ্রী কিনে ছেলে মেয়েদের আবদার মেটাতেন।তাদের মধ্যে কিছু ফেরিওয়ালা শন পাপডড়ি, আইসক্রিম নিয়ে পাড়া থেকে পাড়ায় হাঁক ডাক করে বেড়াতেন। দাম কম হলেও শিশুদের আনন্দ ছিল অফুরন্ত। সে সময়ের গ্রামের মানুষদের জীবনে আজকের বার্গার, রোল বা দামি আইসক্রিমের চেয়ে এই ফেরিওয়ালাদের সরল পণ্যই ছিল প্রিয়।তিনি আমাদের গ্রামীণ সমাজের এক পতীক। এই পেশা তার কাছে শুধুই জীবিকার মাধ্যম নয়, এটি তার জীবনধারা।

সমাজে যখন পরিবর্তনের ঝড় বইছে, তখনও তার পেশা এবং বিশ্বাসকে অটুট রেখে চলেছেন। তার মতো মানুষরা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পরিবর্তনের মধ্যেও আমাদের শেকড় ধরে রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আজকের দিনে যখন সবকিছু দ্রুত বদলে যাচ্ছে, তখন তার মতো মানুষরা আমাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের সাথে সংযোগ করিয়ে দেয়। তাদের জীবন এবং সংগ্রামের প্রতি সম্মান প্রদর্শন আমাদের দায়িত্ব। তার এই হাঁক শুধু রুটি-রুজির আহ্বান নয়, এক সংগ্রামী অস্তিত্বের আর্তনাদ। ওরা যেন জীবনের এক বাস্তব গল্প ।

ছবি

৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করলেন বিএনপি নেতা শাহাফুজ আলম

ছবি

শারদীয় দুর্গোৎসব মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ

ছবি

ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় আলোকিত মওলানা ভাসানী সেতু

ছবি

দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে

ছবি

মোরেলগঞ্জে রাস্তার বেহালদশা ৮ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

ভৈরবে প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে দুই পরিবারের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ছবি

সুনামগঞ্জ কার মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ নিহত ২

ছবি

ভৈরব জনতা ব্যাংকের ম্যানেজরসহ দুইজন বরখাস্ত

ছবি

মহেশপুরে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও গুণীজনদের সংবর্ধনা

ছবি

সুনামগঞ্জে আন্তর্জাতিক নির্মল বায়ু দিবস পালিত

ছবি

সুনামগঞ্জে আন্তর্জাতিক নির্মল বায়ু দিবস পালিত

ছবি

বাগেরহাটে মাছের ঘেরের পাড়ে মাচায় তরমুজ চাষে ব্যপক লাভ

ছবি

নরসিংদী থেকে প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন

ছবি

বাগেরহাটে তিনদিনের সকাল-সন্ধ্যা হরতালে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত

ছবি

চান্দিনায় পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে জশনে জুলুস

ছবি

সখীপুরে পিকআপ চাপায় শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু

ছবি

বিদেশে মৃত্যুর ৩ মাস পর যুবকের লাশ পেলেন স্বজনরা, এলাকায় শোকের ছায়া

ছবি

পাংশায় ডাকাতি, বাড়ির মালিক আহত

ছবি

সুনামগঞ্জে কারের সঙ্গে সংঘর্ষে মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত

ছবি

ময়মনসিংহে মুখোমুখি দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ২, আহত অন্তত ১০

ছবি

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজীপুরে সমাবেশ

ছবি

কোটালীপাড়া থেকে অপহৃত শিশুকে লালপুরে উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার

ছবি

সুন্দরবনে রাঙ্গা বাহিনীর দুই সহযোগী অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ গ্রেপ্তার

ছবি

মুন্সীগঞ্জে সেপটিক ট্যাংকের ঝুঁকি ও করণীয় বিষয়ক প্রশিক্ষণ

ছবি

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গণছুটি কর্মসূচি স্থগিত

ছবি

বদলগাছীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ অর্থ ও ১০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট

ছবি

ব্লাস্ট রোগের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধী জাতের উদ্ভাবন বিষয়ক কর্মশালা

ছবি

সড়ক দুর্ঘটনা: মীরসরাইয়ে বাবা-মেয়ে নিহত, আহত ৪

ছবি

কদমতলীতে নারীর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার

ছবি

হাসপাতালের বিছানায়ই আহমদ রফিকের জন্মদিন কাটলো

ছবি

বেতাগীর বদনীখালী খেয়াঘাটের বেহাল দশা, যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে

ছবি

টিকেট কালোবাজারি: কক্সবাজার রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে বিশৃঙ্খলা: আহত অন্তত ৩০

