উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : গন্ধযুক্ত খাদ্য গুদামের চাল -সংবাদ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুস্থ ও অসহায় মহিলাদের জন্য ভিডাব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় ৩০ কেজি চালের বস্তায় পচা এবং দূর্গন্ধযুক্ত খাবার অযোগ্য চাল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের চাল হওয়ায় তা দুস্থদের মাঝে বিতরণ বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি ঘটেছে, উপজেলার বজরা ইউনিয়ন পরিষদে। এদিকে ওই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে।
বজরা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধিনে অতি দরিদ্র ও অসচ্ছল নারীদের খাদ্য সহায়তা হিসাবে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল প্রদানের কথা। সেই হিসাবে জুলাই ও আগষ্ট মাসে ওই ইউনিয়নের ২শ ৯০ জন সুবিধাভোগী দুই মাসের ৬০ কেজি চাল পাবেন। সে মোতাবেক গত ১০ সেপ্টেম্বর উলিপুর খাদ্য গুদাম থেকে ৩০ কেজি ওজনের ৫শ ৮০ বস্তায় ১৭ টন ৪শ কেজি চাল উত্তোলন করে বজরা ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে নেয়া হয়।
সরেজমিন বজরা ইউনিয়ন পরিষদে গেলে কথা হয় পরিষদের সদস্য আরজু মিয়া, লুৎফর রহমান ও এনামুল হকের সাথে। তারা জানান, উলিপুর সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে জুলাই ও আগষ্ট মাসে ভিডাব্লিউবি এর চাল উত্তোলন করা হয়। পরিষদের গুদামে চালগুলো আনার পর দেখা যায় অধিকাংশ বস্তায় পচা ও দূর্গন্ধযুক্ত চাল সরবারহ করা হয়েছে। চালগুলো একেক বস্তায় একেক ধরনের। তাই চালগুলো বিতরন করা হয়নি। বিষয়টি চেয়ারম্যানসহ আমরা ইউএনওকে অবগত করেছি।
উলিপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা হিসাবে মোহাম্মদ আলী চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। শুরুতেই চলতি বছরের বোরো মৌসুমে ধান চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়ম করেন। বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহের লটারী হয়। সেখানে ৫শ ২৩ জন কৃষক নির্বাচিত হন। তাদের কাছ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৫শ ৬৫ মেঃ টন ধান সংগ্রহ করা হয়। একজন কৃষক সর্বোচ্চ ৩ টন করে ধান খাদ্য গুদামে বিক্রি করেছেন। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা লটারীতে নাম ওঠা কৃষকের নাম বাদ দিয়ে প্রায় ৫০ব্যক্তির কাছে ধান সংগ্রহ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে খাদ্য গুদামের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক খাদ্য ব্যবসায়ী বলেন, লটারীতে নাম ওঠা যেসব কৃষকের নামে গুদামে ধান সংগ্রহ হয়েছে তাদের নিকট টন প্রতি ১ হাজার ২শত টাকা করে প্রায় ১৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন গুদাম কর্মকর্তা। এছাড়া বোরো মৌসুমে ১ হাজার ৪শ ৬৯ মে. টন চাল সংগ্রহ করা হয়। সরকারি বিধি মোতাবেক চুক্তিবদ্ধ মিলারদের কাছ থেকে ৪৯ টাকা কেজি দরে শুটার (পালিশ) চাল সংগ্রহ করার নিয়ম। কিন্তু গুদাম কর্মকর্তা মিলারদের কাছে অধিকাংশ নন শুটার ও নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করেন। এর বিনিময়ে টন প্রতি ২ হাজার ৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নেন। এভাবে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন। চালগুলো খাবার অযোগ্য হওয়ায় তা নিতে অস্বীকার করেছেন দরিদ্র সুবিধাভোগীরা। ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী নিম্নমানের চাল সরবরাহের কথা অস্বীকার করে বলেন, পরিষদের লোকজনের সাথে পজেটিভ আলোচনা হয়েছে। খারাপ চাল যাওয়ার কথা না। গুদাম থেকে চালগুলো সরবরাহের সময় আপনি দেখেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখে দিয়েছে একটু উনিশ-বিশ হতে পারে। বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে অনিয়ম ও উৎকোচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিসবাহুল হুসাইন বজরা ইউনিয়নে নিম্নমানের চাল সরবরাহের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা জানান, নিমানের চালের বিষয়ে বজরা ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে অবগত করেছেন। উপজেলা খাদ্য বিভাগকে সরেজমিন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে। কোন অবস্থাতেই খারাপ চাল বিতরন করা যাবে না।
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : গন্ধযুক্ত খাদ্য গুদামের চাল -সংবাদ
শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুস্থ ও অসহায় মহিলাদের জন্য ভিডাব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় ৩০ কেজি চালের বস্তায় পচা এবং দূর্গন্ধযুক্ত খাবার অযোগ্য চাল সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের চাল হওয়ায় তা দুস্থদের মাঝে বিতরণ বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি ঘটেছে, উপজেলার বজরা ইউনিয়ন পরিষদে। এদিকে ওই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে।
বজরা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধিনে অতি দরিদ্র ও অসচ্ছল নারীদের খাদ্য সহায়তা হিসাবে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল প্রদানের কথা। সেই হিসাবে জুলাই ও আগষ্ট মাসে ওই ইউনিয়নের ২শ ৯০ জন সুবিধাভোগী দুই মাসের ৬০ কেজি চাল পাবেন। সে মোতাবেক গত ১০ সেপ্টেম্বর উলিপুর খাদ্য গুদাম থেকে ৩০ কেজি ওজনের ৫শ ৮০ বস্তায় ১৭ টন ৪শ কেজি চাল উত্তোলন করে বজরা ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে নেয়া হয়।
সরেজমিন বজরা ইউনিয়ন পরিষদে গেলে কথা হয় পরিষদের সদস্য আরজু মিয়া, লুৎফর রহমান ও এনামুল হকের সাথে। তারা জানান, উলিপুর সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে জুলাই ও আগষ্ট মাসে ভিডাব্লিউবি এর চাল উত্তোলন করা হয়। পরিষদের গুদামে চালগুলো আনার পর দেখা যায় অধিকাংশ বস্তায় পচা ও দূর্গন্ধযুক্ত চাল সরবারহ করা হয়েছে। চালগুলো একেক বস্তায় একেক ধরনের। তাই চালগুলো বিতরন করা হয়নি। বিষয়টি চেয়ারম্যানসহ আমরা ইউএনওকে অবগত করেছি।
উলিপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা হিসাবে মোহাম্মদ আলী চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। শুরুতেই চলতি বছরের বোরো মৌসুমে ধান চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়ম করেন। বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহের লটারী হয়। সেখানে ৫শ ২৩ জন কৃষক নির্বাচিত হন। তাদের কাছ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৫শ ৬৫ মেঃ টন ধান সংগ্রহ করা হয়। একজন কৃষক সর্বোচ্চ ৩ টন করে ধান খাদ্য গুদামে বিক্রি করেছেন। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা লটারীতে নাম ওঠা কৃষকের নাম বাদ দিয়ে প্রায় ৫০ব্যক্তির কাছে ধান সংগ্রহ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে খাদ্য গুদামের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক খাদ্য ব্যবসায়ী বলেন, লটারীতে নাম ওঠা যেসব কৃষকের নামে গুদামে ধান সংগ্রহ হয়েছে তাদের নিকট টন প্রতি ১ হাজার ২শত টাকা করে প্রায় ১৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন গুদাম কর্মকর্তা। এছাড়া বোরো মৌসুমে ১ হাজার ৪শ ৬৯ মে. টন চাল সংগ্রহ করা হয়। সরকারি বিধি মোতাবেক চুক্তিবদ্ধ মিলারদের কাছ থেকে ৪৯ টাকা কেজি দরে শুটার (পালিশ) চাল সংগ্রহ করার নিয়ম। কিন্তু গুদাম কর্মকর্তা মিলারদের কাছে অধিকাংশ নন শুটার ও নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করেন। এর বিনিময়ে টন প্রতি ২ হাজার ৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নেন। এভাবে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন। চালগুলো খাবার অযোগ্য হওয়ায় তা নিতে অস্বীকার করেছেন দরিদ্র সুবিধাভোগীরা। ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী নিম্নমানের চাল সরবরাহের কথা অস্বীকার করে বলেন, পরিষদের লোকজনের সাথে পজেটিভ আলোচনা হয়েছে। খারাপ চাল যাওয়ার কথা না। গুদাম থেকে চালগুলো সরবরাহের সময় আপনি দেখেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখে দিয়েছে একটু উনিশ-বিশ হতে পারে। বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে অনিয়ম ও উৎকোচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিসবাহুল হুসাইন বজরা ইউনিয়নে নিম্নমানের চাল সরবরাহের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা জানান, নিমানের চালের বিষয়ে বজরা ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে অবগত করেছেন। উপজেলা খাদ্য বিভাগকে সরেজমিন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে। কোন অবস্থাতেই খারাপ চাল বিতরন করা যাবে না।