alt

গারো-কোচ নারীদের হাতে তৈরি বাঁশের শৌখিন পণ্য যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়

প্রতিনিধি, মধুপুর (টাঙ্গাইল) : রোববার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কেউ গারো সম্প্রদায়ের। কেউ কোচ-বর্মণ। কারো হাতে দা-বটি। কারো হাতে বাঁশের ফালি। কেউ চটা কাটছে। কেউবা আবার করছে বুননের কাজ। তাদের নিপুণ হাতে ফুটে উঠেছে বাঁশের শৌখিন বাহারি পণ্যে। বলছিলাম টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের ফুলবাগ চালা ইউনিয়নের পীরগাছা বর্মন পল্লীর কথা।

পীররগাছা গ্রামটি মধুপুর শহর থেকে ১২-১৩ কিমি উত্তরে অবস্থিত। এ গ্রামের সিংহভাগ বসতি গারো কোচ সম্প্রদায়ের। কোচদের বেশি বসতি গ্রাম এটিই। এখানে তারা যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। তাদের নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি অনেকটাই হারিয়ে গেলেও এখনও টিকে আছে বাঁশের কাজ। কোচ নারীরা বাড়িতেই কুটির শিল্পের কাজ করে থাকে। নারী পুরুষেরা কৃষি ও বাঁশের কাজ তাদের প্রধান পেশা। কম বেশি সারা বছরই তারা বাঁশের কাজ করে থাকে। তাদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় হাত পাখা, কলমদানি, প্রিন্ট ট্রে, পেন হোল্ডার, গাছেকসহ নানা পণ্য তৈরি হচ্ছে।

পীরগাছা বর্মনপাড়ায় গিয়ে কোচ নারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের পাড়ায় কেউ কেউ গৃহস্থতালি, কেউ কেউ দিন মজুরি, কেউবা ক্ষুদ্র ব্যবসা, কেউ কেউ বাঁশের কাজও করে থাকে। এক সময় নিজের সংসারের কাজের পাশাপাশি সারা বছরই বাঁশের কাজ করত। এখন বাঁশের দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্লাস্টিকের পণ্যের চাহিদা ও দাপটে তাদের পণ্যের চাহিদা কমে যাচ্ছে। তাদের গ্রামের প্রায় ২শ’৫০ ঘরের নারীরাই কম বেশি বাঁশের কাজ করে থাকে বলে জানালেন সঞ্চিতা রানী। বিভিন্ন জেলার লোকজন এসে তাদের বাঁশের তৈরি কিনে নেয়। পুঁজির অভাবে তারা কুটির শিল্পের কাজ ঠিকমত করতে পারে না। এ জন্য বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে সংসার চালিয়ে থাকে। প্রতি সপ্তাহেই অনেক পরিবারের কিস্তি গুনতে হয়। বাঁশের কাজ করেও তাদের অভাব থেকেই যাচ্ছে। তারা সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দাবি জানান।

উদ্যোক্তা লিটন নকরেক (৪৭) বলেন, তার পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। অর্ডার আসলে তৈরি করে দেন। সে প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারে বলে জানান।

পীরগাছা গ্রামের বাঁশের কাজ করা নারী রাঁধা রানী (৪০) বলেন, তার বিয়ে হইছে ১৫ বছর আগে। সে তার বাবার বাড়িতে থাকতেই পরিবারের সাথে বাঁশের কাজ করতো। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসেও এ কাজই করছে।

সঞ্চিতা রানী (৩০) বলেন, দুই ছেলে মেয়ের সংসার। স্বামীর সংসারে সহযোগিতার জন্য সে বাঁশের কাজ করে থাকে। তার এক মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ে। ছেলে কেজিতে পড়ে। পড়াশোনা শিখে তারা যেন ভালো মানুষ হয় এমনটাই তার চাওয়া। বাঁশের কাজে উপার্জিত অর্থ স্বামীকে দিয়ে সহযোগিতা করে।

কোচ পল্লীর অহলা রানী (৪০) বলেন, সে ২০০৮ সালে কাজ শেখেন। দেখাদেখি তার কাজ শেখা। তালাই, পাখা, ধারি, গাছেক, ফুলদানিসহ বিভিন্ন শৌখিন পণ্য তৈরি করে। তার অর্জিত অর্থ দিয়ে সংসারের কাজ লাগান। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচসহ বিভিন্ন প্রয়োজন মেটান।

জলছত্র গ্রামের মুন্নি মৃ (৪০) জানান, তার স্বামী বাঁশ বেতের কাজ করে। বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা ভালোই। চাহিদা বেশি তবে দাম কম। পোষাতে পারে না। সংসার চলাতে কষ্ট হয়। সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান।

মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন বলেন, মধুপুরের নারীরা বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্পের কাজ করে থাকে। তাদের তৈরিকৃত পণ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে তিনি বলেন, কুটির শিল্পে মধুপুরে কাজের সাথে জড়িতদের তালিকা উর্ধ্বতন অফিসে পাঠানো হয়েছে।

ছবি

কবরে নামানোর আগমুহূর্তে জেগে উঠলো শিশু!

ছবি

ডেঙ্গু: একদিনে সর্বোচ্চ ৬৮৫ জন হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু ৩

ছবি

ঐকমত্য কমিশনে ‘নারী’ সিদ্ধান্তে পরিবর্তন দাবি অধিকারকর্মীদের

ছবি

অবাধে বালু উত্তোলন: ভাঙনের ঝুঁকিতে সুন্দরবন ও উপকূলীয় বাঁধ

ছবি

সুন্দরবনের ডিমের চরে নিখোঁজ কিশোর পর্যটকের মরদেহ ৩০ ঘন্টা পর উদ্ধার

ছবি

উলিপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভেঙে জায়গা দখলের পায়তারা

ছবি

চান্দিনায় খাল খনন ও রিটার্নিং ওয়াল প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা লুট

ছবি

ডিমলায় অনুমোদনহীন ঝুঁকিপূর্ণ পেট্রোল পাম্পের ছড়াছড়ি

ছবি

মহেশপুর সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক

ছবি

কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ

ছবি

বনভূমি উদ্ধার করে বৃক্ষরোপণ

ছবি

বেতাগীতে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমে দায়সারাভাব!

ছবি

পীর বলুহ দেওয়ানের মেলা থেকে ৫ মাদকসেবী ও জুয়াড়ি আটক

ছবি

বেগমগঞ্জে বিলুপ্ত প্রায় ৪২৫ কচ্ছপ উদ্ধার

ছবি

ঝালকাঠিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আমড়া চাষ

ছবি

কুমিল্লায় চাকুরির প্রলোভনে নেয়া ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতে হত্যা করা হয় আমিনুলকে

ছবি

পূর্বধলায় ট্রেনে কাটা পড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু

ছবি

সুন্দরবনে ভ্রমণে এসে সাগরে কিশোর নিখোঁজ

ছবি

দেশকে সোনার খনিতে রূপান্তর সম্ভব : বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

১২০ টাকায় কনস্টেবলে চাকরি পেলেন ১৭ তরুণ-তরুণীর

ছবি

চার বিভাগে ভারী বৃষ্টি হতে পারে

ছবি

ডেঙ্গু: আক্রান্ত ৩৭ হাজার ছাড়িয়েছে

ছবি

মুলাদিতে জমি নিয়ে বিরোধে এক কৃষককে হত্যা, আহত দু’জন

ছবি

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে ছাড়পত্র পেল আরও এক শিক্ষার্থী

ছবি

চার দফা দাবিতে ময়মনসিংহে সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারীদের মানববন্ধন

ছবি

‘আমার নাম ভাঙিয়ে মামলা–বাণিজ্য চলছে’: সাইফুদ্দীনের অভিযোগ

ছবি

প্রধান বিচারপতি ব্রাজিলে, আলোচনায় দু’দেশের বিচার ব্যবস্থা

ছবি

সৈয়দপুরে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা

ছবি

সাংবাদিক শফিকুর রহমানের জানাজা সম্পন্ন

ছবি

অটোচালক হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

নোয়াখালীতে সাম্যবাদী আন্দোলনের মানববন্ধন

ছবি

বাগাতিপাড়ার গুণী শিক্ষক স্বপ্না রানী ও আয়েশা আক্তার

ছবি

রাজশাহীর অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই

ছবি

জিল বাংলায় আখ চাষীদের বিক্ষোভ

ছবি

বেতাগীতে সুপারি বাম্পার ফলন দাম বিগত বছরের তুলনায় কম

ছবি

হিলিতে গ্রামীণ সড়কে নিম্নমানের কাজ, উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং

tab

news » bangladesh

গারো-কোচ নারীদের হাতে তৈরি বাঁশের শৌখিন পণ্য যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়

প্রতিনিধি, মধুপুর (টাঙ্গাইল)