ছবি

সাগরপথে মানবপাচার: টেকনাফে বিজিবির অভিযানে আটক ৫

ছবি

সারাদেশে মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে: আক্রান্ত ৩৬ হাজার ৯২৭, মৃত্যু ১৪৫

ছবি

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ১৭১ অবৈধ অভিবাসী আটক

ছবি

বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়লো ৩০ কেজির ‘ট্রেভ্যালি ফিশ’

tab

news » bangladesh

দামুড়হুদার এক ফেরিওয়ালার বেঁচে থাকার গল্প

প্রতিনিধি, দামুড়হুদা ( চুয়াডাঙ্গা)

শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফুলুলি গো ফুলুলি। আজকের ভোরের টাটকা ভাজা ফুলুলি। এই ভাবে ডাক হাঁক দিয়ে রোজ সকালে পায়ে হেঁটে গ্রামের পথে পথে বাঁকে ঝুঁড়ি বেঁধে ফুলুলি বিক্রি করতে আসে এক ফেরিওয়ালা। নাম তার ইমদাদুল। বয়স তিন কুড়ি ছুঁই ছুঁই করছে। সে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সুবলপুর গ্রামের হবিবর মন্ডলের ছেলে।

তিনি বলেন, গেছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সুবলপুর গ্রামে তার স্থায়ী ঠিকানা। নিজের কোন জমা জমি নেই।কখনো কামলা খেটে আবার কখনো ফেরি করেবেঁচে আছেন তিনি। প্রতিদিন সকাল হলেই নেমে পড়েন জীবন সংগ্রামে রুটি রুজির জন্য জীবন সংগ্রামে নেমে পড়লেই সৃষ্টি কর্তা রুজি মিলিয়ে দেন। তিনি যা রুজি দেন তাই নিয়ে খুশি মনে বাড়ী ফেরে প্রতিদিন।এই রুজি দিয়ে স্বামী স্ত্রীর দুজনের সংসার চলে যায়।ছেলে মেয়ে আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকতে। চোখ মুছে বলে উঠে কপাল খারাপ। অনেক কষ্ট করে কামলা খেটে ফেরি করে দুই ছেলে কে বড় করে ছিলাম। তারা বড় হয়ে বিয়ে করে শশুর বাড়ীতে সংসার পেতেছে। আমাদের কোন খোঁজ নেই না। বেঁচে থাকার তাগিদে এখন বারো মাসই নানা রকম জিনিস ফেরি করি। রোজ ভোরে বাড়ীওয়ালী আর আমি দুজনে মিলে এখন ফুলুলি ভেজে সাথে কখনো নিমকি নিয়ে আমি রোজ সকালে ফেরি করতে বের হয়। সপ্তাহে শনিবার আর মঙ্গলবার আসি দামুড়হুদা সদরে ফেরি করতে। এখানে এলে দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। হাজার টাকা পুঁজি খাটিয়ে প্রতিদিন ৩/৪শত টাকা লাভ হয়। রোগ শোকে বিছানায় পড়ে গেলে পুঁজি হারাবার ভয় থাকে। বয়স বাড়ায় আগের মত আর ডাক হাঁক দিতে পারি না। পথ চলতে ভয় করে। পথ চলতে প্রায় আমি ক্লান্ত। এখন দরকার বিশ্রাম। হয়তো বা একদিন পথচলতে আমি হারিয়ে যাবো তোমার মাঝ থেকে। চলার পথে ভুল গুলো ক্ষমা করে দিয়ো মরে। তবে ফেরি করতে বড়ই কস্ট হচ্ছে। জানি না এ পথ চলা কবে শেষ হবে।শাহীন ও জাহাঙ্গীর নামের ফুলুলি ক্রেতা বলেন, তার হাতে তৈরী ফুলুলি ভাজা ভাল । আমার প্রায় তার কাছ থেকে ফুলুলি কিনি সে খুব সহজ সরল মানুষ ।

