alt

লৌহজংয়ে গার্লস কলেজে ছাত্রী মাত্র ৬ জন

প্রতিনিধি, লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) : রোববার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার একমাত্র মহিলা কলেজ মেদিনী মন্ডল গার্লস কলেজ আজ টিকে থাকার লড়াই করছে। আধুনিক চারতলা ভবন, আইসিটি কক্ষ ও এক একর জমির ওপর স্থাপিত হলেও বর্তমানে কলেজটিতে ছাত্রী মাত্র ৬ জন। দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঁচজন এবং একাদশ শ্রেণীতে একজন। চলতি শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে মাত্র একজন ছাত্রী। ২৫ বছর ধরে স্থানীয় অনীহা, রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও শিক্ষকের সংকটে ধুঁকতে থাকা কলেজটির ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কলেজটির মূল ফটকে নামফলক মুছে গেছে। চারপাশ জঙ্গলাকীর্ণ, জনশূন্য প্রাঙ্গণ যেন ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে অধ্যক্ষ রোজিনা আক্তার একমাত্র পূর্ণকালীন শিক্ষক। চারজন খণ্ডকালীন শিক্ষক, পাঁচজন ছাত্রী ও একজন আয়াকে নিয়েই চলছে পাঠদান। কলেজে কেবল মানবিক বিভাগ চালু আছে। ২০২৪ সালে চারজন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মাত্র একজন পাস করেছে। অধ্যক্ষ রোজিনা আক্তার জানান, প্রতিবছর নির্ধারিত ফি দিয়ে ১১টি বিষয়ের স্বীকৃতি নবায়ন করা হলেও ছাত্রী সংকট কাটছে না।

উপজেলার ১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর ৫০০-৬০০ ছাত্রী এসএসসি পাস করলেও তারা ভর্তি হচ্ছে সরকারি লৌহজং কলেজ, ইউনুস খান মেমোরিয়াল কলেজ, শ্রীনগর সরকারি কলেজ কিংবা ঢাকার বিভিন্ন কলেজে। এমনকি কলেজ সংলগ্ন আনোয়ার চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদেরও আগ্রহ নেই এখানে ভর্তি হওয়ার। শিক্ষকের অভাব ও মানবিক বিভাগের সীমাবদ্ধতা প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন স্থানীয়রা।

১৯৯৩ সালে দক্ষিণ মেদিনী মন্ডল গ্রামের শিক্ষানুরাগী জলিল হাওলাদার এক একর জমি দান করলে কলেজটির পথচলা শুরু হয়। ১৯৯৪ সালে সাবেক সংসদ সদস্য উইং কমান্ডার (অব.) এম হামিদুল্লাহ খান বীরপ্রতীক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান এম এ রশিদ প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন। তখন ৪০ জন ছাত্রী নিয়ে ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে কলেজটির পতন শুরু হয়।

অধ্যক্ষ রোজিনা আক্তারকে নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। একপক্ষ মনে করেন, তার কারণে কলেজটি এখনো টিকে আছে। অন্যপক্ষের মতে, তার নেতৃত্বগুণের অভাবেই কলেজের উন্নয়ন থমকে গেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তাকে বিএনপিপন্থি তকমা দিয়ে দূরে সরিয়ে রেখেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিল্পপতিরাও কলেজ উন্নয়নে আগ্রহ দেখাননি।

প্রবীণ শিক্ষানুরাগী আবদুল লতিফ খান জানান, প্রতিষ্ঠাকালে তিনি কলেজের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। তার মতে, এখন একটি শক্তিশালী ম্যানেজিং কমিটি ও বড় আর্থিক তহবিল গঠন করা জরুরি। আরেকজন প্রবীণ মোতালেব চৌধুরীর মতে, কলেজকে বাঁচাতে হলে বিকল্প বিভাগ যেমন ব্যবসায় শিক্ষা চালু করতে হবে, তাহলে ছাত্রী সংখ্যা বাড়তে পারে।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কলেজ পরিচালনার জন্য চার সদস্য বিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটির অনুমোদন দিয়েছে। শ্রীনগর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম সভাপতি, অধ্যক্ষ রোজিনা আক্তার সদস্য সচিব, মো. আশরাফুল ইসলাম শিক্ষক প্রতিনিধি ও মৌসুমী বেগম অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন।

লৌহজং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফ মো. মোর্তজা আহসান বলেন, পরিচালনা কমিটি সক্রিয় হলে কলেজটি আবার দাঁড়িয়ে যাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেছার উদ্দিন জানান, কলেজটি বেসরকারি বিধায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলবে, তবে বাধা এলে প্রশাসন সহযোগিতা করবে।

বর্তমানে সপ্তাহে মাত্র ২-১ দিন কলেজের গেট খোলে। অল্প সময়ে সীমিত ক্লাস নিয়ে কীভাবে শিক্ষার মান রক্ষা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। অনেকের মতে, নতুন উদ্যোগ, বিকল্প বিভাগ ও সক্রিয় পরিচালনা কমিটি ছাড়া মেদিনী মন্ডল গার্লস কলেজের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

ছবি

ডেঙ্গু: একদিনে ১২ জনের মৃত্যু

ছবি

নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হবে কী না, সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলো নেবে: শফিকুল

ছবি

খুলনার বাস্তুহারায় উচ্ছেদ ঠেকাতে বাসিন্দাদের বাধা, সংঘর্ষে আহত ৩৫

ছবি

ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত পরিবারবর্গের মাঝে বিআরটিএ ট্রাষ্টি বোর্ডের চেক বিতরণ

ছবি

মহালয়া দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু

ছবি

দুইশ’ বছরের ‘নৌকার গ্রাম’ ডহর রামসিদ্ধি

ছবি

সচিবালয়ের কর্মচারীরা ফের আন্দোলনে

ছবি

মুশতাক হত্যায় মামলার তদন্তে ধীরগতি, কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি

ছবি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ৯ মাসে নিহত ১১

ছবি

বিরামপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি কার্ডধারী এখনও চাল পাননি

ছবি

সলঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন

ছবি

শ্রীমঙ্গলে ফুলেল সড়কে প্রকৃতির রঙে পর্যটনের নতুন মাত্রা

ছবি

প্রতিমায় চলছে রঙের আঁচড়, নিরাপত্তা জোরদার

ছবি

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার ফেরি যাত্রীদের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জুয়াড়ি চক্র

ছবি

দেবহাটায় চিংড়ি চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

ছবি

মহেশপুরে রোপা আমনে মাজরা পোকা, দিশেহারা কৃষক

ছবি

লক্ষ্মীপুরে ১৮ বছরেও সচল হয়নি টক্কাপুল স্লুইসগেট

ছবি

শেরপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর নানা অভিযোগ

ছবি

প্লট বরাদ্দের ৩ বছরে উৎপাদনে এক কারখানা

ছবি

বিএনপি নেতাকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় ওসি প্রত্যাহার

ছবি

রাশিয়ান নাগরিকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

কুড়িগ্রামের চাকিরপশার বিলে ফোটা পদ্মফুল টানছে ভ্রমন পিপাসুদের

ছবি

কুমিল্লায় চুরির অভিযোগে যুবককে জার্মান শেফার্ড কুকুর লেলিয়ে নির্যাতন

ছবি

দশমিনা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি ফল

ছবি

অসময় বেড়ির আইলে তরমুজ চাষে লাভবান ডুমুরিয়ার কৃষক

ছবি

আড়িয়ালখাঁ নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন ও সংস্কার কাজ শুরু

ছবি

সেতু চাই, ভোগান্তি নয়

ছবি

ফিলিপাইনের আখ আবাদে লাভবান কালীগঞ্জের মাসুদ

ছবি

সাতক্ষীরার নওয়াবেকী সড়ক খানাখন্দে ভরা, জনভোগান্তি

ছবি

ঢেঁকি নেই ভিটামিন সমৃদ্ধ ঢেঁকি ছাটা চালও নেই

ছবি

‘শিক্ষাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প নেই’

ছবি

মাগুরায় মহালয়া পালিত

ছবি

কাশিয়ানীতে বাস চাপায় নিহত ১

ছবি

ভৈরবে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কিশোরের মৃত্যু

ছবি

রাজিবপুরে টিআর-কাবিটা প্রকল্পে হরিলুট

পাবনায় রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ান নাগরিকের লাশ উদ্ধার

tab

লৌহজংয়ে গার্লস কলেজে ছাত্রী মাত্র ৬ জন

প্রতিনিধি, লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ)

রোববার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার একমাত্র মহিলা কলেজ মেদিনী মন্ডল গার্লস কলেজ আজ টিকে থাকার লড়াই করছে। আধুনিক চারতলা ভবন, আইসিটি কক্ষ ও এক একর জমির ওপর স্থাপিত হলেও বর্তমানে কলেজটিতে ছাত্রী মাত্র ৬ জন। দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঁচজন এবং একাদশ শ্রেণীতে একজন। চলতি শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে মাত্র একজন ছাত্রী। ২৫ বছর ধরে স্থানীয় অনীহা, রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও শিক্ষকের সংকটে ধুঁকতে থাকা কলেজটির ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কলেজটির মূল ফটকে নামফলক মুছে গেছে। চারপাশ জঙ্গলাকীর্ণ, জনশূন্য প্রাঙ্গণ যেন ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে অধ্যক্ষ রোজিনা আক্তার একমাত্র পূর্ণকালীন শিক্ষক। চারজন খণ্ডকালীন শিক্ষক, পাঁচজন ছাত্রী ও একজন আয়াকে নিয়েই চলছে পাঠদান। কলেজে কেবল মানবিক বিভাগ চালু আছে। ২০২৪ সালে চারজন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মাত্র একজন পাস করেছে। অধ্যক্ষ রোজিনা আক্তার জানান, প্রতিবছর নির্ধারিত ফি দিয়ে ১১টি বিষয়ের স্বীকৃতি নবায়ন করা হলেও ছাত্রী সংকট কাটছে না।

উপজেলার ১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর ৫০০-৬০০ ছাত্রী এসএসসি পাস করলেও তারা ভর্তি হচ্ছে সরকারি লৌহজং কলেজ, ইউনুস খান মেমোরিয়াল কলেজ, শ্রীনগর সরকারি কলেজ কিংবা ঢাকার বিভিন্ন কলেজে। এমনকি কলেজ সংলগ্ন আনোয়ার চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদেরও আগ্রহ নেই এখানে ভর্তি হওয়ার। শিক্ষকের অভাব ও মানবিক বিভাগের সীমাবদ্ধতা প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন স্থানীয়রা।

১৯৯৩ সালে দক্ষিণ মেদিনী মন্ডল গ্রামের শিক্ষানুরাগী জলিল হাওলাদার এক একর জমি দান করলে কলেজটির পথচলা শুরু হয়। ১৯৯৪ সালে সাবেক সংসদ সদস্য উইং কমান্ডার (অব.) এম হামিদুল্লাহ খান বীরপ্রতীক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান এম এ রশিদ প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন। তখন ৪০ জন ছাত্রী নিয়ে ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে কলেজটির পতন শুরু হয়।

অধ্যক্ষ রোজিনা আক্তারকে নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। একপক্ষ মনে করেন, তার কারণে কলেজটি এখনো টিকে আছে। অন্যপক্ষের মতে, তার নেতৃত্বগুণের অভাবেই কলেজের উন্নয়ন থমকে গেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তাকে বিএনপিপন্থি তকমা দিয়ে দূরে সরিয়ে রেখেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিল্পপতিরাও কলেজ উন্নয়নে আগ্রহ দেখাননি।

প্রবীণ শিক্ষানুরাগী আবদুল লতিফ খান জানান, প্রতিষ্ঠাকালে তিনি কলেজের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। তার মতে, এখন একটি শক্তিশালী ম্যানেজিং কমিটি ও বড় আর্থিক তহবিল গঠন করা জরুরি। আরেকজন প্রবীণ মোতালেব চৌধুরীর মতে, কলেজকে বাঁচাতে হলে বিকল্প বিভাগ যেমন ব্যবসায় শিক্ষা চালু করতে হবে, তাহলে ছাত্রী সংখ্যা বাড়তে পারে।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কলেজ পরিচালনার জন্য চার সদস্য বিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটির অনুমোদন দিয়েছে। শ্রীনগর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম সভাপতি, অধ্যক্ষ রোজিনা আক্তার সদস্য সচিব, মো. আশরাফুল ইসলাম শিক্ষক প্রতিনিধি ও মৌসুমী বেগম অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন।

লৌহজং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফ মো. মোর্তজা আহসান বলেন, পরিচালনা কমিটি সক্রিয় হলে কলেজটি আবার দাঁড়িয়ে যাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেছার উদ্দিন জানান, কলেজটি বেসরকারি বিধায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলবে, তবে বাধা এলে প্রশাসন সহযোগিতা করবে।

বর্তমানে সপ্তাহে মাত্র ২-১ দিন কলেজের গেট খোলে। অল্প সময়ে সীমিত ক্লাস নিয়ে কীভাবে শিক্ষার মান রক্ষা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। অনেকের মতে, নতুন উদ্যোগ, বিকল্প বিভাগ ও সক্রিয় পরিচালনা কমিটি ছাড়া মেদিনী মন্ডল গার্লস কলেজের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

back to top