শালতা নদীর চরে শামুক পুড়িয়ে চুন তৈরির কারখানা থেকে বিষাক্ত ধোঁয়া ও তীব্র দুর্গন্ধে ডুমুরিয়া উপজেলার ধানিবুনিয়াসহ আশ-পাশের গ্রামগুলোর পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি জনজীবনে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট কারখানার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২ বছর আগে খুলনা এলাকা থেকে জনৈক সবুজ সরদার নামে এক লোক এসে ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নের পূর্বপাশে ধানিবুনিয়া গ্রামের মৃতপ্রায় শালতা নদীর চরের জমিতে শামুক পুড়িয়ে চুন তৈরির কারখানা গড়ে তোলে। কারখানার অপর পাড়ে বটিয়াঘাটা উপজেলা আর এপার ডুমুরিয়া।
এই দুই উপজেলার অধিকাংশ চিংড়ি চাষি শামুকের শক্ত খোলসের ভেতরে থাকা শরীর (মাংস) বের করে ঘেরে মাছের খাবার হিসাবে ব্যবহার করে। আর শক্ত খোলস বা খোসা ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দেয়। আর সেই খোসা কিনে কারখানা মালিক তা পুড়িয়ে পানে খাওয়া চুন তৈরি করে। ওই শামুক পুড়ানোর সময়েই সৃষ্টি হওয়া বিষাক্ত ধোঁয়া ও তীব্র দুর্গন্ধে এলাকাবাসীর জনজীবন দূর্বিষহ করে তুলেছে।
ওই চুনের কারখানায় গিয়ে উচু স্তুপ করা শামুক ও জ্বালানীর জন্য গাছের ডাল-পালা, ৩টি বড়-বড় চুলি ও শামুক পোড়ানো ৪০ বস্তা চুন-সহ কর্মচারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওইসব শামুক বড়-বড় চুল্লির মধ্যে প্রথমে জ্বালানি কাঠ দিয়ে তার ওপর শামুক, আবার কাঠ, আবার শামুক দিয়ে প্রত্যেক চুল্লিতে অনুমান ৫০ মন শামুক সাজিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে পরদিন ভোর ৬-৭টা পর্যন্ত একটানা পোড়ার পরই চুন তৈরি হয়।
এ প্রসঙ্গে ধানিবুনিয়া গ্রামের কৃষক ধীরেন মন্ডল বলেন, রাতে চুল্লি জ্বালানোর পর থেকে সারারাত ধরে প্রচন্ড ধোঁয়ার পাশাপাশি দুর্গন্ধে বাড়ি-ঘর আচ্ছন্ন করে ফেলে। দোম (শ্বাস) নিতি খুব কষ্ট হয়। ওই এলাকার গ্রাম্য চিকিৎসক নিত্য রঞ্জন রায় বলেন, গ্রামের অনেকেই কাশি, শ্বাসকষ্ট জনিত রোগের উপসর্গ নিয়ে আমার কাছে চিকিৎসার জন্য আসছে। একই গ্রামের নারায়ণ সরকার বলেন, ওই ধোঁয়া ও দূর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ে পাশাপাশি গাছ-পালা ও সাক-সবজিরও ক্ষতি হচ্ছে। চুন কারখানার পূর্ব-পাশে বটিয়াঘাটা উপজেলার খলশীবুনিয়া গ্রামে সেমি-ইনটেনসিভ পদ্ধতির বাগদা চাষী বাবলু মন্ডল বলেন, ওই ধোঁয়ার গুড়া বাতাসে ভেসে আমাদের মাছের ঘেরে পড়ায় অনেক বাগদা মারা যাচ্ছে। গত ১৭ জুলাই আমরা এসব অভিযোগ জানিয়ে খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। দ্রুত এর কোন প্রতিকার না হলে তারা মানববন্ধন করবেন বলে জানান এলাকাবাসী।
শামুক পুড়িয়ে চুন বানালে কোনো প্রকার ক্ষয়-ক্ষতির অভিযোগ অস্বীকার করে কারখানার মালিক সবুজ সরদার দৈনিক সংবাদ এর এই প্রতিবেদককে বলেন, ফাঁকা নদীর চরে আমার কারখানা। সেখানে রাত ১০টার পরে আগুন জ্বালালে কিছু সময় ধোঁয়া হয়, তাতে মানুষের কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা না। ওরা আমার কাছে চাঁদা দাবি করেছিলো, কিন্ত আমি তা না দেওয়ায় অভিযোগ করেছে। তিনি আরও বলেন, শুরুতে কেউ কোনদিন চাঁদা বা বকশিস দাবি করেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রায়ই আসা-যাওয়ার পথে যে যার মতো করে চাঁদা দাবি করে যাচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, আমি দ্রুতই ব্যবস্থা নিচ্ছি।
খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সাদিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি জেনেছি। আমি দেখতেছি।
শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শালতা নদীর চরে শামুক পুড়িয়ে চুন তৈরির কারখানা থেকে বিষাক্ত ধোঁয়া ও তীব্র দুর্গন্ধে ডুমুরিয়া উপজেলার ধানিবুনিয়াসহ আশ-পাশের গ্রামগুলোর পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি জনজীবনে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট কারখানার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২ বছর আগে খুলনা এলাকা থেকে জনৈক সবুজ সরদার নামে এক লোক এসে ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নের পূর্বপাশে ধানিবুনিয়া গ্রামের মৃতপ্রায় শালতা নদীর চরের জমিতে শামুক পুড়িয়ে চুন তৈরির কারখানা গড়ে তোলে। কারখানার অপর পাড়ে বটিয়াঘাটা উপজেলা আর এপার ডুমুরিয়া।
এই দুই উপজেলার অধিকাংশ চিংড়ি চাষি শামুকের শক্ত খোলসের ভেতরে থাকা শরীর (মাংস) বের করে ঘেরে মাছের খাবার হিসাবে ব্যবহার করে। আর শক্ত খোলস বা খোসা ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দেয়। আর সেই খোসা কিনে কারখানা মালিক তা পুড়িয়ে পানে খাওয়া চুন তৈরি করে। ওই শামুক পুড়ানোর সময়েই সৃষ্টি হওয়া বিষাক্ত ধোঁয়া ও তীব্র দুর্গন্ধে এলাকাবাসীর জনজীবন দূর্বিষহ করে তুলেছে।
ওই চুনের কারখানায় গিয়ে উচু স্তুপ করা শামুক ও জ্বালানীর জন্য গাছের ডাল-পালা, ৩টি বড়-বড় চুলি ও শামুক পোড়ানো ৪০ বস্তা চুন-সহ কর্মচারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওইসব শামুক বড়-বড় চুল্লির মধ্যে প্রথমে জ্বালানি কাঠ দিয়ে তার ওপর শামুক, আবার কাঠ, আবার শামুক দিয়ে প্রত্যেক চুল্লিতে অনুমান ৫০ মন শামুক সাজিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে পরদিন ভোর ৬-৭টা পর্যন্ত একটানা পোড়ার পরই চুন তৈরি হয়।
এ প্রসঙ্গে ধানিবুনিয়া গ্রামের কৃষক ধীরেন মন্ডল বলেন, রাতে চুল্লি জ্বালানোর পর থেকে সারারাত ধরে প্রচন্ড ধোঁয়ার পাশাপাশি দুর্গন্ধে বাড়ি-ঘর আচ্ছন্ন করে ফেলে। দোম (শ্বাস) নিতি খুব কষ্ট হয়। ওই এলাকার গ্রাম্য চিকিৎসক নিত্য রঞ্জন রায় বলেন, গ্রামের অনেকেই কাশি, শ্বাসকষ্ট জনিত রোগের উপসর্গ নিয়ে আমার কাছে চিকিৎসার জন্য আসছে। একই গ্রামের নারায়ণ সরকার বলেন, ওই ধোঁয়া ও দূর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ে পাশাপাশি গাছ-পালা ও সাক-সবজিরও ক্ষতি হচ্ছে। চুন কারখানার পূর্ব-পাশে বটিয়াঘাটা উপজেলার খলশীবুনিয়া গ্রামে সেমি-ইনটেনসিভ পদ্ধতির বাগদা চাষী বাবলু মন্ডল বলেন, ওই ধোঁয়ার গুড়া বাতাসে ভেসে আমাদের মাছের ঘেরে পড়ায় অনেক বাগদা মারা যাচ্ছে। গত ১৭ জুলাই আমরা এসব অভিযোগ জানিয়ে খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। দ্রুত এর কোন প্রতিকার না হলে তারা মানববন্ধন করবেন বলে জানান এলাকাবাসী।
শামুক পুড়িয়ে চুন বানালে কোনো প্রকার ক্ষয়-ক্ষতির অভিযোগ অস্বীকার করে কারখানার মালিক সবুজ সরদার দৈনিক সংবাদ এর এই প্রতিবেদককে বলেন, ফাঁকা নদীর চরে আমার কারখানা। সেখানে রাত ১০টার পরে আগুন জ্বালালে কিছু সময় ধোঁয়া হয়, তাতে মানুষের কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা না। ওরা আমার কাছে চাঁদা দাবি করেছিলো, কিন্ত আমি তা না দেওয়ায় অভিযোগ করেছে। তিনি আরও বলেন, শুরুতে কেউ কোনদিন চাঁদা বা বকশিস দাবি করেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রায়ই আসা-যাওয়ার পথে যে যার মতো করে চাঁদা দাবি করে যাচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, আমি দ্রুতই ব্যবস্থা নিচ্ছি।
খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সাদিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি জেনেছি। আমি দেখতেছি।