ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজার ষষ্ঠীপূজার আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। রোববার,(২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) মন্দিরের দুর্গামণ্ডপের সামনে থাকা বেলতলায় চণ্ডীপাঠ ও বিহিত পূজা হয়। ঢাকের বাদ্য, শঙ্খনাদ, উলুধ্বনি, কাসর ঘণ্টার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে আবাহন করা হয়। সকাল থেকেই মন্দিরে ভক্তরা আসতে শুরু করেন। কেউ কেউ অঞ্জলি দিয়েই চলে যান। আবার কেউ কেউ প্রার্থনার পর পরিবার নিয়ে সময়ও কাটান।
ঢাকের বাদ্য, উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ আর কাসর ঘণ্টায় মুখরিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির। সেখানে দেবীদুর্গাকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকে অনেকেই ছিলেন অপেক্ষায়। রোববার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে বেলগাছের নিচে ঘট স্থাপন করে ষোড়শ উপাচারে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভে ষষ্ঠী পূজা শুরু হয়। এর আগে ভোর থেকে চলতে থাকে পূজার সরঞ্জামাদি সাজানোর কাজ।
ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। যার সমাপ্তি হবে বিজয়া দশমীতে দেবীদুর্গার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। স্বামীর ঘর স্বর্গ ছেড়ে মর্ত্যে তার পিতৃগৃহে পদার্পণ করলেন দেবী। এ আগমনে তার সঙ্গে রয়েছেন চার ছেলেমেয়ে গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, ও সরস্বতী, আরও রয়েছে কার্তিকের কলা বউ। সাধারণত ষষ্ঠীর দিন ‘দুর্গা মায়ের’ মুখ উন্মোচিত করা হয়, এ সময় লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীকে নিয়ে দেবী দুর্গা মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হন।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বলেন, ‘সংকল্প ও আরম্ভ এ দুই মিলিয়ে হয় ‘কল্পারম্ভ’। এর মাধ্যমে দেবীর কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়, সমস্ত নিয়ম মেনেই তার পূজার্চনা করা হবে। ষষ্ঠীর আগে দেবী বেলগাছের তলায় ঘুমিয়ে থাকেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বোধনের মধ্য দিয়ে দেবীর ঘুম ভাঙানো হয়েছে। আজকে পূজা এবং অঞ্জলির মধ্যদিয়ে আমরা দেবীর কাছে শান্তি প্রত্যাশা করেছি।’
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অঞ্জলি দিয়ে দেবীর ভক্তরা দেশ এবং সারাবিশ্বে ‘অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায়’ দুর্গার চরণে গন্ধ, পুষ্প, অর্ঘ্য ও বাদ্য দিয়ে প্রার্থনা করে ষষ্ঠী পূজায়। হিন্দু আচার অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এ তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী দুর্গার আগমন হয়েছে গজে অর্থাৎ হাতির পিঠে চড়ে। গজে আগমন বা গমন হলে বসুন্ধরা শস্য শ্যামলা হয়। দশমীতে দেবী মর্ত্যলোক ছাড়বেন দোলায় চড়ে। আর দোলায় দেবীর গমনকে মহামারী বা মড়কের ইঙ্গিত ধরা হয়।
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন দেবীদুর্গা। তার এ ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
মহালয়ার মধ্য দিয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর এবারের দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছিল। ওইদিন থেকেই দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধরায় আসেন। সন্তানদের নিয়ে কয়েকটি দিন পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। তাদের বিশ্বাস, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব।
রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গা পূজা নামেও পরিচিত।
এবারের পূজায় কেবল ঢাকাতে গতবারের তুলনায় ৭টি বেড়ে মোট ২৫৯টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর সারাদেশে মোট মণ্ডপের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৩৫৫টি, যা গতবারের তুলনায় প্রায় হাজারখানেক বেশি।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রোববার থেকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপি কেন্দ্রীয়ভাবে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করেছে। এছাড়া রামকৃষ্ণ মিশনে এবারও হবে ‘কুমারী র্পূজা’সহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা। আজ সপ্তমীর সকালে হবে দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমীর বিহিত পূজা।
