সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শোষণ প্রতিরোধে সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা বলেছেন, শিশুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের ওপরই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। নিরাপদ পরিবেশের অভাবে শিশুদের সার্বিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় যা তাদের জীবনে স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করে। শুধু আইন দিয়ে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শোষণ রোধ করা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তারা। রোববার,(১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজধানীর আজিমুর রহমান মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে গার্মেন্ট শ্রমিকদের শিশুদের জন্য কমিউনিটিভিত্তিক শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। উন্নয়ন সংস্থা ‘টেরে ডেস হোমস নেদারল্যান্ডস’ (টিডিএইচ-এনএল), ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (বিটিএস)’ ও ‘ভিলেজ অ্যাডুকেশন রিসোর্স সেন্টার (ভার্ক)’ যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সংলাপে ধারণাপত্র উপস্থাপন করে টিডিএইচ-এনএলর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নূরুল কবির বলেন, সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এসডিজিতে শিশুদের উন্নয়ন ও শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং সেই লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ ও শিশু আইন-২০১৩ প্রণীত হয়েছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, শুধু আইন দিয়ে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শোষণ রোধ করা সম্ভব নয়, এজন্য সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগ অপরিহার্য। তিনি গার্মেন্টস শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য কমিউনিটিভিত্তিক, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিশু সুরক্ষা কাঠামো গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় না। তিনি বলেন, শিশু নির্যাতন রোধে বিদ্যমান আইনগুলো সম্পর্কে সবাই সচেতন হলে প্রতিরোধ সহজ হবে এবং সরকারের একার পক্ষে এটি করা সম্ভব নয়, সবার অংশগ্রহণ জরুরি।
নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ব্যবস্থাপক রইসুল ইসলাম জানান, তাদের হেল্পলাইন ‘১০৯’-এ প্রতিদিন ৬ হাজারের বেশি অভিযোগ আসে, যার বেশিরভাগই পারিবারিক সহিংসতা, যৌন হয়রানি ও বাল্যবিয়েসংক্রান্ত। তিনি আরও বলেন, সরকার নির্যাতিত নারী ও শিশুদের সহায়তায় জেলা পর্যায়ের সরকারি মেডিকেলগুলোতে ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) স্থাপন করেছে। বর্তমানে ৬৭ টি ওসিসির মাধ্যমে কার্য পরিচালনা করা হচ্ছে যা ৯৫টিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিটিআরসির উপ-পরিচালক তাইফুর রহমান সাইবার জগতের ঝুঁকি তুলে ধরে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণার মাধ্যমে শিশু অপহরণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। তাই শিশুদের জন্য সাইবার সচেতনতা জরুরি।
ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের শ্রমিকদের শিশুদের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। বিকেএমইএ-এর একজন প্রতিনিধি জানান, ৪০ জন কর্মী রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানে একটি মাতৃকেন্দ্র থাকা বাধ্যতামূলক।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জোন অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশনগুলোর শিশুদের জন্য কাজ করার আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে তবে এনজিওগুলো এক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা দিতে পারে। সংলাপে ডিসিসির এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে সিটি করপোরেশনগুলোতে কোনো প্রতিনিধি নেই। আলোচনায় ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রতিনিধিদের এই কাজে আরও সক্রিয় করার ওপর জোর দেয়া হয়।
আয়োজক সংস্থার পক্ষে টিডিএইচ-এনএল বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার নজরুল ইসলাম জানান, তারা ঢাকা ও সাভারে ১৬টি আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার পরিচালনা করছে, যেখানে পাঁচ শতাধিক প্রান্তিক শিশু সেবা পাচ্ছে, যাদের অধিকাংশই কারখানা শ্রমিকের সন্তান। তিনি শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিডিএইচ-এনএল বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার নজরুল ইসলাম। বিটিএসর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সংলাপে নেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) কাউন্সিলর পারভীন আক্তার, ডিএনসিসির কাউন্সিলর মেহেরুন নেসা, বিটিএসর নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা, শিশু অধিকার ফোরামের সহ-সভাপতি খায়রুজ্জামান কামাল, পুলিশ কর্মকর্তা নাঈমা আক্তার, ভার্কের উপ-নির্বাহী পরিচালক মাসুদ হাসান প্রমূখ।
রোববার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শোষণ প্রতিরোধে সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা বলেছেন, শিশুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের ওপরই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। নিরাপদ পরিবেশের অভাবে শিশুদের সার্বিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় যা তাদের জীবনে স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করে। শুধু আইন দিয়ে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শোষণ রোধ করা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তারা। রোববার,(১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজধানীর আজিমুর রহমান মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে গার্মেন্ট শ্রমিকদের শিশুদের জন্য কমিউনিটিভিত্তিক শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। উন্নয়ন সংস্থা ‘টেরে ডেস হোমস নেদারল্যান্ডস’ (টিডিএইচ-এনএল), ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (বিটিএস)’ ও ‘ভিলেজ অ্যাডুকেশন রিসোর্স সেন্টার (ভার্ক)’ যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সংলাপে ধারণাপত্র উপস্থাপন করে টিডিএইচ-এনএলর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নূরুল কবির বলেন, সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এসডিজিতে শিশুদের উন্নয়ন ও শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং সেই লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ ও শিশু আইন-২০১৩ প্রণীত হয়েছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, শুধু আইন দিয়ে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শোষণ রোধ করা সম্ভব নয়, এজন্য সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগ অপরিহার্য। তিনি গার্মেন্টস শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য কমিউনিটিভিত্তিক, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিশু সুরক্ষা কাঠামো গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় না। তিনি বলেন, শিশু নির্যাতন রোধে বিদ্যমান আইনগুলো সম্পর্কে সবাই সচেতন হলে প্রতিরোধ সহজ হবে এবং সরকারের একার পক্ষে এটি করা সম্ভব নয়, সবার অংশগ্রহণ জরুরি।
নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ব্যবস্থাপক রইসুল ইসলাম জানান, তাদের হেল্পলাইন ‘১০৯’-এ প্রতিদিন ৬ হাজারের বেশি অভিযোগ আসে, যার বেশিরভাগই পারিবারিক সহিংসতা, যৌন হয়রানি ও বাল্যবিয়েসংক্রান্ত। তিনি আরও বলেন, সরকার নির্যাতিত নারী ও শিশুদের সহায়তায় জেলা পর্যায়ের সরকারি মেডিকেলগুলোতে ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) স্থাপন করেছে। বর্তমানে ৬৭ টি ওসিসির মাধ্যমে কার্য পরিচালনা করা হচ্ছে যা ৯৫টিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিটিআরসির উপ-পরিচালক তাইফুর রহমান সাইবার জগতের ঝুঁকি তুলে ধরে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণার মাধ্যমে শিশু অপহরণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। তাই শিশুদের জন্য সাইবার সচেতনতা জরুরি।
ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের শ্রমিকদের শিশুদের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। বিকেএমইএ-এর একজন প্রতিনিধি জানান, ৪০ জন কর্মী রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানে একটি মাতৃকেন্দ্র থাকা বাধ্যতামূলক।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জোন অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশনগুলোর শিশুদের জন্য কাজ করার আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে তবে এনজিওগুলো এক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা দিতে পারে। সংলাপে ডিসিসির এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে সিটি করপোরেশনগুলোতে কোনো প্রতিনিধি নেই। আলোচনায় ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রতিনিধিদের এই কাজে আরও সক্রিয় করার ওপর জোর দেয়া হয়।
আয়োজক সংস্থার পক্ষে টিডিএইচ-এনএল বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার নজরুল ইসলাম জানান, তারা ঢাকা ও সাভারে ১৬টি আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার পরিচালনা করছে, যেখানে পাঁচ শতাধিক প্রান্তিক শিশু সেবা পাচ্ছে, যাদের অধিকাংশই কারখানা শ্রমিকের সন্তান। তিনি শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিডিএইচ-এনএল বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার নজরুল ইসলাম। বিটিএসর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সংলাপে নেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) কাউন্সিলর পারভীন আক্তার, ডিএনসিসির কাউন্সিলর মেহেরুন নেসা, বিটিএসর নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা, শিশু অধিকার ফোরামের সহ-সভাপতি খায়রুজ্জামান কামাল, পুলিশ কর্মকর্তা নাঈমা আক্তার, ভার্কের উপ-নির্বাহী পরিচালক মাসুদ হাসান প্রমূখ।