চান্দিনা (কুমিল্লা) : সরকারি খাল ভরাট করে সমিলের ব্যবসা -সংবাদ
কুমিল্লার চান্দিনায় সরকারি খাল ভরাট করে স’মিল ব্যবসা সাজিয়ে বসেছেন লোকমান হোসেন শাহজাহান নামে সাবেক এক যুবদল নেতা। খালটি ভরাটের ফলে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ মহিচাইল বাজার, মহিচাইল উচ্চ বিদ্যালয়, মহিচাইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ আশপাশের বাড়ির পানি নিস্কাশনে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। মহিচাইল বাজারের যে পুকুরটির সাথে ‘ছরা’ খালটির সংযোগ ওই সংযোগ স্থলেই খালটির প্রায় আড়াইশ ফুট ভরাট করায় পানি নিষ্কাশনের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
খাল ভরাট উচ্ছেদের মাধ্যমে খালটি পুনঃখনন করে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মহিচাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন। চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত ওই অভিযোগটি দায়ের করেন তিনি।
লোকমান হোসেন শাহজাহান চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল গ্রামের মৃত আব্দুল মালেক এর ছেলে। তিনি চান্দিনা উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি। তবে তিনি এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে রাজনৈতিক দল বদল করেছেন কয়েকবার। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামলে আওয়ামী লীগের এমপি’র ঘনিষ্ঠজন হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিও করেছেন। তিনবার করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনও। ৫ আগস্টের পর আবারও ফিরেছেন বিএনপিতে।
প্রধান শিক্ষকের দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে- বাজার সংলগ্ন পুকুরটিতে মহিচাইল উচ্চ বিদ্যালয়, মহিচাইল বাজার, মহিচাইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও আশপাশের বাড়ির বৃষ্টির পানি বাজার সংলগ্ন পুকুরটিতে জমে। ওই পুকুরের সাথে সংযুক্ত ছিল একটি খাল। যা সিএস ম্যাপ থেকে শুরু করে বিএস ম্যাপেও ওই খালটি রয়েছে।
পুকুরের অতিরিক্ত পানি ওই খাল দিয়ে নিস্কাশন হতো। কিন্তু লোকমান হোসেন শাহজাহান ও তার ভাই আবুল কালাম আজাদ কয়েক বছর যাবত সরকারি ওই খালটি অবৈধভাবে ভরাট করে সেখানে স’মিল ব্যবসাসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এদিকে, বর্ষা মৌসুমেই বিদ্যালয় দুইটির পানি, বাজারের পানিসহ আশাপাশের পানি পুকুরটিতে জমে ধ্বসে পড়ছে পাকা সড়ক। জলাবদ্ধতার ফলে মাধাইয়া-নবাবপুর সড়কের মহিচাইল বাজার সংলগ্ন ওই পুকুরটির পাড় রক্ষায় সরকারি অর্থায়নে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করতে হচ্ছে রিটার্নিং ওয়াল।
স্থানীয় বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন, মোসলেম স্বর্ণকার, আব্দুল জব্বারসহ একাধিক ব্যক্তি জানান- জন্মের পর থেকেই পুকুরটির সাথে খালটির সংযোগ দেখে আসছি। কয়েক বছর আগে হঠাৎ ওই খালটির মুখ বন্ধ করে দেন লোকমান হোসেন শাহজাহান। পুকুরটির পশ্চিম পাড় মাধাইয়া-রহিমানগর পাকা সড়ক, তার সাথে মহিচাইল উচ্চ বিদ্যালয় ও বাজার। দক্ষিণ পাড়ে কাঁচা সড়ক, বাজার ও মহিচাইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব ও উত্তর পাড়ে বাড়ি ঘর। উত্তর পূর্ব কোনে ছিল খালটি। যার নাম ‘ছরা খাল’।
ওই খালটির প্রধান মুখটি বন্ধ করে দেয়ায় বৃষ্টি হলেই পুকুরের দক্ষিণ পাড়ের কাঁচা সড়কটি ডুবে যায়, অতিরিক্ত পানি স্কুল মাঠে ঢুকে খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যায়। পশ্চিম পাড়ের পাকা সড়কটি ধ্বসে যান চলাচলের প্রায় অনুপযোগি হয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায় সরকার রিটার্নিং ওয়াল করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু পুকুরের সাথে খালের সংযোগটি থাকলে অতিরিক্ত পানি খালে নিস্কাশন হতো। আমরা দ্রুত খালটি পুনঃউদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।
পুকুরের পাড় ও পাকা সড়ক ধ্বসে পড়ার ফলে রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ প্রসঙ্গে চান্দিনা উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান- পুকুরের পানি নিষ্কাশনে কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্কুলের মাঠে জলাবদ্ধতা এবং সড়ক ধ্বসে পড়ে এটা সত্য। কিন্তু আমি আগে জানতাম না যে পুকুরটির সাথে খালের সংযোগ ছিল এবং তা সরকারি নকশায়ও আছে। আমি শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে খালটি পুনঃউদ্ধারের চেষ্টা করবো।
সাবেক যুবদল নেতা লোকমান হোসেন শাহজাহান জানান- নকশায় কোন খাল নেই, তবে পুকুরের সাথে খালের একটি সংযোগ ছিল। পুকুরে মাছ চাষ করার জন্য সংযোগটি বন্ধ করেছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি সঠিক না। চান্দিনা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আল নুর জানান- অভিযোগের ঘটনাটি সত্য। আমরা সরেজমিন তদন্ত করেছি এবং মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ানে শ্রেণি খাল রয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে সেখানে খালের কোন অস্তিত্বই নেই। আমরা খুব শীঘ্রই খালটি পুনঃরুদ্ধার করবো।
চান্দিনা (কুমিল্লা) : সরকারি খাল ভরাট করে সমিলের ব্যবসা -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কুমিল্লার চান্দিনায় সরকারি খাল ভরাট করে স’মিল ব্যবসা সাজিয়ে বসেছেন লোকমান হোসেন শাহজাহান নামে সাবেক এক যুবদল নেতা। খালটি ভরাটের ফলে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ মহিচাইল বাজার, মহিচাইল উচ্চ বিদ্যালয়, মহিচাইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ আশপাশের বাড়ির পানি নিস্কাশনে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। মহিচাইল বাজারের যে পুকুরটির সাথে ‘ছরা’ খালটির সংযোগ ওই সংযোগ স্থলেই খালটির প্রায় আড়াইশ ফুট ভরাট করায় পানি নিষ্কাশনের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
খাল ভরাট উচ্ছেদের মাধ্যমে খালটি পুনঃখনন করে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মহিচাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন। চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত ওই অভিযোগটি দায়ের করেন তিনি।
লোকমান হোসেন শাহজাহান চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল গ্রামের মৃত আব্দুল মালেক এর ছেলে। তিনি চান্দিনা উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি। তবে তিনি এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে রাজনৈতিক দল বদল করেছেন কয়েকবার। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামলে আওয়ামী লীগের এমপি’র ঘনিষ্ঠজন হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিও করেছেন। তিনবার করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনও। ৫ আগস্টের পর আবারও ফিরেছেন বিএনপিতে।
প্রধান শিক্ষকের দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে- বাজার সংলগ্ন পুকুরটিতে মহিচাইল উচ্চ বিদ্যালয়, মহিচাইল বাজার, মহিচাইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও আশপাশের বাড়ির বৃষ্টির পানি বাজার সংলগ্ন পুকুরটিতে জমে। ওই পুকুরের সাথে সংযুক্ত ছিল একটি খাল। যা সিএস ম্যাপ থেকে শুরু করে বিএস ম্যাপেও ওই খালটি রয়েছে।
পুকুরের অতিরিক্ত পানি ওই খাল দিয়ে নিস্কাশন হতো। কিন্তু লোকমান হোসেন শাহজাহান ও তার ভাই আবুল কালাম আজাদ কয়েক বছর যাবত সরকারি ওই খালটি অবৈধভাবে ভরাট করে সেখানে স’মিল ব্যবসাসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এদিকে, বর্ষা মৌসুমেই বিদ্যালয় দুইটির পানি, বাজারের পানিসহ আশাপাশের পানি পুকুরটিতে জমে ধ্বসে পড়ছে পাকা সড়ক। জলাবদ্ধতার ফলে মাধাইয়া-নবাবপুর সড়কের মহিচাইল বাজার সংলগ্ন ওই পুকুরটির পাড় রক্ষায় সরকারি অর্থায়নে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করতে হচ্ছে রিটার্নিং ওয়াল।
স্থানীয় বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন, মোসলেম স্বর্ণকার, আব্দুল জব্বারসহ একাধিক ব্যক্তি জানান- জন্মের পর থেকেই পুকুরটির সাথে খালটির সংযোগ দেখে আসছি। কয়েক বছর আগে হঠাৎ ওই খালটির মুখ বন্ধ করে দেন লোকমান হোসেন শাহজাহান। পুকুরটির পশ্চিম পাড় মাধাইয়া-রহিমানগর পাকা সড়ক, তার সাথে মহিচাইল উচ্চ বিদ্যালয় ও বাজার। দক্ষিণ পাড়ে কাঁচা সড়ক, বাজার ও মহিচাইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব ও উত্তর পাড়ে বাড়ি ঘর। উত্তর পূর্ব কোনে ছিল খালটি। যার নাম ‘ছরা খাল’।
ওই খালটির প্রধান মুখটি বন্ধ করে দেয়ায় বৃষ্টি হলেই পুকুরের দক্ষিণ পাড়ের কাঁচা সড়কটি ডুবে যায়, অতিরিক্ত পানি স্কুল মাঠে ঢুকে খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যায়। পশ্চিম পাড়ের পাকা সড়কটি ধ্বসে যান চলাচলের প্রায় অনুপযোগি হয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায় সরকার রিটার্নিং ওয়াল করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু পুকুরের সাথে খালের সংযোগটি থাকলে অতিরিক্ত পানি খালে নিস্কাশন হতো। আমরা দ্রুত খালটি পুনঃউদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।
পুকুরের পাড় ও পাকা সড়ক ধ্বসে পড়ার ফলে রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ প্রসঙ্গে চান্দিনা উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান- পুকুরের পানি নিষ্কাশনে কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্কুলের মাঠে জলাবদ্ধতা এবং সড়ক ধ্বসে পড়ে এটা সত্য। কিন্তু আমি আগে জানতাম না যে পুকুরটির সাথে খালের সংযোগ ছিল এবং তা সরকারি নকশায়ও আছে। আমি শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে খালটি পুনঃউদ্ধারের চেষ্টা করবো।
সাবেক যুবদল নেতা লোকমান হোসেন শাহজাহান জানান- নকশায় কোন খাল নেই, তবে পুকুরের সাথে খালের একটি সংযোগ ছিল। পুকুরে মাছ চাষ করার জন্য সংযোগটি বন্ধ করেছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি সঠিক না। চান্দিনা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আল নুর জানান- অভিযোগের ঘটনাটি সত্য। আমরা সরেজমিন তদন্ত করেছি এবং মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ানে শ্রেণি খাল রয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে সেখানে খালের কোন অস্তিত্বই নেই। আমরা খুব শীঘ্রই খালটি পুনঃরুদ্ধার করবো।