বিজয়া দশমীতে একদিকে ‘আনন্দময়ী মাকে’ বিদায় জানানোর পালা, আবার আসন্ন বছর ‘মা’ আবার আসবেন সেই অপেক্ষার শুরু। সেদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রোববার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজার ষষ্ঠীপূজার আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। রোববার,(২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) মন্দিরের দুর্গামণ্ডপের সামনে থাকা বেলতলায় চণ্ডীপাঠ ও বিহিত পূজা হয়। ঢাকের বাদ্য, শঙ্খনাদ, উলুধ্বনি, কাসর ঘণ্টার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে আবাহন করা হয়। সকাল থেকেই মন্দিরে ভক্তরা আসতে শুরু করেন। কেউ কেউ অঞ্জলি দিয়েই চলে যান। আবার কেউ কেউ প্রার্থনার পর পরিবার নিয়ে সময়ও কাটান।
ঢাকের বাদ্য, উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ আর কাসর ঘণ্টায় মুখরিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির। সেখানে দেবীদুর্গাকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকে অনেকেই ছিলেন অপেক্ষায়। রোববার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে বেলগাছের নিচে ঘট স্থাপন করে ষোড়শ উপাচারে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভে ষষ্ঠী পূজা শুরু হয়। এর আগে ভোর থেকে চলতে থাকে পূজার সরঞ্জামাদি সাজানোর কাজ।
ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। যার সমাপ্তি হবে বিজয়া দশমীতে দেবীদুর্গার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। স্বামীর ঘর স্বর্গ ছেড়ে মর্ত্যে তার পিতৃগৃহে পদার্পণ করলেন দেবী। এ আগমনে তার সঙ্গে রয়েছেন চার ছেলেমেয়ে গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, ও সরস্বতী, আরও রয়েছে কার্তিকের কলা বউ। সাধারণত ষষ্ঠীর দিন ‘দুর্গা মায়ের’ মুখ উন্মোচিত করা হয়, এ সময় লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীকে নিয়ে দেবী দুর্গা মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হন।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বলেন, ‘সংকল্প ও আরম্ভ এ দুই মিলিয়ে হয় ‘কল্পারম্ভ’। এর মাধ্যমে দেবীর কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়, সমস্ত নিয়ম মেনেই তার পূজার্চনা করা হবে। ষষ্ঠীর আগে দেবী বেলগাছের তলায় ঘুমিয়ে থাকেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বোধনের মধ্য দিয়ে দেবীর ঘুম ভাঙানো হয়েছে। আজকে পূজা এবং অঞ্জলির মধ্যদিয়ে আমরা দেবীর কাছে শান্তি প্রত্যাশা করেছি।’
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অঞ্জলি দিয়ে দেবীর ভক্তরা দেশ এবং সারাবিশ্বে ‘অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায়’ দুর্গার চরণে গন্ধ, পুষ্প, অর্ঘ্য ও বাদ্য দিয়ে প্রার্থনা করে ষষ্ঠী পূজায়। হিন্দু আচার অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এ তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী দুর্গার আগমন হয়েছে গজে অর্থাৎ হাতির পিঠে চড়ে। গজে আগমন বা গমন হলে বসুন্ধরা শস্য শ্যামলা হয়। দশমীতে দেবী মর্ত্যলোক ছাড়বেন দোলায় চড়ে। আর দোলায় দেবীর গমনকে মহামারী বা মড়কের ইঙ্গিত ধরা হয়।
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন দেবীদুর্গা। তার এ ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
মহালয়ার মধ্য দিয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর এবারের দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছিল। ওইদিন থেকেই দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধরায় আসেন। সন্তানদের নিয়ে কয়েকটি দিন পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। তাদের বিশ্বাস, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব।
রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গা পূজা নামেও পরিচিত।
এবারের পূজায় কেবল ঢাকাতে গতবারের তুলনায় ৭টি বেড়ে মোট ২৫৯টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর সারাদেশে মোট মণ্ডপের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৩৫৫টি, যা গতবারের তুলনায় প্রায় হাজারখানেক বেশি।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রোববার থেকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপি কেন্দ্রীয়ভাবে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করেছে। এছাড়া রামকৃষ্ণ মিশনে এবারও হবে ‘কুমারী র্পূজা’সহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা। আজ সপ্তমীর সকালে হবে দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমীর বিহিত পূজা।
বিজয়া দশমীতে একদিকে ‘আনন্দময়ী মাকে’ বিদায় জানানোর পালা, আবার আসন্ন বছর ‘মা’ আবার আসবেন সেই অপেক্ষার শুরু। সেদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব।