কেউ গারো সম্প্রদায়ের। কেউ কোচ-বর্মণ। কারো হাতে দা-বটি। কারো হাতে বাঁশের ফালি। কেউ চটা কাটছে। কেউবা আবার করছে বুননের কাজ। তাদের নিপুণ হাতে ফুটে উঠেছে বাঁশের শৌখিন বাহারি পণ্যে। বলছিলাম টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের ফুলবাগ চালা ইউনিয়নের পীরগাছা বর্মন পল্লীর কথা।
পীররগাছা গ্রামটি মধুপুর শহর থেকে ১২-১৩ কিমি উত্তরে অবস্থিত। এ গ্রামের সিংহভাগ বসতি গারো কোচ সম্প্রদায়ের। কোচদের বেশি বসতি গ্রাম এটিই। এখানে তারা যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। তাদের নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি অনেকটাই হারিয়ে গেলেও এখনও টিকে আছে বাঁশের কাজ। কোচ নারীরা বাড়িতেই কুটির শিল্পের কাজ করে থাকে। নারী পুরুষেরা কৃষি ও বাঁশের কাজ তাদের প্রধান পেশা। কম বেশি সারা বছরই তারা বাঁশের কাজ করে থাকে। তাদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় হাত পাখা, কলমদানি, প্রিন্ট ট্রে, পেন হোল্ডার, গাছেকসহ নানা পণ্য তৈরি হচ্ছে।
পীরগাছা বর্মনপাড়ায় গিয়ে কোচ নারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের পাড়ায় কেউ কেউ গৃহস্থতালি, কেউ কেউ দিন মজুরি, কেউবা ক্ষুদ্র ব্যবসা, কেউ কেউ বাঁশের কাজও করে থাকে। এক সময় নিজের সংসারের কাজের পাশাপাশি সারা বছরই বাঁশের কাজ করত। এখন বাঁশের দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্লাস্টিকের পণ্যের চাহিদা ও দাপটে তাদের পণ্যের চাহিদা কমে যাচ্ছে। তাদের গ্রামের প্রায় ২শ’৫০ ঘরের নারীরাই কম বেশি বাঁশের কাজ করে থাকে বলে জানালেন সঞ্চিতা রানী। বিভিন্ন জেলার লোকজন এসে তাদের বাঁশের তৈরি কিনে নেয়। পুঁজির অভাবে তারা কুটির শিল্পের কাজ ঠিকমত করতে পারে না। এ জন্য বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে সংসার চালিয়ে থাকে। প্রতি সপ্তাহেই অনেক পরিবারের কিস্তি গুনতে হয়। বাঁশের কাজ করেও তাদের অভাব থেকেই যাচ্ছে। তারা সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দাবি জানান।
উদ্যোক্তা লিটন নকরেক (৪৭) বলেন, তার পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। অর্ডার আসলে তৈরি করে দেন। সে প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারে বলে জানান।
পীরগাছা গ্রামের বাঁশের কাজ করা নারী রাঁধা রানী (৪০) বলেন, তার বিয়ে হইছে ১৫ বছর আগে। সে তার বাবার বাড়িতে থাকতেই পরিবারের সাথে বাঁশের কাজ করতো। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসেও এ কাজই করছে।
সঞ্চিতা রানী (৩০) বলেন, দুই ছেলে মেয়ের সংসার। স্বামীর সংসারে সহযোগিতার জন্য সে বাঁশের কাজ করে থাকে। তার এক মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ে। ছেলে কেজিতে পড়ে। পড়াশোনা শিখে তারা যেন ভালো মানুষ হয় এমনটাই তার চাওয়া। বাঁশের কাজে উপার্জিত অর্থ স্বামীকে দিয়ে সহযোগিতা করে।
কোচ পল্লীর অহলা রানী (৪০) বলেন, সে ২০০৮ সালে কাজ শেখেন। দেখাদেখি তার কাজ শেখা। তালাই, পাখা, ধারি, গাছেক, ফুলদানিসহ বিভিন্ন শৌখিন পণ্য তৈরি করে। তার অর্জিত অর্থ দিয়ে সংসারের কাজ লাগান। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচসহ বিভিন্ন প্রয়োজন মেটান।
জলছত্র গ্রামের মুন্নি মৃ (৪০) জানান, তার স্বামী বাঁশ বেতের কাজ করে। বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা ভালোই। চাহিদা বেশি তবে দাম কম। পোষাতে পারে না। সংসার চলাতে কষ্ট হয়। সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন বলেন, মধুপুরের নারীরা বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্পের কাজ করে থাকে। তাদের তৈরিকৃত পণ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে তিনি বলেন, কুটির শিল্পে মধুপুরে কাজের সাথে জড়িতদের তালিকা উর্ধ্বতন অফিসে পাঠানো হয়েছে।