পথে ঘাটে খুব দ্রুত তার ফুলুলি বিক্রয় হয়ে যায় ।দশমী গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন, বর্তমান সময়ে, গ্রামীণ অর্থনীতি এবং আধুনিক বাণিজ্যের সাথে তাল মিলিয়ে গ্রামগুলোতে ফেরিওযালাদের সংখ্যা কমেছে। সাপ্তাহিক হাট-বাজার এবং আধুনিক শপিং সেন্টারের প্রভাবে তাদের পেশা অনেকটাই বিলুপ্ত। এখন আর সেই চিরচেনা ফেরিওয়ালাদের হাক ডাক তেমন শোনা যায় না। তবুও অনেকে, তার মত অসহায় মানুষ গুলো বেচে থাকার তাগিদে তাদের জীবনের ভালোবাসা থেকে এই পেশা ধরে রেখেছেন। কাজ ছাড়া তিনি থাকতে পারবেন না। কাজই তাকে সুস্থ ও প্রাণ বন্ত রাখে। এই ফেরিওয়ালার পেশা এবং জীবন সংগ্রাম আমাদের গ্রামীণ সমাজের বিস্তর জুড়ে কিছু মানুষের সাথে একটা আত্নীকতা গড়ে ওঠে। যাদের কোনো উৎসবে দাওয়াত দেওয়া হয়না বা তাদের পাশে বসে তাদের গল্প কখনো শোনা হয় না।ছোটবেলা থেকেই এ ধরনের মানুষদের সাথে একটা অতীব পরিচিত আর এক অকৃত্রিম মিল তৈরি হয়। সে সারাদিন ফেরি করে ফুলুলি বিক্রি করে বেড়ায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই এসব মানুষদের চেহারা গুলো এক অদ্ভুত মায়াতে মিলন তৈরি করে। যাদেরকে দেখা হলেই আত্নীকতা যেন মন থেকেই বেড়ে যায। এই মানুষগুলো এতটাই আপন হয়। তারা অনেক সময় বাকীতেই জিনিস পাতি দিয়ে যায। সপ্তাহে একবার এই লোক গুলোকে দেখা যায়। এদের এক নির্দিষ্ট একটা নাম আছে। তাদের নাম পাল্টে দিয়ে আলাদা ভাবে ডাকা হয় “ফেরিওয়ালা”। তাই কোন অবজ্ঞা নয় ওরা মানুষ তাদের প্রতি সবার সম্মান দেওয়া উচিত। কালের পরিক্রমায় গ্রামীণ বাংলার অনেক ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে। এর মধ্যে অন্যতম হলো গ্রাম্য ফেরিওয়ালাদের জীবন। সেই এক সময়ের পরিচিত মাটির হাড়ি পাতিল, চানাচুর, আইসক্রিমের হাঁকডাক আজ গ্রামীণ জীবনে বিরল। কিন্তু আজও কিছু মানুষ আছেন যারা তাদের প্রাচীন পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন ৬০ বছরেরও বেশি বয়সী এই মানুষটি এখনো প্রতিদিন গ্রামের পথে ফেরি করে যান। জীবনের এই চলার পথে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে তাঁর জীবন এক অনন্য উদাহরণ। দামুড়হুদা সাহিত্য পরিসদের সম্পাদক আব্দুল আলীম বলেন, বিংশ শতকের শেষ দিকে গ্রামের প্রতিটি পথ ছিল ফেরিওয়ালাদের হাঁক ডাকে ভরা। “আইসক্রিম-মালাই”,-কুলফি মালাই এই ধরনের ডাক গুলো গ্রাম জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। ফেরিওয়ালারা তাদের কাঁধে দু’পাশে বাকে ঝুলিয়ে তেল, সাবান, নুন, মশলা থেকে শুরু করে কাচের বাক্সে করে মেয়েদের আলতা, ফিতা, স্নো-পাউডার বিক্রি করতেন। পাড়ার ছেলেমেয়েরা তাদের দেখলেই ছুটে আসত। আর মা-বাবারা ছোটখাটো সামগ্রী কিনে ছেলে মেয়েদের আবদার মেটাতেন।তাদের মধ্যে কিছু ফেরিওয়ালা শন পাপডড়ি, আইসক্রিম নিয়ে পাড়া থেকে পাড়ায় হাঁক ডাক করে বেড়াতেন। দাম কম হলেও শিশুদের আনন্দ ছিল অফুরন্ত। সে সময়ের গ্রামের মানুষদের জীবনে আজকের বার্গার, রোল বা দামি আইসক্রিমের চেয়ে এই ফেরিওয়ালাদের সরল পণ্যই ছিল প্রিয়।তিনি আমাদের গ্রামীণ সমাজের এক পতীক। এই পেশা তার কাছে শুধুই জীবিকার মাধ্যম নয়, এটি তার জীবনধারা।

সমাজে যখন পরিবর্তনের ঝড় বইছে, তখনও তার পেশা এবং বিশ্বাসকে অটুট রেখে চলেছেন। তার মতো মানুষরা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পরিবর্তনের মধ্যেও আমাদের শেকড় ধরে রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আজকের দিনে যখন সবকিছু দ্রুত বদলে যাচ্ছে, তখন তার মতো মানুষরা আমাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের সাথে সংযোগ করিয়ে দেয়। তাদের জীবন এবং সংগ্রামের প্রতি সম্মান প্রদর্শন আমাদের দায়িত্ব। তার এই হাঁক শুধু রুটি-রুজির আহ্বান নয়, এক সংগ্রামী অস্তিত্বের আর্তনাদ। ওরা যেন জীবনের এক বাস্তব গল্প ।

back to top