সম্প্রতি ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সহিংসতার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে নারী সংগঠনগুলো বিবৃতি দিচ্ছে। করছে সভা-সমাবেশও। যার মধ্যে প্রাচীনতম সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদও রয়েছে। তাদেরই সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিটাও নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য দায়ী’
এর সাথে তরুণদের থাকতে হবে বললে কম বলা হবে। আসলে তাদেরকে এই নারী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সবাইকে ‘ঔন’ করতে হবে
সম্প্রতি নারীর প্রতি সহিংসতা- নিয়ে এক আয়োজনে তিনি বলেছেন, লৈঙ্গিক বৈষম্যের ধারণা, চেতনা ও কাঠামো যত দিন সমাজে থাকবে, তত দিন নারীর প্রতি সহিংসতা চলবে। বর্তমানে কিছু আইনের পরিবর্তন নারীর প্রতি সহিংসতাকে আরও প্রশ্রয় দিচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। ১৯৭০ সাল থেকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সেই যাত্রালগ্ন থেকে নারী আন্দোলনে কাজ করে যাচ্ছেন ফওজিয়া মোসলেম। এতো বছরে নারীর প্রতি সহিংসতার গতিপথ নিয়ে তার সাথে সম্প্রতি কথা হলো সংবাদ এর। সাক্ষাৎকারটি প্রায় হুবুহু তুলে ধরা হলো-
সংবাদ: বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের এক বছরে কতটা প্রত্যাশা অর্জন হয়েছে?
ফওজিয়া মোসলেম: যদি নারী আন্দোলনের দিক থেকে বলেন, তাহলে কিন্তু খুব একটা প্রত্যাশা তৈরির সুযোগই হয়নি বা পাননি। বিশেষ করে কোটা আন্দোলন, এ আন্দোলন তো শুরু হলো নারী কোটা নিয়ে? শুধু নারী কোটা। সেজন্য প্রথম থেকেই কিন্তু আমাদের স্ট্যান্ড ছিলো যে নারীর বিরুদ্ধে কোটাটা নারীর ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধেযাবে। এবং এ আলোচনায় এই যে হত্যা, এই যে নির্যাতন- এগুলো কোনো সমাধান না। এগুলোকে বন্ধ করে একটা গ্রহণযোগ্য আলোচনায় আসা এবং সেখানে কোটাটাও থাকবে, নারী কোটা বিশেষ করে। অন্য কোটা নিয়ে আমাদের আলোচনা নয়। অন্যথায় নারী ক্ষমতায়ন পিছিয়ে যাবে।
এটা তো আন্দোলনের সময় আমাদের কথা ছিলো। পরবর্তীতে আমরা দেখলাম যেদিন বিজয় হলো, বিজয়ের তিন-চারদিন পরই দেখা গেলো বেগম রোকেয়ার মুখে কালি মেখে দেয়া হলো। মেয়েদের উপর পোশাক নিয়ে ধাক্কা আসলো। কাজেই সবকিছু মিলিয়ে কিন্তু প্রথম থেকেই আমাদের সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশা দাঁড় হওয়ার সুযোগটাই হয়নি বা তারা আগ্রহ দেখাননি।
পরবর্তীতে আমরা বলতে পারি নারী কমিশন যখন হলো, তাদের সুপারিশগুলো কমিশন যখন হ্যান্ডওভার করলো, তখন প্রধান উপদেষ্টা খুব উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। কিন্তু সাথে সাথেই যখন একদল লোক (উগ্রপন্থা) এটাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার কথা বললো, তখন কিন্তু সবাই চুপ। তখন কিন্তু শুধু আমরাই কথা বললাম, মহিলা পরিষদই প্রেস কনফারেন্স করে কথা বলেছে এ বিষয়ে।
কাজেই সবকিছু মিলিয়ে এই এক বছরে যে সব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো কিন্তু নারীর জীবনকে সংহত করার ক্ষেত্রে, এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখে নাই।
সংবাদ: তাহলে কি বলতে চাচ্ছেন যে, নারী কমিশন যেসব সংস্কার নিয়ে সুপারিশ করেছে সেগুলোর কোনো ভালো কিছু আমরা পাব না?
ফাওজিয়া মোসলেম: পাব কি না জানি না। যদি নির্বাচন হয় এই সরকারের পরে নির্বাচন কিভাবে হয় বা যে সরকার আসবে, সেটা তো আমি বলতে পারি না। তবে তিন/চার মাসে কিছু হবে বলে মনে হয় না। কারন হচ্ছে যে, ইতোমধ্যে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে সব নারী সংগঠনের একটা মিটিং হয়েছিলো। সেখানে আমাদের নারী কমিশনের সদস্যরাও ছিলেন। তারা বলেছেন, এ নির্বাচনে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাবটা দিয়েছে, (সেটা নিয়ে তো আমাদের বক্তব্য আছেই। আমরা তো এর সাথে একমত নই) ঐকমত্য কমিশনের প্রধানের কাছে বললো তারা তাদের রিপোর্টটি কমিশনের কাছে দিয়েছে। এটার ভিত্তিতে আপনারা ঐকমত্য কমিশনের কাছে উল্লেখ করেন। তখন তিনি বলছেন, ঐকমত্য কমিশনের যে টার্মস অব রেফারেন্স সেটার মধ্যে নারী কমিশনের রিপোর্টটা নাই। তার মানে নিশ্চয়ই নারী কমিশনটা এখানে উহ্য ছিলো।
সংবাদ: তার মানে ঐকমত্য কমিশনে নারী বিষয়ক আলোচনাগুলো পরিষ্কারভাবে আসেই নি?
ফাওজিয়া মোসলেম: আসে-ই নাই। পলিটিক্যাল ছিলো। কারণ ওখানে কোনো নারী প্রতিনিধিও ছিলো না, নারী কমিশনের রিপোর্টও ছিলো না।
সংবাদ: তার মানে নারী ইস্যুতে ঐকমত্য কমিশনেও আমরা কোনো আশার আলো দেখছি না।
ফাওজিয়া মোসলেম: আমার মনে হচ্ছে যে নারী আন্দোলন একটা পশ্চাদমুখীনতার একটা সংকট হলেও হতে পারে।
সংবাদ: আপনার এই কথা সূত্র ধরে যদি প্রশ্ন করি, আপনার কি মনে হয়- এই সার্বিক বিবেচনায় আমরা বেগম রোকেয়ার যুগের চেয়েও খারাপ দিকে চলে যাচ্ছি?
ফাওজিয়া মোসলেম: না, সেটা মনে করছি না। তাহলে এতোদিন ধরে আমরা কি করে কাজ করছি? নিশ্চয়ই একটা পজিটিভিটি অ্যাপ্রোচ আছে বলেই কাজ করছি। সেই বিবেচনায় আমি বলতে চাই, বেগম রোকেয়ার যুগে ফিরে যাবো না। কারণ হচ্ছে যে যতই হোক, যেভাবেই হোক নারীর মধ্যে তো একটা জাগরণ আছে। নারী তার ক্ষমতায়নের জন্য প্রস্তুত হয়েছে এবং সেটার জন্য সে লড়াই করছে। যার যার অবস্থান থেকে সে লড়াই করছে। বেগম রোকেয়া তো তার যুগে একা লড়েছেন, এখন এই যে লড়াই করার আগ্রহটা মেয়েদের মধ্যে তৈরি হয়েছে, এটা আমাদের সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। এগিয়ে যেতে পারবো আমরা। এখন যদিও মনে হয়, আমরা একটা জটিল সময় পার করছি, রাজনৈতিকভাবে একটা শূন্যতা- এই সময়টা যদি আমরা পার হতে পারি, তখন দেখবে যে নারী আন্দোলন আরো শক্তিশালী হয়ে গেছে।
সংবাদ: ধর্ষণ, শ্লীলতাহানী, নারীর পোশাক নিয়ে হয়রানি- এই সার্বিক পরিস্থিতিতে আপনার পরামর্শ কী? আমরা কোন দিকে যেতে পারি?
ফাওজিয়া মোসলেম: সব সংকট তো নারীর পক্ষে একা সমাধান করা সম্ভব না। কিছু সংকট আছে যেগুলোকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। যেমন- একটা জায়গাতে তো আমরা বুঝেছি (আমার ধারণা যেটা), এই যে জুলাই অভ্যুত্থানের পরে যেটা হলো সেটা একজন নারীর প্রতি ভীতিকর একটা সংস্কৃতি তৈরি করার চেষ্টা করা হলো এবং সেটা কিন্তু মব ভায়োলেন্সের মধ্য দিয়ে, তার পোশাকের কথা বলে, যেটার আমরা সর্বশেষ রিফ্লেকশন দেখলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নোটিশে (যদিও সেটি প্রত্যাহার করা হয়েছে)।
কাজেই নারীর অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে একটা গোষ্ঠী তো কাজ করছে। সেই গোষ্ঠীটাকে যদি শক্তিশালী হতে না দেয় মানুষ, তাহলে পরে এটা ছাড়া তো আর পথ নাই। এখন যদি এমন হয়- একটা কথা বলি, এই জুলাই সনদ তো আসলো, এই আসার মধ্য দিয়ে আমি একটা জিনিস বুঝলাম, বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট ঔন করছে। মুক্তিযুদ্ধ আর জুলাইকে যে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছিলো, সেটা হয় নাই। শুধু এটুকুই কিন্তু আমাদের অনেক শক্তি।
মুক্তিযুদ্ধ যে আমাদের কাছ থেকে হাইজ্যাক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো, মুক্তিযুদ্ধ যে একটি পরিবারের হাতে বন্দী ছিলো, সেখান থেকে যদি ফিরিয়ে এনে আমরা জনগণের মুক্তিযুদ্ধ করতে পারি- সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সমতার যে রাজনীতি আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলাম; সেই রাজনীতি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই কিন্তু আমাকে এই নারীর প্রতি অবমাননার প্রতিশোধ নিতে হবে, মানে নারীর অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হবে। কাজেই নারীর আন্দোলনটা পাশাপাশি দু’টোই হবে- একটা হলো নারীর অগ্রযাত্রার আন্দোলন, আর অন্যটা হলো আমাদের সংবিধানে স্বীকৃত সাম্য, সমতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করেই চলবে। তা না হলে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করলে, সেটা কোনো ফল হয় না। কারণ এগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। নারী-বিরোধী যে শক্তি আছে এগুলো তাদেরই প্রচারের ফল।
এই চিন্তার সাথে অবশ্যই প্রশাসনিক বিষয়, আইনশৃঙ্খলা জড়িত আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তো খুবই খারাপ। শুনছিলাম যে, সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন হচ্ছে।
সেখানে যেসব নারীরা আসছেন ওই এলাকায় তাদের কাপড়-চোপর নেই, একটা থাকার জায়গা নেই, বসতে পারছে না। থানার সামনে তারা দিনের পর দিন বসে কাটাচ্ছে। তো বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কাছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা চেয়েছে। তখন আমি বলেছি, পুলিশই তো এটুকুন সহায়তা করতে পারে। তখন তারা জানালো- পুলিশ কিভাবে করবে, তার তো শুধু চামড়া আর পোশাকটাই আছে, আর তো কিছু নেই। কাজেই আজকে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, তার তো নানা কারণ আছে। একটা হচ্ছে, পুলিশ যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না। তার থানা, অস্ত্র লুট হয়ে গেছে। কাজেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিটাও নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য দায়ী।
পাশাপাশি বিচার। বিচারে আমরা খুব বড় বড় বক্তৃতা দিলাম। ১৮০ দিন থেকে কমিয়ে ১২০ দিন করলো। কিন্তু শুধুমাত্র ওই যেটা টোকেন- মাগুরার ঘটনাটার বিচার হয়েছে, তা-ও বেশি আলোচিত হওয়ায়। তারপরও নিহতের মায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
তারপর তো আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে। মুরাদনগরের ঘটনারই তো কোনো হেলদোল নাই। তার সাথে আমরা দেখছি যে, আইনের কাছে নারীর যে অভিগম্যতা সেটাও সংকুচিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে সমাজের মধ্যে নারীবিরোধী সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এইজন্য নারীর আন্দোলনটার সাথে নারীবিরোধী সংস্কৃতিকে দূর করতে সাম্য, সমতার আন্দোলনকে সম্পৃক্ত করে কাজ করতে হবে।
সংবাদ: নারী অধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন কবে থেকে?
ফওজিয়া মোসলেম: ছাত্রজীবনে শেষের দিকে ৭০ সালের দিকে। তখন মনে হলো, এতগুলো বছর যে একটা অঙ্গীকারের সাথে থাকলাম, এই অঙ্গীকারটা আগামী জীবনে কীভাবে রক্ষা করবো? তখন ছাত্র সংগঠন থাকতে পারবো না, মূল রাজনৈতিক দলে থাকাটা সেটাও আমার জন্য কঠিন কাজ। সেসময়েই ভাবনা এলো মহিলাদের নিয়ে কিছু করা যায় কি না।
আমরা যখন এসব ভাবছি, তখন ফরহাদ ভাই বললেন, একমাত্র মহিলা রাজবন্দি মতিয়া চৌধুরীর মুক্তিতে মহিলাদের স্বাক্ষর সম্বলিত একটা প্রতিবাদ পত্রিকায় দেন।
সেসময় সুফিয়া কামালের সান্নিধ্য পাওয়া। তখন তিনি বললেন, শুধু মহিলা নয়, সাধারণ রাজবন্দিদের পরিবারও অনেক কষ্টে আছে, তাদের জন্যও কিছু করো। তখন ব্যাপক অর্থে কাজ শুরু হলো। এবং তিনিই বললেন, কৃষক, শ্রমিক- সবারই সংগঠন আছে। তোরা একটা মহিলা সংগঠন কর। আমরাও পথ খুঁজছি তিনিও প্রস্তাব দিলেন। সেই শুরু। শুরুতে ৫/৬ জন ছিলাম। এখন তো অনেক বড় পরিসর। তখনকার আমরা দু’জন- আমি ও রত্না আপা এখনও মহিলা পরিষদে আছি।
সংবাদ: আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
ফওজিয়া মোসলেম: একটা তো পরিকল্পনা আমাদের আছেই। এই আন্দোলনটার সাথে তরুণদের থাকতে হবে বললে কম বলা হবে। আসলে তাদেরকে এই নারী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ‘ঔন’ করতে হবে। এখন অনেক সংগঠনই নারী আন্দোলন নিয়ে কাজ করছে। তবে আমাদের ঘোষণাপত্র এবং গঠনতন্ত্র অনেক প্রাগমেটিক, এখানে তরুণদের সম্পৃক্ত করার বিষয়টি আছেই। জেলা পর্যায়ে আমাদের তরুণ নেতৃত্ব আসছে। এখন কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তরুণ নেতৃত্ব দিতে হবে। তখনই মহিলা পরিষদকে আমরা আরো গতিশীল করতে পারবো।
সংবাদ: এই নারী আন্দোলনের সাথে পুরুষদের সম্পৃক্ত করতে আপনাদের করণীয় কী?
ফওজিয়া মোসলেম: অবশ্যই করণীয় আছে। একটা হচ্ছে- আইনগুলো যদি জেন্ডার সেনসেটাইজ হয় তাহলে সেখানে খুব বেশি কাজ করার দরকার নেই। কারণ আইন মানতে হয়, সেটা দিয়ে পুরুষ সমাজ বুঝতে শিখে। আরেকটা হচ্ছে- লাইফস্টাইল। সেখানে তো একটা পরিবর্তন হচ্ছে। একক পরিবার হওয়ায় কিছু পুরুষ তো ঘরের কাজ করছেই। এই যে নারীর সামাজিক কাজে, প্রাতিষ্ঠানিক কাজে নারীর যত অংশগ্রহণ বাড়বে, ততই জীবনের প্রয়োজনেই নারীর প্রতি পুরুষ সংবেদনশীল হয়ে উঠবে। তবে এর নিয়মিত চর্চা থাকতে হবে। সেজন্য আমরা জেন্ডার সার্টিফিকেট কোর্স করাই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে- সমাজ মানসিকতাকে নারীবান্ধব করে গড়ে তোলা। এখানে বেশি পুরুষরাই অংশ নেন। আইন, প্রশাসনিক জায়গা, সামাজিক কাঠামোতে যদি এই সংবেদনশীলতাটা গড়ে তোলা যায়, তাতেই পরিবর্তন আসবে। তবে পুরুষতন্ত্র তো শুধু পুরুষের মধ্যে নয়, নারীর মধ্যেও আছে। তাই এই কাজগুলো জরুরি।
সংবাদ: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সম্প্রতি ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সহিংসতার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে নারী সংগঠনগুলো বিবৃতি দিচ্ছে। করছে সভা-সমাবেশও। যার মধ্যে প্রাচীনতম সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদও রয়েছে। তাদেরই সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিটাও নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য দায়ী’
এর সাথে তরুণদের থাকতে হবে বললে কম বলা হবে। আসলে তাদেরকে এই নারী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সবাইকে ‘ঔন’ করতে হবে
সম্প্রতি নারীর প্রতি সহিংসতা- নিয়ে এক আয়োজনে তিনি বলেছেন, লৈঙ্গিক বৈষম্যের ধারণা, চেতনা ও কাঠামো যত দিন সমাজে থাকবে, তত দিন নারীর প্রতি সহিংসতা চলবে। বর্তমানে কিছু আইনের পরিবর্তন নারীর প্রতি সহিংসতাকে আরও প্রশ্রয় দিচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। ১৯৭০ সাল থেকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সেই যাত্রালগ্ন থেকে নারী আন্দোলনে কাজ করে যাচ্ছেন ফওজিয়া মোসলেম। এতো বছরে নারীর প্রতি সহিংসতার গতিপথ নিয়ে তার সাথে সম্প্রতি কথা হলো সংবাদ এর। সাক্ষাৎকারটি প্রায় হুবুহু তুলে ধরা হলো-
সংবাদ: বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের এক বছরে কতটা প্রত্যাশা অর্জন হয়েছে?
ফওজিয়া মোসলেম: যদি নারী আন্দোলনের দিক থেকে বলেন, তাহলে কিন্তু খুব একটা প্রত্যাশা তৈরির সুযোগই হয়নি বা পাননি। বিশেষ করে কোটা আন্দোলন, এ আন্দোলন তো শুরু হলো নারী কোটা নিয়ে? শুধু নারী কোটা। সেজন্য প্রথম থেকেই কিন্তু আমাদের স্ট্যান্ড ছিলো যে নারীর বিরুদ্ধে কোটাটা নারীর ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধেযাবে। এবং এ আলোচনায় এই যে হত্যা, এই যে নির্যাতন- এগুলো কোনো সমাধান না। এগুলোকে বন্ধ করে একটা গ্রহণযোগ্য আলোচনায় আসা এবং সেখানে কোটাটাও থাকবে, নারী কোটা বিশেষ করে। অন্য কোটা নিয়ে আমাদের আলোচনা নয়। অন্যথায় নারী ক্ষমতায়ন পিছিয়ে যাবে।
এটা তো আন্দোলনের সময় আমাদের কথা ছিলো। পরবর্তীতে আমরা দেখলাম যেদিন বিজয় হলো, বিজয়ের তিন-চারদিন পরই দেখা গেলো বেগম রোকেয়ার মুখে কালি মেখে দেয়া হলো। মেয়েদের উপর পোশাক নিয়ে ধাক্কা আসলো। কাজেই সবকিছু মিলিয়ে কিন্তু প্রথম থেকেই আমাদের সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশা দাঁড় হওয়ার সুযোগটাই হয়নি বা তারা আগ্রহ দেখাননি।
পরবর্তীতে আমরা বলতে পারি নারী কমিশন যখন হলো, তাদের সুপারিশগুলো কমিশন যখন হ্যান্ডওভার করলো, তখন প্রধান উপদেষ্টা খুব উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। কিন্তু সাথে সাথেই যখন একদল লোক (উগ্রপন্থা) এটাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার কথা বললো, তখন কিন্তু সবাই চুপ। তখন কিন্তু শুধু আমরাই কথা বললাম, মহিলা পরিষদই প্রেস কনফারেন্স করে কথা বলেছে এ বিষয়ে।
কাজেই সবকিছু মিলিয়ে এই এক বছরে যে সব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো কিন্তু নারীর জীবনকে সংহত করার ক্ষেত্রে, এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখে নাই।
সংবাদ: তাহলে কি বলতে চাচ্ছেন যে, নারী কমিশন যেসব সংস্কার নিয়ে সুপারিশ করেছে সেগুলোর কোনো ভালো কিছু আমরা পাব না?
ফাওজিয়া মোসলেম: পাব কি না জানি না। যদি নির্বাচন হয় এই সরকারের পরে নির্বাচন কিভাবে হয় বা যে সরকার আসবে, সেটা তো আমি বলতে পারি না। তবে তিন/চার মাসে কিছু হবে বলে মনে হয় না। কারন হচ্ছে যে, ইতোমধ্যে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে সব নারী সংগঠনের একটা মিটিং হয়েছিলো। সেখানে আমাদের নারী কমিশনের সদস্যরাও ছিলেন। তারা বলেছেন, এ নির্বাচনে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাবটা দিয়েছে, (সেটা নিয়ে তো আমাদের বক্তব্য আছেই। আমরা তো এর সাথে একমত নই) ঐকমত্য কমিশনের প্রধানের কাছে বললো তারা তাদের রিপোর্টটি কমিশনের কাছে দিয়েছে। এটার ভিত্তিতে আপনারা ঐকমত্য কমিশনের কাছে উল্লেখ করেন। তখন তিনি বলছেন, ঐকমত্য কমিশনের যে টার্মস অব রেফারেন্স সেটার মধ্যে নারী কমিশনের রিপোর্টটা নাই। তার মানে নিশ্চয়ই নারী কমিশনটা এখানে উহ্য ছিলো।
সংবাদ: তার মানে ঐকমত্য কমিশনে নারী বিষয়ক আলোচনাগুলো পরিষ্কারভাবে আসেই নি?
ফাওজিয়া মোসলেম: আসে-ই নাই। পলিটিক্যাল ছিলো। কারণ ওখানে কোনো নারী প্রতিনিধিও ছিলো না, নারী কমিশনের রিপোর্টও ছিলো না।
সংবাদ: তার মানে নারী ইস্যুতে ঐকমত্য কমিশনেও আমরা কোনো আশার আলো দেখছি না।
ফাওজিয়া মোসলেম: আমার মনে হচ্ছে যে নারী আন্দোলন একটা পশ্চাদমুখীনতার একটা সংকট হলেও হতে পারে।
সংবাদ: আপনার এই কথা সূত্র ধরে যদি প্রশ্ন করি, আপনার কি মনে হয়- এই সার্বিক বিবেচনায় আমরা বেগম রোকেয়ার যুগের চেয়েও খারাপ দিকে চলে যাচ্ছি?
ফাওজিয়া মোসলেম: না, সেটা মনে করছি না। তাহলে এতোদিন ধরে আমরা কি করে কাজ করছি? নিশ্চয়ই একটা পজিটিভিটি অ্যাপ্রোচ আছে বলেই কাজ করছি। সেই বিবেচনায় আমি বলতে চাই, বেগম রোকেয়ার যুগে ফিরে যাবো না। কারণ হচ্ছে যে যতই হোক, যেভাবেই হোক নারীর মধ্যে তো একটা জাগরণ আছে। নারী তার ক্ষমতায়নের জন্য প্রস্তুত হয়েছে এবং সেটার জন্য সে লড়াই করছে। যার যার অবস্থান থেকে সে লড়াই করছে। বেগম রোকেয়া তো তার যুগে একা লড়েছেন, এখন এই যে লড়াই করার আগ্রহটা মেয়েদের মধ্যে তৈরি হয়েছে, এটা আমাদের সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। এগিয়ে যেতে পারবো আমরা। এখন যদিও মনে হয়, আমরা একটা জটিল সময় পার করছি, রাজনৈতিকভাবে একটা শূন্যতা- এই সময়টা যদি আমরা পার হতে পারি, তখন দেখবে যে নারী আন্দোলন আরো শক্তিশালী হয়ে গেছে।
সংবাদ: ধর্ষণ, শ্লীলতাহানী, নারীর পোশাক নিয়ে হয়রানি- এই সার্বিক পরিস্থিতিতে আপনার পরামর্শ কী? আমরা কোন দিকে যেতে পারি?
ফাওজিয়া মোসলেম: সব সংকট তো নারীর পক্ষে একা সমাধান করা সম্ভব না। কিছু সংকট আছে যেগুলোকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। যেমন- একটা জায়গাতে তো আমরা বুঝেছি (আমার ধারণা যেটা), এই যে জুলাই অভ্যুত্থানের পরে যেটা হলো সেটা একজন নারীর প্রতি ভীতিকর একটা সংস্কৃতি তৈরি করার চেষ্টা করা হলো এবং সেটা কিন্তু মব ভায়োলেন্সের মধ্য দিয়ে, তার পোশাকের কথা বলে, যেটার আমরা সর্বশেষ রিফ্লেকশন দেখলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নোটিশে (যদিও সেটি প্রত্যাহার করা হয়েছে)।
কাজেই নারীর অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে একটা গোষ্ঠী তো কাজ করছে। সেই গোষ্ঠীটাকে যদি শক্তিশালী হতে না দেয় মানুষ, তাহলে পরে এটা ছাড়া তো আর পথ নাই। এখন যদি এমন হয়- একটা কথা বলি, এই জুলাই সনদ তো আসলো, এই আসার মধ্য দিয়ে আমি একটা জিনিস বুঝলাম, বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট ঔন করছে। মুক্তিযুদ্ধ আর জুলাইকে যে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছিলো, সেটা হয় নাই। শুধু এটুকুই কিন্তু আমাদের অনেক শক্তি।
মুক্তিযুদ্ধ যে আমাদের কাছ থেকে হাইজ্যাক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো, মুক্তিযুদ্ধ যে একটি পরিবারের হাতে বন্দী ছিলো, সেখান থেকে যদি ফিরিয়ে এনে আমরা জনগণের মুক্তিযুদ্ধ করতে পারি- সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সমতার যে রাজনীতি আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলাম; সেই রাজনীতি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই কিন্তু আমাকে এই নারীর প্রতি অবমাননার প্রতিশোধ নিতে হবে, মানে নারীর অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হবে। কাজেই নারীর আন্দোলনটা পাশাপাশি দু’টোই হবে- একটা হলো নারীর অগ্রযাত্রার আন্দোলন, আর অন্যটা হলো আমাদের সংবিধানে স্বীকৃত সাম্য, সমতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করেই চলবে। তা না হলে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করলে, সেটা কোনো ফল হয় না। কারণ এগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। নারী-বিরোধী যে শক্তি আছে এগুলো তাদেরই প্রচারের ফল।
এই চিন্তার সাথে অবশ্যই প্রশাসনিক বিষয়, আইনশৃঙ্খলা জড়িত আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তো খুবই খারাপ। শুনছিলাম যে, সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন হচ্ছে।
সেখানে যেসব নারীরা আসছেন ওই এলাকায় তাদের কাপড়-চোপর নেই, একটা থাকার জায়গা নেই, বসতে পারছে না। থানার সামনে তারা দিনের পর দিন বসে কাটাচ্ছে। তো বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কাছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা চেয়েছে। তখন আমি বলেছি, পুলিশই তো এটুকুন সহায়তা করতে পারে। তখন তারা জানালো- পুলিশ কিভাবে করবে, তার তো শুধু চামড়া আর পোশাকটাই আছে, আর তো কিছু নেই। কাজেই আজকে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, তার তো নানা কারণ আছে। একটা হচ্ছে, পুলিশ যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না। তার থানা, অস্ত্র লুট হয়ে গেছে। কাজেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিটাও নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য দায়ী।
পাশাপাশি বিচার। বিচারে আমরা খুব বড় বড় বক্তৃতা দিলাম। ১৮০ দিন থেকে কমিয়ে ১২০ দিন করলো। কিন্তু শুধুমাত্র ওই যেটা টোকেন- মাগুরার ঘটনাটার বিচার হয়েছে, তা-ও বেশি আলোচিত হওয়ায়। তারপরও নিহতের মায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
তারপর তো আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে। মুরাদনগরের ঘটনারই তো কোনো হেলদোল নাই। তার সাথে আমরা দেখছি যে, আইনের কাছে নারীর যে অভিগম্যতা সেটাও সংকুচিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে সমাজের মধ্যে নারীবিরোধী সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এইজন্য নারীর আন্দোলনটার সাথে নারীবিরোধী সংস্কৃতিকে দূর করতে সাম্য, সমতার আন্দোলনকে সম্পৃক্ত করে কাজ করতে হবে।
সংবাদ: নারী অধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন কবে থেকে?
ফওজিয়া মোসলেম: ছাত্রজীবনে শেষের দিকে ৭০ সালের দিকে। তখন মনে হলো, এতগুলো বছর যে একটা অঙ্গীকারের সাথে থাকলাম, এই অঙ্গীকারটা আগামী জীবনে কীভাবে রক্ষা করবো? তখন ছাত্র সংগঠন থাকতে পারবো না, মূল রাজনৈতিক দলে থাকাটা সেটাও আমার জন্য কঠিন কাজ। সেসময়েই ভাবনা এলো মহিলাদের নিয়ে কিছু করা যায় কি না।
আমরা যখন এসব ভাবছি, তখন ফরহাদ ভাই বললেন, একমাত্র মহিলা রাজবন্দি মতিয়া চৌধুরীর মুক্তিতে মহিলাদের স্বাক্ষর সম্বলিত একটা প্রতিবাদ পত্রিকায় দেন।
সেসময় সুফিয়া কামালের সান্নিধ্য পাওয়া। তখন তিনি বললেন, শুধু মহিলা নয়, সাধারণ রাজবন্দিদের পরিবারও অনেক কষ্টে আছে, তাদের জন্যও কিছু করো। তখন ব্যাপক অর্থে কাজ শুরু হলো। এবং তিনিই বললেন, কৃষক, শ্রমিক- সবারই সংগঠন আছে। তোরা একটা মহিলা সংগঠন কর। আমরাও পথ খুঁজছি তিনিও প্রস্তাব দিলেন। সেই শুরু। শুরুতে ৫/৬ জন ছিলাম। এখন তো অনেক বড় পরিসর। তখনকার আমরা দু’জন- আমি ও রত্না আপা এখনও মহিলা পরিষদে আছি।
সংবাদ: আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
ফওজিয়া মোসলেম: একটা তো পরিকল্পনা আমাদের আছেই। এই আন্দোলনটার সাথে তরুণদের থাকতে হবে বললে কম বলা হবে। আসলে তাদেরকে এই নারী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ‘ঔন’ করতে হবে। এখন অনেক সংগঠনই নারী আন্দোলন নিয়ে কাজ করছে। তবে আমাদের ঘোষণাপত্র এবং গঠনতন্ত্র অনেক প্রাগমেটিক, এখানে তরুণদের সম্পৃক্ত করার বিষয়টি আছেই। জেলা পর্যায়ে আমাদের তরুণ নেতৃত্ব আসছে। এখন কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তরুণ নেতৃত্ব দিতে হবে। তখনই মহিলা পরিষদকে আমরা আরো গতিশীল করতে পারবো।
সংবাদ: এই নারী আন্দোলনের সাথে পুরুষদের সম্পৃক্ত করতে আপনাদের করণীয় কী?
ফওজিয়া মোসলেম: অবশ্যই করণীয় আছে। একটা হচ্ছে- আইনগুলো যদি জেন্ডার সেনসেটাইজ হয় তাহলে সেখানে খুব বেশি কাজ করার দরকার নেই। কারণ আইন মানতে হয়, সেটা দিয়ে পুরুষ সমাজ বুঝতে শিখে। আরেকটা হচ্ছে- লাইফস্টাইল। সেখানে তো একটা পরিবর্তন হচ্ছে। একক পরিবার হওয়ায় কিছু পুরুষ তো ঘরের কাজ করছেই। এই যে নারীর সামাজিক কাজে, প্রাতিষ্ঠানিক কাজে নারীর যত অংশগ্রহণ বাড়বে, ততই জীবনের প্রয়োজনেই নারীর প্রতি পুরুষ সংবেদনশীল হয়ে উঠবে। তবে এর নিয়মিত চর্চা থাকতে হবে। সেজন্য আমরা জেন্ডার সার্টিফিকেট কোর্স করাই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে- সমাজ মানসিকতাকে নারীবান্ধব করে গড়ে তোলা। এখানে বেশি পুরুষরাই অংশ নেন। আইন, প্রশাসনিক জায়গা, সামাজিক কাঠামোতে যদি এই সংবেদনশীলতাটা গড়ে তোলা যায়, তাতেই পরিবর্তন আসবে। তবে পুরুষতন্ত্র তো শুধু পুরুষের মধ্যে নয়, নারীর মধ্যেও আছে। তাই এই কাজগুলো জরুরি।
সংবাদ: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।