রোববার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কেউ গারো সম্প্রদায়ের। কেউ কোচ-বর্মণ। কারো হাতে দা-বটি। কারো হাতে বাঁশের ফালি। কেউ চটা কাটছে। কেউবা আবার করছে বুননের কাজ। তাদের নিপুণ হাতে ফুটে উঠেছে বাঁশের শৌখিন বাহারি পণ্যে। বলছিলাম টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের ফুলবাগ চালা ইউনিয়নের পীরগাছা বর্মন পল্লীর কথা।

পীররগাছা গ্রামটি মধুপুর শহর থেকে ১২-১৩ কিমি উত্তরে অবস্থিত। এ গ্রামের সিংহভাগ বসতি গারো কোচ সম্প্রদায়ের। কোচদের বেশি বসতি গ্রাম এটিই। এখানে তারা যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। তাদের নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি অনেকটাই হারিয়ে গেলেও এখনও টিকে আছে বাঁশের কাজ। কোচ নারীরা বাড়িতেই কুটির শিল্পের কাজ করে থাকে। নারী পুরুষেরা কৃষি ও বাঁশের কাজ তাদের প্রধান পেশা। কম বেশি সারা বছরই তারা বাঁশের কাজ করে থাকে। তাদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় হাত পাখা, কলমদানি, প্রিন্ট ট্রে, পেন হোল্ডার, গাছেকসহ নানা পণ্য তৈরি হচ্ছে।

পীরগাছা বর্মনপাড়ায় গিয়ে কোচ নারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের পাড়ায় কেউ কেউ গৃহস্থতালি, কেউ কেউ দিন মজুরি, কেউবা ক্ষুদ্র ব্যবসা, কেউ কেউ বাঁশের কাজও করে থাকে। এক সময় নিজের সংসারের কাজের পাশাপাশি সারা বছরই বাঁশের কাজ করত। এখন বাঁশের দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্লাস্টিকের পণ্যের চাহিদা ও দাপটে তাদের পণ্যের চাহিদা কমে যাচ্ছে। তাদের গ্রামের প্রায় ২শ’৫০ ঘরের নারীরাই কম বেশি বাঁশের কাজ করে থাকে বলে জানালেন সঞ্চিতা রানী। বিভিন্ন জেলার লোকজন এসে তাদের বাঁশের তৈরি কিনে নেয়। পুঁজির অভাবে তারা কুটির শিল্পের কাজ ঠিকমত করতে পারে না। এ জন্য বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে সংসার চালিয়ে থাকে। প্রতি সপ্তাহেই অনেক পরিবারের কিস্তি গুনতে হয়। বাঁশের কাজ করেও তাদের অভাব থেকেই যাচ্ছে। তারা সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দাবি জানান।

উদ্যোক্তা লিটন নকরেক (৪৭) বলেন, তার পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। অর্ডার আসলে তৈরি করে দেন। সে প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারে বলে জানান।

পীরগাছা গ্রামের বাঁশের কাজ করা নারী রাঁধা রানী (৪০) বলেন, তার বিয়ে হইছে ১৫ বছর আগে। সে তার বাবার বাড়িতে থাকতেই পরিবারের সাথে বাঁশের কাজ করতো। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসেও এ কাজই করছে।

সঞ্চিতা রানী (৩০) বলেন, দুই ছেলে মেয়ের সংসার। স্বামীর সংসারে সহযোগিতার জন্য সে বাঁশের কাজ করে থাকে। তার এক মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ে। ছেলে কেজিতে পড়ে। পড়াশোনা শিখে তারা যেন ভালো মানুষ হয় এমনটাই তার চাওয়া। বাঁশের কাজে উপার্জিত অর্থ স্বামীকে দিয়ে সহযোগিতা করে।

কোচ পল্লীর অহলা রানী (৪০) বলেন, সে ২০০৮ সালে কাজ শেখেন। দেখাদেখি তার কাজ শেখা। তালাই, পাখা, ধারি, গাছেক, ফুলদানিসহ বিভিন্ন শৌখিন পণ্য তৈরি করে। তার অর্জিত অর্থ দিয়ে সংসারের কাজ লাগান। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচসহ বিভিন্ন প্রয়োজন মেটান।

জলছত্র গ্রামের মুন্নি মৃ (৪০) জানান, তার স্বামী বাঁশ বেতের কাজ করে। বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা ভালোই। চাহিদা বেশি তবে দাম কম। পোষাতে পারে না। সংসার চলাতে কষ্ট হয়। সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান।

মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন বলেন, মধুপুরের নারীরা বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্পের কাজ করে থাকে। তাদের তৈরিকৃত পণ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে তিনি বলেন, কুটির শিল্পে মধুপুরে কাজের সাথে জড়িতদের তালিকা উর্ধ্বতন অফিসে পাঠানো হয়েছে।

back to top