ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
‘একটি পরিবারের স্বপ্নের মৃত্যু যেন আমাদের কাছে শুধুই আরেকটি খবর নয়- এই বাস্তবতাই বলে দেয়, জীবনের মূল্য কতটা অসীম, আর প্রবাসের জীবন কতটা অনিশ্চিত।’ একটি পরিবার, একটি স্বপ্ন আর সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটে জীবন দিলো এক তরুণ হাফিজুর রহমান। যে গিয়েছিল হাজার মাইল দূরে, পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে।
সাইপ্রাসে নির্মাণ কাজের সময় ছাদ থেকে পড়ে হাফিজুর রহমান (৪৫) নামে যশোরের বেনাপোলের এক প্রবাসীর করুণ মৃত্যু হয়েছে। তিনি বেনাপোল সীমান্তের পুটখালী (হাজিপাড়া) গ্রামের মৃত রবিউল ইসলামের ছেলে।
এ বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে সংসার-পরিজন ছেড়ে ইউরোপের এই দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্নের পরিসমাপ্তি ঘটলো এক নির্মম মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
হাসপাতালের বিছানায় ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতেই মারা যান হাফিজুর। একদিকে স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে রেখে যাওয়া দেনার বোঝা সব মিলিয়ে ভেঙে পড়েছে পরিবারটি।
পুটখালী সীমান্তের চিত্রটাই বলে দেয় হাফিজুরদের কষ্টের গল্প। এক সময় ভারতীয় গরুর ব্যবসায় জীবিকা চললেও সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৫ বছর। সংসারের অভাব কাটাতে এখন অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। হাফিজুরও ছিলেন তাদের একজন।
স্বজনরা জানান, এক বন্ধুর মাধ্যমে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে সাইপ্রাসে যান হাফিজুর। এরমধ্যে ৭ লাখ টাকা তিনি মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন সাইপ্রাসের ল্যাবকোসা শহরে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, কাজের প্রথম দিনেই অসাবধানতার কারণে ৭তলা ভবনের ছাদ থেকে নিচে পড়ে যান তিনি। সহকর্মীরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। ৫ দিন ছিলেন লাইফ সাপোর্টে। দিনরাত লড়াই করে ২২ সেপ্টেম্বর হার মানেন। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে মরদেহ দেশে আসার কথা রয়েছে।
পুটখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তানজিলা খাতুন বলেন, ১১ ভাইবোনের মধ্যে হাফিজুর ছিলেন সবচেয়ে ছোট। বাবাকে আগেই হারিয়েছেন, এবার পরিবারের হাল ধরার স্বপ্নও শেষ হলো অকালে। মরদেহ যাতে দ্রুত দেশে আসে সে ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
হাফিজুরের ভাই আনিছুর রহমান বলেন, সংসারের অভাব ঘোচাতে বিদেশে গিয়েছিলেন ভাই হাফিজুর। কিন্তু তাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেল পরিবার। দ্রুত মরদেহ যেন দেশে ফেরত আসে, সে বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা চাই।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাজী নাজিব হাসান জানান, নিহতের পরিবারকে সরকারি আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করলে মরদেহ দ্রুত দেশে ফেরাতে সহযোগিতা করবে উপজেলা প্রশাসন।
প্রবাসী হাফিজুরের স্বপ্ন এখন মরদেহ হয়ে ফিরে আসছে। আর তার পেছনে পড়ে রইলো শোকে পাথর হয়ে যাওয়া পরিবার, অনিশ্চয়তার বোঝা আর চোখের জলে ভেজা পুটখালী গ্রামের আকাশে-বাতাসে।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
‘একটি পরিবারের স্বপ্নের মৃত্যু যেন আমাদের কাছে শুধুই আরেকটি খবর নয়- এই বাস্তবতাই বলে দেয়, জীবনের মূল্য কতটা অসীম, আর প্রবাসের জীবন কতটা অনিশ্চিত।’ একটি পরিবার, একটি স্বপ্ন আর সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটে জীবন দিলো এক তরুণ হাফিজুর রহমান। যে গিয়েছিল হাজার মাইল দূরে, পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে।
সাইপ্রাসে নির্মাণ কাজের সময় ছাদ থেকে পড়ে হাফিজুর রহমান (৪৫) নামে যশোরের বেনাপোলের এক প্রবাসীর করুণ মৃত্যু হয়েছে। তিনি বেনাপোল সীমান্তের পুটখালী (হাজিপাড়া) গ্রামের মৃত রবিউল ইসলামের ছেলে।
এ বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে সংসার-পরিজন ছেড়ে ইউরোপের এই দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্নের পরিসমাপ্তি ঘটলো এক নির্মম মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
হাসপাতালের বিছানায় ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতেই মারা যান হাফিজুর। একদিকে স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে রেখে যাওয়া দেনার বোঝা সব মিলিয়ে ভেঙে পড়েছে পরিবারটি।
পুটখালী সীমান্তের চিত্রটাই বলে দেয় হাফিজুরদের কষ্টের গল্প। এক সময় ভারতীয় গরুর ব্যবসায় জীবিকা চললেও সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৫ বছর। সংসারের অভাব কাটাতে এখন অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। হাফিজুরও ছিলেন তাদের একজন।
স্বজনরা জানান, এক বন্ধুর মাধ্যমে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে সাইপ্রাসে যান হাফিজুর। এরমধ্যে ৭ লাখ টাকা তিনি মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন সাইপ্রাসের ল্যাবকোসা শহরে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, কাজের প্রথম দিনেই অসাবধানতার কারণে ৭তলা ভবনের ছাদ থেকে নিচে পড়ে যান তিনি। সহকর্মীরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। ৫ দিন ছিলেন লাইফ সাপোর্টে। দিনরাত লড়াই করে ২২ সেপ্টেম্বর হার মানেন। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে মরদেহ দেশে আসার কথা রয়েছে।
পুটখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তানজিলা খাতুন বলেন, ১১ ভাইবোনের মধ্যে হাফিজুর ছিলেন সবচেয়ে ছোট। বাবাকে আগেই হারিয়েছেন, এবার পরিবারের হাল ধরার স্বপ্নও শেষ হলো অকালে। মরদেহ যাতে দ্রুত দেশে আসে সে ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
হাফিজুরের ভাই আনিছুর রহমান বলেন, সংসারের অভাব ঘোচাতে বিদেশে গিয়েছিলেন ভাই হাফিজুর। কিন্তু তাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেল পরিবার। দ্রুত মরদেহ যেন দেশে ফেরত আসে, সে বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা চাই।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাজী নাজিব হাসান জানান, নিহতের পরিবারকে সরকারি আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করলে মরদেহ দ্রুত দেশে ফেরাতে সহযোগিতা করবে উপজেলা প্রশাসন।
প্রবাসী হাফিজুরের স্বপ্ন এখন মরদেহ হয়ে ফিরে আসছে। আর তার পেছনে পড়ে রইলো শোকে পাথর হয়ে যাওয়া পরিবার, অনিশ্চয়তার বোঝা আর চোখের জলে ভেজা পুটখালী গ্রামের আকাশে-বাতাসে।