বেতাগী (বরগুনা) : উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স -সংবাদ
বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবলের তীব্র সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ২৮ জন চিকিৎসকের সরকারি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। ২৩টি পদই শূন্য থাকায় উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ক্ষেত্রে; জুনিয়র কনসালটেন্টের ১০টি পদের একটিতেও কোনো চিকিৎসক না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি একটি নামসর্বস্ব হাসপাতালে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বেতাগী উপজেলার দেড় লাখ অধ্যুষিত জনসংখ্যা। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক।
শুধু পদই শূন্য নয়, কর্মরতদের নিয়েও রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। নথি বলছে, একজন মেডিক্যাল অফিসার ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে এবং একজন প্যাথোলজিস্ট চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যোগদানের পর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সত্ত্বেও তাঁদের দীর্ঘ অনুপস্থিতি নিয়ে কোনো কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্যাথোলজিস্ট না থাকায় হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রায় বন্ধ। ফলে সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়ে ছুটতে হচ্ছে বাইরের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে, যেখানে কয়েকগুণ বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে তাদের। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে জরুরি সেবাও মুখ থুবড়ে পড়েছে। মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও শিশুসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০টি বিশেষজ্ঞ পদই শূন্য। সার্জন না থাকায় অ্যানেস্থেটিস্ট কর্মরত থাকলেও হাসপাতালে বড় কোনো অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রসূতি মা কিংবা দুর্ঘটনায় আহত মুমূর্ষু রোগীদের প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরের বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে পাঠানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকছে না। এই সংকট শুধু চিকিৎসকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। নার্স, মিডওয়াইফ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর অর্ধেকের বেশি পদ শূন্য থাকায় হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবে ওয়ার্ড ও শৌচাগারগুলোর অবস্থা শোচনীয়। নোংরা ও দুর্গন্ধময় পরিবেশে রোগীদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। শয্যার অভাবে অনেককেই মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সর্দি-জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসা আব্দুল জব্বার নামের এক ভুক্তভোগী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বাবাকে নিয়ে সকাল ৯টায় এসেছি, দুপুর ১২টা বাজে। এখনো ডাক্তারের দেখা পাইনি। শুনলাম আজ একজন মাত্র ডাক্তার।
সামান্য পরীক্ষার জন্যও বাইরে যেতে হয়। এখানে শুধু বিল্ডিংটাই আছে, সেবার কিছুই নেই।
এ বিষয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোবাশ্বির আহমেদ বলেন, চরম জনবল সংকটের কারণে একজনকে টানা ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ডিউটি করতে হচ্ছে, যা অমানবিক ও ঝুঁকিপূর্ণ। দুজন নারী চিকিৎসককে এখানে নিয়োগ দেওয়া হলেও তাঁরা কর্মস্থলে যোগ দেননি। তাঁদের দেওয়া ফোন নম্বরও ভুল পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় হৃদরোগ বা ডেঙ্গুর মতো জটিল রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ৫০ শয্যার অনুমোদন থাকলেও ভবন নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ থাকায় চালু রাখা সম্ভব হয়েছে মাত্র ২৭টি শয্যা, যার ফলে রোগীদের প্রায়ই মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়।
এই সার্বিক অব্যবস্থাপনা নিয়ে জানতে চাইলে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সায়্যিদ আমারুল ইসলাম সরাসরি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
একপর্যায়ে অনুরোধ করার পর ডা: সায়্যিদ আমারুল ইসলাম বলেন, আমার হাসপাতালে ইনফরমেশন কর্মকর্তা আছেন, আপনি উনার সাথে কথা বলেন। উনার যেটা বক্তব্য আমারও একই ধরণের বক্তব্য।
এ বিষয় বেতাগী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিপুল সিকদার বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল সংকটের বিষয়টি আমরা অবগত আছি। শূন্য পদে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য আমরা জেলা পর্যায়সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। সীমিত জনবল নিয়েও যাতে রোগীরা সর্বোচ্চ সেবা পান, সে বিষয়টি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং দ্রুত এই সংকট নিরসনে আমরা আশাবাদী।