রোববার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কেউ গারো সম্প্রদায়ের। কেউ কোচ-বর্মণ। কারো হাতে দা-বটি। কারো হাতে বাঁশের ফালি। কেউ চটা কাটছে। কেউবা আবার করছে বুননের কাজ। তাদের নিপুণ হাতে ফুটে উঠেছে বাঁশের শৌখিন বাহারি পণ্যে। বলছিলাম টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের ফুলবাগ চালা ইউনিয়নের পীরগাছা বর্মন পল্লীর কথা।
পীররগাছা গ্রামটি মধুপুর শহর থেকে ১২-১৩ কিমি উত্তরে অবস্থিত। এ গ্রামের সিংহভাগ বসতি গারো কোচ সম্প্রদায়ের। কোচদের বেশি বসতি গ্রাম এটিই। এখানে তারা যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। তাদের নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি অনেকটাই হারিয়ে গেলেও এখনও টিকে আছে বাঁশের কাজ। কোচ নারীরা বাড়িতেই কুটির শিল্পের কাজ করে থাকে। নারী পুরুষেরা কৃষি ও বাঁশের কাজ তাদের প্রধান পেশা। কম বেশি সারা বছরই তারা বাঁশের কাজ করে থাকে। তাদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় হাত পাখা, কলমদানি, প্রিন্ট ট্রে, পেন হোল্ডার, গাছেকসহ নানা পণ্য তৈরি হচ্ছে।
পীরগাছা বর্মনপাড়ায় গিয়ে কোচ নারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের পাড়ায় কেউ কেউ গৃহস্থতালি, কেউ কেউ দিন মজুরি, কেউবা ক্ষুদ্র ব্যবসা, কেউ কেউ বাঁশের কাজও করে থাকে। এক সময় নিজের সংসারের কাজের পাশাপাশি সারা বছরই বাঁশের কাজ করত। এখন বাঁশের দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্লাস্টিকের পণ্যের চাহিদা ও দাপটে তাদের পণ্যের চাহিদা কমে যাচ্ছে। তাদের গ্রামের প্রায় ২শ’৫০ ঘরের নারীরাই কম বেশি বাঁশের কাজ করে থাকে বলে জানালেন সঞ্চিতা রানী। বিভিন্ন জেলার লোকজন এসে তাদের বাঁশের তৈরি কিনে নেয়। পুঁজির অভাবে তারা কুটির শিল্পের কাজ ঠিকমত করতে পারে না। এ জন্য বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে সংসার চালিয়ে থাকে। প্রতি সপ্তাহেই অনেক পরিবারের কিস্তি গুনতে হয়। বাঁশের কাজ করেও তাদের অভাব থেকেই যাচ্ছে। তারা সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দাবি জানান।
উদ্যোক্তা লিটন নকরেক (৪৭) বলেন, তার পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। অর্ডার আসলে তৈরি করে দেন। সে প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারে বলে জানান।
পীরগাছা গ্রামের বাঁশের কাজ করা নারী রাঁধা রানী (৪০) বলেন, তার বিয়ে হইছে ১৫ বছর আগে। সে তার বাবার বাড়িতে থাকতেই পরিবারের সাথে বাঁশের কাজ করতো। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসেও এ কাজই করছে।
সঞ্চিতা রানী (৩০) বলেন, দুই ছেলে মেয়ের সংসার। স্বামীর সংসারে সহযোগিতার জন্য সে বাঁশের কাজ করে থাকে। তার এক মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ে। ছেলে কেজিতে পড়ে। পড়াশোনা শিখে তারা যেন ভালো মানুষ হয় এমনটাই তার চাওয়া। বাঁশের কাজে উপার্জিত অর্থ স্বামীকে দিয়ে সহযোগিতা করে।
কোচ পল্লীর অহলা রানী (৪০) বলেন, সে ২০০৮ সালে কাজ শেখেন। দেখাদেখি তার কাজ শেখা। তালাই, পাখা, ধারি, গাছেক, ফুলদানিসহ বিভিন্ন শৌখিন পণ্য তৈরি করে। তার অর্জিত অর্থ দিয়ে সংসারের কাজ লাগান। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচসহ বিভিন্ন প্রয়োজন মেটান।
জলছত্র গ্রামের মুন্নি মৃ (৪০) জানান, তার স্বামী বাঁশ বেতের কাজ করে। বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা ভালোই। চাহিদা বেশি তবে দাম কম। পোষাতে পারে না। সংসার চলাতে কষ্ট হয়। সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন বলেন, মধুপুরের নারীরা বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্পের কাজ করে থাকে। তাদের তৈরিকৃত পণ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে তিনি বলেন, কুটির শিল্পে মধুপুরে কাজের সাথে জড়িতদের তালিকা উর্ধ্বতন অফিসে পাঠানো হয়েছে।