বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) : পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে স্লুইস গেট স্থাপন করা গেলে চাষাবাদের আওতায় আসবে শত শত হেক্টর জমি -সংবাদ
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে স্লুইস গেট স্থাপন করা গেলে চাষাবাদের আওতায় আসবে শত শত হেক্টর জমি। এনিয়ে গত সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয়ে ছন্দারিয়া খালের মোহনায় স্লুইস গেট স্থাপনের আবেদন জানিয়ে লিখিত আবেদন করেছেন কৃষকেরা। ৪০ জনেরও অধিক ব্যক্তির স্বাক্ষরিত এ আবেদনে বলা হয়, উপজেলার শতাধিক বিলের কয়েক শত হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদি। গত দুই দশক পূর্বেও এসব জমিতে ধান, রবিশস্য ও শীতকালীন শাকসবজি আবাদ হতো।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালখালীতে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১৬ হাজার ৯২০ একর। এর মধ্যে এক ফসলি জমি ৩ হাজার ৫৩২ দশমিক ৪০ একর, দুই ফসলি ১২ হাজার ১৫২ দশমিক ৪০ একর ও তিন ফসলি ১ হাজার ১৩৬ দশমিক ২০ একর। সম্প্রতি কৃষি অফিসের জরিপে দেখা গেছে, নানা কারণে অনাবাদি হয়ে পড়েছে প্রায় ২ হাজার ৮৫২ একর জমি। অনাবাদি এসব জমিতে আগে আমন মৌসুমে ৩-৫ হাজার হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হতো। এ ছাড়া রবিশস্য বা সবজি উৎপাদন হতো অন্তত ৫ হাজার মেট্রিক টন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ বলেন, ‘বিস্তীর্ণ ফসলি জমি অনাবাদি থাকার কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো জলাবদ্ধতা। খাল খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে চাষের আওতায় আসবে এসব অনাবাদি জমি।
অন্যদিকে বোয়ালখালী খাল ও ছন্দরিয়া খালের মুখে ফ্লুইসগেট স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে।’ পৌরসভাসহ উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী, কধুরখীল, শাকপুরা সারোয়াতলি, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পরিত্যক্ত জমি কচুরিপানা আর আগাছায় ভরে গেছে।
পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়নের চরখিদিরপুর এলাকার চরের বিল, বড়ুয়াপাড়া বিলের কৃষকেরা বলেন, ‘শত বছর ধরে চাষাবাদের ওপর নির্ভরশীল এলাকার বেশির ভাগ মানুষ। এসব বিলে চাষাবাদ হতো কাকনিয়া খাল ও জেঠি খালের পানি দিয়ে। কাকনিয়া খালটি একটি শিল্পকারখানার পেটে ঢুকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। জেঠি খালটিও আধমরা। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে দুই দশক ধরে চাষাবাদ বন্ধ।’ তারা জানান, পানি নিষ্কাশনে কয়েকবছর আগে পৌরসভার উদ্যোগে কাকনিয়া খালে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। তবে এটি অপরিকল্পিত হওয়ায় জলাবদ্ধতা আরো বেড়েছে। কধুরখীল এলাকার কৃষকেরা জানান, ছন্দারিয়া খালের জোয়ারের পানি এলাকায় প্রবেশ করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে শত শত একর জমিতে চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে চরম জনদূর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
ছন্দারিয়া খালের মোহনায় পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে একটি স্লুইস গেট স্থাপন করা হলে এ ভোগান্তি নিরসন হবে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। কধুরখীল ইউনিয়নের বাসিন্দা রাজু দে ও পোপাদিয়া এলাকার কৃষক এস এম মোদ্দাচ্ছের বলেন, অনাবাদি জমিগুলো চাষের আওতায় আসলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি খাদ্যের চাহিদা পূরণ হবে। এ লক্ষ্যে প্রধান খালগুলোর প্রবেশ মূখে স্লুইস গেট স্থাপন জরুরি। এ বিষয়ে ২০২২ সালে কধুরখীল ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য সুভাসিষ দাশ গুপ্ত মুনমুনের আবেদনের প্রেক্ষিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন-১ অধিশাখার তৎকালীন উপসচিব এ এইচ এম আনোয়ার পাশা স্বাক্ষরিত এক পত্রে ছন্দারিয়া খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণের বিষয়টি যাচাই পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
সুভাসিষ দাশ গুপ্ত মুনমুন বলেন, মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশের প্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। বিষয়টি ওই পর্যন্ত ছিলো। কোনো এক অদৃশ্য কারণে এ জনদাবিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাই নতুন করে আবারও আবেদন দিয়েছেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো রহমত উল্লাহ বলেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে কথা বলে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) : পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে স্লুইস গেট স্থাপন করা গেলে চাষাবাদের আওতায় আসবে শত শত হেক্টর জমি -সংবাদ
শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে স্লুইস গেট স্থাপন করা গেলে চাষাবাদের আওতায় আসবে শত শত হেক্টর জমি। এনিয়ে গত সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয়ে ছন্দারিয়া খালের মোহনায় স্লুইস গেট স্থাপনের আবেদন জানিয়ে লিখিত আবেদন করেছেন কৃষকেরা। ৪০ জনেরও অধিক ব্যক্তির স্বাক্ষরিত এ আবেদনে বলা হয়, উপজেলার শতাধিক বিলের কয়েক শত হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদি। গত দুই দশক পূর্বেও এসব জমিতে ধান, রবিশস্য ও শীতকালীন শাকসবজি আবাদ হতো।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালখালীতে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১৬ হাজার ৯২০ একর। এর মধ্যে এক ফসলি জমি ৩ হাজার ৫৩২ দশমিক ৪০ একর, দুই ফসলি ১২ হাজার ১৫২ দশমিক ৪০ একর ও তিন ফসলি ১ হাজার ১৩৬ দশমিক ২০ একর। সম্প্রতি কৃষি অফিসের জরিপে দেখা গেছে, নানা কারণে অনাবাদি হয়ে পড়েছে প্রায় ২ হাজার ৮৫২ একর জমি। অনাবাদি এসব জমিতে আগে আমন মৌসুমে ৩-৫ হাজার হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হতো। এ ছাড়া রবিশস্য বা সবজি উৎপাদন হতো অন্তত ৫ হাজার মেট্রিক টন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ বলেন, ‘বিস্তীর্ণ ফসলি জমি অনাবাদি থাকার কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো জলাবদ্ধতা। খাল খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে চাষের আওতায় আসবে এসব অনাবাদি জমি।
অন্যদিকে বোয়ালখালী খাল ও ছন্দরিয়া খালের মুখে ফ্লুইসগেট স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে।’ পৌরসভাসহ উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী, কধুরখীল, শাকপুরা সারোয়াতলি, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পরিত্যক্ত জমি কচুরিপানা আর আগাছায় ভরে গেছে।
পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়নের চরখিদিরপুর এলাকার চরের বিল, বড়ুয়াপাড়া বিলের কৃষকেরা বলেন, ‘শত বছর ধরে চাষাবাদের ওপর নির্ভরশীল এলাকার বেশির ভাগ মানুষ। এসব বিলে চাষাবাদ হতো কাকনিয়া খাল ও জেঠি খালের পানি দিয়ে। কাকনিয়া খালটি একটি শিল্পকারখানার পেটে ঢুকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। জেঠি খালটিও আধমরা। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে দুই দশক ধরে চাষাবাদ বন্ধ।’ তারা জানান, পানি নিষ্কাশনে কয়েকবছর আগে পৌরসভার উদ্যোগে কাকনিয়া খালে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। তবে এটি অপরিকল্পিত হওয়ায় জলাবদ্ধতা আরো বেড়েছে। কধুরখীল এলাকার কৃষকেরা জানান, ছন্দারিয়া খালের জোয়ারের পানি এলাকায় প্রবেশ করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে শত শত একর জমিতে চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে চরম জনদূর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
ছন্দারিয়া খালের মোহনায় পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে একটি স্লুইস গেট স্থাপন করা হলে এ ভোগান্তি নিরসন হবে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। কধুরখীল ইউনিয়নের বাসিন্দা রাজু দে ও পোপাদিয়া এলাকার কৃষক এস এম মোদ্দাচ্ছের বলেন, অনাবাদি জমিগুলো চাষের আওতায় আসলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি খাদ্যের চাহিদা পূরণ হবে। এ লক্ষ্যে প্রধান খালগুলোর প্রবেশ মূখে স্লুইস গেট স্থাপন জরুরি। এ বিষয়ে ২০২২ সালে কধুরখীল ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য সুভাসিষ দাশ গুপ্ত মুনমুনের আবেদনের প্রেক্ষিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন-১ অধিশাখার তৎকালীন উপসচিব এ এইচ এম আনোয়ার পাশা স্বাক্ষরিত এক পত্রে ছন্দারিয়া খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণের বিষয়টি যাচাই পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
সুভাসিষ দাশ গুপ্ত মুনমুন বলেন, মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশের প্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। বিষয়টি ওই পর্যন্ত ছিলো। কোনো এক অদৃশ্য কারণে এ জনদাবিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাই নতুন করে আবারও আবেদন দিয়েছেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো রহমত উল্লাহ বলেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে কথা বলে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।