ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে আদালতের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে একযুগ ধরে বাল্য বিবাহ বহুবিবাহসহ ৪ হাজার বিবাহ ও সহস্রাধিক তালাকনামা নিবন্ধন করার অভিযোগ উঠেছে নিকাহ রেজিস্ট্রার আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে। অসদুপায়ে নিয়োগ পাওয়া এ কাজী জনগণের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন ।
জানা যায়, আবদুর রহমান ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর তথ্য গোপন করে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে কমলগরের চর কাদিরা ইউনিয়নের অস্থায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসাবে নিয়োগ পান। ওই সময় তৎকালিন আইন মন্ত্রী কামরুল ইসলাম মোটা অঙ্কের টাকার বিমিময়ে কোন যাচাই বাছাই না করে জনপ্রতি দশ লক্ষাধিক টাকা করে নিয়ে বহু লোককে নিয়োগ দেন। নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ বিধিমালায় সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে,’একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ প্রত্যাশীকে অবশ্যই নিয়োগ লাভের জন্য শূন্য অধিক্ষেত্রের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে । কিন্তু বিতর্কিত আবদুর রহমান সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়ে অন্য ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া সত্বেও চর কাদিরা ইউনিয়নে নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ নেন। যা নিকাহ রেজিস্ট্রার বিধিমালা ২০০৯’ এর ১১ বিধিমতে অসদাচরণ, চাকুরি হতে বরখাস্তযোগ্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবদুর রহমানের স্থায়ী আবাস কমলনগরের হাজির হাট ইউনিয়নের ২ নাম্বার ওয়ার্ডে। তখনকার সময় তিনি নোয়াখালী জেলাতে পড়াশোনা করার সুবাদে ওখানে ভোটার হন। ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর নিয়োগ লাভের পর আবদুর রহমান ওই বছরের ২০ নভেম্বর চর কাদিরা ইউনিয়নে কিছু জমি খরিদ করেন। চর কাদিরার বাসিন্দা না হওয়ায় তাঁর অবৈধ নিয়োগ আদেশ বাতিলের জন্য তৎকালিন সময়ে চর কাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশ্রাফ উদ্দিন রাজন ওই বছরের ১৬ নভেম্বর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়র সচিব এবং ১১ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এ ছাড়াও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন রাজন আবদুর রহমান চর কাদিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা নয় মর্মে প্রত্যয়ন দেন এবং হাজির হাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল বাছেত হেলাল অভিযুক্ত আবদুর রহমান হাজির হাট ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা মর্মে প্রত্যয়ন পত্র ও জন্ম নিবন্ধন জনসম্মুখে প্রচার হয়। এদিকে তথ্য গোপন করে নিয়োগ নেওয়া আবদুর রহমানের নিয়োগাদেশ বাতিল চেয়ে চর কাদিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মোসলেহ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি ওই সময় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে রীট পিটিশন দাখিল করলে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ১৮ মে তাঁর নিয়োগাদেশের উপর স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। উক্ত স্থগিতাদেশ গোপন ও অমান্য করে জেলা ও উপজেলা বিভাগীয় দপ্তরকে ‘ম্যানেজ’ করে আবদুর রহমান টানা একযুগ ধরে হাজার হাজার বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন করে জনগণের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ১২ বছরে নিকাহ রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান প্রায় ৩৬ টা বালাম বহিয়ে ৩৬শ’ বিবাহ ও ১ হাজারের মতো তালাক রেজিস্ট্রি করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন । আবার ১২ বছরের স্থগিতাদেশ হওয়া সত্ত্বেও জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়কে ঘুমে রেখে গত চলতি বছরের ২৯ জুন উপজেলার হাজির হাট ইউনিয়নের শূন্য অধিক্ষেত্রে অতিরিক্ত দায়িত্ব নেন।
ওই ইউনিয়নটির নিয়মিত নিকাহ রেজিস্ট্রার বেলাল অবসর নেয়ার পরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পান উপজেলার লরেঞ্চ ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ কাজী’ আবদুল লতিফ। কিন্তু ‘রহস্যজনক উপায়ে’ তৎকালীন জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার ম্যানেজ হয়ে তাঁর (জেলা রেজিস্ট্রারের) অবসর গমনের আগের কর্মদিবসে আবদুল লতিফের অতিরিক্ত দায়িত্বের আদেশ বাতিল করে আবদুর রহমানকে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান জানান, তাঁর স্থগিতাদেশ থাকার কথা তিনি জানতেন না, তবে এ বছরের ১৯ আগস্ট মামলা থেকে তিনি অব্যহতি পেয়েছেন বলে জানান। চরকাদিরা ইউনিয়নে নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা রেজিস্ট্রার সালাহ উদ্দিন বলেন, অভিযুক্ত আবদুর রহমান স্থগিতাদেশ গোপন করে নিকাহ রেজিস্ট্রি পরিচালনা করার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তাঁর নিয়োগকালীন তথ্য গোপন এবং বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে খুব শীঘ্রই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে আদালতের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে একযুগ ধরে বাল্য বিবাহ বহুবিবাহসহ ৪ হাজার বিবাহ ও সহস্রাধিক তালাকনামা নিবন্ধন করার অভিযোগ উঠেছে নিকাহ রেজিস্ট্রার আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে। অসদুপায়ে নিয়োগ পাওয়া এ কাজী জনগণের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন ।
