চট্টগ্রামে জুলাই আন্দোলনের সময় দোকান কর্মচারী শহীদুল ইসলাম শহীদ হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের একাধিক সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ ২৩১ জন আসামির বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে আদালত।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের চতুর্থ মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তফা এই আদেশ দেন। এটিই চট্টগ্রামে জুলাই আন্দোলনের প্রথম কোনো হত্যা মামলা; যার অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হলো।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ২০২৪ সালের ৩ অগাস্ট নিহত শহীদুল ইসলাম শহীদ হত্যা মামলায় ২৩১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করা হয়েছে।
শুনানিতে মামলার বাদী শফিকুল ইসলামের পক্ষে আইনজীবী অভিযোগ করেন, নিরীহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের নাম বাদীর এজাহারে ছিল না। তবে আদালত বাদীর নারাজি আবেদন খারিজ করে চার্জশিট সরাসরি গ্রহণ করেন।
নিহত শহীদুল ইসলামের ভাই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে শুরুতে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। তদন্ত শেষে গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে তদন্ত কর্মকর্তা ২৩১ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন ২ অগাস্ট জানিয়েছিলেন, তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণ হয়েছে তাদেরই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও রেজাউল করিম চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে আছেন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, এম আবদুল লতিফ, এস এম আল মামুন, আবদুচ ছালাম, মহিউদ্দিন বাচ্চু, দিদারুল আলম দিদার ও নোমান আল মাহমুদ।
নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীসহ বহু সাবেক কাউন্সিলরকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন— এসরারুল হক, কাজী নুরুল আলম মামুন, এম আশরাফুল আলম, সাইফুদ্দিন খালেদ সাইফু, জাবেদ নজরুল ইসলাম, পুলক খাস্তগীর, ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, মো. ইলিয়াছ, মোরশেদ আলী, মোবারক আলী, গিয়াস উদ্দিন, জহর লাল হাজারী, আবদুস সবুর লিটন, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, জিয়াউল হক সুমন, গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের, নেছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, নূর মোস্তফা টিনু, আবুল হাসান মো. বেলাল, মোরশেদ আলম, নাজমুল হক ডিউক, জহুরুল আলম জসিম, শৈবাল দাশ সুমন, কফিল উদ্দিন খান ও সলিমুল্লাহ বাচ্চু।
তালিকায় আরও আছেন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনি, নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম, যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু, নগর যুবলীগের সহ-সভাপতি দেবাশীষ পাল দেবু, নগর ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আরশেদুল আলম বাচ্চু, ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।
২০২৪ সালের ৩ অগাস্ট সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান দোকান কর্মচারী মো. শহীদুল ইসলাম শহীদ (৩৭)। তিনি কদমতলীর একটি জুতার দোকানে কাজ করতেন। বাজার করে বাসায় ফেরার পথে বহদ্দার পুকুর পাড় এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। পরে মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তার শরীর থেকে ১০টি ধাতব পিলেট উদ্ধার হয়, যা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে নিক্ষিপ্ত বলে সিআইডির ফরেনসিক বিশারদ মত দেন। প্রতিবেদনে তার হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও পাকস্থলীতে আঘাতের কথাও উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা লাঠি-শোঠা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনায় তারা সশস্ত্র হামলায় অংশ নেয়। শহীদুল ইসলাম ঘটনার দিন চাকরি শেষে বাড়ি ফেরার পথে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, সেদিন আসামি মহিউদ্দিন ফরহাদ প্রথমে পিস্তল দিয়ে গুলি চালান। এরপর ফিরোজ, তৌহিদুল ইসলাম ও দেলোয়ার শর্টগান দিয়ে গুলি করে। এ ছাড়াও মো. জালাল, এইচ এম মিঠু, নূর মোস্তফা টিনু, ঋভু মজুমদার ও মো. তাসিন গুলি ছোড়েন, যাতে আরও অনেকে আহত হন।
গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলায় নিহত ও আহতদের ঘটনায় চট্টগ্রামে মোট ১৫১টি মামলা হয়। এর মধ্যে এই প্রথম কোনো মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণ করল আদালত।
বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
চট্টগ্রামে জুলাই আন্দোলনের সময় দোকান কর্মচারী শহীদুল ইসলাম শহীদ হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের একাধিক সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ ২৩১ জন আসামির বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে আদালত।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের চতুর্থ মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তফা এই আদেশ দেন। এটিই চট্টগ্রামে জুলাই আন্দোলনের প্রথম কোনো হত্যা মামলা; যার অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হলো।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ২০২৪ সালের ৩ অগাস্ট নিহত শহীদুল ইসলাম শহীদ হত্যা মামলায় ২৩১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করা হয়েছে।
শুনানিতে মামলার বাদী শফিকুল ইসলামের পক্ষে আইনজীবী অভিযোগ করেন, নিরীহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের নাম বাদীর এজাহারে ছিল না। তবে আদালত বাদীর নারাজি আবেদন খারিজ করে চার্জশিট সরাসরি গ্রহণ করেন।
নিহত শহীদুল ইসলামের ভাই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে শুরুতে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। তদন্ত শেষে গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে তদন্ত কর্মকর্তা ২৩১ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন ২ অগাস্ট জানিয়েছিলেন, তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণ হয়েছে তাদেরই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও রেজাউল করিম চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে আছেন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, এম আবদুল লতিফ, এস এম আল মামুন, আবদুচ ছালাম, মহিউদ্দিন বাচ্চু, দিদারুল আলম দিদার ও নোমান আল মাহমুদ।
নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীসহ বহু সাবেক কাউন্সিলরকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন— এসরারুল হক, কাজী নুরুল আলম মামুন, এম আশরাফুল আলম, সাইফুদ্দিন খালেদ সাইফু, জাবেদ নজরুল ইসলাম, পুলক খাস্তগীর, ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, মো. ইলিয়াছ, মোরশেদ আলী, মোবারক আলী, গিয়াস উদ্দিন, জহর লাল হাজারী, আবদুস সবুর লিটন, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, জিয়াউল হক সুমন, গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের, নেছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, নূর মোস্তফা টিনু, আবুল হাসান মো. বেলাল, মোরশেদ আলম, নাজমুল হক ডিউক, জহুরুল আলম জসিম, শৈবাল দাশ সুমন, কফিল উদ্দিন খান ও সলিমুল্লাহ বাচ্চু।
তালিকায় আরও আছেন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনি, নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম, যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু, নগর যুবলীগের সহ-সভাপতি দেবাশীষ পাল দেবু, নগর ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আরশেদুল আলম বাচ্চু, ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।
২০২৪ সালের ৩ অগাস্ট সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান দোকান কর্মচারী মো. শহীদুল ইসলাম শহীদ (৩৭)। তিনি কদমতলীর একটি জুতার দোকানে কাজ করতেন। বাজার করে বাসায় ফেরার পথে বহদ্দার পুকুর পাড় এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। পরে মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তার শরীর থেকে ১০টি ধাতব পিলেট উদ্ধার হয়, যা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে নিক্ষিপ্ত বলে সিআইডির ফরেনসিক বিশারদ মত দেন। প্রতিবেদনে তার হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও পাকস্থলীতে আঘাতের কথাও উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা লাঠি-শোঠা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনায় তারা সশস্ত্র হামলায় অংশ নেয়। শহীদুল ইসলাম ঘটনার দিন চাকরি শেষে বাড়ি ফেরার পথে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, সেদিন আসামি মহিউদ্দিন ফরহাদ প্রথমে পিস্তল দিয়ে গুলি চালান। এরপর ফিরোজ, তৌহিদুল ইসলাম ও দেলোয়ার শর্টগান দিয়ে গুলি করে। এ ছাড়াও মো. জালাল, এইচ এম মিঠু, নূর মোস্তফা টিনু, ঋভু মজুমদার ও মো. তাসিন গুলি ছোড়েন, যাতে আরও অনেকে আহত হন।
গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলায় নিহত ও আহতদের ঘটনায় চট্টগ্রামে মোট ১৫১টি মামলা হয়। এর মধ্যে এই প্রথম কোনো মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণ করল আদালত।