চান্দিনা (কুমিল্লা) : জলাশয়ে মাছ না থাকায় ভেসাল জাল পানিতে না ফেলে এভাবে টানিয়ে রাখে -সংবাদ
বর্ষার এখন ভরা যৌবন। আষাঢ়ের মাঝামাঝি থেকে পুরো শ্রাবণ মাস জুড়ে টানা বৃষ্টিতে পানিতে টইটুম্বুর খাল-বিল, মাঠ-ঘাট। বর্ষা আসলেই দেশীয় মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়তো মাছ শিকারীরা। বর্তমানে সেই জৌলুস আর নেই। কুমিল্লার চান্দিনায় বর্ষারভরা মৌসুমেও মুক্ত জলাশয়ে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। খাল-বিলে মাছ শিকারের অন্যতম ফাঁদ ভেসাল জালও পানিতে না ফেলে টানিয়ে রাখতে দেখা গেছে।
ইংরেজী অক্ষর ‘ভি’ আকৃতির এ জাল সাধারণত খাল ও বিলে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যা পানির ওপর ভেসে থাকা এক ধরনের বড়জাল, যেটি একটি নির্দিষ্ট জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং পানির গভীরতা বুঝে পানির তলদেশ পর্যন্ত ডুবিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে জালটিকে হাত দিয়ে টেনে তোলা হয়, আর তাতেই উঠে আসে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। বর্তমানে এসব দেশীয় প্রজাতির অধিকাংশ মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। যে কারণে বর্ষার ভরা মৌসুমেও মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। ফাঁদ পেতে নিরাশ হয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছে নিম্নবিত্ত শ্রেণির ওই মাছ শিকারিরা। পুরো মৌসুমে মাছ শিকার করে ভেসাল জালের খরচও উঠছে না তাদের!
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- এক সময়ে বর্ষা মৌসুমে খাল-বিলে প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠা বাইম, বুতুম, মেনি, ট্যাংরা, পুঁটি, মলা, শিং, কৈ, টাকি, খলিশা, চিংড়ি, শোল মাছের মতো অসংখ্য দেশীয় প্রজাতির মাছ হরহামেশায়ই দেখে মিলতো। বর্ষা মৌসুম থেকে শুরু করে হেমন্তের মাঝা মাঝি পর্যন্ত মুক্ত জলাশয়ে মাছ শিকারে ব্যস্ত সময় পার করতো গ্রামের নিম্নবিত্ত অধিকাংশ মানুষ। তারা কেউ চাঁই পেতে, কেউ ভেসাল জাল, আবার কুনি ও ঠেলা জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করতো। তার মধ্যে মাছ শিকারে ভেসাল জাল অন্যতম।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মাছ শিকারের আশায় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বিভিন্ন খাল বিলে শত শত ভেসাল জাল পেতে বসে শিকারীরা। কিন্তু তাদের ওই আশায় গুড়ে বালি! ভেসাল জাল দিয়ে এক সময় রাত জেগে থাকা মাছ শিকারিরা এখন দিনের পর দিন তার জাল পানিতে ডুবাচ্ছেনা! এতে চরম আশাহত তারা।
চান্দিনার উপজেলার জামিরাপাড়া গ্রামের ভেসাল জালের মাছ শিকারী মোবারক হোসেন জানান, আমি প্রায় ৪০ বছর যাবৎ ভেল (ভেসালজাল) দিয়ে মাছ ধরি। আগে দিন-রাত জাল টেনে যে মাছ পেতাম তা সকাল ও বিকাল বিক্রি করতাম। ওই টাকায় সংসার চলতো। এখন আমাদের খাবারের মাছও পাইনা।
মাধাইয়া ইউনিয়নের কলাগাঁও গ্রামের আবু তাহের জানান, একটি ভেল জাল পাততে জাল কেনা, বাঁশ কেনা ও শ্রমিকের বেতন দিয়ে যে টাকা খরচ হয়, ওই ভেল দিয়ে এখন সারা বছর মাছ ধওে জালের টাকাও উঠে না।
তুলাতলী গ্রামের হাসেম মিয়া জানান, জাল তুলে রাখবো না তো কি করবো ? একদিন ধান কাটলে ৭শ টাকা পাই আর সারা দিন-রাত জাল টেনে খাবারের মাছ পাইনা। তাই দিনে জালটা নিয়ে রাখি আর সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত অবসর সময়ে কয়েকটা টান দেই। আবার কখনও দেইও না।
চান্দিনা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার প্রিয়াংকা সাহা জানান, দিনের পর দিন অবৈধভাবে খাল দখল, খালের নাব্যতা সংকট, খালের মাঝে অবৈধ বাঁধ নির্মাণে পানি প্রবাহ না থাকায় এবং ফসলি মাঠে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ওষুধের প্রভাবে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। আর জলাশয়গুলোতে দেশীয় মাছ না থাকায় বর্ষার ভরা মৌসুমেও মাছ শিকার করতে পারছেনা মাছ শিকারীরা।
চান্দিনা (কুমিল্লা) : জলাশয়ে মাছ না থাকায় ভেসাল জাল পানিতে না ফেলে এভাবে টানিয়ে রাখে -সংবাদ
সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বর্ষার এখন ভরা যৌবন। আষাঢ়ের মাঝামাঝি থেকে পুরো শ্রাবণ মাস জুড়ে টানা বৃষ্টিতে পানিতে টইটুম্বুর খাল-বিল, মাঠ-ঘাট। বর্ষা আসলেই দেশীয় মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়তো মাছ শিকারীরা। বর্তমানে সেই জৌলুস আর নেই। কুমিল্লার চান্দিনায় বর্ষারভরা মৌসুমেও মুক্ত জলাশয়ে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। খাল-বিলে মাছ শিকারের অন্যতম ফাঁদ ভেসাল জালও পানিতে না ফেলে টানিয়ে রাখতে দেখা গেছে।
ইংরেজী অক্ষর ‘ভি’ আকৃতির এ জাল সাধারণত খাল ও বিলে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যা পানির ওপর ভেসে থাকা এক ধরনের বড়জাল, যেটি একটি নির্দিষ্ট জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং পানির গভীরতা বুঝে পানির তলদেশ পর্যন্ত ডুবিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে জালটিকে হাত দিয়ে টেনে তোলা হয়, আর তাতেই উঠে আসে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। বর্তমানে এসব দেশীয় প্রজাতির অধিকাংশ মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। যে কারণে বর্ষার ভরা মৌসুমেও মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। ফাঁদ পেতে নিরাশ হয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছে নিম্নবিত্ত শ্রেণির ওই মাছ শিকারিরা। পুরো মৌসুমে মাছ শিকার করে ভেসাল জালের খরচও উঠছে না তাদের!
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- এক সময়ে বর্ষা মৌসুমে খাল-বিলে প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠা বাইম, বুতুম, মেনি, ট্যাংরা, পুঁটি, মলা, শিং, কৈ, টাকি, খলিশা, চিংড়ি, শোল মাছের মতো অসংখ্য দেশীয় প্রজাতির মাছ হরহামেশায়ই দেখে মিলতো। বর্ষা মৌসুম থেকে শুরু করে হেমন্তের মাঝা মাঝি পর্যন্ত মুক্ত জলাশয়ে মাছ শিকারে ব্যস্ত সময় পার করতো গ্রামের নিম্নবিত্ত অধিকাংশ মানুষ। তারা কেউ চাঁই পেতে, কেউ ভেসাল জাল, আবার কুনি ও ঠেলা জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করতো। তার মধ্যে মাছ শিকারে ভেসাল জাল অন্যতম।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মাছ শিকারের আশায় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বিভিন্ন খাল বিলে শত শত ভেসাল জাল পেতে বসে শিকারীরা। কিন্তু তাদের ওই আশায় গুড়ে বালি! ভেসাল জাল দিয়ে এক সময় রাত জেগে থাকা মাছ শিকারিরা এখন দিনের পর দিন তার জাল পানিতে ডুবাচ্ছেনা! এতে চরম আশাহত তারা।
চান্দিনার উপজেলার জামিরাপাড়া গ্রামের ভেসাল জালের মাছ শিকারী মোবারক হোসেন জানান, আমি প্রায় ৪০ বছর যাবৎ ভেল (ভেসালজাল) দিয়ে মাছ ধরি। আগে দিন-রাত জাল টেনে যে মাছ পেতাম তা সকাল ও বিকাল বিক্রি করতাম। ওই টাকায় সংসার চলতো। এখন আমাদের খাবারের মাছও পাইনা।
মাধাইয়া ইউনিয়নের কলাগাঁও গ্রামের আবু তাহের জানান, একটি ভেল জাল পাততে জাল কেনা, বাঁশ কেনা ও শ্রমিকের বেতন দিয়ে যে টাকা খরচ হয়, ওই ভেল দিয়ে এখন সারা বছর মাছ ধওে জালের টাকাও উঠে না।
তুলাতলী গ্রামের হাসেম মিয়া জানান, জাল তুলে রাখবো না তো কি করবো ? একদিন ধান কাটলে ৭শ টাকা পাই আর সারা দিন-রাত জাল টেনে খাবারের মাছ পাইনা। তাই দিনে জালটা নিয়ে রাখি আর সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত অবসর সময়ে কয়েকটা টান দেই। আবার কখনও দেইও না।
চান্দিনা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার প্রিয়াংকা সাহা জানান, দিনের পর দিন অবৈধভাবে খাল দখল, খালের নাব্যতা সংকট, খালের মাঝে অবৈধ বাঁধ নির্মাণে পানি প্রবাহ না থাকায় এবং ফসলি মাঠে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ওষুধের প্রভাবে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। আর জলাশয়গুলোতে দেশীয় মাছ না থাকায় বর্ষার ভরা মৌসুমেও মাছ শিকার করতে পারছেনা মাছ শিকারীরা।