জানা যায়, আবদুর রহমান ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর তথ্য গোপন করে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে কমলগরের চর কাদিরা ইউনিয়নের অস্থায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসাবে নিয়োগ পান। ওই সময় তৎকালিন আইন মন্ত্রী কামরুল ইসলাম মোটা অঙ্কের টাকার বিমিময়ে কোন যাচাই বাছাই না করে জনপ্রতি দশ লক্ষাধিক টাকা করে নিয়ে বহু লোককে নিয়োগ দেন। নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ বিধিমালায় সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে,’একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ প্রত্যাশীকে অবশ্যই নিয়োগ লাভের জন্য শূন্য অধিক্ষেত্রের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে । কিন্তু বিতর্কিত আবদুর রহমান সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়ে অন্য ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া সত্বেও চর কাদিরা ইউনিয়নে নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ নেন। যা নিকাহ রেজিস্ট্রার বিধিমালা ২০০৯’ এর ১১ বিধিমতে অসদাচরণ, চাকুরি হতে বরখাস্তযোগ্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবদুর রহমানের স্থায়ী আবাস কমলনগরের হাজির হাট ইউনিয়নের ২ নাম্বার ওয়ার্ডে। তখনকার সময় তিনি নোয়াখালী জেলাতে পড়াশোনা করার সুবাদে ওখানে ভোটার হন। ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর নিয়োগ লাভের পর আবদুর রহমান ওই বছরের ২০ নভেম্বর চর কাদিরা ইউনিয়নে কিছু জমি খরিদ করেন। চর কাদিরার বাসিন্দা না হওয়ায় তাঁর অবৈধ নিয়োগ আদেশ বাতিলের জন্য তৎকালিন সময়ে চর কাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশ্রাফ উদ্দিন রাজন ওই বছরের ১৬ নভেম্বর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়র সচিব এবং ১১ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এ ছাড়াও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন রাজন আবদুর রহমান চর কাদিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা নয় মর্মে প্রত্যয়ন দেন এবং হাজির হাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল বাছেত হেলাল অভিযুক্ত আবদুর রহমান হাজির হাট ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা মর্মে প্রত্যয়ন পত্র ও জন্ম নিবন্ধন জনসম্মুখে প্রচার হয়। এদিকে তথ্য গোপন করে নিয়োগ নেওয়া আবদুর রহমানের নিয়োগাদেশ বাতিল চেয়ে চর কাদিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মোসলেহ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি ওই সময় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে রীট পিটিশন দাখিল করলে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ১৮ মে তাঁর নিয়োগাদেশের উপর স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। উক্ত স্থগিতাদেশ গোপন ও অমান্য করে জেলা ও উপজেলা বিভাগীয় দপ্তরকে ‘ম্যানেজ’ করে আবদুর রহমান টানা একযুগ ধরে হাজার হাজার বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন করে জনগণের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ১২ বছরে নিকাহ রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান প্রায় ৩৬ টা বালাম বহিয়ে ৩৬শ’ বিবাহ ও ১ হাজারের মতো তালাক রেজিস্ট্রি করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন । আবার ১২ বছরের স্থগিতাদেশ হওয়া সত্ত্বেও জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়কে ঘুমে রেখে গত চলতি বছরের ২৯ জুন উপজেলার হাজির হাট ইউনিয়নের শূন্য অধিক্ষেত্রে অতিরিক্ত দায়িত্ব নেন।
ওই ইউনিয়নটির নিয়মিত নিকাহ রেজিস্ট্রার বেলাল অবসর নেয়ার পরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পান উপজেলার লরেঞ্চ ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ কাজী’ আবদুল লতিফ। কিন্তু ‘রহস্যজনক উপায়ে’ তৎকালীন জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার ম্যানেজ হয়ে তাঁর (জেলা রেজিস্ট্রারের) অবসর গমনের আগের কর্মদিবসে আবদুল লতিফের অতিরিক্ত দায়িত্বের আদেশ বাতিল করে আবদুর রহমানকে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান জানান, তাঁর স্থগিতাদেশ থাকার কথা তিনি জানতেন না, তবে এ বছরের ১৯ আগস্ট মামলা থেকে তিনি অব্যহতি পেয়েছেন বলে জানান। চরকাদিরা ইউনিয়নে নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা রেজিস্ট্রার সালাহ উদ্দিন বলেন, অভিযুক্ত আবদুর রহমান স্থগিতাদেশ গোপন করে নিকাহ রেজিস্ট্রি পরিচালনা করার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তাঁর নিয়োগকালীন তথ্য গোপন এবং বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে খুব শীঘ্রই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে