ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
খাগড়াছড়িতে এক মারমা কিশোরীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ অভিযোগকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘স্থানীয় জনগণ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার পরবর্তী সময়ে ভুক্তভোগী ও তার পরিবার ন্যায়বিচার পাওয়ার পরিবর্তে ভয়ভীতির মুখে পড়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতার বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত জনগণের উপর এহেন আচরণ মৌলিক অধিকারের পরীপন্থী। অন্যদিকে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করে কিশোরী নির্যাতনের বিচার এড়িয়ে যাওয়ার অপকৌশল নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য।‘
দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৮৪জন নাগরিক রোববার,(২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেন, ‘খাগড়াছড়িতে গত এক বছরে সাতজন পাহাড়ী আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। প্রতিবার এই বর্বরোচিত ঘটনাগুলোর বিচার চাইতে গিয়ে ভুক্তভোগী ও আন্দোলনকারীরা শিকার হচ্ছেন হামলা, মামলার দীর্ঘসূত্রিতা এবং রাষ্ট্রীয় অসহযোগিতার।
মঙ্গলবার রাতে প্রাইভেট পড়া থেকে ফেরার সময়ে এক মারমা কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে তিনজনকে অভিযুক্ত করে তার বাবা মামলা করেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে পাহাড়িরা প্রতিবাদ, সমাবেশ ও মিছিল করার ঘোষণা দেন। তারা অবরোধও পালন করেন। এ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেখানে পাহাড়ি-বাঙ্গালী ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের খবরও পাওয়া যায়।
উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় এবং বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
মহিলা পরিষদের বিবৃতি
মহিলা পরিষদ বিবৃতিতে বলেছে, সংগঠনটি ‘মনে করে পার্বত্য অঞ্চলের জাতি সত্তাভিত্তিক নারী ও কিশোরীরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থাকে ক্ষুন্ন করে এমন যেকোনো পক্ষপাতদুষ্ট বা অন্যায্য আচরণ ও দেশের অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
‘বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে তা তিনি যেখানেই বসবাস করুন না কেন, যে কোনো জাতিসত্তা বা সম্প্রদায়েরই হোন না কেন। এ ধরনের সহিংসতা সংবিধান ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ‘অবিলম্বে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর উপর হামলা ও নিযার্তন বন্ধে’ প্রয়োজনী পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়েছে।
###চুরাশি নাগরিক
চুরাশি জন নাগরিকের পক্ষে মারজিয়া প্রভা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে
বলা হয়, ‘এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জাতিসত্তার নারীর ওপর সংগঠিত বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে চলে আসা জাতিগত নিপীড়নের ভয়াবহ অস্ত্র হিসেবে ধর্ষণের ব্যবহারকে আবারও স্পষ্ট করেছে।’
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, লেখক, গবেষক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিকিৎসক, প্রকাশক, আলোকচিত্রী থিয়েটার কর্মীর নামে দেয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মারমা নারীর ধর্ষণ মামলার ৭২ ঘন্টা পার হলেও ভুক্তভোগীর মেডিকেল টেস্ট হয়নি। গত ২৭ জুন খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণীর একজন ত্রিপুরা ছাত্রীর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় প্রশাসনের একইরকম গাফিলতি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। তাছাড়া দুটি ঘটনাতেই অভিযুক্তরা হলো সেটেলার বাঙালি, যা প্রমাণ করে যে পাহাড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা মূলত পাহাড়ি জাতিসত্তার জনগণদের ভূমি দখল ও উচ্ছেদের কৌশল হিসেবে জাতিগত নিপীড়নের একটি পরিকল্পিত হাতিয়ার।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত বছর সেপ্টেম্বরেও একই সময়ে ১৪৪ ধারা জারি করে খাগড়াছড়িত একইভাবে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল।
বিবৃতিতে তারা অভিযোগ করেন, সংবাদমাধ্যম সেন্সর করা ও ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা, মামলা নিতে পুলিশের অনীহা, দুর্বল এজাহার তৈরি করে আসামির জামিন নিশ্চিত করা, মেডিকেল পরীক্ষা না করা কিংবা দেরিতে করে আলামত নষ্ট করা এবং ভুক্তভোগীদের পর্যাপ্ত আইনি সহায়তা না দেওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
তারা বলেন, এসব ‘প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্রীয়ভাবে এই অপরাধকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না।’
তারা অবিলম্বে এই ‘জাতিগত নিপীড়নমূলক’ ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত বিচার এবং ‘নিরপরাধ’ কারাবন্দী বম নারী ও শিশুদের মুক্তির দাবী জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, সায়েমা খাতুন, নাসরিন সিরাজ, ফেরদৌস আরা রুমী, কাব্য কৃত্তিকা, নাজিফা তাসনিম, ফারহা তানজীম, ছায়েদুল হক নিশান প্রমুখ।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
খাগড়াছড়িতে এক মারমা কিশোরীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ অভিযোগকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘স্থানীয় জনগণ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার পরবর্তী সময়ে ভুক্তভোগী ও তার পরিবার ন্যায়বিচার পাওয়ার পরিবর্তে ভয়ভীতির মুখে পড়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতার বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত জনগণের উপর এহেন আচরণ মৌলিক অধিকারের পরীপন্থী। অন্যদিকে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করে কিশোরী নির্যাতনের বিচার এড়িয়ে যাওয়ার অপকৌশল নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য।‘
দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৮৪জন নাগরিক রোববার,(২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেন, ‘খাগড়াছড়িতে গত এক বছরে সাতজন পাহাড়ী আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। প্রতিবার এই বর্বরোচিত ঘটনাগুলোর বিচার চাইতে গিয়ে ভুক্তভোগী ও আন্দোলনকারীরা শিকার হচ্ছেন হামলা, মামলার দীর্ঘসূত্রিতা এবং রাষ্ট্রীয় অসহযোগিতার।
মঙ্গলবার রাতে প্রাইভেট পড়া থেকে ফেরার সময়ে এক মারমা কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে তিনজনকে অভিযুক্ত করে তার বাবা মামলা করেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে পাহাড়িরা প্রতিবাদ, সমাবেশ ও মিছিল করার ঘোষণা দেন। তারা অবরোধও পালন করেন। এ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেখানে পাহাড়ি-বাঙ্গালী ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের খবরও পাওয়া যায়।
উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় এবং বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
মহিলা পরিষদের বিবৃতি
মহিলা পরিষদ বিবৃতিতে বলেছে, সংগঠনটি ‘মনে করে পার্বত্য অঞ্চলের জাতি সত্তাভিত্তিক নারী ও কিশোরীরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থাকে ক্ষুন্ন করে এমন যেকোনো পক্ষপাতদুষ্ট বা অন্যায্য আচরণ ও দেশের অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
‘বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে তা তিনি যেখানেই বসবাস করুন না কেন, যে কোনো জাতিসত্তা বা সম্প্রদায়েরই হোন না কেন। এ ধরনের সহিংসতা সংবিধান ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ‘অবিলম্বে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর উপর হামলা ও নিযার্তন বন্ধে’ প্রয়োজনী পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়েছে।
###চুরাশি নাগরিক
চুরাশি জন নাগরিকের পক্ষে মারজিয়া প্রভা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে
বলা হয়, ‘এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জাতিসত্তার নারীর ওপর সংগঠিত বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে চলে আসা জাতিগত নিপীড়নের ভয়াবহ অস্ত্র হিসেবে ধর্ষণের ব্যবহারকে আবারও স্পষ্ট করেছে।’
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, লেখক, গবেষক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিকিৎসক, প্রকাশক, আলোকচিত্রী থিয়েটার কর্মীর নামে দেয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মারমা নারীর ধর্ষণ মামলার ৭২ ঘন্টা পার হলেও ভুক্তভোগীর মেডিকেল টেস্ট হয়নি। গত ২৭ জুন খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণীর একজন ত্রিপুরা ছাত্রীর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় প্রশাসনের একইরকম গাফিলতি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। তাছাড়া দুটি ঘটনাতেই অভিযুক্তরা হলো সেটেলার বাঙালি, যা প্রমাণ করে যে পাহাড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা মূলত পাহাড়ি জাতিসত্তার জনগণদের ভূমি দখল ও উচ্ছেদের কৌশল হিসেবে জাতিগত নিপীড়নের একটি পরিকল্পিত হাতিয়ার।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত বছর সেপ্টেম্বরেও একই সময়ে ১৪৪ ধারা জারি করে খাগড়াছড়িত একইভাবে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল।
বিবৃতিতে তারা অভিযোগ করেন, সংবাদমাধ্যম সেন্সর করা ও ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা, মামলা নিতে পুলিশের অনীহা, দুর্বল এজাহার তৈরি করে আসামির জামিন নিশ্চিত করা, মেডিকেল পরীক্ষা না করা কিংবা দেরিতে করে আলামত নষ্ট করা এবং ভুক্তভোগীদের পর্যাপ্ত আইনি সহায়তা না দেওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
তারা বলেন, এসব ‘প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্রীয়ভাবে এই অপরাধকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না।’
তারা অবিলম্বে এই ‘জাতিগত নিপীড়নমূলক’ ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত বিচার এবং ‘নিরপরাধ’ কারাবন্দী বম নারী ও শিশুদের মুক্তির দাবী জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, সায়েমা খাতুন, নাসরিন সিরাজ, ফেরদৌস আরা রুমী, কাব্য কৃত্তিকা, নাজিফা তাসনিম, ফারহা তানজীম, ছায়েদুল হক নিশান প্রমুখ।