পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত ঝিনাইদহের নাটোপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা
পাশেই দুটি নদীর মিলনস্থল। বর্ষা এলেই পানিতে ডুবে যেত ফসলি মাঠ। একমুঠো ধানও উঠতো না ঘরে। সারা বছরই লড়াই চলতো অভাবের সঙ্গে। এভাবে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আর ঝুঁকি নিতে চাননি এ গ্রামের কৃষকরা। তাদের প্রায় সবাই ধানের মৌসুমে শুরু করলেন পাটের চাষ। এরপর থেকে পাট, পাটকাঠির ওপরই চলে তাদের সংসার।
বর্তমানে দুটিরই পাটের দামও ভালো। পাটকাঠিও বিক্রি হয় বেশ চড়া দামে। তাইতো তাদের সংসার ভর করে পাট আর পাটকাঠির ওপর।
সোমবার, (২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সরজমিনে দেখা যায়, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বেগবতী ও মাগুরার শালিখা উপজেলার ফটকি নদীর মিলনস্থলের পাশে উভয় জেলার সীমান্তবর্তী অন্তত ২১টি গ্রাম এখন জলমগ্ন।
এরমধ্যে একটি নাটোপাড়া। গ্রামজুড়েই পাট আর পাটকাঠি। বসতবাড়ির সামনে অথবা পিচঢালা সড়কের দুই পাশে সাজিয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে সড়কের দুই ধার দর্শনীয় করতে পাট আর পাটকাঠি দিয়ে যেন বিশেষ ধরনের তোরণ তৈরি করা হয়েছে।
আর প্রায় শতভাগ পরিবারই পাট ও পাটকাঠি নিয়ে ব্যস্ত। কেউ অনেকে পচানো পাটের আঁশ ছাড়াচ্ছেন। কেউ পাট ধোলাই করছেন। কেউ পাটকাঠির মেলে দিচ্ছেন। আঁটি বাঁধছেন। বা দাঁড় করাচ্ছেন। নারী-পুরুষ সমানে কাজ করে যাচ্ছেন।
ওই গ্রামের কৃষক নাটোপাড়া গ্রামের সাবুর আলী জানান, ছোটবেলায় দেখেছে বেগবতী ও ফটকি দুটি নদীই গভীর ছিল। সে সময় বর্ষা মৌসুমে পানি যতই হোক না কেন তা নদী দিয়ে বের হয়ে যেত। একটু উঁচু জমিতে আমন ধানের চাষ হতো। কিন্তু কালক্রমে নদী ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ কমে গেছে। সম্প্রতিক যে বছর একটু বেশি পানি হয় সে বছর নদী ফুলে-ফেঁপে ওঠে তাদের গ্রামসহ আশপাশের বেশ কিছু গ্রামের বিস্তর এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এতে বারবার আমন খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তারা অভাবে পড়েন। সে কারণে এখন তাদের গ্রামের কৃষকেরা আর কোনো ঝুঁকিতে যেতে রাজি না। তাই গ্রামের প্রায় শতভাগ কৃষক এখন পানি সহিঞ্চু পাটচাষে ঝুঁকেছেন।
তবে গ্রামটির গ্রামের পূর্ব দিকে কিছু উঁচু জমি আছে, সেখানে এখনও আমন ধানের চাষ হয় বলে জানান একই গ্রামের কৃষক সাবেক ইউপি সদস্য জামাত আলী। তবে বাকি অংশ নিচু, যেখানে আমনের আশা আর কেউ করেন না। পাট চাষ করেন। আটকে থাকা পানিতে চলে পাট পচানো ও ধোয়ার কাজ।
পাটের পচাতে (জাগ) আসতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় লেগে যায়। জাগ আসা পাট পানির মধ্য থেকে আঁশ ছাড়ানো, পাট ও পাটকাঠি রোদে শুকানোর সময় বাড়িতে বাড়িতে কৃষাণ-কৃষাণীদের ব্যস্ততার সীমা থাকে না। প্রতি মুঠো পাটের আঁশ ছাড়াতে দিনমজুরেরা নেন ৫/৬ টাকা। প্রতিদিন তাদের কমপক্ষে ৭-৮শত টাকা রোজগার হয়।
কৃষক আতাউর রহমান জানান, এখন গ্রামের অধিকাংশ কৃষকই পাট ঘরে তুলে ফেলেছেন। বাকিরাও খুব শীঘ্রই তুলবেন।
যা সারাদেশের মধ্যে আর কোনো গ্রামে পাট নিয়ে এমন ব্যস্ততা আছে বলে মনে হয় না তার। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা গ্রাম থেকে পাট কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পাটকাঠিও একইভাবে বিক্রি হচ্ছে। এ বছর দামও ভালো।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মাহাবুব আলম রনি জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলাতে মোট ৭শত ১০ হেক্টর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এরমধ্যে চাষ হয়েছে ৬শ’ ৬৫ হেক্টর জমিতে। তিনি বলেন, এক সময়ে বৃহত্তর যশোর অঞ্চলে পাটের রেকর্ড পরিমাণে চাষ হতো। নানাবিধ কারণে এখন কমে গেছে। তিনি বলেন, ভালো পাট হলে এক বিঘা জমিতে কমপক্ষে ১৫ মণ পাট উৎপাদন হয়। প্রতিমণ পাট এখন ৩২-৩৮শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও এক বিঘা জমিতে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকার পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে। কাজেই পাট চাষ বেশ লাভজনক। তিনি বলেন, এ উপজেলার নাটোপাড়া গ্রামটির প্রায় শতভাগ কৃষক পাটচাষ করে সোনালী আাঁশের সোনালী দিনের সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত ঝিনাইদহের নাটোপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পাশেই দুটি নদীর মিলনস্থল। বর্ষা এলেই পানিতে ডুবে যেত ফসলি মাঠ। একমুঠো ধানও উঠতো না ঘরে। সারা বছরই লড়াই চলতো অভাবের সঙ্গে। এভাবে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আর ঝুঁকি নিতে চাননি এ গ্রামের কৃষকরা। তাদের প্রায় সবাই ধানের মৌসুমে শুরু করলেন পাটের চাষ। এরপর থেকে পাট, পাটকাঠির ওপরই চলে তাদের সংসার।
বর্তমানে দুটিরই পাটের দামও ভালো। পাটকাঠিও বিক্রি হয় বেশ চড়া দামে। তাইতো তাদের সংসার ভর করে পাট আর পাটকাঠির ওপর।
সোমবার, (২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সরজমিনে দেখা যায়, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বেগবতী ও মাগুরার শালিখা উপজেলার ফটকি নদীর মিলনস্থলের পাশে উভয় জেলার সীমান্তবর্তী অন্তত ২১টি গ্রাম এখন জলমগ্ন।
এরমধ্যে একটি নাটোপাড়া। গ্রামজুড়েই পাট আর পাটকাঠি। বসতবাড়ির সামনে অথবা পিচঢালা সড়কের দুই পাশে সাজিয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে সড়কের দুই ধার দর্শনীয় করতে পাট আর পাটকাঠি দিয়ে যেন বিশেষ ধরনের তোরণ তৈরি করা হয়েছে।
আর প্রায় শতভাগ পরিবারই পাট ও পাটকাঠি নিয়ে ব্যস্ত। কেউ অনেকে পচানো পাটের আঁশ ছাড়াচ্ছেন। কেউ পাট ধোলাই করছেন। কেউ পাটকাঠির মেলে দিচ্ছেন। আঁটি বাঁধছেন। বা দাঁড় করাচ্ছেন। নারী-পুরুষ সমানে কাজ করে যাচ্ছেন।
ওই গ্রামের কৃষক নাটোপাড়া গ্রামের সাবুর আলী জানান, ছোটবেলায় দেখেছে বেগবতী ও ফটকি দুটি নদীই গভীর ছিল। সে সময় বর্ষা মৌসুমে পানি যতই হোক না কেন তা নদী দিয়ে বের হয়ে যেত। একটু উঁচু জমিতে আমন ধানের চাষ হতো। কিন্তু কালক্রমে নদী ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ কমে গেছে। সম্প্রতিক যে বছর একটু বেশি পানি হয় সে বছর নদী ফুলে-ফেঁপে ওঠে তাদের গ্রামসহ আশপাশের বেশ কিছু গ্রামের বিস্তর এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এতে বারবার আমন খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তারা অভাবে পড়েন। সে কারণে এখন তাদের গ্রামের কৃষকেরা আর কোনো ঝুঁকিতে যেতে রাজি না। তাই গ্রামের প্রায় শতভাগ কৃষক এখন পানি সহিঞ্চু পাটচাষে ঝুঁকেছেন।
তবে গ্রামটির গ্রামের পূর্ব দিকে কিছু উঁচু জমি আছে, সেখানে এখনও আমন ধানের চাষ হয় বলে জানান একই গ্রামের কৃষক সাবেক ইউপি সদস্য জামাত আলী। তবে বাকি অংশ নিচু, যেখানে আমনের আশা আর কেউ করেন না। পাট চাষ করেন। আটকে থাকা পানিতে চলে পাট পচানো ও ধোয়ার কাজ।
পাটের পচাতে (জাগ) আসতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় লেগে যায়। জাগ আসা পাট পানির মধ্য থেকে আঁশ ছাড়ানো, পাট ও পাটকাঠি রোদে শুকানোর সময় বাড়িতে বাড়িতে কৃষাণ-কৃষাণীদের ব্যস্ততার সীমা থাকে না। প্রতি মুঠো পাটের আঁশ ছাড়াতে দিনমজুরেরা নেন ৫/৬ টাকা। প্রতিদিন তাদের কমপক্ষে ৭-৮শত টাকা রোজগার হয়।
কৃষক আতাউর রহমান জানান, এখন গ্রামের অধিকাংশ কৃষকই পাট ঘরে তুলে ফেলেছেন। বাকিরাও খুব শীঘ্রই তুলবেন।
যা সারাদেশের মধ্যে আর কোনো গ্রামে পাট নিয়ে এমন ব্যস্ততা আছে বলে মনে হয় না তার। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা গ্রাম থেকে পাট কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পাটকাঠিও একইভাবে বিক্রি হচ্ছে। এ বছর দামও ভালো।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মাহাবুব আলম রনি জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলাতে মোট ৭শত ১০ হেক্টর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এরমধ্যে চাষ হয়েছে ৬শ’ ৬৫ হেক্টর জমিতে। তিনি বলেন, এক সময়ে বৃহত্তর যশোর অঞ্চলে পাটের রেকর্ড পরিমাণে চাষ হতো। নানাবিধ কারণে এখন কমে গেছে। তিনি বলেন, ভালো পাট হলে এক বিঘা জমিতে কমপক্ষে ১৫ মণ পাট উৎপাদন হয়। প্রতিমণ পাট এখন ৩২-৩৮শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও এক বিঘা জমিতে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকার পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে। কাজেই পাট চাষ বেশ লাভজনক। তিনি বলেন, এ উপজেলার নাটোপাড়া গ্রামটির প্রায় শতভাগ কৃষক পাটচাষ করে সোনালী আাঁশের সোনালী দিনের সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।