বেতাগী (বরগুনা) : উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবলের তীব্র সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ২৮ জন চিকিৎসকের সরকারি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। ২৩টি পদই শূন্য থাকায় উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ক্ষেত্রে; জুনিয়র কনসালটেন্টের ১০টি পদের একটিতেও কোনো চিকিৎসক না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি একটি নামসর্বস্ব হাসপাতালে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বেতাগী উপজেলার দেড় লাখ অধ্যুষিত জনসংখ্যা। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক।
শুধু পদই শূন্য নয়, কর্মরতদের নিয়েও রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। নথি বলছে, একজন মেডিক্যাল অফিসার ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে এবং একজন প্যাথোলজিস্ট চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যোগদানের পর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সত্ত্বেও তাঁদের দীর্ঘ অনুপস্থিতি নিয়ে কোনো কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্যাথোলজিস্ট না থাকায় হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রায় বন্ধ। ফলে সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়ে ছুটতে হচ্ছে বাইরের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে, যেখানে কয়েকগুণ বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে তাদের। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে জরুরি সেবাও মুখ থুবড়ে পড়েছে। মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও শিশুসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০টি বিশেষজ্ঞ পদই শূন্য। সার্জন না থাকায় অ্যানেস্থেটিস্ট কর্মরত থাকলেও হাসপাতালে বড় কোনো অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রসূতি মা কিংবা দুর্ঘটনায় আহত মুমূর্ষু রোগীদের প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরের বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে পাঠানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকছে না। এই সংকট শুধু চিকিৎসকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। নার্স, মিডওয়াইফ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর অর্ধেকের বেশি পদ শূন্য থাকায় হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবে ওয়ার্ড ও শৌচাগারগুলোর অবস্থা শোচনীয়। নোংরা ও দুর্গন্ধময় পরিবেশে রোগীদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। শয্যার অভাবে অনেককেই মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সর্দি-জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসা আব্দুল জব্বার নামের এক ভুক্তভোগী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বাবাকে নিয়ে সকাল ৯টায় এসেছি, দুপুর ১২টা বাজে। এখনো ডাক্তারের দেখা পাইনি। শুনলাম আজ একজন মাত্র ডাক্তার।
সামান্য পরীক্ষার জন্যও বাইরে যেতে হয়। এখানে শুধু বিল্ডিংটাই আছে, সেবার কিছুই নেই।
এ বিষয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোবাশ্বির আহমেদ বলেন, চরম জনবল সংকটের কারণে একজনকে টানা ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ডিউটি করতে হচ্ছে, যা অমানবিক ও ঝুঁকিপূর্ণ। দুজন নারী চিকিৎসককে এখানে নিয়োগ দেওয়া হলেও তাঁরা কর্মস্থলে যোগ দেননি। তাঁদের দেওয়া ফোন নম্বরও ভুল পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় হৃদরোগ বা ডেঙ্গুর মতো জটিল রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ৫০ শয্যার অনুমোদন থাকলেও ভবন নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ থাকায় চালু রাখা সম্ভব হয়েছে মাত্র ২৭টি শয্যা, যার ফলে রোগীদের প্রায়ই মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়।
এই সার্বিক অব্যবস্থাপনা নিয়ে জানতে চাইলে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সায়্যিদ আমারুল ইসলাম সরাসরি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
একপর্যায়ে অনুরোধ করার পর ডা: সায়্যিদ আমারুল ইসলাম বলেন, আমার হাসপাতালে ইনফরমেশন কর্মকর্তা আছেন, আপনি উনার সাথে কথা বলেন। উনার যেটা বক্তব্য আমারও একই ধরণের বক্তব্য।
এ বিষয় বেতাগী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিপুল সিকদার বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল সংকটের বিষয়টি আমরা অবগত আছি। শূন্য পদে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য আমরা জেলা পর্যায়সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। সীমিত জনবল নিয়েও যাতে রোগীরা সর্বোচ্চ সেবা পান, সে বিষয়টি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং দ্রুত এই সংকট নিরসনে আমরা আশাবাদী।