‘নীতি গবেষণা কেন্দ্র’ আয়োজিত রোহিঙ্গা সমস্যার সংকট ও সমাধান নিয়ে কৌশলগত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে দেখা উচিত। জাতিসংঘ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত কনফারেন্সকে সামনে রেখে এই কর্মশালা আয়োজন করে নীতি গবেষণা কেন্দ্র। গতকাল বুধবার সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার। বক্তৃতা করেন, আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের (আরএনএ) চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমান এবং ঢাকা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নীতি গবেষণা কেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. মাহবুবুল হক। এছাড়া অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও স্থানীয় বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের নেতারা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন।

আলোচনা সভায় ফরহাদ মজহার বলেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিদের দ্বারা ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা নীতি প্রচ-ভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল। রোহিঙ্গা সমস্যাকে আমাদের একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে দেখতে হবে।

তিনি বলেন, এটি শুধুমাত্র একটি মানবতাবাদী সমস্যা নয়, এটি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক ও সামরিক সমস্যা। এটি একটি ভূ-রাজনৈতিক সমস্যাও বটে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের (আরএনএ) চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মূলত কোনো রাজনৈতিক বা দেশীয় হস্তক্ষেপ ছাড়া কোনো ধরনের প্রত্যাবর্তন আসলে সম্ভব হয় না।

মূল প্রবন্ধে সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমান বলেন, আরাকান আর্মি এবং এসএসপিসিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য অপরিহার্য শর্ত হিসেবে মিয়ানমারে নাগরিকত্ব, ভোটাধিকার এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক শ্রম এবং জোরপূর্বক নিয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

মূল প্রবন্ধে তিনি আরও বলেন, উভয়পক্ষের মধ্যে আস্থা তৈরির জন্য আইডিপি ক্যাম্প ভেঙে ফেলা, রোহিঙ্গাদের জমি ও সম্পত্তির অধিকার পুনরুদ্ধার করা, চলাচলের স্বাধীনতা, স্থানীয় সংস্থা এবং কাউন্সিলে অংশগ্রহণ, নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের মাঠ পর্যায়ে উপস্থিতি, সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং পুনর্মিলনের বিষয়ে রোহিঙ্গা, রাখাইন এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে সংলাপ আয়োজন করা জরুরি।

অনুষ্ঠানে ঢাকা ঘোষণাপত্রে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, চলাচলের স্বাধীনতা, সম্পত্তি ফেরত এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। মানবিক সহায়তা, নারী ও যুবকদের সম্পৃক্ততা, অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের ঐক্য এবং আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি ন্যায়বিচার, আন্তর্জাতিক জবাবদিহিতা এবং গণমাধ্যমের নিরপেক্ষ ভূমিকার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সাংস্কৃতিক মর্যাদা ও অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে।