অপরূপ সাজে সেজেছে নরসিংদীর লাল শাপলা ও পদ্ম বিল। অনিন্দ্য সৌন্দর্যের কারণে পদ্মকে জলজ ফুলের রানী বলা হয়ে থাকে। এসব ফুল সাড়া ফেলেছে দর্শনার্থীদের মধ্যে। প্রতিদিনই বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীরা ঘুড়ে ঘুরে উপভোগ করছেন এমন অপরূপ সৌন্দর্য।
এসব পদ্মফুলের দেখা মিলেছে জেলার শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের লাল শাপলার পদ্ম চিনারদী বিল, জয়নগর ইউনিয়নের ছয়মায়া বিল ও দড়িপুরা গ্রামের কাফায়ারটেক, পলাশ উপজেলার রাবান এলাকার,কুরাইতলি বিলে পদ্ম ফুল। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘কেউ কথা রাখে নি’ কবিতায় বলেছিলেন ১০৮টি নীল পদ্মের কথা। শুধু সুনীল নয় সাহিত্যের পরতে পরতে মেলে পদ্মের উপাখ্যান। ভালোবাসার জন্য পৃথিবী তন্ন তন্ন করে নীল পদ্ম খুঁজে আনার কথা বলেছিলেন সুনীল। দেশের খাল-বিলে অবশ্য তন্ন তন্ন করে পদ্ম খোঁজার প্রয়োজন পড়ে না। প্রতি বছর বর্ষার শেষে ফুটতে শুরু করে সৌন্দর্য আর শুভ্রতার প্রতীক পদ্ম। জলজ ফুলের রানির উপস্থিতিতে জলাভূমি ও বিল-ঝিলে সৌন্দর্য বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
বিস্তৃর্ণ জলাভূমি। চারদিকে লতা-গুল্ম কোথাও কচুরিপানা। এরই মাঝে ভেসে রয়েছে অগণিত পদ্ম। স্নিগ্ধ তার রং আর আকাশে মেঘের ভেলা এই দুইয়ে মিলে যেন একাকার প্রকৃতি। বর্ষার পর শরতেও বিলগুলোয় এখন পদ্মের সমাহার। কোথাও ফুটেছে কোথাও আবার ফোঁটার অপেক্ষা। পদ্ম ফুলের পাতায় জমে থাকা পানিটিও রঙিন করে মানুষের মনকে।অনেক বছর ধরে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেয় এখানকার পদ্মফুল। ফুল দেখার উদ্দেশে আশেপাশের কয়েক উপজেলার মানুষ এ বিল গুলোতে ঘুরতে আসেন। পদ্ম বিলের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যান প্রকৃতির মাঝে। চিনারদী বিল ইতোমধ্যে লাল শাপলার পদ্মবিল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিক ভাবে পদ্মফুল জন্মে থাকে প্রতি বছরই। পুরো বিল গোলাপী আর সাদা রঙের পদ্মফুলে ভরে ওঠে। এযেন বিধাতার এক অপরূপ সৃষ্টি,যা দেখলে যে কারো মন জুড়িয়ে যায়। পদ্ম বিলের সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রতিদিনই বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার পরিজন নিয়ে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। যে যার মতো করে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন আর ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করে রাখেন। প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিল গুলোতে আসে দর্শনার্থীরা। এই সময়ে তেমন কাজ না থাকায় পদ্ম ফুল তুলে বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন স্থানীয়রা।
চিনারদী পদ্ম বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে নরসিংদী থেকে আসে নাঈম হাসান বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে পদ্ম বিল ঘুরতে আসি। এ বিলের সৌন্দর্য দেখার মতো। এখানে ঘুরতে আসলে মন ভালো হয়ে যায়।
শিবপুর সরকারি কলেজ থেকে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বর্ষার শেষ। শরৎ শুরু। এরকম সময়ে পদ্মের শোভা মন কেড়ে নিয়েছে। এখানের পরিবেশ ভালো লেগেছে। নিরাপত্তাও ভালো। তবে নৌকাগুলোতে কিছু নিরাপত্তা সরঞ্জাম থাকলে আরো ভাল হতো। ডিঙি নৌকা ভাড়া করে দর্শনার্থীরা ঘুরে বেড়ান, তাই নৌকা চালিয়ে আয়ের পথও খুঁজে পেয়েছেন বিলপাড়ের মানুষ।
চিনারদী বিলের স্থানীয় বাসিন্দা সুজিত তিনি সারা বছর বিলে মাছ ধরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এখন তিনি দর্শনার্থীদের নৌকায় চড়িয়ে বিলের ফুল দেখান। সকাল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ মানুষ বিল দেখাতে আসে । আমরাও তাদেরকে বিল দেখাইতাছি। জনপ্রতি ৫০ টাকা, ঘন্টা হিসাবে ১০০ কইরা নেই। আমরার ভালোই আয় হইতাছে। একই উপজেলার ছয়মায়া বিল থেকে লাল শাপলা ও পদ্ম ফুল তুলে বিক্রি করেন স্থানীয় শিশু সানি সে বলেন, ঘুরতে আসা কেউ যদি পদ্ম ফুল তুলতে বলে আমরা তুলে দেই। সে বিনিময়ে তারা আমাদের টাকা দেয়া। পলাশের রাবান বিলের পাড়ে কথা হয় উৎপলের দাসের সাথে তিনি বলেন, লালপদ্ম বা রক্তপদ্ম, শ্বেতপদ্ম কিংবা নীল পদ্ম চোখে পড়ে প্রকৃতির রূপ তবে আগের মত পানির প্রাচুর্যতা না থাকায় দিনের পর দিন জৌলুস হারিয়ে ফেলছে বিলগুলো। তাইতো আগের মতো আর পদ্ম কিংবা শাপলার সৌন্দর্য চোখে পড়ে না। মাঝেমধ্যে পদ্ম কাটার সাথে যুদ্ধ করে পদ্মফুল সংগ্রহের এমন চিত্র সত্যিই মুগ্ধ করে।
পদ্ম বিল পাড়ের একজন বাসিন্দা রহিম ফকির বলেন, বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে উপভোগ করেন পদ্মবিলের অপরূপ সৌন্দর্য।এই পদ্ম এলাকাটি সরকারের রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত। যাতে ভ্রমণ পিপাসুরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো জায়গা খুঁজে পায় এবং নতুন প্রজন্মকে প্রকৃতিপ্রেমী করে গড়ে তুলতে পারে।
শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, দিনশেষে প্রকৃতির কাছাকাছি আমাদের ফিরতেই হয়। সেক্ষেত্রে আমরা প্রকৃতিকে উন্মুক্ত রাখতে চাই। প্রকৃতিকে যদি আমরা উপভোগ করতে চাই তাহলে সকলের জন্য এটা উন্মুক্ত রাখতে হবে। আমরা চাই পর্যটক এবং ভ্রমণ পিপাসু যারা আছেন, তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, সবাই মিলে যেন প্রকৃতির উপভোগ করতে পারি,সেই পরিবেশটা যেন ঠিক থাকে। পাশাপাশি আমরা সবাই যে যার জায়গা থেকে এর সৌন্দর্য ঠিক রাখার জন্য সচেষ্ট থাকব।
বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
অপরূপ সাজে সেজেছে নরসিংদীর লাল শাপলা ও পদ্ম বিল। অনিন্দ্য সৌন্দর্যের কারণে পদ্মকে জলজ ফুলের রানী বলা হয়ে থাকে। এসব ফুল সাড়া ফেলেছে দর্শনার্থীদের মধ্যে। প্রতিদিনই বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীরা ঘুড়ে ঘুরে উপভোগ করছেন এমন অপরূপ সৌন্দর্য।
এসব পদ্মফুলের দেখা মিলেছে জেলার শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের লাল শাপলার পদ্ম চিনারদী বিল, জয়নগর ইউনিয়নের ছয়মায়া বিল ও দড়িপুরা গ্রামের কাফায়ারটেক, পলাশ উপজেলার রাবান এলাকার,কুরাইতলি বিলে পদ্ম ফুল। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘কেউ কথা রাখে নি’ কবিতায় বলেছিলেন ১০৮টি নীল পদ্মের কথা। শুধু সুনীল নয় সাহিত্যের পরতে পরতে মেলে পদ্মের উপাখ্যান। ভালোবাসার জন্য পৃথিবী তন্ন তন্ন করে নীল পদ্ম খুঁজে আনার কথা বলেছিলেন সুনীল। দেশের খাল-বিলে অবশ্য তন্ন তন্ন করে পদ্ম খোঁজার প্রয়োজন পড়ে না। প্রতি বছর বর্ষার শেষে ফুটতে শুরু করে সৌন্দর্য আর শুভ্রতার প্রতীক পদ্ম। জলজ ফুলের রানির উপস্থিতিতে জলাভূমি ও বিল-ঝিলে সৌন্দর্য বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
বিস্তৃর্ণ জলাভূমি। চারদিকে লতা-গুল্ম কোথাও কচুরিপানা। এরই মাঝে ভেসে রয়েছে অগণিত পদ্ম। স্নিগ্ধ তার রং আর আকাশে মেঘের ভেলা এই দুইয়ে মিলে যেন একাকার প্রকৃতি। বর্ষার পর শরতেও বিলগুলোয় এখন পদ্মের সমাহার। কোথাও ফুটেছে কোথাও আবার ফোঁটার অপেক্ষা। পদ্ম ফুলের পাতায় জমে থাকা পানিটিও রঙিন করে মানুষের মনকে।অনেক বছর ধরে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেয় এখানকার পদ্মফুল। ফুল দেখার উদ্দেশে আশেপাশের কয়েক উপজেলার মানুষ এ বিল গুলোতে ঘুরতে আসেন। পদ্ম বিলের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যান প্রকৃতির মাঝে। চিনারদী বিল ইতোমধ্যে লাল শাপলার পদ্মবিল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিক ভাবে পদ্মফুল জন্মে থাকে প্রতি বছরই। পুরো বিল গোলাপী আর সাদা রঙের পদ্মফুলে ভরে ওঠে। এযেন বিধাতার এক অপরূপ সৃষ্টি,যা দেখলে যে কারো মন জুড়িয়ে যায়। পদ্ম বিলের সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রতিদিনই বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার পরিজন নিয়ে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। যে যার মতো করে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন আর ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করে রাখেন। প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিল গুলোতে আসে দর্শনার্থীরা। এই সময়ে তেমন কাজ না থাকায় পদ্ম ফুল তুলে বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন স্থানীয়রা।
চিনারদী পদ্ম বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে নরসিংদী থেকে আসে নাঈম হাসান বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে পদ্ম বিল ঘুরতে আসি। এ বিলের সৌন্দর্য দেখার মতো। এখানে ঘুরতে আসলে মন ভালো হয়ে যায়।
শিবপুর সরকারি কলেজ থেকে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বর্ষার শেষ। শরৎ শুরু। এরকম সময়ে পদ্মের শোভা মন কেড়ে নিয়েছে। এখানের পরিবেশ ভালো লেগেছে। নিরাপত্তাও ভালো। তবে নৌকাগুলোতে কিছু নিরাপত্তা সরঞ্জাম থাকলে আরো ভাল হতো। ডিঙি নৌকা ভাড়া করে দর্শনার্থীরা ঘুরে বেড়ান, তাই নৌকা চালিয়ে আয়ের পথও খুঁজে পেয়েছেন বিলপাড়ের মানুষ।
চিনারদী বিলের স্থানীয় বাসিন্দা সুজিত তিনি সারা বছর বিলে মাছ ধরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এখন তিনি দর্শনার্থীদের নৌকায় চড়িয়ে বিলের ফুল দেখান। সকাল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ মানুষ বিল দেখাতে আসে । আমরাও তাদেরকে বিল দেখাইতাছি। জনপ্রতি ৫০ টাকা, ঘন্টা হিসাবে ১০০ কইরা নেই। আমরার ভালোই আয় হইতাছে। একই উপজেলার ছয়মায়া বিল থেকে লাল শাপলা ও পদ্ম ফুল তুলে বিক্রি করেন স্থানীয় শিশু সানি সে বলেন, ঘুরতে আসা কেউ যদি পদ্ম ফুল তুলতে বলে আমরা তুলে দেই। সে বিনিময়ে তারা আমাদের টাকা দেয়া। পলাশের রাবান বিলের পাড়ে কথা হয় উৎপলের দাসের সাথে তিনি বলেন, লালপদ্ম বা রক্তপদ্ম, শ্বেতপদ্ম কিংবা নীল পদ্ম চোখে পড়ে প্রকৃতির রূপ তবে আগের মত পানির প্রাচুর্যতা না থাকায় দিনের পর দিন জৌলুস হারিয়ে ফেলছে বিলগুলো। তাইতো আগের মতো আর পদ্ম কিংবা শাপলার সৌন্দর্য চোখে পড়ে না। মাঝেমধ্যে পদ্ম কাটার সাথে যুদ্ধ করে পদ্মফুল সংগ্রহের এমন চিত্র সত্যিই মুগ্ধ করে।
পদ্ম বিল পাড়ের একজন বাসিন্দা রহিম ফকির বলেন, বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে উপভোগ করেন পদ্মবিলের অপরূপ সৌন্দর্য।এই পদ্ম এলাকাটি সরকারের রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত। যাতে ভ্রমণ পিপাসুরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো জায়গা খুঁজে পায় এবং নতুন প্রজন্মকে প্রকৃতিপ্রেমী করে গড়ে তুলতে পারে।
শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, দিনশেষে প্রকৃতির কাছাকাছি আমাদের ফিরতেই হয়। সেক্ষেত্রে আমরা প্রকৃতিকে উন্মুক্ত রাখতে চাই। প্রকৃতিকে যদি আমরা উপভোগ করতে চাই তাহলে সকলের জন্য এটা উন্মুক্ত রাখতে হবে। আমরা চাই পর্যটক এবং ভ্রমণ পিপাসু যারা আছেন, তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, সবাই মিলে যেন প্রকৃতির উপভোগ করতে পারি,সেই পরিবেশটা যেন ঠিক থাকে। পাশাপাশি আমরা সবাই যে যার জায়গা থেকে এর সৌন্দর্য ঠিক রাখার জন্য সচেষ্ট থাকব।